বইয়ের বাইরে - মজার গল্প জেনে নাও
আমরা ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনেছি। যেটা ছিল বইয়ের বাইরে মজার গল্প। আর এই গল্প শুনেছি আমরা দাদি নানীর কাছ থেকে। কিন্তু এখন আর শিশুরা সেই গল্প শুনতে চায় না। তারা বইয়ের বাইরে মজার গল্প যেন নামটাই কখনো শুনেনি। আর এর প্রধান কারণ হলো ডিভাইস নির্ভর জীবন, যেখানে রয়েছে মোবাইলের স্কিন।
বইয়ের বাইরে - মজার গল্প
বর্তমান সময়ে বই পড়া যেন যন্ত্রের মত হয়ে উঠেছে এখানে কেউ আর আনন্দ খোঁজে না শুধু খুঁজে ফিরে কিভাবে ভালো ফলাফল করা যায় কিভাবে ক্লাসে প্রথম হওয়া যায় কিন্তু কেউ এই পড়ার ভিতরে মনোযোগ দেয় না যে আমি এখান থেকে কিছু শিখতে চাই আমি জানতে চাই বর্তমানে এই অনুভূতি আর যেন কাজই করেনা সবাই চাই আমি ক্লাসে ফার্স্ট হবো
বইয়ের বাইরে ও আলাদা একটা জগত আছে যেখান থেকে মানুষ অনেক অভিজ্ঞতার আলো নিতে পারে সবাই নিজেকে বুঝতে পারে জানতে পারে আর এই জানা অজানা গল্প থেকেই মানুষ নিজেকে আবিষ্কার করতে শেখে আমি এমন একটি গল্প আজ তুলে ধরার চেষ্টা করব আমার গল্পের নাম -
তোমাকেই খুঁজে ফিরে
পুরনো একটি গ্রাম সেই গ্রামে বাস করে একটি ছেলে।আমার গল্পে তার নাম রাজকুমার। আমার গল্পের রাজকুমারকে কেউ চেনে না, বিশেষ করে বইয়ের পাতায় তো কেউ তাকে চেনে না। কারণ কোন ইতিহাসের খাতায় তার কোন নাম লেখা নেই, শুধু রয়েছে গল্পের রাজ্যে। গ্রামের শেষ মাথার সেই পুরনো বটগাছের নিচে যেখানে প্রতি পূর্ণিমার রাত্রে ছোট্ট একটি ছেলে এসে বসে থাকে ।
অচেনা সেই গ্রামের রাজকুমারকে কেউ চেনে না, কারণ গ্রামের মানুষ মেঠো পথ ধরে হাঁটতে হাটতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে যায় এবং দিনশেষে তারা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মানুষ এখন আর গায়ে ধুলো মাখতে পছন্দ করে না, কারণ সে হয়ে উঠেছে আধুনিক যুগের আধুনিক মানুষ। সে এখন ডিভাইস নির্ভর।
সে আসলে কোন বাস্তবের মানুষ নয়, একটা ভুলে যাওয়া কল্পনা মাত্র। এক সময় শিশুদের স্বপ্নে এসে সে খেলা করত গল্পের জগতে, ভ্রমণ করত প্রতিটি শিশুর সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবাই তাকে হারিয়ে ফেলেছে কারণ এখন শিশুদের চোখগুলো আটকে থাকে মোবাইলে স্ক্রিনে যার কারণে গল্পের সেই স্বপ্নের রাজকুমারকে কেউ আর খোঁজেনা।
আমাদের সেই গ্রামের এক কোণে রয়েছে বিশাল এক পুরনো বটগাছ। সেই গাছটা এখনো শত বছরের পুরনো কথা মনে করিয়ে দেয়। এই গাছের ডালপালা গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আশপাশের অনেক ছোট বড় বাড়ির ওপর দিয়ে। দিনের বেলায় এখানে অনেক পাখির কলো কাকলি শোনা যায় আর এর ছায়ায় ছেলেরা বসে খেলা করে।
কিন্তু তাদের সেই খেলা গুলো হয় মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। আগেকার দিনের মতো সেই গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু এই খেলা নয়, তাদের খেলা হলো মোবাইলের গেমস খেলা। তবুও স্বপ্নের রাজকুমার প্রতিদিন অপেক্ষা করে হাতে একটা ছেড়া বই আর মুখে এক গাল হাসি নিয়ে। আর মাঝে মাঝে তার কণ্ঠস্বর বাতাসে ভেসে আসে প্রতিটা শিশুর উদ্দেশ্যে। সে সকলকে ডেকে বলে -
" তুমি যদি আমায় পড়ো তাহলে আমি তোমায় স্বপ্নের ডালিম কুমারের মত উড়িয়ে নিয়ে যাব সেই জগতে, যেখানে থাকবে শুধু নদী, গান আর হাসি। সেখানে থাকবে শুধু স্বপ্ন আর ভালোবাসা, থাকবে না কোন দুঃখ - হতাশা"।
স্বপ্নের সেই রাজকুমার এত ডাকাডাকি করার পরেও এখনকার শিশুরা আর গল্পের বই পড়ে না তারা কোন দৌত্ত দানবের গল্প শুনতে ও আর পছন্দ করে না, কারন তারা ব্যস্ত থাকে মোবাইল আর ট্যাবলেট নিয়ে। যেখানে কেউ তাকে ডাকে না। সে তার নিজের পছন্দ মত খেলা করে। যার কারণেই হয়তো সে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে সেই ডিভাইসের মাঝখানে।
একদিন হঠাৎ করে একটা ছোট্ট রাজকুমারী হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে সেই বট গাছের নিচে। তার হাতে ছিল একটা পুরনো গল্পের বই। সে বটগাছের নিচে বসে বইটা খুলে পড়তে শুরু করে আর ঠিক তখনই বাতাসের ঝাপটা এসে বইয়ের পাতা নড়ে ওঠে। তখনই সে রাজকুমারের হাসি শুনতে পায় এবং রাজকুমার তাকে বলে -
" তুমি পড়া চালিয়ে যাও, হারিয়ে যাও গল্পের ভিতরে, তাহলে আমি তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবো অনেক দূরে"।
ঠিক সেই রাত্রেই রাজকুমারী হারিয়ে গেল গল্পের রাজ্যে। এই গল্পের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া মানেই বিলীন হয়ে যাওয়া নয়, কারণ এখানে স্বপ্নের রাজকুমার আসে প্রতি পূর্ণিমার রাত্রে এবং এসে সে ঠিক সেই বটগাছের নিচে বসে। আগেকার মত তার হাতে থাকে পুরনো ছেড়া সেই গল্পের বই। আর তার চোখে থাকে একরাশ অপেক্ষা, যেখানে বেঁচে আছে শুধু স্বপ্ন আর সে চেয়ে আছে রাজকুমারের হাত ধরে থাকার অপেক্ষায়।
রাজকুমার বটগাছের নিচে এসে বসে ভাবে একদিন তার স্বপ্নের রাজকুমারী সেখানে আসবে আসবেই। তার মনে হাজার কল্পনা এসে ভিড়ে জমায়, হাজারো প্রশ্ন এসে উঁকি দেয় এবং সে নিজেই তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে এবং ভাবে সে নিশ্চয়ই আসবে।
হঠাৎ করে রাজকুমার একদিন দেখতে পেল একটি ছোট মেয়ে একটা সেরা গল্পের বই হাতে নিয়ে এসে বসলো সেই বটগাছের শীতল ছায়ায়। তারপর সে বইয়ের পাতাগুলো উল্টে উল্টে পড়তে লাগলো হঠাৎ করে বাতাসের হালকা ছোঁয়ায় তার বইয়ের পাতা উল্টে গেল। বটগাছের পাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়তে লাগলো তার মুখে। তখনই যেন সে শুনতে পেল কেউ তাকে ডেকে বলছে -
"রাজকুমারী ও রাজকুমারী, কি বই পড়ছো তুমি? ঠিক যেন একটা মৃদু কন্ঠস্বর"।
রাজকুমারী চমকে উঠে তাকালো তার দিকে। রাজকুমারীর তার সামনে দেখতে পেল একটি ছোট্ট ছেলে যার গায়ে রয়েছে একটি সুন্দর জামা, হাতে একটি বই এবং তার চোখে মুখে রয়েছে অজস্র হাসি যেন সে খুশিতে উৎফুল্ল, আহ্লাদে আটখানা।
রাজকুমারী মৃদু সুরে জিজ্ঞাসা করল। তুমি কে?
রাজকুমার তার মনের অজান্তেই উত্তর দিল, আমি স্বপ্নের রাজকুমার। আমি প্রতিটি বইয়ের ভেতরে থাকি। যখন আমাকে কেউ পড়ে আমি তার সঙ্গে গল্পের জগতে হারিয়ে যাই। তুমি কি আজ আমার সঙ্গে গল্পের রাজ্যে হারিয়ে যাবে!
রাজকুমারী তখন একটু ভেবে বলে, মানে? হারিয়ে যাব! তাও আবার গল্পের জগতে?
রাজকুমারীর মনে প্রশ্ন আসতেই সে তার উত্তর পেয়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে গল্পের জগতে মানে - এটা এমন একটি দুনিয়া যেখানে পাখির গান, নদীর কলতল ধ্বনি আর স্বপ্নেরা রঙ্গিন পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়। রাজকুমার বলে, রাজকুমারী, তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার সঙ্গে যেতে পারি।
রাজকুমারী যখন বইটি খুলে আরো মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করল ঠিক তখনই সার্বিক থেকে যেন আরো অনেক বই তার সামনে এসে হাজির হলো। হঠাৎ করেই যখন বাতাস থেমে গেল তখন চারদিকে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এরপর রাজকুমারী এক ঝলকে রঙ্গিন আলো জড়িয়ে নিল। সে চোখ বন্ধ করল এবং ভাবতে থাকল।
তারপর যখন সে চোখ খুললো তখন সে আর বট গাছের নিচে নয়, সে রয়েছে যেন এক রঙিন জগতে যেখানে আকাশে রয়েছে বেগুনি - গোলাপি রঙের ছায়া এবং সেই রাজ্যে গাছেরা গল্প বলে। আর এই গল্পের রাজ্যের গল্প যেন কখনোই শেষ হয় না।
সেদিন থেকেই রাজকুমার আর রাজকুমারী হয়ে উঠল ভালো বন্ধু তারা সব সময় একসঙ্গে ঘুরে বেড়াই তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং হারানো স্বপ্ন খুঁজে পাই কারণ তারা গল্পের রাজ্যের ভেতরেই ডুবে থাকে।
বন্ধুরা তোমরা যদি কখনো সেই বটগাছের নিচে বসে কোন গল্পের বই পড়তে থাকো তাহলে একদিন দেখবে তোমাদের স্বপ্নের রাজকুমার বা রাজকুমারী এসেও হাজির হবে তোমাদের সামনে।
আমার এই গল্প লেখার উদ্দেশ্য হলো আমাদের ছোট কোমলমতি শিশুরা তোমরা ডিভাইস নির্ভর না হয়ে বইয়ের প্রতি মনোযোগ দাও তাহলে দেখবে একদিন তোমরা ঠিক সেই রাজ্যের ডালিম কুমারকে খুঁজে পাবে যেখানে তোমার মন সবসময় ভালো থাকবে তুমি মনের অজান্তেই হেসে উঠবে
এবং কবির মতোই বলতে থাকবে -
থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘুর্নিপাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url