বিদায় হজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধু, বিদায় হজ রচনা সম্পর্কে তোমরা অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকো। তাই আমি তোমাদের জন্য বিদায় হজ রচনা বিস্তারিতভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনা-অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমরা বিদায় হজ রচনা দেখতে পারো -
মনে রেখো, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনায় একটি বড় অংকের নম্বর থাকে তাই তোমাদের অবশ্যই রচনা লেখার সময় গুরুত্বের সাথে লিখতে হবে। নিচে তোমাদের জন্য বিদায় হজ রচনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো -
বিদায় হজ রচনা
ভূমিকা
"আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম
দুটি পথ নির্দেশক সম্পদ আল্লাহর কিতাব এবং তার নবী (সাঃ) সুন্নাত
যা থাকলে ধারণ করে কিছুতেই হবে না পথ হারা"।
ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ এর ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ দশম হিজরীতে আরাফার ময়দানে হজ পালনকারী হাজীদের উদ্দেশ্যে তথা পুরো মুসলিম বিশ্বের উম্মাদের জন্য খুতবা বা ভাষণ প্রদান করেন আর এই ভাষণকেই বিদায় হজের ভাষণ নামে আখ্যায়িত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা - রচনা (২০ পয়েন্ট) সম্পর্কে জেনে নিন
ইসলাম ধর্ম যে ধাপে ধাপে এবং পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা পেয়েছিল তারই চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ভাষণের মাধ্যমে। তাই মূল্যবোধ অনুযায়ী এই ভাষণকে ইসলামের চূড়ান্ত পথ নির্দেশনা মূলক ভাষণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বিদায় হজ কি
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তথা দশম হিজরীতে হজ পালন করেন এবং এই হজ ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে তার জীবনের শেষ হজ তথা ইসলামের ইতিহাসে হাজ্জাতুল বিদা বা বিদায় হজ নামে পরিচিত। আর ইসলামের ইতিহাসে একেই বিদায় হজ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে রাসূল (সাঃ) নবুওত প্রাপ্তির পর মক্কায় অবস্থানকালে অবশ্য তিনি দুইবার হজ পালন করেছিলেন।
রাসূল (সাঃ) এর বিদায় হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দশম হিজরীতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে হজ পালনের জন্য রওনা হন এবং তিনি লক্ষাধিক মুসলমান নিয়ে সেই হজ পালনের উদ্দেশ্যে গমন করেন। জুল হুলাইফায় নামক স্থানে গিয়ে মহানবী সাঃ এবং তার সঙ্গীরা সবাই হজের জন্য ইহারাম বাঁধেন।
বিদায় হজ এ রাসুল সাঃ এর ভাষণ সংখ্যা
বিদায় হজ্ব তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলামের জীবনের শেষ হজে তিনি তিনটি বক্তব্য প্রদান করেন আর এই হজে ছিল তার জীবনের আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হজ
প্রথমতঃ আরাফার ময়দানে
দ্বিতীয়তঃ কোরবানির দিন, মিনায় এবং
তৃতীয়তঃ আইয়ামে তাশরিকের মধ্যবর্তী স্থান অর্থাৎ মিনায়।
তবে আরাফার ময়দানে বিশ্ব উম্মাহর জন্য তিনি যে ভাষণ প্রদান করেন তাই ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
বিদায় হজ প্রদানের স্থান
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার জীবনের শেষ হজ পালনকালে হজের দ্বিতীয় দিন আরাফার ময়দানে অবস্থানকালে জাবাল নামক পাহাড়ের টিলার শীর্ষে দাঁড়িয়ে সমবেত মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবিত অবস্থায় এটা ছিল তার জীবনের শেষ ভাষণ তাই এই ভাষণকেই বিদায় হজ্জের ভাষণ বলে অভিহিত করা হয়।
বিদায় হজের প্রেক্ষাপট
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তথা দশম হিজরীতে জিলকদ মাসের ২৫ তারিখে লক্ষাধিক সাহাবীসহ হজের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং তিনি সেখানে গিয়ে হজ পালনরত অবস্থায় জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ বিকেলে আরাফার ময়দানে এবং পরের দিন জিলহজ মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ কোরবানির দিন মিনায় বক্তব্য পেশ করেন।
আরো পড়ুনঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা সম্পর্কে জানুন
এই দুই দিনে তিনি যে বক্তব্য পেশ করেন তা বিদায় ভাষণ নামে পরিচিত। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি ইসলাম ধর্ম যে ধাপে ধাপে পূর্ণতা পেয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটান এবং তিনি মুসলিম জাহানের জন্য রেখে যান তার মূল্যবান বক্তব্য অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য পথের নির্দেশনা।
বিদায় হজের ভাষণ
আরব দেশ থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষ মহানবী (সাঃ) এর সঙ্গে হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় আসে আর এই হজে মহানবী (সাঃ) জাবালে রহমত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সমবেত সকল মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। আর এই ভাষণটি ছিল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনের শেষ ভাষণ যা বিশ্বের ইতিহাসে মদিনা সনদ হিসেবে স্বীকৃত।
এবং এই ভাষণকেই বলা হয় বিদায় হজের ভাষণ। তিনি তার এই ভাষণের মাধ্যমে সব মানুষের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ সব মানুষের উদ্দেশ্যে মানুষের কর্তব্য, অধিকার, দায়িত্ব সহ সকল মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন -
হে মানব সকল, আমার কথাগুলো তোমরা মনোযোগের সাথে শুনে রেখো। কারণ আগামী বছর আমি তোমাদের সাথে এখানে সমবেত হতে পারব কিনা তা জানি না।
আজকের এ দিন, এই স্থান, মাস যেমন পবিত্র তেমনি তোমাদের জীবন ও সম্পদ পরস্পরের নিকট পবিত্র। মনে রাখবে, অবশ্যই একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে সেদিন সকলকে নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।
দাস - দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তোমরা যা আহার করবে, পরিধান করবে তাদেরকেও তাই পরিধান করাবে। তারা যদি কোন অমার্জনীয় অন্যায় করে ফেলে তবে তাদের মুক্ত করে দেবে তবুও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করবে না। কেননা তারা তোমাদের মতই মানুষ। আল্লাহর সৃষ্টি সকল মুসলিম একে অন্যের ভাই এবং তোমরা একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
আরো পড়ুনঃ গ্রীষ্মের ছুটিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বিশ্বের সকল মুসলমান একে অপরের ভাই। তোমরা এক ভাই কখনো অন্য ভাইয়ের সম্পদ জোর করে দখল করবে না।
কখনো অন্যায় এবং অবিচার করবে না। সামান্য পাপ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
মানুষ তার নিজের কাজের জন্য নিজেই দায়ী থাকবে একজনের জন্য অন্যজনকে দোষী করা যাবেনা।
তোমরা যারা উপস্থিত আছো তারা অনুপস্থিতিদের কাছে আমার এই বাণী পৌঁছে দেবে। হয়তো এই উপদেশ তারা বেশি করে মনে রাখবে।
বিদায় হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি বাক্য
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশ্বের সকল উম্মার প্রতি তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করার পর তিনি এর সাথে চার ৪ টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন যা মুসলিম উম্মাহকে তাদের সঠিক পথের নির্দেশনা প্রদান করেন। এগুলো হল-
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করোনা।
অন্যায় ভাবে মানুষকে হত্যা করো না।
পরের সম্পদ অপহরণ করোনা।
কারো ওপর অত্যাচার করো না।
এর সঙ্গে তিনি আরো গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের জন্য আরো দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি আর তা হল -
আল্লাহর বাণী পবিত্র আল কোরআন এবং
আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসূল (সাঃ) এর জীবন আদর্শ।
তোমরা যদি এই দুটি পথ আঁকড়ে ধরতে পারো তাহলে এই দুটি পথই তোমাদের সঠিক পথের নির্দেশনা দিবে। মহানবী (সাঃ) তার ভাষণ শেষ করলেন। তার চোখ - মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি কি তোমার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি! আরাফাতের ময়দানে থেকে লাখো কন্ঠে ধ্বনিত হল হ্যাঁ, পেরেছেন,
আরো পড়ুনঃ একটি চন্দ্রালোকিত রাতের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আপনি পেরেছেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মন তখন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, তোমরা সাক্ষী, আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। বিদায়।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আরও জোর দিয়ে বলেন -
ধর্ম নিয়ে তোমরা কখনো বাড়াবাড়ি করবে না। যে যার নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে তাদের ওপর তোমরা নিজের ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করো না।
বিদায় হজের তাৎপর্য
বিদায় হজের ভাষণ মুসলিম উম্মার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে কারন এই ভাষণের মর্ম বাণী সংক্ষেপে বর্ণিত হলেও তার তার মূল কথা ছিল মুসলমানদের জীবন পরিচালনাকারী মর্মকথা।বিদায় হজের ভাষণ শুধু ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল তা নয়, এটা ছিল মুসলিম উম্মার তথা মানব সমাজের জন্য জীবন বিধান এবং গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ। আরো ছিল আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তার সার্বভৌমত্ব, মানবজাতির সাম্য, ঐক্য, আধ্যাত্মিক, ভ্রাতৃত,
আরো পড়ুনঃ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
গণতান্ত্রিক, সাম্য, সামাজিক, স্বাধীনতা সহ সকল কিছু বিনির্মাণের অন্যতম দিক। ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতি মমত্ববোধ এবং ভালবাসাসা সহ মানবতার পরম ধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
আমার অবর্তমানে তোমরা
হয়ো নাকো কাফির।
ভুলেও কখনো নিও নাকো তোমরা
একে অপরের প্রাণ।
উপসংহার
বিদায় হজের ভাষণ বিশ্ব মুসলিম উম্মার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এই বিদায় হজের ভাষণের মাধ্যমে নবীজি সাঃ যেসব কথা তুলে ধরেছেন সেগুলো যদি প্রত্যেক মুসলমান সঠিকভাবে পালন করে তাহলে তাদের জীবন হবে শান্তিময়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url