সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

সূর্যমুখী ফুল এবং বীজের সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত কিন্তু  সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে আমরা তা জানি না। তাই আপনারা যারা সূর্যমুখী তেলের  সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তারা আমার আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আপনারা  সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।

Image

এছাড়াও আমি আজকে আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেলের যে আশ্চর্য গুণাগুণ হয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব। তাহলে আসুন আর দেরি না করে জেনে নিই সূর্যমুখী তেলের যত আশ্চর্য কর গুনাগুন।

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা

সূর্যমুখী তেল শুধু আমাদের দেশের জন্য নয় সারা বিশ্বের জন্য এই তেল হল বিখ্যাত একটি তেল। সূর্যমুখী শুধু দেখতে অপরূপ তা নয়, সূর্যমুখী গুণেও অনন্য। বাংলাদেশের আবহাওয়া, মাটি, পানি, জলবায়ু সবকিছুই সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সূর্যমুখী বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। অন্যান্য তেলে যেমন ক্ষতিকরক উপাদান থাকে কিন্তু সূর্যমুখী তেলে তেমন কোন ক্ষতিকারক দিক নেই বললেই চলে। বিশেষ করে এই তেল মানুষের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

তাই আমাদের দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে সূর্যমুখীর চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ এবং ক্যান্সার ও প্রতিরোধে অনেক পুষ্টিগণ সম্পন্ন তেল। সূর্যমুখী ফুলের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ অতি অল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে অধিক লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী ফুল হলো একপ্রকার বার্ষিক ফুলের উদ্ভিদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করা হয়ে থাকে। এই গাছটির প্রায় ৩ মিটার লম্বা হয় এবং ৩0 সেন্টিমিটার ব্যাস পর্যন্ত ফুল থাকে।

ফুল কিছুটা সূর্যের দিকে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং হলুদ রঙের হয়ে থাকে যার কারণে এই ফুলকে বলা হয়ে থাকে সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখী তেলের নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্রতা রয়েছে যা সকলকে মুগ্ধ করে। যেমন ঘি এর পরিবর্তে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাকে বনস্পতি মাখন নামে অভিহিত করা হয়। সূর্যমুখী তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়েও অনেক বেশি ভালো এবং যাদের হৃদরোগ রয়েছে তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো। 

আরো পড়ুনঃ স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

আবার এই সূর্যমুখী তেলে কোলেস্টরেল এর পরিমাণ খুব কম যার কারণে যাদের কোলেস্টরেলের সমস্যা রয়েছে তারা অনায়াসে এই তেল খেতে পারেন। ভিটামিন এ, ডি এবং ই সূর্যমুখীর বীজ প্রায় সব ধরনের বাদাম এবং বীজ অপরিহার্য। ফ্যাটি অ্যাসিড এবং সুস্বাস্থ্যের প্রধান উৎস। সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করে তা নয়, সূর্যমুখী ফুলের বীজ আমাদের শরীরের জন্য খুব বেশি উপকারী। 

সূর্যমুখী ফুলের জন্মস্থান হল আমেরিকা। এক সময় ফুল হিসেবে এই গাছের চাষ করা হতো কিন্তু বর্তমানে ভজ্য তেলের জন্য এই ফুলের চাষ করা হয় তবে অনেক জায়গায় এই ফুলের বীজ রোস্ট করে বা কাঁচা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন শস্য দানা এবং মিষ্টি তৈরি করতে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা মাখন এবং পিনাট মাখন খেতে পারেন না তাদের জন্য সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে মাখন তৈরি করা হয়। সূর্যমুখী তেলের বীজ আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী এই তেলের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

সূর্যমুখী তেলের বিভিন্ন উপকারী বৈশিষ্ট্য সমূহ

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে সেলেনিয়াম নামক এক ধরনের উপাদান যা মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খুব বেশি পারদর্শী। এছাড়াও এই তেলের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম নামক উপাদান যা আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। এছাড়াও মাইগ্রেনের সমস্যা, আমাদের মস্তিষ্কে শান্ত রাখতে এই তেলের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, দেহের চামড়ায় জ্বালাপোড়া, হাঁপানি, আলসার, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে এই তেল খুব বেশি উপকারী। নিচে এগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো -

আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির -১৫ টি - উপকারিতা জেনে নিন

হাড়ের ব্যথায় সমাধান

যাদের জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে সূর্যমুখী তেল তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। এছাড়া ও ত্বকের জ্বালাপোড়া, হাঁপানি, পেটের আলসার ইত্যাদি চিকিৎসায় এই তেল খুব বেশি কার্যকরী।

কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ফাইটোস্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

সূর্যমুখী তেলের নিয়মিত ব্যবহার আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা মানসিক স্নায়ু কোষে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রীকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে থাকে।

শরীরের ব্যথা এবং হয় জনিত রোগ থেকে মুক্তি দেয়

সূর্যমুখী তেলের বীজের রয়েছে ভিটামিন "এ" যা আমাদের শরীরের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন "ই" যা আমাদের শরীরের ব্যথা সারাতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ভিটামিন "এ" যা আমাদের ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং অকালে বয়সের ছাপ পড়া থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।

চুল পড়া রোধ করে

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন "বি ৬" যা মাথার ত্বকে অক্সিজেন বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের চুল পড়া কমিয়ে দিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে চুলের প্রাকৃতিক রং ধরে রাখার ক্ষমতা।

ত্বক নরম রাখে

সূর্যমুখী তেল হল ফ্যাটি এসিডের একটি অন্যতম উৎস তাই এটি আমাদের ত্বককে কোমল ও নরম রাখতে সহায়তা করে থাকে।

শরীরের দাগ দূর করে

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ফ্যাটি এসিড যা ত্বকে কোলাজেন এবং ইলাস্টিন তৈরি করতে তৈরি করে যার কারণে আমাদের ত্বকের মধ্যে যে দাগ পড়ে তা দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও এই তেলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান যা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে ছাড়াও এই তেলে রয়েছে এমাইনো এসিড যা মানুষের শরীরকে সেরোটোনিন তৈরি করতে সহায়তা করে থাকে। আর সেরােটোনিন হলো এমন একটি উপাদান যা মানসিক ক্লান্তি, বিষণ্নতা, উদ্যোগ থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়।

পুষ্টিগুণে ভরপুর

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে উচ্চমানের পুষ্টিগুণ যার কারণে আমাদের শরীরকে দুর্বল হতে রক্ষা করে। সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের কর্মক্ষমতা অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয় এবং আমাদের কর্ম ক্ষমতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া সূর্যমুখী বীজ আমাদের হাড়কে সুস্থ এবং মজবুত রাখে। সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপারের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে থাকে।

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা

  • সূর্যমুখী তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম নামক একপ্রকার উপাদান যা মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
  • সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম নামক উপাদান যা আমাদের মানসিক চাপ দূর করে।
  • মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
  • আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • হাড়ের জোড়ার ব্যথা প্রতিরোধ করে।
  • গ্যাস্ট্রিক, আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালাপোড়া ইত্যাদি ভালো করে।
  • হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করতে এই তেল খুব বেশি উপকারী।
  • সূর্যমুখী ফুলে আছে লিনোলাইক এসিড যা ত্বকে মেলানিন উপাদান কমায়।
  • আমাদের ত্বকে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে ত্বক টান টান রাখতে সহায়তা করে।
  • ত্বকের যাবতীয় সমস্যা যেমন - ব্রণ, রেশ, ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড, বলিরেখা যাবতীয় প্রবণতা কমাতে সহায়তা করে।
  • সূর্যমুখী তেলের রয়েছে লিনোলাইক নামক অ্যাসিড যা খুব অল্প সময়ে ত্বকের গভীর ক্ষত থাকলে তা সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
  • যাদের ত্বক স্পর্শকাতর এবং কোন কিছু ব্যবহার করতে পারেন না তারা নির্ভয়ে এই তেল লাগাতে পারেন।
  • সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের দেহের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
  • সূর্যমুখী তেল আমাদের ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি ভায়োলেট রোশ্মি থেকে রক্ষা করে।
  • সূর্যমুখী তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি যা আমাদের শরীরকে দুর্বলতা হতে রক্ষা করে।
  • সূর্যমুখী তেল মানবদেহের হাড় সুস্থ রাখে এবং মজবুত করে।
  • এছাড়া এই তেলের রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার যা মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
  • সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ওমেগা ৯ এবং ও মেগা ৬ আর এতে রয়েছে অলিক এসিড।
  • সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং মিনারেল।
  • ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি রোগীদের জন্য সূর্যমুখী তেল উপকারী এবং নিরাপদ।
  • সূর্যমুখী তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট।

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেলের আশ্চর্যজনক পাঁচ ৫ টি উপকারিতা

সূর্যমুখী তেল শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় তা নয়, সূর্যমুখী তেল আপনার ত্বকের কাজে ও বেশ উপকারী কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বকের বলি রেখা দূর করে এবং ত্বক রাখে টানটান। সূর্যমুখী তেলে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা আমাদের সৌন্দর্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যার কারণে আমাদের ত্বকে আসে নিখুঁত আভা। ত্বকের যত্নে ভারতের একটি ওয়েবসাইট "বোর্ড স্কাই""- এর একটি প্রতিবেদনে ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেলের যে পাঁচটি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আমি আজকে আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে সেগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ব্রণের সমস্যা দূর করে

ব্রণের সমস্যা আমাদের  ত্বকের একটি খুব সাধারণ সমস্যা বিশেষ করে বয়সন্ধিকালে এই ব্রণের সমস্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর সূর্যমুখী তেলের রয়েছে নন কমোডোজেনিক প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী এবং এই নন-কোমোডোজনিক উপাদান আমাদের ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই সরবরাহ করে থাকে যার কারণে আমাদের মুখে ব্রণ উঠতে পারে না। এছাড়া ও এটি ত্বককে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে যা আমাদের ত্বকে ব্রণের জন্য দায়ী। এছাড়াও সূর্যমুখী তেলে এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্রণ প্রতিরোধ করে থাকে।

বয়সের ছাপ দূর করে

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট নামক উপাদান যা আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে থাকে এবং আমাদের ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে দেয় না। এছাড়াও এই তেলের রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বকের যত্নে খুব বেশি কার্যকর। সূর্যমুখী তেল আমাদের ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় যার কারণে আমাদের ত্বক থাকে নরম কমল এবং তারুণ্যময়।

ত্বক মশ্চারাইজ করার জন্য

সূর্যমুখী তেল আমাদের ত্বকের আদ্রতা বাড়ায় এবং ত্বক শুষ্ক হতে দেয় না। এক গবেষণায় দেখা যায় যে, সূর্যমুখী তেলে ত্বকের আদ্রতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে কারন এই তেলের রয়েছে লিনোলিক এসিডের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বকে অপরিহার্যভাবে মশ্চারাইজ করে থাকে।

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নি থেকে রক্ষা করে

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিম উপাদান যা আমাদের ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্নি থেকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা ত্বক সুস্থ ও মসৃণ রাখে এবং ত্বককে করে রাখে টান টান। এছাড়াও সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং লিনোলিক এসিড যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে।

সাধারণ ত্বকের যত্ন

সূর্যমুখী তেল সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী হলেও সাধারণ ত্বকের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকারী কারণ সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং ফ্যাটি এসিড যা ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন এ, ই, সি, ডি এবং কপার, জিংক এবং আয়রনের মত উপকারী খনিজ পদার্থ যা আমাদের ত্বককে মশ্চারাইজ করে এবং ত্বক রাখে নরম ও কোমল।

সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিমান

 সূর্যমুখী বীজ পুষ্টিতে ভরপুর একটি বীজ। আর প্রতি ১00 গ্রাম বীজে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা আমাদের জানা দরকার। যেমন -

ক্যালোরি রয়েছে ৫৮৫ গ্রাম।

লিপিড ৮.৫ গ্রাম প্রধানত পলিঅনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড lipid।

প্রোটিন ২০.৭৭ গ্রাম।

চর্বি ৫১.৫ গ্রাম।

আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং জিংক এর মত উপাদান রয়েছে।

বিভিন্ন ভিটামিন যেমন - রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন, প্যান্টিথেণিক এসিড, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং কোলিন রয়েছে।

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেলোনিক অ্যাসিড।

সূর্যমুখী তেলের অপকারিতা

সূর্যমুখী তেলের অনেক উপকারী গুণ রয়েছে কিন্তু এর পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে যেমন - আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য তেল হিসাবে সূর্য মুখী তেল খান তাহলে আপনার শরীরে যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলো হল -

আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা  খাওয়ার  উপকারিতা - কলা খাওয়ার  নিয়ম  জেনে নিন

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফসফরাস উপাদান যা কিডনির কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করতে পারে এবং এটি মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ গুলির কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করতে পারে।

সূর্যমুখী বীজগুলো স্বাস্থ্যকর অনেক উপাদান রয়েছে এবং এটি সুস্বাদু তাই আপনি এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে ফেলতে পারেন যদিও এটি উপকারী কিন্তু অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক দিক রয়েছে।

অতিরিক্ত সূর্যমুখী তেল খেলে আপনার বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া সহ গ্যাস্ট্রোইনস্টাইল ব্যথাও হতে পারে।

সূর্যমুখী তেল একটি মানুষ সারা দিনে খুব বেশি হলে আধা গ্লাস বা হাফ গ্লাস খেতে পারেন যাতে আপনার শরীরের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু আপনি যদি অতিমাত্রায় খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপকারের চেয়ে অপকারিতা হতে পারে যেমন আপনার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।

অতিরিক্ত সূর্যমুখীর বীজ খেলে ফুসকুড়ি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যাওয়া এবং ঠোঁট জ্বলার মতো ক্ষতিকর প্রভাব অনুভূত হতে পারে।

সূর্যমুখীর অঙ্কুরিত বীজ খেলে অণুজীব দূষণ হতে পারে।

সূর্যমুখী বীজে রয়েছে ক্যাডমিয়াম নামক উপাদান যাতে আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

সূর্যমুখী তেল ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বর্তমানে ভজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন আর সরিষার তুলনায় বাংলাদেশের সয়াবিনসহ বিভিন্ন জাতের তেল জাতীয় ফসল থেকে যোগান হয় মানব চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ। আর বেশির ভাগ তেল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সরকারকে ভোজ্য তেল আমদানি করতে ব্যয় করতে হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আর এই কারণে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশে উৎপাদিত সরিষা ও তিলের 

পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গড়ে তোলার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার অনেকটাই সফলতার মুখ দেখছে। প্রতি বছরের দেশব্যাপী সূর্যমুখী ফুলের আবাদ গত মৌসুমে দেশে প্রায় ২৭২৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন হয়েছে ৫৭২৫ টন এবং এক বছরের ব্যবধানে ২০২০ ২১ মেয়াদে পাঁচ হাজার ৫০১ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৬২৮ টন উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া ও ২০২১ - ২২ মৌসুমে উৎপাদিত হয়ে হয়েছে ৯১৩৬ সেক্টর জমিতে ১৫ লাখ ৯৬১ টন সূর্যমুখী।

আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  -  আমলকির ব্যবহার  জেনে নিন

১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশে অল্প পরিমাণে সূর্য মুখী বীজ আবাদ হলেও বর্তমানে এখন রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর সহ বৃহত্তর নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমেও এই আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের রয়েছে অসংখ্য চরাঞ্চল এবং হাওর এবং এই জমিতে সূর্যমুখী উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা যেতে পারে এবং সূর্যমুখী বীজের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে বাজারেও এর দাম বেশ ভালো। তাই কৃষকেরা ও এই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন ।

সূর্যমুখী বীজে কি এলার্জি আছে?

সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার পূর্বে আপনাদের অনেকের মাথায় আসে এই বীজ এবং তেলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা এবং সেই সাথে এতে এলার্জি সম্ভাবনা রয়েছে কিনা! আর আপনারা যারা জানতে চান সূর্যমুখী বীজে কি অ্যালার্জি আছে! আমি তাদের জন্য বলছি, সূর্যমুখী বীজে কোন এলার্জি নেই। মনে রাখবেন, চিনা বাদাম, কাঠবাদাম এবং সূর্যমুখী বীজে রয়েছে গাম টোকোফেরল যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই সূর্যমুখী বীজে কোন এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সূর্যমুখী বীজ খেলে কি হয়?

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম নামক একপ্রকার উপাদান যা মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম নামক উপাদান যা আমাদের মানসিক চাপ দূর করে।

মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে।

হাড়ের জোড়ার ব্যথা প্রতিরোধ করে।

গ্যাস্ট্রিক, আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালাপোড়া ইত্যাদি ভালো করে।

হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করতে এই তেল খুব বেশি উপকারী।

সূর্যমুখী ফুলে আছে লিনোলাইক এসিড যা ত্বকে মেলানিন উপাদান কমায়।

আমাদের ত্বকে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে।

ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে ত্বক টান টান রাখতে সহায়তা করে।

ত্বকের যাবতীয় সমস্যা যেমন - ব্রণ, রেশ, ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড, বলিরেখা যাবতীয় প্রবণতা কমাতে সহায়তা করে।

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে লিনোলাইক নামক অ্যাসিড যা খুব অল্প সময়ে ত্বকের গভীর ক্ষত থাকলে তা সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

যাদের ত্বক স্পর্শকাতর এবং কোন কিছু ব্যবহার করতে পারেন না তারা নির্ভয়ে এই তেল লাগাতে পারেন।

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের দেহের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

সূর্যমুখী তেল আমাদের ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি ভায়োলেট রোশ্মি থেকে রক্ষা করে।

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি যা আমাদের শরীরকে দুর্বলতা হতে রক্ষা করে।

সূর্যমুখী তেল মানবদেহের হাড় সুস্থ রাখে এবং মজবুত করে।

এছাড়া এই তেলের রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপার যা মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

সূর্যমুখী তেলের রয়েছে ওমেগা ৯ এবং ও মেগা ৬ আর এতে রয়েছে অলিক এসিড।

সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং মিনারেল।

ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি রোগীদের জন্য সূর্যমুখী তেল উপকারী এবং নিরাপদ।

সূর্যমুখী তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমি আজকে আমার আর্টিকেল এর মাধ্যমে সূর্যমুখী তেল এবং বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আপনারা যদি আমার এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই  সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তাই আপনি আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সূর্যমুখী তেল এবং বীজ অনায়াসে খেতে পারেন। আর নিত্য নতুন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url