ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪ সম্পর্কে জেনে নিন

আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করি তাদের অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪  সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪  সম্পর্কে যদি আমাদের সঠিক জ্ঞান না থাকে তাহলে আমরা এর বাস্তবতা বুঝতে পারব না এবং এই দিনটি সঠিকভাবে পালন করতে পারবো না। তাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪  সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

Image

২০২১ সালের পয়লা ১লা জুলাই থেকে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়ন করেছেন বাংলাদেশের অসংখ্য জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি এবং তারা ও যুগে যুগে পালন করে এসেছেন এই পয়লা ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। নিচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪  সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস 

প্রতিবছর পয়লা ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ২০২১ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে এই দিবস পালন করা হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় আর এর পর থেকে পূর্ব বাংলার সচেতন জনগণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানাতে থাকে। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। ২৭ এ মে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, ব্যারিস্টার আর নাথের নেতৃত্বে নবাব সিরাজুল ইসলামসহ ঢাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন।

১৯১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এবং নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্টে তা প্রকাশিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত হয় ফ্যাডলার কমিশন এবং এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক প্রস্তাব দেয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের ১৩ই মার্চ ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট ভারতীয় আইন সভায় পাস হয়।১৯১৭ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লর্ড রোলান্ডসে বাংলার গভর্নর ছিলেন এবং সেই পর্যন্ত সৈয়দ শামসুল হুদাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আরো পড়ুনঃ হলি ক্রস স্কুল এন্ড কলেজ - সম্পর্কে  জেনে নিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির শুরুতে নানা সমস্যার মুখে পড়ে কারণ ১৯১৪ সালে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় যার কারণে বাংলার মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।১৯১৭ সালের মার্চ মাসে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্রাজিক বিধান পরিষদের নবাব আলী চৌধুরী আহ্বান জানান আর এ আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর জেনারেল এই বিল পাসে সম্মতি জানান। আর এই আইনটি করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯২১ সালের পয়লা ১লা জুলাই এই আইনের বাস্তবায়ন করা হয়। 

এবং এর ফল স্বরূপ ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে। রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থ থেকে জানা যায় নাথান কমিটি ৪৫০ একর জায়গার উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং সে সময়ে সবচেয়ে সৌন্দর্য মন্ডিত রমনা এলাকায় ৬০০ একর জমির উপর এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিতক্ত ভাবনাদি এবং ঢাকা কলেজের ভবন সমূহের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে এক মনোরম পরিবেশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা কালে ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী ছিল তার মধ্যে ৮৭৬ জন শিক্ষার্থী ছিল পুরুষ শিক্ষার্থী এবং মাত্র এক ১ জন ছিল নারী শিক্ষার্থী। নারী শিক্ষার্থীর নাম হল লীলা নাগ। তিনি ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একজন সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। আর ১৯২১ সালের পয়লা জুলাই থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

আগামী সোমবার পয়লা ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২০২৪ পালন করা হবে। বিভিন্ন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সারা দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং প্রতিবছরই বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো - "তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা"।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি সাহিত্য শাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য তৎকালীন গভর্নর একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় আর এই বঙ্গভঙ্গ রদ করার পর থেকে পূর্ব বাংলার সচেতন নাগরিকগন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার দাবি জানাতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৭ উনিশ সতের সালের মার্চ মাসের সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী সাম্রাজিক বিধান পরিষদের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল পেশ করার জন্য আহবান করেন।

এই আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২০ সালে ২৩ মার্চ সম্মতি জ্ঞাপন করেন আর এই বিলটি বা আইনটি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন। এরপর ১৯২১ সালের পহেলা ১লা জুলাই তাদের যাত্রা শুরু করে। ১৯২১ সালে এটি স্থাপিত হয় তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করে। আর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত হয় মেধাবী বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা যার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন - রচনা  সম্পর্কে জেনে নিন

যাত্রাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৮৭৭ জন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ৮৭৬ জন শিক্ষার্থী ছিল ছেলে আর এক ১ জন শিক্ষার্থী ছিল নারী শিক্ষার্থী। এই একমাত্র নারী শিক্ষার্থীর নাম হল লীলা নাগ। তিনি ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাশ করেন। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একজন সহকারী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু করে।

তিন ৩ টি অনুষদ এবং ১২ টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী ক্লাসে অধ্যায়নরত ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এই দুই কলেজ ছাত্রসহ শিক্ষক, লাইব্রেরী, বই এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে। তাদের এই সহযোগিতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি হলের নাম রাখা হয় জগন্নাথ হল ও ঢাকা হল যা বর্তমানে ডঃ শহীদুল্লাহ হল নামে পরিচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১৩অনুষদ, ১৩ ইনস্টিটিউট,৮৩ টি বিভাগ, ২০ টি  আবাসিক হল, তিন ৩ টি ছাত্রাবাস, ৫৬ টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, সাত ৭ টি স্নাতক পর্যায়ের অধিভুক্ত কলেজ সহ মোট ১০৫ টি অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে রয়েছে সরকারি কলেজ, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং নার্সিং কলেজ। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছেন এর মধ্যে রয়েছেন বাঙালির জাতির জন ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়াও ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, সাত ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। আর একজন শান্তিতে নোবেল বিজয় লাভ করেছেন তিনি হলেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক অবদান ছিল। এছাড়া ও এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যা এশিয়া মহাদেশের ১০০ শীর্ষ  বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়  জায়গা করে নিয়েছে।

শেষ কথা 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। ১৯২১ সালের পয়লা ১লা জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে যার কারণে প্রতিবছরই এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পেরেছি তারা নিজেকে গর্বিত বলে মনে করি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url