বিশ্ব দুগ্ধ দিবস - সম্পর্কে জেনে নিন

বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব কে তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়।প্রতিবছর পয়লা জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়ে থাকে। আর এই দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগিতা এবং কুইজ প্রতিযোগিতা। আর দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতেই মূলত  বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়।

Image

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য হল ডেইরি খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা এবং মানুষকে বোঝানো দুধের গুরুত্ব মানুষের জীবনে অসীম। আর এই কথাগুলো মাথায় রেখেই বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়।

 বিশ্ব দুগ্ধ দিবস 

২০০১ সাল থেকে পহেলা ১লা জুন প্রতিবছর বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠনগুলো বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আইএফও ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে এই দিন ঘোষণা করে। মূলত এই দিনটি উদযাপন করা হয় ডেইরি খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আর বিশ্বের প্রায় ৭0 টি দেশে এই দুগ্ধ দিবস উদযাপিত হয়। অথচ ২০১৬ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় ৪0 টি দেশে এই দুগ্ধ দিবস উদযাপিত হত আর বর্তমানে ২০১৮-১৯ সালের পর থেকে প্রায় ৭0 টি দেশে এই দুগ্ধ দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস এর ইতিহাস

খাদ্য ও কৃষি খাতের উদ্যোগে ২০০১ সালে এফএও FAO দ্বারা বিশ্ব দুগ্ধ দিব সর্বপ্রথম মনোনীত হয় এবং পয়লা ১লা জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। পৃথিবীর অনেক দেশ অবশ্য এই দিন অর্থাৎ জুন মাসের এক তারিখে দুগ্ধ দিবস উদযাপন করা শুরু করেছিল। এরপর ২০০১ সালে এফএও পয়লা জুন কে নির্বাচন করে দুগ্ধ দিবস হিসাবে কারণ এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবিকা দ্বারা সমর্থিত এবং পুরো বিশ্বব্যাপী ছয় বিলিয়নেরও বেশি লোক দুগ্ধ খায় বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খায়। আর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এই পহেলা জুনকে বিশ্বব্যাপী দুগ্ধ দিবস হিসেবে গুরুত্ব দেয় যার কারণে এফএও পয়লা জুনকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

দুধ কি

দুধ হল অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একপ্রকার সাদা তরল পদার্থ যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন্যগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয় এবং মানুষের জন্য একটি প্রধান খাদ্য। একটি স্তন্যপায়ী শিশু জন্মগ্রহণের পরে খাদ্য গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত দুধ হল পুষ্টির প্রধান উৎস। প্রাথমিক পর্যায়ে যখন স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ হয় তখন কোলোষ্ট্রাম সমৃদ্ধ শাল দুধ উৎপন্ন হয় আর এই দুধ মায়ের দেহ হতে রোগ প্রতিরোধের সকল ব্যবস্থা নিয়ে আসে যা শিশুর রোগাক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমায়। এই দুধে রয়েছে আমিষ ও ল্যাকটোজ সহ সকল পুষ্টি উপাদান। দুধ সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং মানুষ গ্রহণ করে থাকে।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা

সব বয়সের মানুষের জন্যই দুধ অত্যন্ত উপকারী খাবার তাই সব বয়সেই মানুষকে দুধ খেতে হবে। কারণ দুধ সব বয়সে মানুষের জন্যই উপকারী বিশেষ করে গর্ভবতী মা এবং যারা মাতৃদুগ্ধ দান করেন এমন প্রত্যেক নারীর প্রতিদিন অন্তত এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ দুধের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এছাড়াও রয়েছে উচ্চমাত্রার অনেক পুষ্টি উপাদান। পুষ্টি বিশেষজ্ঞগন দুধের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস হলো এই দুধ আর সব বয়সের মানুষের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি উপাদান। আমরা জানি, দুধ দিয়ে মানব জীবন শুরু হয়।

আরো পড়ুনঃ ভালো বাসা দিবস কত তারিখ / ভালোবাসা দিবস কিভাবে আসলো জেনে নিন

যেসব শিশু জন্মের পর থেকে সঠিকভাবে মায়ের বুকের দুধ খেতে পায় না অধিকাংশ সময় তারা কোয়াশিয়রকর, ম্যারাসমাস নামক অপুষ্টিজনিত অসুখে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবারের অভাবে যে কোন বয়সের ব্যক্তিরা অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের ভঙ্গুরতা এবং হাড়ে দুর্বলতা জনিত বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়। ২০১৬ সালের food and nution রিসার্চ এর তথ্য মতে, একটি স্বাভাবিক খাদ্য তালিকায় দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাদ্য যোগ করা হলে এর গুণগত মান এত বৃদ্ধি পায় যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর পেশি শক্তির হ্রাস প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। 

এছাড়াও বয়স্ক লোকদের দই ও পনির জাতীয় খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে সারকোপেনিয়ার ঝুঁকি কমানো যায় কারণ এ ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ দুগ্ধ জাতীয় খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রকোপ কমায় এবং কিডনির কার্যকারিতা ও বৃদ্ধি করে থাকে।

দুধ ও দুগ্ধজাত জাতীয় খাদ্য

মানব জাতিতে একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের। টেকসই পুষ্টির জন্য খামার থেকে টেবিল পর্যন্ত দুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাদ্য তালিকা নির্দেশনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার সুপারিশ করা হয়। দুগ্ধজাত জাতীয় খাদ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে - সেমাই, পুডিং, পায়েস, দুধ সুজি, দুধ ভাত, দুধ মুড়ি, পনির, ঘোল, দই ইত্যাদি। পনির ও দই আদর্শগতভাবে হেলদি অ্যাজিং প্রোডাক্ট হিসেবে কাজ করে যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক যুব দিবস - কবে পালিত হয় জেনে নিন

২০১৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী দুধ হল সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার প্রক্রিয়া এবং হেলদি অ্যাজিং হল কার্যকার ক্ষমতার বিকাশ যা মানুষকে বার্ধক্যে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে কারণ দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন যা মানবদেহের মূল পুষ্টি উপাদান এবং যা মানুষের পেশিভর ও গুণমান কে প্রভাবিত করে এবং মানুষকে বার্ধক্যে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও দুধ মানুষের পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে,

স্কেলেটাল মাসল মাস ও শরীর বৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। যার কারণে মানুষের সারকোপেনিয়ার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। যার কারনে দুধ এবং  দুগ্ধজাত জাতীয় খাবার সব বয়সী মানুষের জন্য হেলদি ফুড হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

দুধের পুষ্টি উপাদান

ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে ভালো উৎস হলো দুধ। আমরা জানি, ভিটামিন ডি হাঁড়, দাঁত, নখ, চুল ও ত্বকের পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া ও দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ফোলেট, বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ, ভিটামিন বি৬, বি১২, রিবোফ্লাভিন,জিংক, ক্যালরি ও ফ্যাট। এছাড়াও দুধের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ফোলেট যা আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে থাকে। আর এই সকল পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। 

পুষ্টিবিদরা বলেন, যারা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রোগী এবং যারা ওজন কমাতে চান তারা ফ্যাট ফ্রি দুধ খাবেন কারণ দুধের মধ্যে রয়েছে গ্লটাথিয়ন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানুষের মস্তিষ্ককে সেরোটোনিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে, খাবারের রুচি বাড়িয়ে দেয়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং নিদ্রাহীনতা দূর করে।

পৃথিবীর দুধ উৎপাদনকারী দেশ

এই পৃথিবীতে যত দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে তার মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ হলো গরুর দুধ। কারণ মানব দুধ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় না। আর ভারত হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং দুধ ও গুড়া দুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ও পরিচিত এবং এখানে সামান্য ননী ছাড়া দুধ পাওয়া যায়। তবে ইউরোপ থেকে রপ্তানি করা হয় মোট দুধের বানানো দশমিক পাঁচ ৫২.৫ শতাংশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড।

আরো পড়ুনঃ  বিশ্ব ইচ্ছা পূরণ দিবস - কেন পালন করা হয় জেনে নিন

এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম দুগ্ধ পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম। এছাড়াও রাশিয়া এবং চীন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ হিসেবে রয়েছে। এছাড়াও মানব দুগ্ধ ব্যাংক রয়েছে যা মায়েদের কাছ থেকে স্তন্য দুধ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন শিশুদের মাঝে তা বন্টন করে দেয়। আর এই দুধ দিয়ে বিভিন্ন সময় অপরিণত মানবজাতক, শিশুর এলার্জি, বিপাকীয় রোগ ইত্যাদি হয়। তবে যারা স্তন্যপান করাতে পারেনা তারা এই দুধে অনেক সময় উপকার পেয়ে থাকেন।

 দুধের উৎপাদন মাত্রা

বাংলাদেশের পানি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দুধের মূল উৎস হলো গরু। আর গরু থেকে শতকরা ৯০ ভাগ দুধ আসে, ছাগল থেকে আসে ৮ শতাংশ এবং মহিষ থেকে আসে দুই ২ শতাংশ। ১৯৮৯ - ৯০ সালে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ২.৪ শতাংশ। ২০০৯ - ১০ সালে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪১ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন টন এবং ২০১৯ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫২৪.৪১ মিলিয়ন টন অর্থাৎ বর্তমানে ১৮.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ - ২২ অর্থবছর পর্যন্ত দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ যা ২০০৯ -১০ অর্থবছরের চেয়ে ২৩.৭০ লাখ টন বেশি অর্থাৎ ২০২১ - ২২ অর্থবছরে দুধ উৎপাদিত হয়েছে ১৩0.৭৪ লাখ মেট্রিক টন।

২০২০ সালের ইউএসডি এ তথ্য মতে, বিশ্ব দুগ্ধ উৎপাদনে গরুর দুধের পরিমাণ ৮১ শতাংশ মহিষের দুধ ১৫ শতাংশ ছাগলের ভেড়া ও উটর দুধের পরিমাণ ৪ শতাংশ যা ২০১৯ সাল থেকে ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই বৃদ্ধির পরিমাণ হল ৮৫২ মিলিয়ন টন।

বাংলাদেশে দুধের উৎপাদন

বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে দুধ উৎপাদনের মূল উৎস হলো গরু। গরু থেকেই বাংলাদেশে শতকরা ৯০ ভাগ দুধ আসে এবং শতকরা আট ৮ ভাগ আসে ছাগল থেকে এবং দুই ২ ভাগ আসে মহিষ থেকে। ১৯৮৯ - ৯০ সালে দুধের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.৪ শতাংশ এবং ২০০৯-১০ সালে দুধের উৎপাদন ছিল ২৩.৭0 লক্ষ টন এবং ২০১৯ - ২০ সালে এই দুধের উৎপাদন বেড়েছে ১০৬.৮০ লক্ষ টন এবং বর্তমানে অর্থাৎ ২০২১ - ২২ অর্থবছরে দুধ উৎপাদিত হয়েছে ১৩0.৭৪ লাখ ম্যাট্রিক টন।

বাংলাদেশ গরু ছাগল উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ যার কারণে দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সূচকেও বেশ কয়েক বছর ধরে এর ধারাবাহিকতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের দেয়া খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ দুধ উৎপাদনে বেশ কয়েক বছর ধরে ২৩ তম অবস্থানে রয়েছে। তবে জানা যায় বিশ্বে যে দুধ উৎপন্ন হয় তার প্রায় চল্লিশ ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এশিয়া মহাদেশে।

একজন মানুষের দৈনিক দুধের চাহিদা

দুধ আমিষের একটি প্রধান উৎস। আর দুধ থেকে আমিষ আসে প্রায় ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০শতাংশ প্রত্যক্ষ ভাবেএবং শতকরা ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণি সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, একজন মানুষকে প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ পান করা উচিত। দুধের চাহিদা ২৫০ মিলিলিটার হলেও দুধ পাওয়া যায় ২০৮.৬১ মিলিলিটার। কিন্তু পানিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গত এক যুগ ধরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।

কারণ বাংলাদেশের ডেইরি ইন্ডাস্ট্রি এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প যা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য, পুষ্টি, নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনেও বিশেষ অবদান রাখছে।আর এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল শ্রম শক্তি। ক্রমবর্ধমান জিডিপিতে বাংলাদেশে বর্তমানে পানি সম্পদের অবদান ১.৯0 শতাংশ।

বাংলাদেশের বাজারে দুধের চাহিদা

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে তরল দুধের মাধ্যমে দুধের একটি বড় চাহিদা পূরণ করা হয় তবে সংশ্লিষ্টদের হিসাব মতে প্রায় ২০ হাজার কোটি মেট্রিক টন গুড়া দুধ প্রতিবছর আমদানি করা হয় যা মোট দুধের চাহিদার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পূরণ করে। এছাড়া ও বাজারে পাওয়া যায় আমদানি করা গুঁড়ো দুধ, প্রাস্তরিত দুধ, ফর্টিফাইড দুধ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় গুড়া দুধের ওপর নির্ভর করে ৬৮ শতাংশ পরিবার যা গত তিন বছরে ২১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ৩৬ শতাংশ গুড়া দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্য বেড়েছে বাজারজাতকরণের আনুষঙ্গিক খরচ যেমন জাহাজ ভাড়া, প্যাকেজিং খরচ ইত্যাদি খাতে। তবে দুধের চেয়ে আর ভালো খাবার নেই মেধাবী জাতি বিনির্মাণ এর ক্ষেত্রে তাই সরকার দুধ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দুধ উৎপাদনের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ   আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস - সম্পর্কে জানুন

আর এ লক্ষ্যে দুগ্ধ শিল্প উন্নয়নে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন এলডিডিপি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আর এই প্রকল্প বাংলাদেশের দুধ উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুধের বিপণণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ৪০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার ভি এন সি সি স্থাপন করা হচ্ছে।

আর এই এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সারাদেশে পাঁচ ৫ হাজার ৫0২ প্রসিডিওর প্রকল্প তৈরি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।

বিশ্ব দুগ্ধ দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয়

সাসটেইনেবল ডেইরি গুড ফর দ্যা planet, good for you, অর্থাৎ পরিবেশগত প্রভাব গুলো হ্রাস করার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্য ও জীবিকা সরবরাহের বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

২০২১ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল - পরিবেশ, পুষ্টি এবং আর্থসামাজিক বিষয়ের বার্তা সহ দুগ্ধ খাতে স্থায়িত্ব।

২০২২ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল - পরিবেশ, পুষ্টি ও অর্থসামাজিক ক্ষমতায়নে টেকসই ডেইরি সেক্টর।

২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল - দুগ্ধ উপভোগ করুন।

২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো -  টেকসই দুগ্ধ শিল্প; সুস্থ মানুষ, সবুজ পৃথিবী।

শেষ কথা

বিশ্বব্যাপী শুধু দুগ্ধ দিবস পালন করলেই হবে না দুগ্ধ খাতের পরিস্থিতি আরো গবেষণার প্রয়োজন বিশেষ করে পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার যেমন হেলদি ফাংশনাল ডেইরি ফুড সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কারণ এগুলো ভোক্তার হেলদি অ্যাজিং এর সহায়তা করে থাকে। দুধ হল উচ্চ মাত্রার প্রোটিন জাতীয় খাবার যাকে খাদ্যপ্রাণ বলা হয়। দুধ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণের মাধ্যমে বার্ধকের স্বাস্থ্য ও নিশ্চিত করে থাকে যার কারণে দুধের উৎপাদন মাত্রা বাড়ানো উচিত।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url