জীবনের কিছু বাস্তব কথা - সম্পর্কে জেনে নিন

আমাদের সবার জীবনেই অনেক বাস্তবতা থাকে যা অনেকের চোখে অশ্রু এনে দেয় আবার কাউকে বা আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দেয় কিন্তু বাস্তবতা থাকে। আমি তেমনি এক বাস্তব জীবনের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

Image

জীবনের কিছু বাস্তব কথা

আমার নাম আসমাউল হুসনা। আমার বাবা আমাকে আদর করে আসমান বলে ডাকতেন। বাড়িতে আমি দশ ভাই বোনের মধ্যে নয় নাম্বার বুঝতেই পারছেন! এতগুলো ভাইবোন তাহলে আদর থাকে কি করে! তারপরে আবার ভাইয়ের চেয়ে বোনের সংখ্যা বেশি। আবার আমার জন্ম হয়েছে শেষের দিকে যার কারণে অবহেলাও ছিল অনেক বেশি। আমার চাচা আমাকে আদর করে লিলি বলে ডাকতো। তারপর থেকেই আমার নাম হয়ে যায় আসমাউল হুসনা থেকে লিলি। সবাই যেন আসমা নামটা ভুলেই গেল।

আমার বাবা আমাকে অবশ্য আসমান বলে ডাকতেন। তবে আমাদের এক প্রতিবেশী চাচা ছিলেন যার নাম ছিল আসমান এবং সবাই আমাকে ছোটবেলায় চাচার নাম আসমান বলে আমাকেও আসমান বলে ডাকতো তাই ক্ষ্যাপাতো যার কারণে আমার বাবার মুখ থেকে এই নামটা আর শুনতে ভালো লাগতো না। তারপর হয়তো বাবাও একদিন বুঝতে পারে আমার মেয়ে এই নাম পছন্দ করছে না তখন যেন বাবা ও এই নামটা ভুলে গেল। বাবাও ডাকা শুরু করে দিল লিলি।

জানেন আমার বয়স যখন ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে তারপরেও আমার জন্য কোন নতুন পোশাক ছিল না। শুনেছি মা নাকি আমাকে পুরাতন কাপড়ের টুকরা দিয়ে জামা প্যান্ট বানিয়ে বড় করেছেন। যখন ছয় মাস পার হয়ে গেল তারপর প্রথম আমার জন্য একটি পোশাক কিনেছিল আমার মেজ ভাই যা শুনলে আমার দুই চোখ অশ্রুতে ভিজে যায়। কিন্তু কে বলতে পারে ভাগ্যের কথা বলুন, পরে কি হবে আগে থেকে তা কিছুই বলা যায় না আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হলো।

লিলি ফুল যেমন ঝিলে, বিলে, যেখানে সেখানে অনাদরে ফুটে থাকে কিন্তু তার স্থান সবার উপরে ঠিক আমার অবস্থাও তাই। দশ ভাই বোনের মধ্যে আমার অবস্থান সবার শেষে হলেও আমি হয়ে উঠেছি সবার সেরা। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব হাস্যোজ্জ্বল এবং চঞ্চল। সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ানো আর এ গাছ থেকে ও গাছের নিচে ফল কুড়ানো, দুপুর বেলা না ঘুমিয়ে বাগানে গিয়ে ফল পাড়া এই ছিল আমার নিত্যদিনের কাজ। তারপর আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম হয়ে উঠলাম সকলের নয়নের মনি।

ছোটবেলায় আমি আমার প্রাইমারি জীবন শেষ করেছি আমাদের গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে। তারপরে যখন ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই তখন থেকেই আমার ভাই শহরে চাকরি করতো সেই সুবাদে তিনি আমাকে তার বাসায় রাখতেন। এরপর থেকে আমার শুরু হয় শহরে জীবন। আর লেখাপড়ায় টান পড়ে। তবে লেখাপড়ায় ছাত্রী হিসেবে খুব খারাপ ছিলাম না! এসএসসিতে লেটার মার্কস নিয়ে ফাস্ট ডিভিশনে পাস করলাম তারপর শুরু হলো কলেজ জীবন। কলেজেও বেশ ভালই প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলাম।

২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেই এবং দুই বিষয়ে লেটার সহ ফার্স্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ হই। এরপর অনার্সে ভর্তি হই রাজশাহী কলেজে। এখানে এসে পরিচয় হয় আমার একজন উদার মানুষের সঙ্গে যে ছিল অনেক ব্যক্তিত্বপূর্ণ যার ব্যক্তিত্ব দেখে আমার ভালো লাগে। আর এই ভালোলাগা থেকেই শুরু হয় ভালোবাসা। আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবেসে বিয়ে করেছি তবে পরিবারের অমতে নয়, পরিবারের লোকজন আমাদের দুজনকেই পছন্দ করতো যার কারণে আমাদের কোন ঝামেলা হয়নি।

দুই পরিবারের লোকজন মিলে মহা ধুম ধাম করে আমাদের বিয়ে দেয় এরপর থেকে আমরা আল্লাহর রহমতে অনেক সুখে আছি। এখন আমাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে যে রাজশাহীর একটি স্বনামধন্য স্কুলে পড়াশোনা করে ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি। খুব আশা তাকে নিয়ে আমার সে যেন জ্ঞানে গুনে অনেক বড় হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা ওকে মানুষের মতো মানুষ করুন এবং গরিব অসহায় মানুষকে সেবা করার সুযোগ দান করুন। আমীন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url