ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

ব্যায়াম এবং ব্যামো কখনো একসাথে থাকতে পারে না। কথায় আছে সুস্থ দেহ সুস্থ মন এর নামই স্বাস্থ্য। তাই আপনাকে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। আর নিয়মিত ব্যায়াম করতে আপনাকে অবশ্যই ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। আর ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সঠিকভাবে জানতে আমার আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

Image


নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম করলে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। তাই ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা 

ব্যায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে ব্যায়াম কাকে বলে? ব্যায়াম সম্পর্কে আপনাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তাহলে আপনি একটি সুস্থ জীবন লাভ করতে পারবেন।

ব্যায়াম কাকে বলে

ব্যায়াম হলো শারীরিক কসরত  যাকে ইংরেজিতে এক্সারসাইজ (Exercise)  বলে অভিহিত করা হয়। ব্যায়াম হলো একটি বিশেষ ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে এবং তা এর পাশাপাশি মানুষের শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে একজন মানুষ তার দেহকে সঠিকভাবে গঠন করতে পারে।

আবার ব্যায়াম তাকে বলা হয় যার মাধ্যমে শরীরের মাংস পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌন আবেদন বৃদ্ধি, মানসিক সুস্থতা সহ সকল প্রকার উপকার সাধিত হয়।আবার ব্যায়াম তাকে বলা হয় যার মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশি কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, যৌন আবেদন বৃদ্ধি, মানসিক সুস্থতা সহ সকল প্রকার উপকার সাধিত হয়।

ব্যায়ামের প্রকারভেদ

ব্যায়াম সাধারণত দুই ২ প্রকার। যথা -

  • সরঞ্জামসহ ব্যায়াম এবং 

  • সরঞ্জামবিহীন ব্যায়াম

মানব শরীরের উপর প্রভাবের ভিত্তিতে ব্যায়াম তিন ৩ প্রকার। যথা - 

  • অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম

  • অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম

  • ফ্রেস্কিবিলিটি/স্ট্রেচিং বা নমনীয় ব্যায়াম/পেশীটান ব্যায়াম

অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম

অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম কে আবার কার্ডিওভাস কলার ব্যায়াম কার্ডিও এক্সারসাইজ ও বলা হয়। এই ব্যায়াম দীর্ঘ সময় ধরে করা হয়। আর যে ব্যায়াম দীর্ঘ সময় ধরে করা হয় তাকে অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম বলা হয়। অর্থাৎ যে ব্যায়াম করতে অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন হয় তাকে বলা হয় অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম। আবার একে কার্ডিওভাস কুলার এক্সারসাইজ ও বলা হয়।

কার্ডিওভাস কুলার এক্সারসাইজ বা ব্যয়াম আপনার হার্টের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে আপনার শরীরের কর্ম ক্ষমতা বেড়ে যায়। যে ব্যায়ামগুলো হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুস সহ সবগুলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় সেগুলো হল - হাইকিং, জ্যাম্প,  সাইক্লিং,রোয়িং, স্টেয়ার ক্লাইম্বিং,  মাউন্টেন ক্লাইম্বিং, বারপিস, ইলিপিটক্যাল, ফুটবল, টেনিস ইত্যাদি।

অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম

যে ব্যায়ামে অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন হয় না অর্থাৎ যে ব্যায়াম শরীরের অক্সিজেনের ব্যবহার করে তার প্রয়োজনে শক্তি উৎপাদন করে না তাকে অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম বলা হয়। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশী শক্তিশালী হয় বলে এই ব্যায়াম খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের শক্তি বাড়বে, 

আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্ত বা অক্সিজেনের সঞ্চালন বাড়বে যার ফলে আপনার শরীরে আঘাতের প্রবণতা কমবে।আবার এই ব্যায়াম শরীরে মাংসপেশির প্রসারণ ঘটে থাকে।অ্যানেরোবিক  ব্যায়াম বা অবাত  ব্যায়ামগুলো হল - পুশআপ, ভারোত্তোলন, প্লাঙ্ক, স্কোয়াড, পুল আপ, বাইসেপ কার্ল  ইত্যাদি।

ফ্রেস্কিবিলিটি/স্ট্রেচিং বা নমনীয় ব্যায়াম/পেশীটান ব্যায়াম

যে বেমের মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশের প্রসারন ঘটে এবং অঙ্গ সঞ্চালনের প্রবণতা বেড়ে যায় তাকে নমনীয়তা ব্যায়াম বলা হয় এই ব্যায়ামের ফলে শরীরের আঘাত বা আঘাতের প্রবণতা কমে যায় এই নমনীয়তা ব্যাংকে আবার পেশী টানবেম বলা হয় এই ব্যায়ামগুলো হল যোগব্যায়াম তার স্ট্রেসিং আর এই গেমের মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে পারবেন

শারীরিক গঠনের উপাদান

যেসব উপাদানের সমন্বয়ে শারীরিক গঠন সম্পন্ন হয় তাকে শারীরিক গঠনের উপাদান বলা হয়। এই শারীরিক গঠনের উপাদান প্রধানত  পাঁচ ৫ টি। যথা - 

  • পেশী শক্তি 

  • পেশী বহুল সহনশীলতা 

  • শরীরের গঠন 

  • নমনীয়তা 

  • কার্ডিওভাস্কুলার বা কার্ডিও রেস্পিরেটরি সহনশীলতা

ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা 

ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত যাকে ইংরেজিতে এক্সারসাইজ(Exercise) বলা হয়। ব্যায়াম যা শারীরিক কিছু ক্রিয়াকর্ম কি নির্দেশ করে আমাদের শারীরিক বা মানসিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে, রক্ত সঞ্চালন, রক্ত সংবহনতান্ত্রিক ক্রিয়াকর্ম বাড়াতে এবং তা স্বাভাবিক রাখতে মানব পেশীর কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। আর এজন্যই বলা হয় ব্যায়াম করো, সুস্থ থাকো। 

কথায় বলে, ফেলে রাখলে মরচে পড়ে। আবার বলা হয় লোহা ফেলে রেখোনা মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে, লোহাতে শান দাও। মানুষের শরীরও ঠিক তাই, যদি ব্যায়াম না করে অলস ভাবে বসে থাকা যায় তাহলে মানুষ দিন দিন বিভিন্ন রোগের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। তাই ব্যায়াম করার কোন বিকল্প নেই। শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্থূলতা এখন একটি পুরো বিশ্বব্যাপী সমস্যা।


আর ব্যায়াম করলে স্থূলতা রোধ করা যায়। ডাক্তার মোহাম্মদ  কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ১৭ ভাগ লোকের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হয় নিয়মিত এবং পরিমিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে। শতকরা বারো ১২ ভাগ লোক বৃদ্ধ বয়সে পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকে এবং শতকরা ১০ ভাগ অন্ত্রের ক্যান্সার এবং মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীরা আবার শারীরিক ব্যায়াম কে "আশ্চর্যজনক" এবং "অলৌকিক" বলেও অভিহিত করেছেন। অতএব নিজেকে সুস্থ ও ভালো রাখতে ব্যায়ামের উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো। -

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সুস্থতা আল্লাহর একটি বড় নেয়ামত। আর মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো রোগ। পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কোন রোগ নেই। কিন্তু এর পরেও মানুষকে চেষ্টা করতে হয় রোগ মুক্ত থাকার জন্য। আর ব্যায়াম হল ভাল থাকার একমাত্র হাতিয়ার। নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাবে এবং রক্তচাপ জনিত সকল সমস্যার সমাধান করবে।


মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক চর্বি জাতীয় পদার্থ  ট্রাইগ্লাইসের ইড ও ডেনসিটি লাইপো প্রোটি্ন নামক পদার্থ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। ব্যায়াম করার ফলে আপনার শরীরে তৈরি হবে আপনার শরীরের জন্য উপকারী হাইড্রেন সিটি লাইপো প্রোটিন নামক কোলেস্টেরলের মাত্রা যা আপনার রক্তনালিতে অবাঞ্ছিত চর্বি, জমাটবদ্ধতা জনিত সমস্যা থাকে (যাকে এথেরোমা মজা বলা হয়) প্রতিরোধ করতে পারবেন।

ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, অন্ত্রের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, অস্টিওপরোসিস নামক জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। ব্যায়াম আপনার চেহারার বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে। তাই নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।

বিষন্নতা কমায়

প্রতিদিন নানা কাজে মানুষের মনে বিষন্নতা সৃষ্টি হয়। আর ব্যায়াম দূর করতে পারে আপনার মনের এই বিষন্নতাকে তাই আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে অথবা বিকালে ৩০ মিনিটে জোরে জোরে হাঁটতে পারেন এছাড়াও যদি সম্ভব হয় তাহলে বেমাগারে গিয়ে আপনি কিছু সময় ব্যায়াম করতে পারেন। আর একমাত্র ব্যায়ামই পারে শরীরের যাবতীয় রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে। আর ব্যায়াম আপনার মস্তিষ্ককে করবে উদ্দীপ্ত এবং বাড়িয়ে দেবে আপনার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস। তাই নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম করুন তাহলে আপনার মনের বিষন্নতা দূর হয়ে যাবে।

যৌন জীবনের জন্য উপকারী

ব্যায়াম আপনাকে হারানো যৌবন শক্তি ফিরিয়ে দিতে সহায়তা করবে । দাম্পত্য জীবনের যৌন সুখ আপনার পরিবারের উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। তাই যাদের যৌন জীবনে সমস্যা আছে বিশেষ করে মোটাসোটা বা আলু থালু শরীর নিয়ে অপরের সান্নিধ্যে  আসার ব্যাপারে চিন্তিত তাদের জন্য ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমে যাবে যার ফলে আপনি হয়ে উঠবেন  সুঠাম দেহের অধিকারী যা আপনার যৌবন যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গবেষণায় দেখা গেছে নারী হোক বা পুরুষ যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের যৌন উত্তেজনার সাড়া প্রদান বহুগুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া ও ব্যায়াম পুরুষদের যৌন উত্তেজনার সময় পুরুষাঙ্গের ঋজু না হওয়ার নানা সমস্যা (ইরেক টাইল ডিফাংশন) দূর করতে সহায়তা করে। কাজেই যৌবন ঠিক রাখতে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

মানুষের এটি বড় সমস্যা হলো অধিক ওজন বা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা। প্রতিটি মানুষেরই লম্বা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ওজন থাকা প্রয়োজন। আর এই ওজন যদি কম বা বেশি হয় তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আপনার শরীরের বাড়তি ওজন বা মেদ ভুঁড়ি কমাতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। তবে আপনি ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতে পারেন এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবেন। 

এতে আপনার শরীরের ওজন কমবে ।এছাড়াও আপনি কিছু কাজ করতে পারেন আর তা হলো আপনি যখন উপরে উঠবেন তখন লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন এতে উপকার পাবেন।আবার ক্রায়িক পরিশ্রমও বাড়িয়ে দিতে পারেন। দুপুরে খাবারের পর ঘুমানোর পরিবর্তে একটু হাঁটতে পারেন এতে আপনার ওজন হ্রাস পাবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শরীরে পানির চাহিদা বাড়বে আর এতে আপনার খাবার চাহিদা কমে যাবে।

এতে করে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এভাবে আমরা যত পরিশ্রম করব বা ব্যায়াম করবো ততই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মনে রাখবেন অলসতা আপনার ওজন বাড়াবে। তাই অলসতা না করে ব্যায়াম করুন।ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

শরীর শক্তিশালী করে

সেই ব্যক্তি বেশি শক্তিশালী যার শরীরের মাংসপেশির গাঁথুনি বেশি ভালো। ব্যায়াম আপনার শরীরের প্রতিটি মাংসপেশিকে আলাদা আলাদা ভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে। তাই আপনি ব্যায়াম হিসাবে আপনার ঘরের যাবতীয় টুকিটাকি কাজ করতে পারেন। অপরের ওপর নির্ভর না করে প্রতিদিনের গৃহস্থালির কেনাকাটা ও নিজে করতে পারেন এতে অনেক উপকার পাবেন।

দৈনিক পরিমিত ব্যায়াম আপনার শরীরের কোষ ও কলায় স্বাভাবিকের চেয়ে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। আপনার হৃদপিণ্ড সহ সকল প্রকার কোষ কলা হবে অধিক শক্তিশালী। তাই ব্যায়াম আপনার কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি যেভাবে আপনার শরীরকে শক্তিশালী করতে চান ঠিক সেই ভাবেই করতে পারবেন।

অবসরে বিনোদন

ছুটির দিনে অবসর সময়ে অবহেলা করে সময় নষ্ট না করে আপনি ব্যায়াম করতে পারেন। আর ব্যায়াম মানেই যে কোন বেমাগারে গিয়ে আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে বা আপনাকে জোরে জোরে ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে তার কোন মানে নেই। আপনি ছুটির দিনে অবসরে বিনোদন হিসেবে ভ্রমণ করতে পারেন।  গ্রামের কোন মেঠো পথে হাঁটতে পারেন, ফুটবল, ভলিবল, নদীতে সাঁতার দিতে পারেন (যদি সুযোগ থাকে) একটু দৌড়ঝাপ করতে পারেন।এছাড়াও কোন দুর্গম এলাকায় ঘুরতে পারেন যেখানে আপনি পায়ে হেঁটে চলবেন। তাই আর অবসরে অবহেলা নয়, ব্যায়াম হয়ে উঠুক আপনার নিত্য দিনের সঙ্গী।

ঘুমের সমস্যা দূর করে

ঘুমের সমস্যা দূর করতে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন আপনি যখন ক্লান্ত থাকেন তখন আপনার গভীর ঘুম হয় এবং  আপনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই আপনার ঘুমের সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বড় ওষুধ হল ঘুম।  আপনার ঘুমের সমস্যা দূর করতে আপনি যদি সকালে সময় না পান তাহলে অবশ্যই আপনি বিকেলে ব্যায়াম করবেন।

ঘুম হলো সকল রোগের মহা ঔষধ। কথাই বলে আপনি এক কোটি টাকার সম্পদ কিনতে পারবেন কিন্তু নিশ্চিন্ত ঘুম কিনতে পারবেন না। তাই সঠিকভাবে ঘুমানোর জন্য ব্যায়াম করা অপরিহার্য।

কর্মশক্তি বাড়ায় 

স্বাস্থ্য হলো সকল সুখের মূল। আপনি যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকেন তাহলে আপনি আস্তে আস্তে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলবেন। তাই কর্মশক্তি বাড়াতে পারে কেবল মাত্র ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে। আর এতে আপনি কর্মশক্তি ফিরে পাবেন।

শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়

আপনার শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই ব্যায়াম করতে হবে। মনে করুন আপনি একটি কাগজে এক ভাবে ভাঁজ করে দীর্ঘদিন রেখে দিয়েছেন, তাহলে আপনার সেই কাগজে ভাঁজের জায়গায় কঠিনভাবে দাগ পড়ে যাবে এবং এক সময় তার ছিঁড়ে যাবে। মানুষের শরীরও ঠিক একই রকম। আপনি যদি সঠিকভাবে আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গের ব্যায়াম না করেন তাহলে আস্তে আস্তে আপনার শরীর ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আপনি কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলবেন। তাই একমাত্র  ব্যায়ামই পারে আপনার শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে।

সহনশক্তি বা ধৈর্য ক্ষমতা বাড়ায়

ব্যায়াম আপনার মানসিক শক্তি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন তখন শারীরিক শক্তির পাশাপাশি আপনার মানসিক শক্তিও বেড়ে যায়। মনে করুন, একটি ব্যায়াম আপনাকে ৫ বার বা দশবার ১০ করতে হবে, আপনিও ঠিক তাই করেন। এর কারণ হলো আপনার মানসিক  শক্তি আপনার শারীরিক শক্তিকে জাগ্রত করে। আর মানসিক শক্তি থাকে বলেই আপনি যেকোনো কঠিন কাজ এক নিমিষে করে ফেলতে পারেন। তাই ব্যায়াম আপনার স্মরণশক্তি ও ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকার

ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ডায়াবেটিস হলো সকল রোগের মা। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবারের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা প্রতিদিন সকাল - সন্ধ্যায় নিয়ম করে ২0 থেকে ৩0 মিনিট হাঁটতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে।আপনি স্বল্প দুরুতে কোথাও গেলে কোন যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে যেতে পারেন এতেও আপনার ব্যায়াম হয়ে যাবে। 

আপনি যদি নিয়মিত হাটেন তাহলে আপনার বাড়তি ওজন থাকবে না এবং রক্তের শর্করার মাত্রা ও বাড়বেনা। তাহলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ও থাকবে না। আর যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি নিয়মিত হাঁটেন তাহলে আপনার শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাবে। যার ফলে আপনার আর  বাড়তি ইনসুলিনের প্রয়োজন হবে না।

অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়

শরীরে অক্সিজেন বাড়াতে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে আপনি যে কোন ব্যায়ামি করতে পারেন।

স্টোকের ঝুঁকি কমায় 

অলস জীবন যাপন করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।আর ব্যায়াম করলে অলসতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের মেদ কমানো যায় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও থাকেনা।

হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে

নিয়মিত ব্যায়াম করলে যন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে যার ফলে ধমনীর ওপর চাপও কম পড়ে । যার ফলশ্রুতিতে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা ও কমে যায়।নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তের মন্দ কোলেস্টেরল বা ডোর লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন কমে যায়। আর রক্তে মন্দ কোলেস্টেরল না থাকলে হার্ট একটাকের ঝুকিও থাকে না।

হাড় শক্তিশালী করে

হাড়কে শক্তিশালী করতে ও হাড়ের গঠন বৃদ্ধি করতে ব্যায়াম যথেষ্ট ভূমিকা রাখে নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাড়ের গঠন শক্তিশালী হয় পেশী মজবুত হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

হাড়ের ক্ষয় রোধ করে

বয়স্ক পুরুষ এবং পোস্টম্যান  পেজাল নারী যাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে তাদের একটি সাধারণ রোগ হল হাড় ক্ষয় এছাড়া তিরিশ বছর পর বলে প্রত্যেকটি মানুষের হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যায় এবং হাড় ক্ষয় হয় । ব্যায়াম এখানে দেখতেছি তিন প্রকার যার ফলে পড়ে গেলে সহজেই শরীরের হাড় ভেঙে যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায।গবেষণায় দেখা গেছে ঋতু পরবর্তীকালীন যেসব নারী নিয়মিত হাঁটেন ।


তাদের হাড়ের ঘনত্ব যারা নিয়মিত হাটেনা বা পরিশ্রম করে না তাদের হাড়ের ঘনত থেকে অনেক বেশি ।তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায় এমন কে আর্থাইটিস সহ আহারে নানা রোগও কম হয় তাই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

ব্যায়ামের প্রয়োজনীয় কিছু টিপস

  • ব্যায়াম শুরু করার প্রথম ৫ থেকে ১০ মিনিট এবং শেষের ৫ থেকে ১০ মিনিট অবশ্যই আস্তে আস্তে ব্যায়াম করবেন আর হেঁটে ব্যায়াম করলে শরীরকে ওয়ার্ম আপ এবং ওয়ার্ম ডাউন করতে হবে।

  • খাবার খাওয়ার পর যেকোনো ব্যায়াম করবেন না ।খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ব্যায়াম করুন।

  • ব্যায়াম করার আগে ও ব্যায়াম করার পরে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

  • যেকোনো সময় হাঁটলে আপনার উপকার থেকে ক্ষতি বেশি হবে তাই আপনি সকালে বা বিকেলে
    নিয়ম করে হাটবেন এবং যেকোনো ব্যায়াম করবেন।

  • দুপুরের সময় কোন ব্যায়াম করবেন না ,অথবা দুপুরে রোদে হাঁটবেন না কারণে এই সময় ব্যায়াম করলে আপনার উপকারে এসে ক্ষতি বেশি হবে।

  • কোনো ব্যায়ামের সঠিক উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত সেই ব্যায়াম করতে হবে ।এমন কি আপনি যদি হাঁটার উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত হাঁটতে হবে এবং আপনাকে দ্রুত হাঁটতে হবে যেন শরীর থেকে ঘাম ঝরে যায় তাহলে আপনি সঠিক উপকার পাবেন।

শেষ বক্তব্য

সুস্থ দেহ সুস্থ মন এর নামই স্বাস্থ্য। আর শরীর বা স্বাস্থ্য এবং মন ভালো রাখতে হলে আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে। কারণ একমাত্র ব্যায়ামই পারে একজন মানুষকে তার শরীরের সকল প্রকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার। সঠিকভাবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম না করলে মানুষ দিন দিন পৌঁছে যায় বিভিন্ন রোগের দ্বারপ্রান্তে।

তাই আসুন আমরা সবাই মিলে নিয়মিত ব্যায়াম করি এবং সুস্থ থাকি।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url