বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই আমি বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। প্রিয় শিক্ষার্থী তোমরা যারা বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাও আমার এই রচনা তাদের জন্য।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযোদের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বীমা প্রচলন হয় আর এর অগ্রনায়ক ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নিচে বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু - রচনা
ভূমিকা
বীমা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি যা গ্রাহককে তার বিপদের সময় আর্থিক সহায়তা করে থাকে। বর্তমানে বীমা বাংলাদেশে একটি সুবিধা জনক এবং জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বীমা কোম্পানি ১৯৫৪ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বাংলাদেশে ১৯১০ সালে জীবন বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয় যা আইডি আর এ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের বীমা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বীমা কি
বীমা আমাদের সবার কাছে একটি পরিচিত নাম। বিভিন্নভাবে বীমার সংজ্ঞা প্রদান করা যায় তবে সহজ ভাবে বলতে গেলে বীমা হচ্ছে এমন একটি সংস্থার সাথে চুক্তি বা কোম্পানির সাথে চুক্তি যেখানে একজন বীমা কৃত বা গ্রাহক একজন বীমা কারি অর্থাৎ বীমা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ। যেখানে বীমা কারীর শর্ত মোতাবেক কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের টাকা জমা করবে আর বীমা কারী অর্থাৎ বীমা কোম্পানি একটি আইনি শক্তির মাধ্যমে একজন বীমা কারীর বা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বীমা কারীকে আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকবে।
এবং বীমা হলো একটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি বা বিভিন্ন বিপদের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য একটি ব্যবস্থাপনার অংশ। অর্থাৎ একজন বীমা কৃত বা গ্রাহক নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তার যে ক্ষতি হতে পারে তার জন্য তিনি বীমা কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক সুরক্ষা পান।
উদাহরণ
বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম premium সংগ্রহ করে এবং বীমা কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বৃদ্ধি করে আর বীমা কোম্পানিগুলো বীমারকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত রাখে। বীমা কোম্পানির কাছে গ্রাহক যে টাকা জমা করে তাকে প্রিমিয়াম বলে। অর্থাৎ গ্রাহক যেকোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে তবে বীমা কোম্পানির কিছু নিয়ম বা শর্ত থাকে যেগুলো গ্রাহকে মেনে চলতে হয়। আর এভাবে একজন গ্রাহক অর্থ সঞ্চয় করে বিভিন্ন ধরনের বিপদ ও দুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
বীমা কাকে বলে
বীমা হল একটি বিশেষ কোম্পানির নাম যেখানে একজন গ্রাহক টাকা সঞ্চয় করে এবং বীমা কোম্পানিগুলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা বা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তাদের মূলধন বৃদ্ধি করে এবং এর বিনিময়ে গ্রাহকের জীবন, মালামাল বা বিভিন্ন সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি এবং ন্যায় সঙ্গত স্থানান্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অর্থাৎ বীমা হলো আর্থিক বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকার একটি সুরক্ষা বা গ্যারান্টি।
আরো পড়ুনঃ রচনা - মাদককে রুখবো,স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব
অর্থাৎ বীমা বলতে বীমা কোম্পানিগুলো দ্বারা চুক্তিকে বোঝানো হয় যেখানে গ্রাহক বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পায় এবং বিভিন্ন ক্ষতিপূরণ পায়। অর্থাৎ বীমা হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন গ্রাহক আস্থার সাথে এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা পেয়ে থাকে।
বীমা শব্দের অর্থ
বীমা শব্দের অর্থ হলো চুক্তি। বীমার অপর নাম হল ইন্সুরেন্স। বীমা শব্দটি ফার্সি শব্দ আর এর অর্থ হল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি। অর্থাৎ বীমা কোম্পানি এবং গ্রাহক এর মধ্যে এটি সাধারণ চুক্তি যেখানে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বীমা কোম্পানির সাথে গ্রাহক চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট কিছু অর্থ জমা করে যার বিনিময়ে বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহককে তার ভবিষ্যৎ ক্ষয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। বীমার অপর নাম হল ইন্সুরেন্স আর বাংলাদেশে অনেক ধরনের ইন্সুরেন্স রয়েছে।
বীমার ইতিহাস
বীমার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে তেমন কিছু বলা যায় না তবে বীমার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে পৃথিবীতে যে বীমাটি প্রথম চালু হয়েছিল তা হল নৌ বীমা। এই বিমাটি চালু হয়েছিল ১৮৬৫ সালে ব্রিটেনে আর এর অন্যতম কারণ ছিল ১৯৬৬ সালে লন্ডনে এবং ১৮৬১ সালে টালি এসিসটের অগ্নিকাণ্ডের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আর এই ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করেই ব্রিটেনে এই বীমাটি করা হয়। ১৮৯৬ সালে হ্যান্ড ইন হ্যান্ড বা জীবন বীমা নামক বা লাইক ইন্সুরেন্স এর উদ্ভব ঘটে আর এই জীবন বীমা ও শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডে।
আর ইউরোপীয় উপনিবেশের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বীমা ছড়িয়ে পড়ে। আবার মনে করা হয় চতুর্থ শতাব্দীতে ইতালির জেনোয়া বন্দর এবং ভূমধ্যসাগরের উত্তর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশে ব্যবসায়ের প্রচলন শুরু করার জন্যই বীমা করা হয়। পরে যখন ইউরোপের শিল্প বিপ্লব ঘটে অর্থনীতি যখন ঝুঁকির সম্মুখীন হয় তখন এই ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য ইউরোপীয়রা বীমাকে হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছিল। আর এভাবেই বীমা সময়ের সাথে সাথে পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠে।
বীমা কত প্রকার
আমাদের দেশে বিভিন্ন মেয়াদের বিভিন্ন ধরনের বীমা রয়েছে। তবে সাধারণভাবে যে বীমা গুলো করা হয়ে থাকে তা হল -
- জীবন বীমা - (Life Insurance)
- সাধারণ বীমা - (Jenarel Insurance)
- স্বাস্থ্য বীমা - (Health Insurance)
- সম্পত্তি বীমা - (Wealth Insurance)
- ব্যবসায়িক বীমা - (Business Insurance)
- জীবন ভর বীমা - (Whole Life Insurance)
- ভ্রমণ বীমা - (Travel Insurance)
- অগ্নি বীমা - (Wealth Insurance)
- যানবাহন বীমা - (Car Insurance)
- গৃহ বিমা - (Home Insurance)
জীবন বীমা
যে বীমার মাধ্যমে মানুষের জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় জীবন বীমা।
সাধারণ বীমা
সাধারণ বীমার মাধ্যমে মানুষের ধন-সম্পদ যেমন বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা, বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি, যানবাহন, ভ্রমণ, অগ্নি বীমা, জীবনভর বীমা এবং ব্যবসায়িক বীমা এই সাধারণ বীমার আওতাভুক্ত আর এই সাধারণ বীমা জনসাধারণের এই সকল বিষয়ে নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় সাধারণ বীমা।
স্বাস্থ্য বীমা
মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন চিকিৎসা খরচ অর্থাৎ যে বীমার মাধ্যমে একজন গ্রাহকের সাথে এভাবে চুক্তিবদ্ধ করা হয় যে, কোন দুর্ঘটনা বা কোন দুরারোগ্য ব্যাধি বা অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার খরচ বীমা কোম্পানি প্রদান করবে আর এভাবেই স্বাস্থ্য বীমা করা হয়ে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনার মধ্যে যে বীমা গুলো উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ আরও অনেক ধরনের বীমা রয়েছে যেগুলো গ্রাহকের সুবিধার কথা চিন্তা করে বীমা কোম্পানিগুলো করে থাকে।
বীমা করার যোগ্যতা
বীমা কোম্পানিগুলো অধিকাংশ হলো বেসরকারি অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন। তবে বীমা করতে হলে বীমা কোম্পানি কর্তৃক গ্রাহককে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়। আর এগুলো হলো -
নির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি
যদি কোন নির্দিষ্ট বস্তুকে কেন্দ্র করে বীমা করা হয় তাহলে বীমা কোম্পানি গ্রাহকের যে বিষয়ের উপর বীমা রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ দিবে আর অন্য কোন বিষয়ে ক্ষতিপূরণ দিবে না। যেমন গ্রাহক যদি কোন অগ্নি বীমা করে তাহলে তার সম্পদ অগ্নিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমা কোম্পানি তা পূরণ করবে। কিন্তু যদি দুর্ঘটনা ঘটে বা হারিয়ে যায় তাহলে বীমা কোম্পানিগুলো কোন ক্ষতিপূরণ দিবে না।
দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতি
গ্রাহকের যদি দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতি হয় তাহলে তা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ক্ষতি হতে হবে অর্থাৎ তার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার ব্যয়ভার গ্রহণ করা তার সাধ্যের বাইরে থাকতে হবে। কিন্তু যদি কোন গ্রাহক তার গাফিলতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বীমা কোম্পানি গ্রাহকে ক্ষতিপূরণ নাও দিতে পারে।
ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই পরিমাপ যোগ্য হতে হবে
বীমা কোম্পানিগুলো তার গ্রাহকের কোন ক্ষতি হলে তা টাকার বিনিময়ে পূরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সব ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব সময় টাকার হিসেবে করতে হয়।
প্রিমিয়াম অবশ্যই সাশ্রয়ী হতে হবে
বিভিন্ন বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে যে টাকা নিয়ে থাকে তাকে প্রিমিয়াম বলে। তবে গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ যত বেশি হোক না কেন বীমার যে প্রিমিয়াম থাকবে তা বীমা গ্রহণকারীর সাধ্যের মধ্যে হতে হবে অর্থাৎ আপনি যদি ২০০ টাকা বীমা করেন তাহলে আপনার যদি এক কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বীমা কোম্পানি এত টাকা নাও দিতে পারে।
বৃহৎ আকারের ক্ষতি
যদি কোন গ্রাহকের বৃহৎ আকারের কোন ক্ষতি হয় তাহলে তা বীমাকৃত ব্যক্তির স্বপক্ষে অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হতে হবে তা না হলে বীমা কোম্পানি এ ক্ষতিপূরণ নাও দিতে পারে।
প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হলে সেই ক্ষতির পরিমাণ সীমিত হবে
প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয় যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, ক্ষরা প্রভৃতি কারণে যদি গ্রাহকের কোন ক্ষতি হয় তাহলে বীমা কোম্পানিগুলো এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে কারণ এত ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া বীমা কোম্পানির পক্ষে সম্ভবপর নাও হতে পারে।
গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই পরিমাণ যোগ্য হতে হবে
গ্রাহক যে পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বীমা কোম্পানির কাছে সেই ক্ষতি পরিমাপযোগ্য হতে হবে তাহলে বীমা কোম্পানি এই ক্ষতিপূরণ দিয়ে গ্রাহকে সহযোগিতা করবে।
এমন অনেক উপাদানের অস্তিত্ব থাকতে হবে যা একই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে
বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে তাই বাস্তবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এমন অনেক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকতে হবে। যেমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যারা তাদের হাত এবং পায়ের অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বীমা করিয়ে থাকেন।
বীমা করার ধাপসমূহ
একজন গ্রাহকের বীমা কোম্পানির কাছে বীমা করতে হলে অর্থাৎ প্রিমিয়াম জমা করতে হলে তাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম বা ধাপ মেনে চলতে হয় এগুলো হল -
- বীমা কোম্পানির ওয়েবসাইট বা বীমা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রতিনিধির কাছ থেকে বীমা সম্পর্কে জানতে হবে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা আলোচনা করে পছন্দ মতো পরিকল্প নির্বাচন করতে হবে।
- গ্রাহক তার পছন্দমত বীমা কোম্পানির থেকে গ্রহণকৃত ফ্রম নিজের পছন্দমত বীমা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
- বীমা গ্রাহককে বীমা কোম্পানির কাছে আবেদন এবং দাখিলকৃত সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বীমা প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
- বীমা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।
- গ্রাহক বীমা কোম্পানির কাছে প্রিমিয়াম পরিশোধের পর বীমা কোম্পানির কাছ থেকে এফ পি আর এর মাধ্যমে বীমা চুক্তি চূড়ান্তভাবে সম্পাদন করবে।
- বীমা কোম্পানির কাছে এফ পি আর এর মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদনের পর গ্রাহক দলিল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করবে।
বীমা করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়
বীমা হল দুই পক্ষের মধ্যে আইন সঙ্গত ভাবে চুক্তি অর্থাৎ একপক্ষ প্রিমিয়াম জমা করবে এবং অপরপক্ষ যার বিপদের দিনে তাকে সহযোগিতা করবে তাই বীমা করলে আপনি অনেক সুবিধা পাবেন এগুলোর মধ্যে যেগুলো উল্লেখযোগ্য তা হলো -
আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
- বীমা আপনার সম্পদ এবং জীবনের নিরাপত্তা দিবে।
- সামাজিক সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করে থাকে।
- বীমা ব্যবসায়ে অর্থ যোগান দেয়।
- বীমা-মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
- বীমা মুদ্রা স্মৃতি হ্রাস করে।
- বীমা মূলধন সৃষ্টি করে।
- বীমা বৃদ্ধ এবং বয়সকালীন সম্বল।
বীমা করতে হলে গ্রাহককে কি কি কাগজপত্র দিতে হবে
বীমা হল দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি অর্থাৎ গ্রাহক এবং বীমা কোম্পানির মধ্যে একটি আইনের চুক্তি আর এই চুক্তি সম্পাদন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র বীমা কোম্পানিকে দিতে হবে। এগুলো হলো -
- গ্রাহকের নাম এবং সঠিক ঠিকানা বিস্তারিতভাবে দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহক কোন পেশায় রয়েছে সেই পেশার প্রমাণ সহ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে অর্থাৎ গ্রাহক যে কাজ করে তার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহকের আয়ের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরতে হবে এবং আয়ের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহক যেখানে কর্মরত রয়েছেন তার পেশাগত ঠিকানা সঠিকভাবে দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহকের বয়সের প্রমাণ দাখিল করতে হবে অর্থাৎ তার এন আই ডি কার্ড দিতে হবে।
- বীমা গ্রাহক এবং তিনি যাকে অংশীদার মনে করবেন তার পাসপোর্ট সাইজের ছবি দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহক সুস্থ রয়েছেন এর প্রমাণ হিসাবে মেডিকেল অথবা নন মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
- গ্রাহক যদি বড় অংকের বীমা করতে চায় তাহলে বয়স অনুসারে গ্রাহকের বিভিন্ন রিপোর্ট যেমন ইসিজি, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
- প্রবাসী কোন কর্মরত ব্যক্তি যদি বীমা করতে চান তাহলে তাকে পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে তিনি কবে আগমন করেছিলেন তার শীলযুক্ত পাসপোর্ট এর ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
বীমা দিবস কবে
মানুষের জীবন এবং তার সম্পদ নিয়ে মানুষের যে ঝুঁকি এবং এর নিশ্চয়তা নিয়ে যে সংস্থা বা কোম্পানি কাজ করে তার আর্থিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নামে হলো বীমা। বীমা হচ্ছে একজন গ্রাহকের বিপদের দিনের সম্বল। তবে আন্তর্জাতিকভাবে কোন বীমা দিবস পালন করা হয় না কিন্তু বাংলাদেশে পহেলা ১লা মার্চ বীমা দিবস পালন করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে বাংলাদেশ সরকার বীমা শিল্পের উন্নয়ন এবং বীমা সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতনতা করার লক্ষ্যেই এই বীমা দিবসটি চালু করেন।
বীমার জনক কে
বীমা কোম্পানির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বীমার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে মনে করা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে বীমার প্রথম প্রচলন শুরু হয় যার কারণে বীমার জনক কে তার ইতিহাস সঠিকভাবে পাওয়া মুশকিল। তবে নিকোলাস বারবন কে আধুনিক অগ্নি বীমার জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বীমা কেন করা প্রয়োজন/বীমার গুরুত্ব
আমাদের প্রতিদিন নানারকম ঝুঁকি মোকাবেলা করে জীবন যাপন করতে হয় তাই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা কেউ জানিনা। আজ আমরা ভালো আছি কিন্তু কাল আমাদের কি হবে এ সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। আর জীবনে চলার পথে ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বীমা করা একান্ত প্রয়োজন সে যে ধরনের বীমা হোক না কেন! আমাদের মনে রাখতে হবে, একমাত্র বীমা আমাদের ঝুঁকির পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারে।
একটি পরিবারে উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি সারা জীবন উপার্জন করতে নাও পারে আর এই অসময়ের কথা চিন্তা করে পরিবারে যেন অভাবের ছোঁয়া না লাগে, পরিবারে যেন সচ্ছলতার সঙ্গে চলতে পারে এই কথা মাথায় রেখে বীমা করা প্রয়োজন। এছাড়াও যারা ব্যবসা করেন তাদের ব্যবসার ক্ষতির চিন্তা মাথায় রেখেও বীমা করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এবং বীমা শিল্প
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বীমার প্রতি বেশি আগ্রহী নয় কারণ তারা এখনো বীমার উপকারিতার কথা বুঝে উঠতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ বীমা শিল্পের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে কারণ বীমা হল মানুষের আর্থিক ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ ৮১ টি বীমা কোম্পানি রয়েছে তার মধ্যে ৩৫টি রয়েছে জীবন বীমা এবং ৪৬ টি রয়েছে সাধারণ কোম্পানি। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা কোম্পানি গুলো অবদান রাখতে পেরেছে এক শতাংশের কম যা ০.৫০ শতাংশ হিসেবে ধরা হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মানুষের বীমার অবস্থা প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে মাত্র চার জন যা বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বীমা কোম্পানির ওপর জোর দিয়েছে যার কারণে বীমা কোম্পানিগুলো এখন আশাবাদী যে বীমা শিল্পের প্রয়োজনীয়তা মানুষ এখন উপলব্ধি করতে পারবে। আর এই জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে বীমা কোম্পানিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে এসেছে।
বীমা শিল্পের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় আর এই স্বাধীনতার অগ্রনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর ১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশে প্রথম বীমা জারি করা হয়। ১৯৩৮ সালে একটি বীমা আইন জারি করা হয় যা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই ১৯৩৮ সালের জারিকৃত আইনটি বাংলাদেশে বীমা আইন বলে ঘোষণা করা হয় এবং ৭৫টি বীমা কোম্পানিকে এই সময় জাতীয়করণ করা হয় এবং প্রথমে পাঁচ ৫ টি সংস্থাকে জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ স্মার্ট বাংলাদেশ - অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাই চিন্তা করে বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করেন এবং বীমা কোম্পানির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করার পরিকল্পনা করেন আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল হতে শুরু করে যার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বীমা শিল্পের অগ্রনায়ক হিসেবেও অভিহিত করা হয়। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা কে সচল করতে হলে টাকা সঞ্চয় করা একান্ত প্রয়োজন।
১৯৭২ সালে যে পাঁচটি বীমা জাতীয়করণ করা হয় সেই পাঁচটি বীমা হল -
- বাংলাদেশ জাতীয় বীমা কর্পোরেশন
- রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন
- তিস্তা বীমা কর্পোরেশন
- সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন
- কর্ণফুলী বীমা কর্পোরেশন
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারি ভাবে বীমা প্রচলিত থাকলেও ১৯৮৩ সাল থেকে সরকারি বীমার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বীমা ব্যবসার অনুমতি প্রদান করা হয়। আরো ৯৮৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে বীমা কোম্পানী রয়েছে। বর্তমানে বীমা কোম্পানি বাংলাদেশে একটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় ব্যবসায়ী পরিণত হয়েছে। আর যার হাত ধরে বাংলাদেশের বীমা ব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছে তিনি হলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশে বীমা কোম্পানি কয়টি
আমরা বাংলাদেশের মানুষ সবাই কম বেশি বীমা কোম্পানির সাথে পরিচিত বর্তমানে বীমা কোম্পানি একটি জনপ্রিয় ব্যবসায়ী পরিণত হয়েছে তবে বাংলাদেশে মোট ৮১ টি বীমা কোম্পানি রয়েছে আর এগুলোর মধ্যে ৩৫টি কোম্পানী রয়েছে জীবন বীমা এবং বাকি ৪৬ টি নন লাইফ ইন্সুরেন্স অর্থাৎ বীমা নিয়ে কাজ করে থাকে।
বীমা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে বীমা প্রচলিত হয়। কিন্তু ১৯৭৩ সাল থেকে বীমা কার্যক্রম চূড়ান্তভাবে শুরু হয়। মানুষের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের বীমা থাকলেও বীমার আওতায় রয়েছে মাত্র ২ কোটিরও কম মানুষ এবং এর প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন বীমা কোম্পানির প্রতি মানুষের অনাস্থার কারণে বীমার প্রতি মানুষের আগ্রহ এখনও বৃদ্ধি পায়নি।
উপসংহার
দেশ বিভাগের আগেও বাংলাদেশের বীমা চালু থাকলেও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করা হয়। আর এই সময় পাঁচটি বীমা কোম্পানিকে নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। আর বীমা কোম্পানির অগ্রযাত্রায় ভূমিকা পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বীমা কোম্পানি রয়েছে এবং এটি এখন জনপ্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url