শবে মেরাজ কি ও কেন জেনে নিন

শবে মেরাজ মুসলমানদের একটি ধর্মীয় উৎসব কিন্তু অনেকেই শবে মেরাজ কি ও কেন তা জানে না। তাই আমি শবে মেরাজ কি ও কেন তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনারা যারা শবে মেরাজ কি ও কেন এ সম্পর্কে জানতে চান আমার পোস্ট তাদের জন্য।

Image


পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতালা বলেন,- "পবিত্র সত্তা তিনি যিনি বান্দাকে তার নিদর্শন গুলো দেখানোর জন্য রাত্রি কালে ভ্রমন করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ।(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াতঃ১)। শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

মেরাজ অর্থ কি

শব হলো আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো রাত। মেরাজ হল আরবি শব্দ। এই মেরাজ শব্দটি উরুজ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হল ঊর্ধ্ব গমন। মেরাজ শব্দের অর্থ হলো উর্ধ্ব গমন করার বাহন। আরেক অর্থ হলো সিঁড়ি। এই আরবি এবং ফার্সি শব্দ মিলে হয়েছে শবে মেরাজ। শবে মেরাজ শব্দটির অর্থ হচ্ছে উর্ধ্ব গমনের রজনী। এই শবে মেরাজকে আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল মেরাজ। 

রজব মাসের ২৭ তারিখে রাতে জাগ্রত অবস্থায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা এবং এরপর বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্ব আকাশে পাড়ি দিয়ে আরশে আজিমে পৌঁছে আল্লাহর দিদার লাভ করেন।আর এর নাম হল মেরাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতালা বলেন,-  "পবিত্র সত্তা তিনি যিনি বান্দাকে তার নিদর্শন গুলো দেখানোর জন্য রাত্রি কালে ভ্রমন করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ পবিত্র, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ।(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াতঃ১)

শবে মেরাজ কি ও কেন

লাইলাতুল বা শব যার অর্থ হলো রাত। আর মেরাজ শব্দের অর্থ হলো ঊর্ধগমন সুতরাং লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজের অর্থ হলো ঊর্ধ্ব গমনের রাত। আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখে নবুয়তের দশম বর্ষে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ৫০ বছর বয়সে মেরাজ সংঘটিত হয়(সিরাতে মোস্তফা,  মাওলানা হিফজুর রহমান শিহার ভি, আশেকে এলাহী মারাঠি ও তারিখুল ইসলাম )। পবিত্র মেরাজের প্রথম যাত্রা শুরু হয় মসজিদুল হারাম থেকে।

হযরত জিব্রাইল আঃ সালাম আমাদের প্রিয় নবীকে বোরাকে করে বায়তুল মোকাদ্দাসে নিয়ে যান। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বায়তুল মুকাদ্দাসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। আর ওই  নামাজে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইমামতি করেন। নামাজ শেষে উর্ধ্ব আকাশে গমন করেন। যাত্রা পথে প্রত্যেক আসমানে পূর্ববর্তী সম্মানিত নবী রাসুলদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয় । এরপর আসে সিদরাতুল মুনতাহা। তারপর আরশে আজীমে মহান আল্লাহতালার সাথে সাক্ষাৎ করেন। 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই মেরাজের রাতে স্বচক্ষে বেহেস্ত এবং দোযখ দেখেছেন।এবং স্বচক্ষে অনেক পাপের শাস্তি দেখেছেন। তিনি সরাসরি আরোশ  ও কুরসি দেখেছেন এবং এই সুবিশাল নভোমন্ডল পরিভ্রমণ করেছেন। সর্বোপরি তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং অবলোকন করেছেন এই বিশ্বজগতের অপার রহস্য। আর এই রাত থেকেই রচিত হয় নামাজের বিধান ।

মুমিনগণ তাদের সঠিক পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন। আর এই মেরাজের ঘটনা থেকেই লাভ করেছেন আল্লাহর অপার অনুগ্রহ এবং দ্বীনের সঠিক পথ। আর এ মেরাজের ঘটনা থেকে বোঝা যায় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কতটা দামি, কতটা মূল্যবান, কতটা মর্যাদার অধিকারী। আমাদের নবীকে যে মর্যাদা দান করা হয়েছে তা অন্য কোন নবীকে করা হয়নি। আর এ মেরাজের ঘটনার ফলে মুমিনদের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্ব নবীর প্রতি ভালোবাসা আর ও সুগভীর হয়।

শবে  মেরাজ রজব মাসের কত তারিখ

শবে মেরাজ রজব মাসের কত তারিখ এ নিয়ে বিভিন্ন রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সঠিকভাবে এটুকু জানা যায় যে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের এক থেকে দেড় বছর পূর্বে। মেরাজ সংঘটিত হয়েছে এটা কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত কিন্তু কোন বছরের, কোন মাসের, কত তারিখে তার কোন নির্ভরযোগ্য দলিল পাওয়া যায় না। তবে সর্বজন স্বীকৃত রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে শবে মেরাজ হিসেবে পরিচিত। (আল মাত্ত আহিবুল, লাদু্ন্নিয়াহ ও শরহুল মাওয়া হিবিল লাদু্ন্নিয়াহ ,খন্ডঃ৮, পৃষ্ঠাঃ১৮-১৯)।

মেরাজের ঘটনা কোন সূরায় আছে

রাসূল সাঃ এর লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের ঘটনা কোরআন হাদিস ও ইজমায়ে উম্মত এর অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। মেরাজ সত্য আর এর ওপর বিশ্বাস রাখা ফরজ। সূরা বনী ইসরাইলের শুরুতে নবীজির মেরাজের রাতে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত সফরের কথা এবং সূরা নাজমের ১৩ থেকে ১৮ আয়াতে উর্ধ্বজগতে সফরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব মেরাজ তথা উদ্ধলোকে গমনের কথা হাদিস এবং ইশরা তথা কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। অতএব মেরাজ অস্বীকারকারী কাফের হবে। আমাদের লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস করতে হবে।

শবে মেরাজ ২০২৩ কবে

বাংলাদেশের ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে হিজরী রজব মাসের ১ তারিখ ছিল অর্থাৎ বাংলা যেদিন ২৪ জানুয়ারি সেদিন রজব মাসের গণনা শুরু হয়। শবে মেরাজ অনুষ্ঠিত হবে রজব মাসের  ২৭ তারিখে। সেই হিসেবে অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের  ১৮ তারিখ দিবাগত রাত্রে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে ইনশাআল্লাহ।

শবে মেরাজের বিস্তারিত ঘটনা

ইশরা শব্দের অর্থ হল রাত ইসলামী পরি ভাষায় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত রাত্রের ভ্রমণকে ইসরা বলা হয়। আর মেরাজ বলা হয় মসজিদের আকশা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উর্ধ্ব ভ্রমণকে পবিত্র কোরআনের ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে-

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ 

অনুবাদঃ "পবিত্র ওই মহান সত্তা যিনি রাত্রিবেলায় তার বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার আশপাশকে আমি পবিত্র করেছি এটা এ জন্য যাতে আমি তাকে আমার নির্দেশাবলী দেখাতে পারি।( সূরা বনী ইসরাইল, আয়াতঃ ১)। হাদিসের ভাষ্যমতে মেরাজের সুত্রপাত হয়েছিল মসজিদে হারাম থেকে। রাসূল সা রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে আল্লাহতালার ঘরের হিজরের মাঝে শুয়ে ছিলেন। 

এমন সময় ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ এসে তাকে জাগ্রত করে তার বক্ষ মোবারক  বিদীর্ণ করে দূষিত রক্ত বের করে আবার জোড়া লাগিয়ে দেন। অতঃপর বোরাকে করে সশরীরে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যান। আর বোরাক হল এমন একটি প্রাণী যা গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি আকৃতির একটি জন্তু। আর দুই উরুতে দুইটি পাখা রয়েছে এই পাখা দিয়ে সে পেছনের পায়ে ঝাপটা দেয়। আর সামনের দৃষ্টির শেষ সীমায় সে পা ফেলে।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মুকাদ্দাসের দরজার খুটির সঙ্গে বোরাকটি রেখে যাত্রা বিরতি করেন এবং সব নবীদের ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন। (আর রাহীকুল মাখতুন)। বাইতুল মুকাদ্দাসে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আদায় করার পর নিয়ে আসা হয় সিঁড়ি। যাতে নিচ থেকে ওপরে যাওয়ার ধাপ বসানো ছিল। এই সিড়ির সাহায্য  প্রথমে আকাশে এরপর অবশিষ্ট আকাশে আকাশগুলোতে ভ্রমণ করেন। 

তবে এ সিঁড়িটি কি এবং কেমন ছিল তার প্রকৃত স্বরূপ একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। প্রতিটি আকাশে অবস্থানরত পূর্ববর্তী নবীগণের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং প্রত্যেক আকাশে সেখানকার ফেরেস্তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে যেসব নবীদের সাক্ষাৎ
হয়েছিল-
 

  • প্রথম আকাশে হযরত আদম আলাইহিস সালাম

  • দ্বিতীয় আকাশে হযরত ইয়াহিয়া ও ঈসা আলাইহিস সালাম

  • তৃতীয় আকাশে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম

  • চতুর্থ আকাশে হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম

  • পঞ্চম আকাশে হজরত হারুন আলাইহিস সাল্লাম

  • ষষ্ঠ আকাশে হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম

  • এবং সপ্তম আকাশে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম

এই সপ্তম আসমান পার হয়ে তিনি এক ময়দানে পৌঁছান। যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি যান সিদরাতুল মুনতাহা। যেখানে স্বর্ণের প্রজাপতি সহ বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটা ছুটি করছে আর এই স্থানটি ফেরেশতারা ঘিরে রেখেছে। সেখানে রাসূল সাঃ হযরত জিব্রাইল আঃ কে তার স্বরূপে দেখতে পান। হযরত জিব্রাইল আলাইসালামের  ৬ শত পাখা। আর যেখানে তিনি একটি সবুজ রংয়ের রফ রফ দেখতে পান।

আর রফ হলো সবুজ রঙের গদি বিশিষ্ট পালকি। আর এই রফ রফের মাধ্যমেই তিনি রবের কাছে গমন করেন। আর এ সফরে হযরত মুহাম্মদ সাঃকে কয়েকটি জিনিস দেখানো হয়। তাকে দুধ , সরাব ও মধু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় নবী দুধ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দুধ পান করার ফলে হযরত জিবরাঈল আঃ বলেন, "আপনি ফিত রাতের ওপর বিজয়ী হয়েছেন। যদি আপনি সরাব পান করতেন তাহলে আপনার উম্মত বিপদের সম্মুখীন হয়ে যেত"। 

প্রথম আকাশের ঘটনা

হজরত আদম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাতের সময় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম দেখেন, এক ব্যক্তি ডানে তাকিয়ে হাসছেন আর বামে তাকিয়ে কাঁদছেন। আমাদের প্রিয় নবী এ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম বললেন ইনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার ডান পাশে জান্নাতি সন্তানদের দেখে হাসছেন আর বাম পাশে জাহান্নামি সন্তানদের দেখে কাঁদছেন।

দুনিয়ার আকাশে দুইটি ভান্ডো ভর্তি গোশত  যার একটিতে ভাল গোশত  আর একটিতে যুক্ত পচা দুর্গন্ধযুক্ত গোশত। আর মানুষ ভালো গোশত না খেয়ে পচা দুর্গ ন্ধযুক্ত গোশত খাচ্ছে। প্রিয় নবী এদের বিষয়ে জানতে পারেন এরা দুনিয়ায় হারাম ভক্ষণকারী ব্যাক্তি ছিল। কিছু লোকের ঠোঁট উটের মত। ফেরেশতারা তাদের মুখে পচা দুর্গন্ধযুক্ত গোস্ত জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে এবং তা আবার অন্য পথে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর তারা ভীষণভাবে চিৎকার করছে এবং আল্লাহর কাছে মিনতি করছে।

জিব্রাইল আলাই সালাম বললেন এরা দুনিয়াতে এতিমের মাল অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করত। আরো দেখতে পান ব্যভিচারী কয়েকজন স্ত্রীলোককে। যারা বুকের ভারে লটকিয়ে আছে এবং হায় হায় করছে। আবার কিছু কিছু লোকের পেট বড় বড় ঘরের মতো তারা উঠে দাঁড়াতে চাইলে পড়ে যাচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম জানতে পারেন এরা সুদখোর।

এরপর দেখা গেল ফেরেশতারা কিছু লোকের পাশ্ব দেশ  থেকে গোস্ত কেটে তাদের খাওয়াচ্ছে আর বলছে  দুনিয়াতে যেভাবে নিজের ভাইয়ের গোশত খেতে এখানেও খাও। পরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম জানতে পারেন এরা হলো গীবতকারী। এরপর রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু জাহান্নামের দারোগা মালেক কে দেখেছেন। তিনি দেখলেন মালেকের চেহারায় হাসির কোন ছাপ নেই ।

আবার কোন কোন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ মেরাজের রাতে আল্লাহ তাআলার এত কাছাকাছি গিয়েছিলেন যে দুইজনের মাঝে মাত্র এক ধনুক পরিমাণ ব্যবধান ছিল। এই মেরাজেই রাসূল সাঃ এর উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছিল। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। যা ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে অন্যতম।( বুখারী হাদিস নং ৩ হাজার ৮৮৭)।

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। শবে মেরাজের ঘটনা পুরোটাই বিশ্বাস ও ঈমানের সাথে সম্পর্কিত। এই মেরাজের রাতে মহান আল্লাহতালা রাসূল সাঃ কে বিশেষ নৈকট দান করেছিলেন। মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার দেন। তাই শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সন্দেহ করলে সে কাফের হবে।

ইসলাম ধর্মের চারটি রাতের বেশ গুরুত্ব রয়েছে । যেমন - শবে কদর, শবে বরাত, দুই ঈদের রাত ও জুমা রাত। তেমনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাত হল এই শবে মেরাজের রাত। কারণ এই রাতে সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। অন্যান্য দিনের রাতের মতো এই রাতেও নফল ইবাদত করা উচিত। এছাড়াও রজব মাস আমলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস বলা হয়ে থাকে।

রজব মাস হলো বীজ বপণের সময়, সাবান মাস গাছ তৈরীর সময়, আর রমজান মাস হল ফল লাভের সময়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে বীজ যদি সঠিকভাবে বপন করা না হয় তাহলে গাছ উৎপাদন হবে না এবং ফল ও লাভ করা যাবে না। মহানবী সাঃ এই রজব মাস থেকে রমজান মাসের প্রস্তুতি শুরু করতেন।

হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, "যখন রজব মাস আসতো তা আমরা নবীজি সাঃ  এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম"। উম্মে সালমা বলেন,"নবী করীম সাঃ রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে"। নফল নামাজ রোজা করতে কোন নিষেধ নেই বরং তা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই রাতে যদিও বিশেষ কোন ইবাদতের কথা বলা হয়নি তবে নফল ইবাদত করলে অসংখ্য সওয়াবের অধিকারী হবেন। ইনশাআল্লাহ।

শবে মেরাজের রোজা

শবে মেরাজের রাতে কেন্দ্র করে কোন রোজা বা নামাজ হাদিস দ্বারা উল্লেখ পাওয়া যায় না।( লাতাইয়ে ফুল মা আরিফঃ১৩১)। তবে আপনি ইচ্ছে করলে পুরো রজব মাস ধরেই রোজা রাখতে পারেন। এছাড়া আপনি আইয়ামে বীজের রোজা রাখতে পারেন। আইয়ামে বীজের অর্থ হলো উজ্জ্বল রাতের দিনগুলো। আর প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখ কে আইয়ামে বীজে বলা হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কর্তৃক বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসের শেষাংশে নবী করীম সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, 

"প্রতি মাসে তিনটি নফল রোজা রাখো কেননা প্রত্যেকটি নেকি কমপক্ষে ১০ গুন বর্ধিত করে দেয়া হবে"। (সহিহ বুখারী ও সহিহ হাদিস)। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম রজব মাস আসলে পড়তেন - "আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা  ওয়া বাল্লিগনা রামাদান"।(মোজামের ইবনে আশাকির হাদিস নং ৩০৯, মুসনাদুল বাজ্জার হাদিস ৬৪৯৪, ঈমান সুয়াবুল,  হাদীস নং ৩৫৩৪, মুস্নাদে আহমদ হাদিস নং ২৩ ৪৬")।

শেষ কথা

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। আর এই শবে মেরাজের গুরুত্ব নির্ভর করে বিশ্বাসের উপরে। যদি কেউ বিশ্বাস না করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। কারণ এই শবে মেরাজ হল এমন একটি রজনী যে রজনীতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে নিয়ে এসেছেন।

আমি মেরাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর আমি আরবি উক্তিগুলো গুগল থেকে কপি করে নিয়েছি কারণ আমি আরবি লিখতে পারিনা।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url