বই পড়ার আনন্দ - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বই মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। একটি ভালো বই মানুষের পরম বন্ধু। আমাদের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার আনন্দ - রচনা বিভিন্ন পরীক্ষায় লিখতে আসে। তাই আমি বই পড়ার আনন্দ - রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় বই পড়ার আনন্দ - রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

Image

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমি তোমাদের জন্য বই পড়ার আনন্দ - রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যে শ্রেণীতেই পড়াশোনা করো না কেন আমার লেখা বই পড়ার আনন্দ - রচনা  তোমরা তোমাদের যে কোন পরীক্ষায় লিখতে পারবে।

বই পড়ার আনন্দ - রচনা 

ভূমিকা

"একটি বই খোলো 

আর তুমি পেয়ে যাবে 

সব ধরনের মানুষ আর স্থান; 

একটি বই খোলো 

আর তুমি হতে পারবে 

যা যা খুশি তুমি হতে চাও;।

কবির এই কবিতার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বই পড়লে কত আনন্দ পাওয়া যায়। বই মানুষের চিরন্তন সঙ্গী। মানুষ সামাজিক জীব যার কারণে মানুষ জন্মগতভাবেই একজন আরেকজনের সহচর্য প্রত্যাশা করে থাকে। কারণ এই পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষ কেবল দিন যাপনের সংগ্রাম নিয়েই মেতে থাকেনি, সে শৃঙ্খলতা ভেঙ্গে দৈনন্দিন প্রয়োজনের বন্দিশালায় আটকেও থাকতে চাইনি কারণ এই বিশাল আকাশ তাকে দিয়েছে হাতছানি। 

মানুষ কান পেতে শুনতে পায় সাগরের মহা জীবনের সংগীত আর অরণ্য দেয় মানুষকে মুক্তির সংবাদ।  আর জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে নিরন্তন সঙ্গী হলো বই আর এই বই পড়ে মানুষ অনাবিল প্রশান্তি লাভ করে থাকে।

 কেন বই পড়া হয়?

বই সাধারণত আনন্দ লাভ এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়া হয় কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বই পড়া অনেক বেশি যান্ত্রিক এবং লক্ষ্য কেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বই পড়ার প্রকৃত রূপ এমন হওয়ার কথা নয়! শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন ব্যতীত যেকোনো নির্দিষ্ট কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে বই পড়লে মানুষ কখনোই এর মধ্যে আনন্দ বা কোন পরিতৃপ্তি খুঁজে পাবে না। বইয়ের মধ্যে রয়েছে নানান তথ্যের সমাহার আর প্রকৃত জ্ঞান বিকাশ করতে হলে বই পড়া একান্ত প্রয়োজন।

বর্তমান এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বইয়ের মধ্যে কোন আনন্দ নেই বরং আছে একঘেয়েমি। তবে প্রতিটা বইয়ের মধ্যে রয়েছে লেখকের বিভিন্ন চিন্তাধারার অভিক্ষেপ আর এই অভিক্ষেপকে অনুভব করতে হবে জ্ঞানের অনুভূতির উদ্দেশ্য নিয়ে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তবেই বই পড়া হয়ে উঠবে সার্থক এবং প্রকৃত জ্ঞান আহহরিত হবে।

বইয়ের বৈশিষ্ট্য

বই হচ্ছে মানুষের জ্ঞান ও মেধাবিকাশের একমাত্র উৎকৃষ্ট মাধ্যম। আর বই পাঠের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বই মানুষের হৃদয় বৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং মানবিক বিকাশের মূল্যবোধকেও নিঃস্বার্থভাবে বিকাশ ঘটায়। পৃথিবী সূচনার লগ্ন থেকে যেসব মহাজ্ঞানী ব্যক্তিগণ তাদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন ইতিহাস আমরা বিভিন্ন বইয়ের পাতার মাধ্যমে সেগুলো খুজে পেয়ে থাকি আমাদের পথ চলার পথপ্রদর্শক হিসেবে। আর তখন থেকেই এই জ্ঞান প্রবাহমান নদীর মতোই আমাদের জীবনকে বিকশিত করে।

মানুষের বই পড়ার ইতিহাস

এই পৃথিবীতে যেমন সবকিছুর ইতিহাস রয়েছে তেমনি বই পড়ারও ইতিহাস রয়েছে। পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষের আগ্রহ জন্মে অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার। তবে বই পড়ার আনন্দ তখন থেকেই অনুভব করা যায় যখন থেকে মানুষ লিখতে ও পড়তে শেখে এবং তখন থেকেই মানুষের পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। তবে আজকের যুগের বই এবং পৃথিবীর সূচনা লগ্নে যখন বই সৃষ্টি হয় এর মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। সে সময় মানুষ বই হিসাবে পড়তো গাছের পাতা,

আরো পড়ুনঃ কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা সম্পর্কে জানুন

বড় পাথর, গাছের ছাল ইত্যাদির গায়ে লেখা যে লিপিগুলো ছিল সেগুলো। আর পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন লিপি সংগ্রহ করে গঠিত হয় সুসংগঠিত পুঁথি বা বই। আর এখান থেকে মানুষের বই পড়ার অভ্যাসের সূচনা হয়। এরপর সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের অভ্যাসেরও পরিবর্তন আসে। বই পড়ার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে জার্মানিতে গুটেনবার্গের মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে আর এরপর থেকেই বই সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠে। যার কারণে মানুষ বই পড়ার এই অসীম আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়।

বই নির্বাচন

বইয়ের পাতায় পরিস্ফুটিত হয়েছে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিত্রবিচিত্র শাখা প্রশাখা এবং ধ্যান ধারণার প্রতিফলন। যার কারণ মানুষ যে বিপুল জ্ঞান অর্জন করেছে তা বিদিত হয়েছে একমাত্র বইয়ের পাতায় কালো অক্ষরের মাধ্যমে। একজন মানুষ তার জীবন গঠনের দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকে বই থেকে। মানুষকে সুখ এবং আনন্দ দিতে পারে একমাত্র বই যার কারণে শিক্ষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন -" আজ সাহিত্যের মার্কা নিয়ে একটা জিনিস বাজারে চলছে। শুনিতার কাটতিও কম নয়, বিশেষ করে যুবক মহলে। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণ তরুণীদের একটা অপূর্ণ দুর্দান্ত ইচ্ছাকে রক্ত মাংস ময় কল্পনা দিয়ে পূর্ণ করা। রহমানে শয়তানে যে তফাৎ, আঙুরে ও সরাবে যে তফাৎ, মুক্তি ও বন্ধনে যে তফাৎ আসল সাহিত্য ও এই সকল সাহিত্যে সেই তফাৎ"।

বই পাঠের আনন্দ

নিরাপদ জীবনের একমাত্র আনন্দের উপকরণ হতে পারে বই কারণ বইয়ের মধ্যে রয়েছে দেশকালের কত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ঘটনা। জীবনের চড়াই উতরাই এর কত অভিজ্ঞতা তাই বলা হয় জীবনের জন্যই বই। বই আমাদের নানা ভাবে আনন্দ দান করে থাকে। এটি আমাদের সারা দিনের কর্ম ক্লান্ত, ব্যস্ততা, হানাহানি এবং পীড়িত, ক্লান্তি দূর করে এনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। বই হচ্ছে মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। জীবনের নানাবিধ প্রতিঘাত আমাদেরকে যখন উন্মত্ত করে তোলে তখন আমরা সহানুভূতি, আনন্দ, সান্তনা সবকিছুর জন্য ছুটে যায় গ্রন্থাগার তথা বইয়ের দিকে।

মানুষ যখন চোরাবালিতে ডুবতে থাকে তখন বই হতে পারে মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায়। যার কারনে মনীষী বার ট্রান্ড রাসেল বলেছেন" সংসারে জ্বালা - যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে ভব যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার তত বেশি হয়"। আবার ভিন সেন্ট স্টারেট বলেছেন - " যখন আমরা বই কিনি তখন আমরা আনন্দ কিনে থাকি"(When we buy a book we buy pleasere)।

বই সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়

বই পাঠের মাধ্যমেই মানুষ সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হয়। আমাদের এই বৃহত্তর জীবনের যাত্রাপথে সবচেয়ে বড় সঙ্গী হল মহা মনীষীদের দ্বারা লিখিত বই। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন -" মানুষ বই দিয়ে অতীত ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে"। আর এই উক্তির মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি একমাত্র বই পারে আমাদের পরিচিত করতে অতীতের সঙ্গে। আমরা পরিচিত হতে পারি মহৎ ব্যক্তিদের চিন্তা চেতনা এবং বিভিন্ন মহৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে।

জ্ঞানের আধার হিসাবে বই

বইয়ের পাতায় মানুষের অর্জিত বিভিন্ন জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটেছে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জ্ঞানের উৎস আর আমরা বই পাঠের মাধ্যমে আত্মস্থ করতে পারি বিভিন্ন বিষয়ে। সকল জ্ঞানকে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, ইতিহাস, আইন, ভূগোল বিভিন্ন বিষয়ে আমরা জানতে পারি বই পড়ার মাধ্যমে। বিভিন্ন মনিষীদের রচিত মহা মূল্যবান বইয়ের মাধ্যমে আমরা নিজেদের নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হই।

বুদ্ধির বিকাশ সাধন ও চিত্ত প্রসারনের বই

বই পড়ার আনন্দ আমাদের কেবল মনের নির্মল খোরাক যোগায় তা নয়, বরং আমাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং মনের সংকীর্ণতাকেও দূর করে। তাইতো আনাতোল ফ্রাঁস বই পড়ার আনন্দ অনুভূতি নিয়ে বলেছিলেন - " নানা জ্ঞান বিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করে থাকি, ততই একটা একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে"। বই পড়লে মনের অন্ধকার দূর হয়ে মনের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে।

প্রকৃত জ্ঞানী এবং মানুষ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো বই পড়া আর প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী হতে হলে এবং জ্ঞানের প্রসারণ ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে হলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। আর বই পড়ার আনন্দকে উপলব্ধি করেই রাশিয়ার বিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন - " আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী"।

বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বইয়ের ভূমিকা

একমাত্র বই পাঠের মাধ্যমে আমরা পুরো বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি। আমরা যদি সমগ্র বিশ্বকে জানতে চাই তাহলে বই পড়া একান্ত অনিষ্ককার্য। বই পাঠের মাধ্যমে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ মনীষীদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। ভ্রমনের মাধ্যমে যেমন বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার ও মানুষ সম্পর্কে জানা যায় ঠিক তেমনি বই পড়ার মাধ্যমেও একটি দেশের সকল বিষয় সম্পর্কে জানা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

তাই জ্ঞানপিপাসু লোকদের অর্থের সীমাবদ্ধতা আটকে রাখতে পারেনা। যারা ভ্রমণের ইচ্ছাকে হৃদয়ে লালন করেন তাদের বই হতে পারে সকল সুখের একমাত্র চাবিকাঠি। কারণ উত্তম বই বিশ্বের সাথে মানুষের যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। মানুষ ঘরে বসেই বিশ্ব সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারে। বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ বহিঃ বিশ্বকে আজ হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। তাই বহিঃ বিশ্বের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য বই পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

পাঠক চিত্তে বই পাঠের প্রভাব

বই পড়ার আনন্দ প্রতিটা পাঠকের হৃদয়ে একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে সেই প্রাচীনকালেও বিভিন্ন কবিগণ আনন্দ খুঁজে পেতেন একমাত্র বই পাঠের মাধ্যমে যার কারণে নির্ভীতে বৃক্ষ তলে যে স্বর্গ রচনার উপকরণের তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন তা সেখানেও একটি বইয়ের স্থান ছিল তার মতে বই ছাড়া স্বর্গীয় আনন্দ অপূর্ন থেকে যায় এজন্যই হয়তো তিনি বলেছেন - " রুটি মলো ফুরিয়ে যাবে; প্রিয়র কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে; কিন্তু একখানা বই অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়"।

বই যখন কথা বলে

যখন পাঠকের মনে ধ্যানমগ্নতা ভর করে তখন বুঝে নিতে হবে বই পাঠকের সঙ্গে কথা বলছে কারণ পাঠক একমুখী চিন্তা চেতনা ও কল্পনা আবেগে মহাবিষ্ট হয়ে পড়ে। একটি ভালো বই একজন পাঠকের জন্য সরস গল্পকারের মতই। বই মানুষের কাঠ খোট্টা বিষয়কে ও সাহিত্যরসে সিক্ত করে তুলতে পারে। তবে বইয়ের মধ্যে এই গুণগুলো পাঠকের আবিষ্কারের ক্ষমতা রাখতে হবে আর পাঠকের মনের মধ্যে যদি বই পড়ার প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে সে বই হয়ে যাবে নির্জীব পদার্থের মত। যখন বই পাঠকের সঙ্গে কথা বলে তখন সেই বই পাঠকের সঙ্গে হয়ে ওঠে চরম সুখের আভাস অথচ সে বিনিময়ে কিছুই প্রত্যাশা করে না।

বই পড়ার সময় নির্বাচন

মানুষের মনের আনন্দ সবসময় একরকম থাকে না। পরিবেশ পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থা মানুষের আনন্দ ভাগ করে দেয়। যেমন পাহাড়ি এলাকায় একটি ঝর্ণার পাশে বসে বই পড়লে মনের যে আবেগ, অনুভূতি দোলা দেবে কোন একটি ব্যস্ত এলাকায় বই পড়লে মনে সেই অনুভূতি আসবে না। আবার চাঁদনী রাতে খোলা জানালার পাশে একা একা বই পড়লে যে অনুভূতি সৃষ্টি হবে মধ্য দুপুরে অলস প্রকৃতি নীরবতায় বিছানায় শুয়ে বই পড়লে সেই অনুভূতি আসবে না। তাই বই পড়ার সময় নির্বাচন করতে হবে। আবার ভ্রমণের সময় বই পড়ার একটি অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।

বই মানুষের কৌতূহল মেটায়

বিচিত্র এই পৃথিবীর পড়তে পড়তে লুকিয়ে রয়েছে বিস্ময় আর এই বিস্ময়ের অবসান ঘটাতে পারে একটি সঠিক বই যদি পাঠক সেই বই সঠিকভাবে পড়তে পারে বই পাঠের মাধ্যমে মানুষ মুহূর্তেই চলে যেতে পারে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আর এজন্যই হয়তো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন - 

" বিপুল পৃথিবীর কতটুকু জানি

বিশাল বিশ্বের আয়োজন

মোর মন জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এককোণ,

সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণ বৃত্তান্ত আছে যাহে

অক্ষয় উৎসাহে"।

বই পাঠ মানুষকে উদার করে

মানুষের মনের অভিব্যক্তি, ব্যঞ্জনা বই পড়ার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। মানুষের বিভিন্ন ত্যাগের কাহিনী, সত্যের জন্য আত্মদান, নানা দেশের ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বৃত্তান্ত, বীরত্তের মহিমা, সামাজিক আচার-আচরণ, দুঃসাহসিক অভিযান, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার সবকিছুই মানুষকে উদার হতে শেখায়। বইপাঠ মানুষের মনকে প্রসারিত ও উন্মোচিত করে। ভালো বই কুসংস্কারা মনকে শুদ্ধ করে খুঁজে পেতে সাহায্য করে নতুন ঠিকানা। মানুষের সংকীর্ণ মনের জানালা খুলে উঁকি দেয় মুক্ত চিন্তা।

বর্তমান সময়ে বই পড়া

মানব সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই বই মানুষের জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে কিন্তু বর্তমানে মানুষ বিনোদন বা আনন্দ লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে বই পড়েনা। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা থাকার কারণে মানুষ বই পড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত ১০০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে মানুষের মধ্যে বই পড়ার চাহিদা সে হারে বাড়েনি বরং মানুষের মধ্যে বেড়েছে সহজলভ্য বিনোদনের চাহিদা। বিভিন্ন সহজলভ্য বিনোদন মানুষের বই পড়ার আগ্রহকে বিনষ্ট করে যার কারণে মানুষ এখন জ্ঞান অর্জনের জন্য নয় কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে বই পড়ে। যার মধ্যে মানুষের কোন আত্মার পরিতৃপ্তি থাকে না আর এজন্যই মানুষ বই পড়ার আনন্দ খুঁজে পায় না বরং বইয়ের মধ্যে খুঁজে পাই একঘেয়েমি এবং বিরক্তি।

বই পড়ার নেশা

বিবর্তনের এই যুগে এসে মানুষ বই পড়া থেকে যেন আগ্রহ হারিয়ে গেছে। মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন বিনোদনে আর এই নেশা থেকে মানুষকে বের করে এনে বই পড়ার নেশায় আসক্ত হতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিলগেটস, ওমর খৈয়াম বিভিন্ন কবিদের মতো বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। বইগুলো এমন ভাবে রচনা করতে হবে যেন মানুষ গোলক ধাঁধায় আটকে যায় এবং একটি বই শেষ না করতেই আরেকটি বই পড়ার আগ্রহ তার ভিতরে জন্মাতে পারে।

আমিও বই পড়া

বর্তমান সময়ের গতানুগতিক বই পড়া মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের থেকে আমি কিছুটা আলাদা কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি বিনোদনের তুলনায় বইয়ের প্রতি একটু বেশি আকৃষ্ট। আমি বই পড়ার সময় গল্পের বইয়ের মধ্যে তফাৎ না করে জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং আনন্দ লাভের নিমিত্তেই বই পড়ি। আমি বাংলা, ইংরেজি বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন লেখকদের বই পড়ি। বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য থাকলেও প্রতিটা বই আমার মনের মধ্যে আনন্দ বয়ে আনে। আমি ইতিহাস, পদার্থবিজ্ঞান, সাহিত্য সব ধরনের বই পড়ি তবে এর মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞান আমাকে বেশি আনন্দ দেয়।

উপসংহার

বই পড়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করা যায় তবে সেই আনন্দ উপলব্ধি করতে হলে নিজেকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে আর বই পাঠের মাধ্যমে আনন্দ লাভ করতে হলে নিজেকে অবশ্যই অধ্যাবসায় হতে হবে কারণ একমাত্র উৎকৃষ্ট বই পারে মানুষের প্রকৃত সুখ ও আনন্দ দিতে তাই বিখ্যাত সাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন - " আমার মধ্যে যদি উত্তম বলে কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছেই ঋণী"। তাই আত্মিক তৃপ্তি লাভের জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url