২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি জেনে নিন

২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি আমাদের জানা প্রয়োজন কারণ বাঙালি হল এমন একটি জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। তাই বাঙালি হিসেবে আমাদের ২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি জানা একান্ত প্রয়োজন। 

Image

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অমর একুশে ভাষা শহীদদের স্মরণীয় করে রাখতে এই দিবসটি পালন করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রদান করে। নিচে ২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি আলোচনা করা হলো-

২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের একটি গৌরগোজ্জ্বল দিন। এই দিন মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন হয় রাজপথে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। এই দিন শহীদ হন সালাম, বরকত, শফিক, জব্বার, রফিক সহ আরো অনেক নাম না জানা বাংলার দামাল ছেলেরা। 

হাজারো শহীদের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা।এই একুশে ফেব্রুয়ারি এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ও সুপরিচিত। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির গৌরব উজ্জ্বল ও স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

কত সাল থেকে ২১ শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়

১৯৫৩ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণে "শহীদ দিবস" হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শহীদদের সম্মানে এই দিনে কালো পতাকা উত্তোলোন, খালি পায়ে শোভাযাত্রা,  ফেরি প্রভাত ফেরী, শহীদদের কবর ও  শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া সহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে লাখ জনতা শহীদ হলেও তাদের সম্মানে ১৯৫৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

২১ শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি ইতিহাস

বাংলা ভাষার দাবিতে বাঙালির আত্ম অন্বেষায় যে ভাষা চেতনার উন্মেষ ঘটে তারই সূত্র ধরে ১৯৪৭ সালের নভেম্বর - ডিসেম্বরে ভাষা বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি হত্যার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। এবং বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে তার শেষ হয়।

১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং ঘোষণা করেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। .১৯৫২ সালের জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নিজামুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জিন্নার বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনিও বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার দেওয়া এই বক্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রতিবাদের জন্ম দেয়। 

আরো পড়ুনঃ রচনা - সাম্প্রতিক বিশ্ব ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং কোন সমাবেশ, জনসভা, মিছিল নিষিদ্ধ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ক্যাম্পাসে ২১শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে এক বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে ১৪৪ ধারা অমান্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর পুলিশ চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার সহ অনেক নাম না জানা ছাত্র শহিদ হন। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের আয়োজন করেন। কিন্তু ছাত্রদের এই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং বিক্ষোভ কারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে .৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। মাতৃভাষার লড়াইয়ে ছাত্রদের মৃত্যুকে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ শে ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে একটি স্মৃতিসম্ভ গড়ে তোলে। যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ার গুঁড়িয়ে দেয় । এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন আরো বেগবান হয়।১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট। আর গণপরিষদের অধিবেশনে ৭ মে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 

পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা প্রচলন বিল পাস হয়। ১৯৮৭ সালের ৮ই মার্চ তা কার্যকর করা হয়।

২১ শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি কি বার ছিল

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলা ১৩৯৮ সাল ৮ ফাল্গুন বৃহস্পতিবার। এই দিন বাংলার দামাল ছেলেরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি বর্ষন করে। এইগুলি বর্ষণে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ  কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একুশে / ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

২১ শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের নাম

৫/পাঁচজন ভাষা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারা হলেন - আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বর, শফিউর রহমান এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ। ২০০০ সালে এসব ভাষা শহীদদের রাষ্ট্রীয় "একুশে পদকে" ভূষিত করা হয়। জব্বার ও বরকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। আর রফিক ছিলেন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে। পাকিস্তানের নির্বাচন লেখক লালখান ২০০৮ সালে প্রকাশিত তার "পাকিস্তানস আদারস্টোরি দা ১৯৬৮ - ৬৯ রেগুলেশন" নামক বইয়ে লিখেছেন, 

পুলিশের গুলিতে ২৬ জন নিহত ও ৪০০ জনের মত আহত হয়েছিল। অলি আহাদ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তার দেওয়া তথ্যমতে ২২ শে ফেব্রুয়ারি ভিক্টোরিয়া পার্কের আশেপাশে বংশাল রোড ও নবাবপুর রোডে পুলিশের গুলিতে কতজন মারা গেছে তার সঠিক সংখ্যা কারো জানা নাই। "একুশে ৭১" নামক বইয়ের আহমেদ রফিক লিখেছেন, নিহতদের মধ্যে সিরাজউদ্দিন, আব্দুল আউয়াল ও কিশোর ওহি উল্লাহর নাম উল্লেখ করেছেন।কবির উদ্দিন আহমেদ আর একুশের

আরো পড়ুনঃ জাতীয় শোক দিবস রচনা -  ১৫ ই আগস্ট রচনা (৬ - ১২)

ইতিহাস এবং হাসান হাফিজুর রহমান তার একুশে ফেব্রুয়ারি নিবন্ধে লিখেছেন, ৮/ আটজনের মৃত্যুর কথা সন্দেহাতীত ভাবে জানা যায়। আর এই সূত্র ধরেই এম আর আক্তার মুকুল ৮ জন ভাষা শহীদের তালিকা তৈরি করেছেন।এই তালিকাটি তে ২১শে/ একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ হয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক এবং জব্বার। আর ২২শে/ বাইশে ফেব্রুয়ারিতে শহিদ হয়েছেন আব্দুল আউয়াল, শফিকুর রহমান, ওয়ালীউল্লাহ ও অজ্ঞাতো বালককে এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন ৫/ পাঁচজন। এই.৫/পাঁচজন হলেন - সালাম, বরকত, রফিক,জব্বার এবং শফিউর।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে স্বীকৃতি পায়

২১ শে /একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার কাহিনীটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এই কাহিনী শুরু বাংলাদেশে না হলেও বাঙালির হাত ধরেই ১৯৯৮ সালে এই অসামান্য অর্জনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কানাডায় বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল সালাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণার প্রাথমিক আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনানের কাছে।

২৯ মার্চ কানাডায়  ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভারস অফ দ্য সোসাইটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে প্রস্তাব তুলে ধরে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান এর কাছে । ১০ জন বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ সেই প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে এই বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারিসের জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ইউনেসকোতে যোগাযোগ করা হয়। 

১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার জন্য রফিককে অনুরোধ জানানো হয়। এই অনুরোধের পরে রফিক - আব্দুল সালাম কে সাথে নিয়ে "মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভারস অফ দা ওয়ার্ল্ড" নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান।এতে একজন জার্মানভাষী,  একজন কাচ্চিভাষী, একজন ইংরেজিভাষী, একজন ক্যান্টোনিভাষী  সদস্য ছিলেন। তারা আবারো “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড”-এর পক্ষ থেকে  কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন, 

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা - অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন 

এবং চিঠির একটি কপি ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয় যিনি ছিলেন  ইউএনওর কানাডীয় দূত। ১৯৯৯ সালে তারা প্রথমে  জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া তাদের পরামর্শ দেন যে , এই  প্রস্তাবটি  ৫ টি সদস্য দেশ যেমন – বাংলাদেশ ,কানাডা , ভারত, হাঙ্গেরি এবং ফিনল্যান্ড দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর ২৯টি দেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস যা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে  জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম

অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাস করা হয় আর তা হলো এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ।  বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে । মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস 

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। বাংলার দামাল ছেলেরা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য রাজপথে আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন সালাম ,বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর সহ অনেকেই। মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বের কোন দেশকে যুদ্ধ করতে হয়নি এবং প্রাণ ও দিতে হয়নি। 

আরো পড়ুনঃ জেল হত্যা দিবস - জাতীয় চার নেতা কেন জেলে ছিলেন

মাতৃভাষাকে রক্ষা করার এমন ত্যাগ দেখে ইউনেস্কো ফ্রান্সের প্যারিস শহরে তার ৩০ তম অধিবেশনে বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করে। সেই অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের মূল প্রস্তাবক ছিল বাংলাদেশ ও সৌদি আরব।

তবে এতে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেরই সমর্থন ছিল।  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সর্বপ্রথম পালন করা হয় ২000 সালের ২১ /একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় প্যারিসে। আর সেই বছর থেকেই জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতেও যথাযজ্ঞ মর্যাদার সাথে পালন করা হয় এই ২১/একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

২১শে / একুশে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। একুশে ফেব্রুয়ারি হল ভাষার জন্য আন্দোলন, মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন। এই দিনটি সমস্ত বাংলার জনগণের কাছে একটি স্মৃতিময় উজ্জ্বল দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পরিচিত। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার, ৮ ই ফাল্গুন এবং বাংলা ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ। বাংলা ভাষার দাবিতে এই দিনে রাজপথে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো নাম না জানা বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। 

এই দিনে প্রাণ উৎসর্গকারীদের আমরা ভাষা শহীদ হিসেবে অভিহিত করে থাকি। ১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক প্রথম বাংলাকে ঘোষণা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।  প্রতিবছর ২১শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত ভাব গাভীর্য ও মর্যাদার সাথে পালন করা হয়ে থাকে। বাংলার আকাশে বাতাসে একটি সুরই ধ্বনিত হয় "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি"।পুরো পৃথিবীতে একটি মাত্র জাতি আর তা হল বাঙালি জাতি, 

আরো পড়ুনঃ  জেনে নিন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত - রচনা - সম্পর্কে 

যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তাইতো বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের দরবারে সমাদিত ,সম্মানিত। আর এ জন্যই বাঙালি জাতির বুকে স্মৃতি হয়ে থাকবে এই অমর গাঁথা একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতি এই একুশে ফেব্রুয়ারিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এর ওপর নির্মিত করেছে বিভিন্ন নাটক, গান, কবিতা যা আজও বাংলার আকাশে - বাতাসে ধ্বনিত হয়। ভাষার দাবিতে হওয়া সেই একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগকে বাঙালি জাতি চির স্মরণীয় করে রেখেছে এবং এই আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি আজীবন চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

২১/একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য

২০৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য একটি চির স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সেই দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ১৯,২০ এবং ২১ অর্থাৎ মঙ্গলবার বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই তিন দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শহীদদের স্মৃতি স্মরণে প্রতিবছর ২১ শে/একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য দিতে হয়।

দেশ স্বাধীনতার বেশ কিছুদিন পরে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের পরে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর তখন থেকে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনকে কেন্দ্র করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মহল্লা বা পাড়া এবং কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ভাষা শহীদের স্মরণে মিলাদ মাহফিল, সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্যের আয়োজন করা হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম

যেকোনো অনুষ্ঠান বা মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার মতোই একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য দিতে গেলে আপনাকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে আপনি একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠেছেন। আপনাকে অবশ্যই একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়েই বক্তব্য দিতে হবে। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ সকলে একুশে ফেব্রুয়ারীর তাৎপর্য বুঝতে পারে। আপনাকে অবশ্যই বক্তব্য যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত করতে হবে।

আপনার বক্তব্যের মধ্যে ২১শে/ একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তুলে ধরতে হবে। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে আপনার বক্তব্য শুরু করতে হবে। এরপরে আলোচনা অনুষ্ঠানে আপনার অবস্থান বুঝে আপনাকে বক্তব্য দিতে হবে। আপনার বক্তব্য দেওয়ার পূর্বে যদি কেউ শহীদদের স্মরণে নিরবতা পালন না করে থাকে তাহলে আপনি শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

মনে রাখবেন আপনার বক্তব্য সব সময় নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বেশি থাকতে হবে। তারা যেন আপনার বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে অবশ্যই রহস্য জড়িত কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে যেন যারা আপনার বক্তব্য শুনছে তারা যেন মনে করে আরো কিছু শুনতে হবে জানতে হবে। আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার বক্তব্য শেষ করতে হবে যেন আপনার গ্রহণযোগ্যতা বজায় থাকে।

আর হ্যাঁ একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন যে, আপনি একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। আপনি অবশ্যই ইংরেজি কোন বাক্য ব্যবহার করবেন না।

একুশে ফেব্রুয়ারি দিবস টি কয়টি দেশে পালন করা হয়

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা আর এই মাতৃভাষা এমনিতেই আসেনি এই বিশ্বে বাঙালি হলো এমন একটি জাতি যারা নিজেদের ভাষায় কথা বলার জন্য অর্থাৎ ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। আর এর মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা আমাদের এই বাংলা ভাষাকে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং এই স্বীকৃতিতে ১৮৮ দেশ সমর্থন জানালেও 

জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহ যথাযথ মর্যাদায় এই দিবসটি পালন করে থাকে দুই হাজার ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে। আর তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে একুশে ফেব্রুয়ারি দিবস টি কয়টি দেশে পালন করা হয়! আর আমাদের যাদের মনে এই প্রশ্নটি জাগে তাদের জন্য আমি বলছি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২00 টি দেশ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

উপসংহার

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের একটি গৌরগোজ্জ্বল দিন। এই দিন মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন হয় রাজপথে।হাজারো শহীদের বিনিময়ে আমরা ফিরে পাই আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা।এই একুশে ফেব্রুয়ারি এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ও সুপরিচিত। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির গৌরব উজ্জ্বল ও স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url