কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা সম্পর্কে জানুন

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই দেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে তাই কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ একান্ত প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা লিখার প্রয়োজন হয়। তাই আমি কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি।

Image

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা তোমাদের পরীক্ষায় আমার এই রচনা লিখতে পারো। আমি আশা করি এই রচনা লিখলে তোমরা বেশ ভালো করবে। নিচে কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা হলো -

কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা 

ভূমিকা

জর্জ ওয়াশিংটন বলেন" কৃষি মানুষের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর, সবচেয়ে উপকারী এবং সবচেয়ে মহৎ কর্মসংস্থান"।বর্তমান যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি। বাংলাদেশ হলো কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হল কৃষি। আমাদের জীবনের উন্নতি ত্বরান্বিত হচ্ছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে।কবি আমানত উল্লাহ সোহান কৃষকের হাসি কবিতায় বলেন -

কৃষকের মুখে হাসি

প্রানে ভালোবাসা

সোনালী ফসল পাবে

একটাই আশা

আরো পড়ুনঃ  কৃষি উদ্যোক্তা -  রচনা  সম্পর্কে জেনে নিন

আর কৃষি ক্ষেত্র বিজ্ঞানের ব্যবহার শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের অবদানের কারণে। কৃষিতে এসেছে নতুন বিপ্লবের ছোঁয়া।কৃষকের ঘরে কাঙ্খিত অধিক ফসল এনে দিয়েছে আজকের এই বিজ্ঞানের ছোঁয়া। তাইতো জন কনেল বলেছেন -"কৃষিকাজ করা অর্থ চিরকাল ছাত্র থাকা কারণ কৃষি প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আসে"।

কৃষি কাজে বিজ্ঞান কি

বিজ্ঞান হলো জ্ঞানের ভান্ডার। কৃষিকাজের সাথে সম্পর্কিত যে বিজ্ঞান তাকে বলা হয় কৃষিবিজ্ঞান। অর্থাৎ খাদ্য,বস্ত, উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণ এর সাথে সম্পর্কিত যে বিজ্ঞান তাকে বলা হয় কৃষি বিজ্ঞান। এক কথায় কৃষিবিজ্ঞান হল মানুষের ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদ, মাটি, চাষ, ফসল উৎপাদন, ফসল সংগ্রহ, প্রাণী প্রজনন এবং প্রাণী জাতীয় সকল প্রকার প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রযুক্তিই হল কৃষিবিজ্ঞান।

কৃষি বিজ্ঞানের জনক

পৃথিবীতে কোন কিছুই নিজের থেকে সৃষ্টি হয়নি প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টির পেছনে একজন উদ্ভাবক আছেন তেমনি কৃষি বিজ্ঞানের জনক হলেন "জেন্সেটাল" আর আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হলেন "রজার বেকন"।

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রবেশ

সেই প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি কাজ শুরু হলে ও বর্তমানে বিজ্ঞানের সংমিশ্রণে মানুষ সময়ের সাথে সাথে নানা অপ্রাসঙ্গিক বস্তুকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। আর ধীরে ধীরে কৃষি কাজের যে উন্নতি তাকে বলা হয় কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ। প্রথমে মানুষ মাটি খোঁড়ার কাজে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে শেখে। এ কাজ করার জন্য আবিষ্কার করে লাঙ্গলের এবং লাঙ্গল পরিবহনের জন্য গবাদি পশুর ব্যবহার শেখে। জমিতে সেচ প্রদান করার জন্য মানুষ আবিষ্কার করে গভীর নলকূপ, জৈব সার উৎপাদন করার পাশাপাশি মানুষ রাসায়নিক সার উৎপাদন এবং ব্যবহার করতে শেখে। আর এভাবেই কৃষি কাজ বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ ঘটে।

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও কৃষি

বিংশ শতাব্দীর এই যুগে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি। আজ সর্বত্রই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। আমাদের এ ধরনী আজ আলোক আভায় ঝলমল করছে বিজ্ঞানের অবদানের কারণেই। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে আজ পানি সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে যার কারণে উষর মরুভূমি ও আজ হয়ে উঠেছে সবুজ শ্যামল। দুর্গম পাহাড় পরিণত হচ্ছে সমতলভূমিতে। নদী শাসন করে তার গতিপথ পরিবর্তন করা হচ্ছে। 

আরো পড়ুনঃ  লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

আজকে নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে। একসময় এই পৃথিবীতে ১০০ কোটি মানুষের খাদ্য যোগান দিতে হিমশিম খেতে হতো আর আজ বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছে।

মানব জীবনে কৃষির গুরুত্ব

মানুষের জীবনের অস্তিত্ব সরাসরি কৃষির সাথে সম্পর্কিত কারণ পৃথিবীর শুরু থেকে মানুষ কৃষিকাজ করছে এবং এখনো তারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষি মানুষের মেরুদন্ড এবং কৃষি সমাজের ভিত্তি। আর কৃষির উন্নতি মানে সমাজের তথা দেশের উন্নতি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে নিজেদের দেশের জন্য বয়ে এনেছে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ। বিজ্ঞান আজ কৃষি ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দিয়েছে তার কল্যাণময়ী হাত এবং উপকৃত হচ্ছে পুরো বিশ্বের প্রতিটি মানুষ।

মানব সভ্যতা ও কৃষি

কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে ১৮ শতকের শেষের দিকে অর্থাৎ ১৯ শতকের শুরুতে। কৃষিকাজ বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে কৃষকেরা পরিচিত হয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির সাথে। প্রাচীনকালের কাঠের লাঙ্গলের পরিবর্তে কৃষকের হাতে আসে কলের লাঙ্গল। বিজ্ঞান সেচ ব্যবস্থাতে নিয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন আর মানুষের প্রকৃতির পানির উপর নির্ভর করে থাকতে হয় না মানুষ বিজ্ঞানের কল্যাণে বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করছে। আর এসব কাজ সম্ভব হচ্ছে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের কারণে।

অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি

আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি হলো কৃষিকাজে বিজ্ঞানের এক অনন্য অবদানের এসব যন্ত্রপাতি মানুষের শ্রম অনেক কমিয়ে দিয়েছে কৃষিতে যে আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে তা হল -

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন

  • মোয়ার - শস্য ছেদনকারী যন্ত্র
  • রুপার - ফসল কাটার যন্ত্র
  • বাইন্ডার - ফসল বাধার যন্ত্র
  • থ্রেশিং মেশিন - মাড়াই যন্ত্র
  • ম্যানিউর স্পেডার - সার বিস্তারণ যন্ত্র
  • ট্রাক্টর - চাষাবাদ করার যন্ত্র
  • সিল ড্রিম - গর্ত খনন যন্ত্র
  • বিরিড্রাম সিডার
  • স্পেয়ার
  • ডায়া ফার্ম পাম্প
  • ট্রেডল পাম্প
  • রোয়ার পাম্প  ইত্যাদি।

অধিক ফসলের মূল মন্ত্র

কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই কারণ অধিক ফলন, উন্নত জাত উদ্ভাবন ও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের চাহিদা আর এই চাহিদা পূরণ করতে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার প্রয়োজন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ১৯৬১ সাল থেকে ২০০১ সালের মধ্যে অর্থাৎ ৪০ বছরের ব্যবধানে জনসংখ্যা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ আর এই অধিক জনসংখ্যার খাদ্যের অভাব পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে একমাত্র কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদানের কারণে। তাই কৃষি কাজে বিজ্ঞানের কোন বিকল্প নেই।

কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সমূহ

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অভিনব সাফল্য হলো জিন প্রযুক্তির প্রয়োগ। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির ব্যবহার করে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ফসল আবার উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষি কাজে বিজ্ঞান শুধু এখানেই থেমে থাকেনি, কৃত্রিম উপায়ে সেচের ব্যবস্থা চালু করেছে। যে জমিতে পূর্বে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলতো সেখানে আজ একই জমিতে বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল ফলছে।

কৃষির প্রাচীন চাষবাদ পদ্ধতি

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আদিম সমাজের মানুষ বেঁচে থাকার জন্যই তাদের প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে। তারা কাঠের লাঙ্গল তৈরি করে এবং বিভিন্ন জন্তু ব্যবহার করে চাষাবাদ করতো। ফসল উৎপাদনের জন্য তারা প্রকৃতির বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতো যার কারণে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা প্রভৃতি কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। একই জমিতে তারা বারবার একই ফসল বুনতো যার কারণে উৎপাদন কম হতো। ফসল উৎপাদনকে তারা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিত যার কারণে কৃষকের মধ্যে সব সময় হতাশা কাজ করতো।

কৃষি ও বিজ্ঞান গবেষণা

আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের গবেষণার ফলে কৃষিকাজে প্রচলন ঘটিয়েছে একটি সুসংহত বিষয়ের যা আজ মানুষের জন্য আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান এনে দিয়েছে এক অভাবনীয় সাফল্য। গবেষণার ফল হিসাবে কৃষিকে পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রী কৃষি নিয়ে নানা গবেষণা করে থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে উচ্চ ফলনশীল বীজের আবির্ভাব ঘটেছে 

আরো পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

যার কারণে অল্প খরচে এবং স্বল্প ব্যয় অধিক মাত্রায় ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে কৃষি ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া গ্রীনরোভোল্যুশন বা সবুজ বিপ্লব সম্ভব হয়েছে উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনের জন্য।

কৃষি কাজে বিজ্ঞানের পরিধি

কৃষিকাজ সর্বক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক। কৃষি আর অশিক্ষিত লোকের হাতে বন্দি নয়, এমনকি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলও নয়, বিজ্ঞান উন্নত জাতের বীজ উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে। আর এসব ফসল উৎপাদনে তুলনামূলক কম সময় নেয় এবং ফলনও অধিক হয়। বীজ রোপন, বীজতলা পরিচর্যা, বীজবাছাই, ফসল সংগ্রহ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল সংরক্ষণ এমনকি ভোক্তার কাছে ফসল পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে।

মাটির গুনাগুন পরীক্ষা

জমিতে বীজ রোপনের আগে মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করা প্রয়োজন আর এইসব কাজ করা সম্ভব হয় বিজ্ঞানের কল্যাণে। মাটিতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে যেমন - অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, খনিজ লবণ, কার্বন, ম্যাগনেসিয়াম ও হাইড্রোজেন। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাটির PH মান নির্ণয়। এগুলো জানা থাকলে ফসলের জাত নির্বাচন করা ও সার প্রয়োগ করা সহজ হয় আর এসব কিছুই আমরা জানতে পারি কৃষিকাজে বিজ্ঞানের মাধ্যমে।

চাষের জমি তৈরি

জমিতে বীজ বপনের আগে জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হয়। কিন্তু পূর্বে জমি চাষ করা হতো কাঠের লাঙ্গল ব্যবহার করে। তবে কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানের কারণে এখন আর জমিতে কাঠের লাঙ্গল ব্যবহার করা হয় না, তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ট্রাক্টর যাকে কলে লাঙ্গল বলা হয়। অল্প সময়ে এবং স্বল্প পরিশ্রমে জমি গভীরভাবে চাষ করা সম্ভব হয় আর এতে ফসলের উৎপাদনও বেশি হয়।

জিন গবেষণা

কৃষি জগতে এক নতুন বিপ্লব এনে দিয়েছেন জিন গবেষণা কারণ জিনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে বীজের বৈশিষ্ট্য। জিন গবেষণা করে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে যার কারণে প্রতিকূল পরিবেশেও অতি অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে।

সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যা

কৃষি কাজ করার জন্য আগে প্রকৃতির বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে থাকতে হতো কিন্তু কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানে মানুষ এখন কৃত্রিম উপায়ে সেচ প্রদান করছে। এছাড়াও বীজ তলা তৈরি. বীজ রোপন. সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এমনকি ফসল কাটাসহ ফসল মাড়াই করা হয়ে থাকে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে। এক কথায় সকল পরিচর্যার কাজ করা হয় কৃষি কাজে বিজ্ঞানের অবদানে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

কৃষি কাজে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে সুনামি এলাকায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে মানুষ তাদের কষ্টে অর্জিত ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে পারে। আর ফসল ঘরে তুলতে পারলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

প্রাগৈতিহাসিক কৃষিকাজ

প্রাচীনকালে মানুষ কৃষিকাজ প্রকৃতিকে দেখে শিখেছিল কারণ আগের যুগের মানুষ ছিল যাযাবর। তারা কোন কিছু খাওয়ার পর বীজ ফেলে দিত আর এর থেকে চারা উৎপাদন হতো আর এভাবেই তারা কৃষিকাজ শিখেছিল। পরবর্তীতে তারা মাটি গর্ত করে বীজ বপন করতে শিখে। আর এভাবেই তারা ধীরে ধীরে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

কৃষি ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এদেশের মাটি ও জলবায়ু কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। তাইতো কবি বলেছেন - "অন্য দেশে আছে সোনার খনি আর আমাদের দেশে আছে সোনার মাটি যেখানে সোনার ফসল ফলে"। যদিও এখনো বাংলাদেশের শতকরা ৮0 ভাগ কৃষক সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করছে। আবার আমাদের দেশে কৃষি কাজকে নিম্নমানের পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে এখনো তেমন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয় না।

আরো পড়ুনঃ  বাংলাদেশের উৎসব - রচনা সম্পর্কে  জেনে নিন

যার কারণে কৃষকের প্রচুর শ্রম দিতে হয় ও তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করতে পারেনা। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। এছাড়ো কৃষিকাজে তারা ট্রাক্টর, বিডি ড্রাম, সিডার, সিল্ড্র্রিল, স্পেয়ার, ডেয়া ফ্রাম, ঘাস কাটার যন্ত্র এমনকি মাড়াই কারা যন্ত্র ব্যবহার করছে। কৃষি বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বাংলাদেশের কৃষি কাজে সফলতা এসেছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে যদিও বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ এবং গবেষণার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। বাংলাদেশ এ বি আর আর আই BRRI ধানের জাত নিয়ে গবেষণা করে। এছাড়া বি আই এন এ BINA ইন্সটিটিউট সকল প্রকার কৃষি পণ্য নিয়ে গবেষণা করে থাকে। বাংলাদেশে কয়েকটি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার এক মাইলফলক মহিষের জীবন রহস্য উদঘাটন ও পাটের জাত রহস্য উদ্ভাবন।

কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ

কৃষি বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তাই দেশও জাতির কল্যাণে কৃষিকাজে উন্নতি সাধন করতে হবে। সরকার কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সোচ্চার এবং কৃষি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে উন্নত করতে হলে সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সার, বীজ ব্যবহার করতে হবে। আর কৃষিকাজে উন্নতির জন্য বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করছে উচ্চ ফলনশীল বীজ।

কৃষি কাজে প্রযুক্তি বিনিময়

কৃষিকাজে বিজ্ঞানের এক অনন্য অবদান হলো কম্পিউটার নির্ভর নেটওয়ার্ক তৈরি করা। মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব সহজেই কৃষি বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারছে এবং উপকৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর চালু করেছে কৃষি সেবা সার্ভিস।

বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান নির্ভর হতে পারেনি আর এর প্রধান কারণ হলো-

  • প্রযুক্তি তথা কম্পিউটারের অভাব
  • পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি প্রশিক্ষণ এবং সংগঠনের অভাব
  • ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধ ব্যবহার
  • পর্যাপ্ত তথ্য কেন্দ্রের অভাব
  • ভাষাগত জটিলতা

আর ভাষাগত জটিলতার প্রধান কারণ হলো মোবাইল বা কম্পিউটারে প্রায় সকল তথ্য ইংরেজিতে থাকে যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না।

উন্নত বিশ্বের কৃষি

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞান নির্ভর আর এসব দেশে কৃষি কাজ একটি সম্মান জনক পেশা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে প্রতিদিন একটি মাত্র ট্রাক্টর এর মাধ্যমে ১০০ একর জমি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন মোয়ার, ম্যানিউর, স্পেডার, বাইন্ডার, রপার এবং ফ্রেসিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এগুলো একসঙ্গে তিন থেকে চারটি ফসল কাটার যন্ত্র কে একত্র করতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে।

কৃষিতে বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিক

বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের মাধ্যমে যেমন উৎপাদন বেড়েছে তেমনি এর ক্ষতিকর প্রভাব ও লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ তাই ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন - জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে কারণ অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক জমির উর্বরতা হ্রাস করছে এবং বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এগুলো বিভিন্ন জলাশয়ে গিয়ে মিশছে যার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। 

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

আবার অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের জন্য পানির স্তর বিপদ সীমার নিচে নেমে যাচ্ছে যার কারণে পানিতে মিশছে আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর বিষ। তাই বিজ্ঞানের ইতিবাচক ব্যবহার করে অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি থেকে দেশ তথা পুরো বিশ্বকে বাঁচাতে হবে।

আমাদের করণীয়

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে পিসিতে উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন তাই আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে যে সকল অবদান রাখা প্রয়োজন তা হলো

  • কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহারের বিষয় পর্যাপ্ত বাড়ানো
  • আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কৃষকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে  হবে
  • প্রয়োজনীয় সকল খেল ক্ষেত্রেই কৃষি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে
  • কৃষকদের মাঝে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে জটিল তথ্য সহজ করে উপস্থাপন করতে হবে
  • কৃষকদের বিভিন্ন ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে

উপসংহার

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশে এখনো কৃষিকে নিম্ন পর্যায়ের কাজ বলে ও মনে করা হয় কিন্তু উন্নত বিশ্বের কৃষি হল সবচেয়ে সম্মানজনক জীবিকা। আর এই বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরী। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের কৃষি কেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url