বড় দিন - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

সারা বিশ্ব জুড়ে ২৫ ডিসেম্বর খ্রিসমাস বা বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে। আর বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং ক্যাথলিক ধর্মের লোকজন এই দিবস পালন করে থাকে। যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সময় বড় দিন - রচনা লেখার প্রয়োজন হয়। আর আমি তাদের জন্য বড় দিন - রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় বড় দিন - রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

Image

বড় দিন - রচনা 

ভূমিকা

সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে কারন উৎসব মানুষের জীবনের একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ। উৎসব যে ধরনেরই হোক না কেন এবং যে ধর্মের লোকের জন্যই হোক না কেন প্রত্যেকের জন্যই তাদের উৎসব একটি অন্যরকম আনন্দের বিষয়। পৃথিবীতে এমন অনেক ধর্মের উৎসব রয়েছে যেগুলো মানুষ জাতি ধর্ম ভুলে একই দিনে একই সাথে আনন্দে মেতে উঠে এবং পালন করে থাকে। বড়দিনও ঠিক তেমনি একটি উৎসব যা পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর সারা বিশ্বব্যাপী লোকজন পালন করে থাকে। তবে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন নামে অভিহিত হলে ও পাশ্চাত্য বিশ্বে এটি খ্রিসমাস নামে বেশি পরিচিত।

বড়দিন কি

বড়দিন হল খ্রিস্টান ধর্মের এমন একটি উৎসব যে দিনে যীশু খ্রীষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। আর ইতিহাসের তথ্যমতে ২৫ শে ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্ট জন্মগ্রহণ করেন বলে এই দিন বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা যীশু খ্রীষ্ট কে ঈশ্বরের পুত্র বলে অভিহিত করে থাকেন। তারা আবার যীশুখ্রীষ্ট কে সূর্যের পুত্র ও বলে থাকেন। আর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালন করেন বলেই এই দিন বড়দিন হিসেবে অভিহিত করা হয়।

প্রথম কবে বড়দিন পালন করা হয়

৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম খ্রিসমাস বা বড় দিন পালন করা হয় আর এই দিন পালন করা হয় ক্যাথলিক রাজা কনস্ট্যান টাইনের আমলে। তবে ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বড়দিন পালন করা হলেও ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয় এর কয়েক বছর পরে আর এই ঘোষণা করেন পোপ জুলিয়াস ঘোশণা। ২৫ শে ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন তাই এই দিন বড়দিন হিসেবে বা খ্রিসমাস হিসেবে পালন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় ২৫ ডিসেম্বর রাতে বেতেলহেমের এক গোশালায় যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়

আরো পড়ুনঃ জানুয়ারি অর্থ কি - ১লা জানুয়ারি (থার্টি ফাস্ট) এর ইতিহাস জেনে নিন

কুমারী মা মেরীর কোলে। আর তার জন্ম হয় এই পৃথিবী থেকে হিংসা-বিদ্বেষ এবং ভেদাভেদ মুছে ফেলার জন্য। এমন অনেকেই আছেন তারা যীশুকে সূর্যের পুত্র বলে অভিহিত করে থাকেন। আর যিশুখ্রিস্টের জন্ম থেকেই খ্রিস্ট্র শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। তবে বড়দিন নিয়ে অনেক কপ্টিক চার্চ ও অর্থোডক্স গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুলিয়ান দিন পঞ্জি অনুসারে ৭ জানুয়ারিকে বড়দিন হিসেবে পালন করে থাকে।

খ্রিসমাস শব্দের উৎপত্তি

খ্রিসমাস শব্দটি ইংরেজি শব্দ এবং এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন অনুসারে খ্রিস্টের মাস বা উৎসব হিসেবে এসেছে। তবে খ্রিসমাস কথাটির উৎপত্তি ঘটে আদি ইংরেজি Cristes maesse এবং মধ্য ইংরেজি Chirstemasse শব্দ থেকে। ১০৩৮ সালের এক রচনায় এই খ্রিসমাস শব্দের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয় গ্রীক শব্দ এবং লাতিন শব্দের সমন্বয়ে খ্রিসমাস শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ Cristes শব্দটি গ্রিক শব্দ Chirstos থেকে এসেছে এবং  maesse শব্দটি লাতিন শব্দ Missa শব্দ থেকে এসেছে।

আর এই শব্দদ্বয়ের অর্থ হলো পবিত্র উৎসব। আবার বলা হয় Chirst বা খ্রিস্ট শব্দের প্রথম অক্ষর X এক্স হল প্রাচীন গ্রিক ভাষার শব্দ আর এই অক্ষরটির সমরূপ হল লাতিন X শব্দটি যার কারণে এই অক্ষরটি যিশুখ্রিস্টের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ষোড়শ শতাব্দী থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কারণে যীশু খ্রীষ্টের নাম সংক্ষেপ করে খ্রিসমাস না বলে এক্সমাস কথাটিও বলা হয়ে থাকে।

কেন খ্রিসমাস পালন করা হয়

১৬৬৮ সালে ভারতে প্রথম খ্রিসমাস  পালন করা হয়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় জব চার্নক ভারতবর্ষে প্রথম বড়দিন উৎসব পালন করেন। খ্রিস্টান ধর্ম অনুসারে এই দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন এবং এই পৃথিবীকে পাপমুক্ত করার জন্য এই পৃথিবীতে যিশুখ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করে আর এই দিনই যীশুখ্রীষ্ট কে কুষবিদ্ধ করে হত্যা করা হয় তাই এই দিন যিশু খ্রিসমাস  পালন করা হয়। এই দিনে পুরো বিশ্ব যাবতীয় দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছিল যে কারণেই সবাই এই দিনে একে অপরকে আনন্দের সঙ্গে উপহার দিয়ে থাকে যার কারণে খ্রিসমাস পালন করা হয়।

খ্রিসমাস উদযাপন

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ২৫ শে ডিসেম্বর খ্রিসমাস বা বড়দিন হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ২৫ এর ডিসেম্বর বড়দিন একটি প্রধান সরকারি ছুটির দিন হিসেবেই পালিত হয়ে থাকে। তবে এমন অনেক খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে খ্রিসমাস বা বড়দিন মহাসমরহে উদযাপন করা হয়ে থাকে। তবে কয়েকটি অখ্রিস্টান দেশে বড়দিন উদযাপনের সূত্রপাত ঘটেছিল পূর্বতন উপনিবেশিক শাসনামলে। আবার অন্যান্য দেশগুলিতে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান বৈদেশিক সংস্কৃতির প্রভাবে ও বড়দিন উদযাপন শুরু করে।

বড়দিনের উৎসব সমূহ

বড়দিন অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর এই দিনটিকে বিভিন্ন জাঁকজমক ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনে গির্জাগুলিকে অতি সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। আবার কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মীয়- পরিজনের মধ্যে চলে উপহার দেওয়া নেওয়া। যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মের লোকজন এই দিন কেক কাটে এবং বিভিন্ন প্রকার আয়োজন করে থাকে। পাশ্চাত্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সবচেয়ে বেশি জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।

বড়দিন পালনের প্রকারভেদ

সারা বিশ্বব্যাপী পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে এবং এই দিন বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং ক্যাথলিক ধর্মের লোকজন পালন করে থাকে। তাই বিভিন্ন ধর্মের লোক হওয়ার কারণে তাদের অনুষ্ঠান পালনের ধরন আলাদা হয়ে থাকে যেমন - ক্যাথলিক দেশ গুলিতে বড়দিনের আগের দিন অর্থাৎ ২৪ শে ডিসেম্বর শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আবার অন্যান্য দেশে অন্যান্য আমদ মূলক চরিত্র যেমন শান্তা ক্লোজ কে নিয়ে মূলত ধর্মনিরপেক্ষ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আবার অনেক দেশে বড়দিন উপলক্ষে পরস্পরের মধ্যে উপহার বিনিময় করে আবার ও কোন কোন দেশে বড়দিন হিসাবে ৭ জানুয়ারি পালন করা হয়ে থাকে।

বড়দিনের সান্টাক্লজ

বড়দিনের সাথে সবচেয়ে বেশি অতোপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে সান্টাক্লজের নাম। এই দিনে সান্টাক্লজ বড়দিনের উপহার ছোটদের মাঝে পৌঁছে দিয়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে অনেকে মনে করেন স্যান্টাক্লজ নামটি সিন্টার ক্লাস নামের অপভ্রংশ যার সাধারণ অর্থ হল সেন্ট নিকোলাস।  নিকোলাস শিশুদেরকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে তুরস্কের মিশর মীরার বিশপ সেন্টা মতবাদ অনুসারে আবার খ্রিষ্টীয় ত্রয়দা শতাব্দীতে নিকলাস এর নাম বেশি পরিচিতি লাভ করে নেদারল্যান্ডে এবং দক্ষিণ ইউরোপে এবং তারা উপহার আদান প্রদানের ঐতিহ্য চালু হয়। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

বড়দিন পালনে সামাজিক গুরুত্ব

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উৎসবের মতো বড়দিন পালনেও একটি সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বব্যাপী পালিত এই দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর মানুষের মধ্যে একটি ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। মানুষ তার প্রতিদিনের ব্যস্ততা ভুলে এই দিন এক হয়ে বিভিন্ন উৎসব পালন করে এবং বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, উঁচু-নিচু সকল ভেদাভেদ ভুলে তারা একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করে এবং এখানে সৌহার্দ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়।

বড়দিন পালনে অর্থনৈতিক গুরুত্ব

সামাজিক গুরুত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও রয়েছে কারণ এই দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা ও জীবন নির্ধারণ করে এবং খ্রিসমাস পালনের উপর নির্ভর করেও পৃথিবীর সকল পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেচাকেনার পরিমাণ বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। বড়দিন উপলক্ষে মানুষ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী কেনাকাটা করে, উপহার সামগ্রী কিনে এবং প্রচুর পরিমাণে কেনাকাটা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে মানুষের আয়ের পরিমান বেড়ে যায়। এছাড়াও বড়দিনের শুভেচ্ছা প্রেরণের কার্ড তৈরির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কাগজের কারখানাতেও নিয়োগকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় আর এভাবে মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে।

বড়দিন বিতর্ক এবং নিষেধাজ্ঞা

সারা বিশ্বব্যাপী বড়দিন পালনে যেমন আনন্দ রয়েছে তেমনি বিভিন্ন কারণে এর নিষেধাজ্ঞা ও রয়েছে। যেমন সংস্কারবাদী খ্রিস্টানরা বড়দিন পালনকে মহাপাপ বলে মনে করেন। তারা মনে করেন এই দিনটির সাথে যীশু খ্রীষ্টের জন্মের কোন সম্পর্ক নেই। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বড় দিন পালনের নিষিদ্ধ ছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ও একদল সংস্কার বাদী বড়দিনের উৎসব পালনকে ধর্ম বিরোধী এবং পাপাচার বলে মনে করত। তবে উৎসবের আনন্দে সব সময় এই নিষেধাজ্ঞা কাজ করে না যার কারণে পুরো বিশ্বব্যাপী পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে।

কোন দেশে পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন নয়

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ২৫শে ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন এবং এই দিনে বড়দিন হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। তবে জাপান, আলজেরিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, উত্তর কোরিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশে ২৫শে ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় না।

৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করা হয় যে কারণে

সারা বিশ্বের সংস্কৃতিক এবং জাতীয় ঐতিহ্য গত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যার কারণে বড়দিনের মতো উৎসবের রূপটিও ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশে খ্রিস্টানদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে অনেক কম হলেও বড় দিন বা খ্রিসমাস হল এই দেশের একটি জনপ্রিয় উৎসব। এই দেশে বিভিন্ন প্রকার উপহার প্রদান করে সাজসজ্জার মাধ্যমে বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন দেশের চার্চ ঐতিহ্যশালী জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে

আর জুলিয়ান ক্যালেন্ডার এ ২৫ ডিসেম্বরের দিনটি জার্জিয়ান ক্যালেন্ডার এ ৭ জানুয়ারি হয়ে থাকে। যার কারণে মিশর, ইউক্রেন, সার্বিয়া, আর্মেনিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি কয়েকটি ন্যাশনাল  চার্চ ৭ জানুয়ারিকে বড়দিন হিসেবে পালন করে থাকে। 

২৫শে ডিসেম্বর কেন বড় দিন বলে আখ্যা দেওয়া হয়

বাংলা অভিধানে আকাদেমি বিদ্যার্থী যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর কে বড় দিন বলে আখ্যা দেন এবং তিনি বলেন যে, ২৫ ডিসেম্বর থেকে ক্রমশ দিন বড় হতে শুরু করে এবং রাত ছোট হতে শুরু করে যার কারণে পঁচিশে ২৫ ডিসেম্বর কে বড় দিন বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর বিশ্বজিৎ রায় বড়দির নামকরণ প্রসঙ্গে বলেন, ২৫শে ডিসেম্বর মর্যাদার দিক থেকে বড় দিন।

আরো পড়ুনঃ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস - (রচনা) - সম্পর্কে কিছু কথা

বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য যীশু খ্রীষ্ট যেহেতু ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন আর সারা বিশ্বব্যাপী লোক তার দেওয়া ধর্ম ও দর্শন অনুসারে পথ চলে। আর যিনি এই ধর্ম ও দর্শনের পথ দেখালেন ২৫ ডিসেম্বর তার জন্মদিন তাই ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। আর সেই কারণেই খ্রিস্টান ধর্মের লোকজন এটিকে বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে। ইউরোপীয়রা ১৮-১৯ শতকে ভারতবর্ষে এসে খ্রিস্ট ধর্মপ্রচার শুরু করে। আর যারা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে তাদের কাছে এই দিনটি আরো বেশি মর্যাদার।

আর তাদের মতে যীশু খ্রীষ্ট হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি তাদের জন্য ধর্ম দিয়েছে। তাই তারা মনের সমস্ত আবেগ জড়িয়ে এই দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন হিসেবে পালন করে।

২৫ শে ডিসেম্বর কেন যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন

ইতিহাস অনুযায়ী বেতের হাম নগরে পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর কুমারী মা মেরীর কোলে জন্ম নিয়েছিলেন শিশু পুত্র যীশু। আর খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের পুত্র হলো যীশু। আর যীশুকে  ঈশ্বর এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন মানুষকে সমস্ত রকম পাপ থেকে মুক্তি দিতে। যার কারনে যীশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্বের দিন অর্থাৎ ২৪ শে ডিসেম্বর থেকেই যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনের উৎসব পালন শুরু হয়ে থাকে আর এই নিয়েই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এই দিবসটি পালন করা হয়। আর খ্রিস্টান ধর্মের লোকজন যেহেতু বিশ্বাস করে যে ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন তাই এই দিন যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন পালন করা হয়।

বড়দিনের গুরুত্ব কেন

যীশুখ্রীষ্টের জন্ম কে স্মরণ করে রাখার জন্য খ্রিসমাস পালন করা হয়ে থাকে। আর যিশুখ্রিস্ট কে খ্রিস্টান ধর্মের লোকজন ঈশ্বরের পুত্র বলে বিশ্বাস করেন আর খ্রিস্টপূর্ব শব্দটি যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পূর্বের সময়কে বোঝানো হয়ে থাকে এবং খ্রিস্ট শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যিশু খ্রীষ্টের জন্মের পর থেকে। একটি গবেষণায় যাকে কম ইউনিয়ন বা ইউক্যারিষ্ট বলা হয় এবং সেখানে খ্রিস্টানরা মনে করেন যে, যীশু আমাদের জন্য মারা গিয়েছিলেন এবং তারপরে জীবিত হয়েছিলেন।আর যীশু খ্রীষ্ট জন্ম গ্রহণ করেছিলেন পঁচিশে ২৫শে ডিসেম্বর আর এই কারণেই বড়দিনের এত গুরুত্ব।

কোন কোন ধর্মের লোকেরা বড় দিন পালন করে

সারা বিশ্বব্যাপী অনেক ধর্ম ও সংস্কৃতির লোকজন বড়দিন উদযাপন করে যাদের রয়েছে বিশ্বাস এবং প্রত্যেকের নিজস্ব ঐতিহ্য যেমন বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং ক্যাথলিক সহ বিভিন্ন ধর্মের লোক বড়দিন পালন করে থাকে। এছাড়াও সারা বছর যারা খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাস করেন না তারা ও অর্থাৎ অধর্মীয় লোকজনও বড় দিন পালন করে থাকেন।

কতজন খ্রিস্টান বড় দিন পালন করে

সারা বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মের প্রায় সকল লোকজনই ২৫শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিন পালন করে থাকে। তবে যারা খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী তাদের মধ্যে শতকরা ৯৬ শতাংশ লোক বড়দিন পালন করে থাকে এবং এই দিনে তারা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী আদান-প্রদানের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে থাকে।

উপসংহার

২৫শে ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন হিসাবে পালন করা হয়ে থাকে আর এই দিনটি খ্রিস্টান ধর্মের লোকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন হিসেবে পরিচিত। তবে বড়দিন শুধু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন মানুষ জাতি, ধর্ম,বর্ণ ভুলে সকল দেশের এবং সকল ধর্মের লোক এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন হিসাবে পালনের মাধ্যমেই যিশুখ্রিস্ট সকল মানুষের মধ্যে প্রেম ও ভালোবাসার যে বাণী প্রচার করতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নই যেন সার্থকতা লাভ করেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url