বাদাম - খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বাদামে একটি মুখরোচক খাবার যার কারণে মানুষ অনেক সময় চাহিদার অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমাদের বাদাম - খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন কেননা আমরা যদি বাদাম - খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না রাখি তাহলে আমাদের শরীর ভালো হওয়ার পরিবর্তে আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।

Image

বাদামে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট গুলির পরিমাণ খুব বেশি থাকে যা হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বাদাম আমাদের হারকে হাড়কে মজবুত করে এবং শরীরের কোষগুলোকে সচল রাখে। নিচে বাদাম - খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো-

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

বাদাম পুষ্টি গুনে ভরা একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার। বিভিন্ন আড্ডায় অথবা সন্ধ্যার সময় হালকা নাস্তা হিসেবে আমরা বাদাম খেয়ে থাকি। বাদাম আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে সহায়তা করে। সব বয়সের মানুষের কাছেই বাদাম একটি জনপ্রিয় খাবার। কারণ বাদামে সমস্ত গুণাবলীর উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে। নিয়মিত বাদাম খেলে অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব। একজন মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ গ্রাম বাদাম রাখা উচিত। 

আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা  খাওয়ার  উপকারিতা - কলা খাওয়ার  নিয়ম  জেনে নিন

কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট গুলির পরিমাণ খুব বেশি থাকে যা হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বাদাম আমাদের হারকে হাড়কে মজবুত করে এবং শরীরের কোষগুলোকে সচল রাখে। গবেষকেরা বাদাম নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের এই গবেষণায় এসেছে, পুষ্টি গুণের দিক থেকে বাদাম বিশ্বের এক নম্বর খাবার।

কিন্তু অতিরিক্ত বাদাম খেলে  আবার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই আমি আজকে আপনাদের সামনে বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। তবে এসব নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে বাদাম কি? এবং বাদাম কত প্রকার ও কি কি?

বাদাম কি

বাদাম হচ্ছে উদ্ভিদ থেকে পাওয়া একপ্রকার শক্ত বীজ। যার বাইরের সেল শক্ত এবং এর ভেতরে শুকনো এবং তৈলাক্ত বীজ থাকে। অনেক উদ্ভিদ কে বাদাম হিসাবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু জীব বিজ্ঞানীদের মতে, অল্প কিছু উদ্ভিদের বীজ সত্যি কারের বাদাম বলে বিবেচনা করেছেন। বাদাম আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণ সরবরাহ করে থাকে। আর বাদামে উপস্থিত এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী।

বাদামের প্রকারভেদ

বাদাম আমাদের সবার কাছেই একটি পরিচিত খাবার। প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের বাদাম দেখতে পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের বাদাম আমরা চিনি না বা আমাদের কাছে পরিচিত নয়। তবে যে বাদাম গুলো আমাদের কাছে পরিচিত তার ওপর ভিত্তি করে বাদাম কে চার (৪) ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ -

  • চিনা বাদাম

  •  কাঠ বাদাম

  •  কাজুবাদাম এবং

  •  পেস্তা বাদাম

এগুলো ছাড়াও আরো একটি বাদাম রয়েছে। আর তার নাম হলো আখরোট

চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

এমন কোন মানুষ নেই যার কাছে চিনা বাদাম অপরিচিত বা এমন কোন জায়গা নেই যেখানে চিনা বাদাম পাওয়া যায় না। হাট - বাজার, লঞ্চ ঘাট, রেলস্টেশন সহ সকল জায়গাতেই এই চিনা বাদাম পাওয়া যায়। বাদামের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য বাদাম হচ্ছে চিনা বাদাম। এটি একটি অন্যতম পুষ্টিকর খাবার। প্রতি গ্রাম চিনা বাদামে রয়েছে ১৫৮ থেকে ১৬৮ গ্রাম ক্যালোরি, ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেড, ৭.১৪ গ্রাম প্রোটিন, ১৩.৬ গ্রাম ফ্যাট, ৪.৬ গ্রাম আয়রন এবং ৩.৩ মিলিগ্রাম, জিংক রয়েছে ।

এই চিনা বাদামে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও চিনা বাদামে রয়েছে খনিজ ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের চুল ও ত্বক মসৃণ করে এবং দাঁত ও হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে।

কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত কাঠ বাদাম আমাদের দেশে সহ সারা বিশ্বে আমন্ড বাদাম হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই বাদাম দেখতে পুরো গোলাকার নয়, একটু চ্যাপ্টা ধরনের। এই বাদামের বাইরে কাঠের রং এর মতো আবরণ বা খোলস থাকে বলে একে কাঠ বাদাম বলা হয়। বর্তমানে বিশ্বে এই বাদাম বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতি গ্রাম কাঠ বাদামে রয়েছে ক্যালোরি ১৬১ গ্রাম, প্রোটিন ৫.৯ গ্রাম, ভিটামিন ৩৭ গ্রাম এবং ফ্যাট ১৩.৮ গ্রাম। 

আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  -  আমলকির ব্যবহার  জেনে নিন

এই বাদামে উপস্থিত ভিটামিন আমাদের দেহের অভ্যন্তরের এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে। এই বাদাম রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও যদি কারো ভুলে যাওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে রাতে আট (৮) থেকে (১০) দশটি কাঠ বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে তা খেলে ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা

কাজুবাদাম আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না বললেই চলে। এই বাদাম ভিয়েতনাম ও নাইজেরিয়া থেকে আমদানি করা হয়। কাজুবাদাম স্বাদের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তাই আমরা যে কোন রিচ খাবার রান্নায় কাজুবাদাম ব্যবহার করে থাকি। প্রতি গ্রাম কাজু বাদামে রয়েছে ক্যালোরি .১৯৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড ৮.৬ গ্রাম, প্রোটিন ৫.১ গ্রাম,  ফ্যাট ১২ .৩ গ্রাম, ফাইবার ০.৯ গ্রাম ।

কাজুবাদামে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। নিয়মিত ৮ থেকে ১০ টি কাজু বাদাম খেলে শরীরকে যেমন ফিট রাখা যায় তেমনি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও কাজু বাদাম খাওয়ার যে সকল উপকারিতা রয়েছে তা হল-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অতি সাবধানে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হয়। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা কাজুবাদাম খেতে পারেন কারণ এই কাজু বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও আনসার ফ্যাট যা রক্তের শর্করা উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

ক্যান্সার রোগ শুনলেই আমরা ভয়ে আতকে উঠি কারণ এটা এমন একটা মরণ ব্যাধি যার থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না বললেই চলে। তাই যাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে কাজুবাদাম খেতে পারেন। কারণ কাজুবাদামে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, গ্যালিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে

হৃদরোগ এখন মানুষের যেন একটি সাধারন সমস্যায় পরিণত হয়েছে তাই যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারা কাজু বাদাম খেতে পারেন। কারণ এই কাজু বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যারোটিন এবং আনসার ফ্যাট যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিবে।


ক্যালোরি ও শক্তি সরবরাহ করে

আপনার যদি শরীরে দুর্বল অনুভূত হয় তাহলে আপনি কয়েকটি কাজু বাদাম খেতে পারেন। কারণ কাজু বাদামে রয়েছে প্রাকৃতিক শক্তিবোধ এবং উচ্চ ক্যালরি যা আপনার দেহে শক্তি এবং ক্যালরি দুটিই সরবরাহ করবে।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি করে

কাজুবাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা মানুষের চিন্তা ও মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে। তাই যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে মনোবিজ্ঞানী তাদেরকে কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

প্রতিস্থাপন শক্তি বৃদ্ধি করে

আপনার শরীরের যদি কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আপনি কাজু বাদাম খেতে পারেন কারণ কাজু বাদামের রয়েছে প্রোটিন এবং আনসার ফ্যাট যা আপনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ কে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে।

হজমের সহায়তা করে

কাজু বাদামে রয়েছে আনসার ফ্যাট ও প্রোটিন যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করে থাকে। তাই যাদের হজমের অসুবিধা রয়েছে তারা প্রতিদিন কয়েকটি করে কাজু বাদাম খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।

কাজু বাদামের অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি তার অপকারিতাও রয়েছে। ঠিক তেমনি কাজু বাদামের যেমন অনেকগুলো উপকারী দিক রয়েছে তেমনি নিয়ম মেনে না খেলে বা অতিরিক্ত খেলে এর কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। যেমন -

এলার্জির ঝুঁকি বাড়ায়

যাদের অতিরিক্ত এলার্জি রয়েছে কাজুবাদাম তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে তবে এটি নিতান্তই সন্দেহমূলক এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে যদি আপনার অতিরিক্ত এলার্জি থেকে থাকে তাহলে আপনি এটি একটু পরিমাণে কম খেতে পারেন।

অতিরিক্ত প্রোটিন

কাজুবাদামে রয়েছে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং ফলিক এসিড ও লেখক অক্সালেট অ্যাসিড যা আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া

যাদের শরীরে অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের কাজু বাদামের প্রোটিন গুলো গ্রাসিমার সাথে যুক্ত হতে পারে যার কারণে আপনি যেকোন রোগে অতি তাড়াতাড়ি ভুগতে পারেন। তাই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা অতিরিক্ত কাজু বাদাম খাবেন না।


তবে কাজুবাদামের ক্ষতিকর দিকগুলো নিতান্তই সন্দেহমূলক এর কোন মেডিকেল বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে আপনি যে খাবারই খান না কেন অতিরিক্ত কোন কিছুই খাবেন না। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত সবকিছুই আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

পেস্তা বাদাম একটি সুস্বাদু ও আদর্শ খাবার। এই বাদাম আমাদের শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই বাদাম রান্নার পাশাপাশি সালাদ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রতি গ্রাম পেস্তা বাদামে রয়েছে ক্যালোরি ১৫৭ - ১৫৯ গ্রাম, ফ্যাট ১২ .৪৯ গ্রাম,  কার্বোহাইড্রেট ৭.৮ গ্রাম, প্রোটিন ৫.৮গ্রাম, ফাইবার ২.৯ গ্রাম। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পূরণ করে। এটি আমাদের শরীরের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। 

আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির -১৫ টি - উপকারিতা জেনে নিন

প্রতিদিন যদি নিয়ম করে পেস্তা বাদাম খাওয়া যায় তাহলে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।এছাড়াও পেস্তা বাদাম ওজন কমাতে ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিত পেস্তা বাদাম খেলে সুস্থ ও রোগ মুক্ত জীবন পাওয়া যায়।

আখরোট বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের পরিচিত যত ধরনের বাদাম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি বাদাম হচ্ছে আখরোট।এটি অনেক পুষ্টিকর এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। আখরোট বাদাম দেখতে গোলাকার এবং এর মধ্যে একটিমাত্র বীজ থাকে। এই আখরোট বাদামও পুষ্টি গুণে ভরপুর একটি বাদাম। প্রতি একশ ১০০ গ্রাম বাদামে থাকে প্রোটিন ১৫.২ গ্রাম, ফাইবার ৬.৭ গ্রাম এবং স্নেহ পদার্থ ৬৫.০২ গ্রাম। আখরোট বাদামে বেশি উপকার পেতে হলে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে। এবং এর সাধের মাত্রা বাড়াতে হলে মধু অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। চুলের যত্নে এবং স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে এই বাদামের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

আমরা জানি, বাদাম পুষ্টিগুনে ভরা একটি খাবার। তাই শারীরিক উপকারিতার কথা চিন্তা করে বাদাম খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। নিচে বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

বাদাম আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। তাই অন্যান্য খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাছাড়া বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা আমাদের শরীরে জমা থাকে। আর এই কারণে বাদাম খেলে আমাদের ওজন বাড়তে পারে না।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কাজু বাদামে ভিটামিন বি (B) সমৃদ্ধ একপ্রকার তেল থাকে। আর এই জন্য বাদাম শক্তিশালী খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ভিটামিন বি (B) আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সচল রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্লান্তি দূর করে

আমরা জানি বাদাম শক্তির অন্যতম উৎস। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা শরীরের শক্তি যোগায়। তাই নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কাজু বাদাম হল প্রুনোথোসিনিডিন ফ্লাভোনিওইডের একটি প্রকার যা ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান কোষ গুলোকে আটকাতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বাদামে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে সংক্রমণ ব্যাধি থেকে রক্ষা করে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের কোষ গুলোকে ক্ষত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যার কারণে নিয়মিত বাদাম খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে

বাদামে সোডিয়াম এর পরিমাণ কম থাকে এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে যা উঁচু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। সোডিয়াম এর মাত্রা দেহে বেশি হলে রক্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তচাপও বেড়ে যায়। আর এই রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে হ্যাট এটাক, স্ট্রোক এবং কিডনিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই আমাদের নিয়মিত এবং পরিমিত বাদাম খাওয়া উচিত।

কোলেস্টেরল কমায়

কোলেস্টেরলের মাত্রার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উচিত।বাদাম প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় দ্রুত হজম শক্তি বাড়ায়। তাই কোলেস্টরেলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত বাদাম খাওয়া উচিত।

হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বাদামের ফসফরাস বিদ্যমান থাকে যা হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত বাদাম খেলে হাড়ের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

যদি প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমিত বাদাম খাওয়া যায় তাহলে শতকরা ৩0 ভাগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। কারণ বাদাম রক্তে থাকা শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং শরীরে কোন প্রকার হত ক্ষতসৃষ্টি হতে দেয় না। বাদামে উপস্থিত ভিটামিন ই আমাদের চুল পড়া বন্ধ করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এই ভিটামিন ই  শরীরের চামড়া কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই বয়স বাড়লেও শরীরে এর প্রভাব পড়তে দেয় না।

পুষ্টি ঘাটতি দূর করে

বাদাম পুষ্টি গুনে ভরা একটি মুখ রোচক খাবার। এতে ফ্যাট ,ফাইবার, প্রোটিন, ম্যাগানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন হয়। বাদামে উপস্থিত এই সকল উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে থাকে।

মেজাজ ভালো রাখে

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু বাদাম রাখা উচিত কারণ বাদাম বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। যার কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আর এই বাদাম খাদ্য মেজাজ নামেই পরিচিত। তাই মন মেজাজ ভালো রাখতে বাদাম খাওয়া উচিত।

বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

বাদাম খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি আবার অপকারিতা ও রয়েছে। বাদাম খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো -

ওজন বৃদ্ধি করে

বাদামে থাকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাট। তাই অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা জানি কাঠবাদাম ওজন কমায়, তবে অতিরিক্ত বাদাম খেলে আবার ওজনও বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত সঠিক মাথায় বাদাম খাওয়া উচিত।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা

বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, চর্বি ও আঁশ। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি আবার এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যেমন মনে করুন, আপনার কাছে কাজু বাদাম বা চিনা বাদাম পছন্দ। আর আপনি এই পছন্দের খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বা ২00 গ্রামের বেশি খেয়ে ফেললেন, তাহলে এই অতিরিক্ত খাবার আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই বাদাম পরিমিত খাওয়াই উচিত।

এলার্জি সমস্যা

বাদাম খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যে ধরনের বাদাম খেলে এলার্জি সমস্যা হয় সে ধরনের বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও বাদামে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে, তবুও যাদের সমস্যা হয় তারা বাদাম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হবেন।

শেষ কথা

বাদাম পুষ্টি গুনে ভরা একটি খাবার। আমাদের দেশের সবখানেই প্রায় বাদাম পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় চিনা বাদাম। বাদামে রয়েছে ক্যালোরি, মেগানিজ,ফাইবার, ফ্যাট  ও চর্বি সহ বিভিন্ন খাদ্য উপাদান যা আমাদের  শরীরের জন্য অনেক উপকারী।তবে আপনি যে খাবারই খান না কেন সেটা পরিমিত আকারে খাওয়া উচিত। আপনি যদি নিয়ম মেনে খাবার না খান তাহলে যে কোন খাবারে আপনার সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আমি আমার আর্টিকেলের মাধ্যমে বাদাম কি? বাদাম কত প্রকার ও কি কি? এবং প্রত্যেক প্রকার বাদামের পুষ্টিগুণ নিয়ে এবং বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আমার এই লেখা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url