বজ্রপাত কেন হয় - বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
বজ্রপাত হলো মেঘের গর্জন অর্থাৎ বাতাসে যখন মেঘ ভেসে বেড়ায় এবং মেঘে মেঘে যখন প্রচন্ড ধাক্কা লাগে তখন একটি বিকট আওয়াজ হয়, যাকে আমরা বজ্রপাত বলে জানি। আর যখন এই বজ্রপাত হয় তখন এর শব্দ আমরা শুনতে পাই এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে। তখন বাতাসের গতি সম্প্রসারিত ও বিস্ফোরিত হয় যার কারণে বজ্রপাত হয়।
নিচে বজ্রপাত কি, বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, বজ্রপাত কেন হয় বজ্রপাতের কারণ, বজ্রপাত হলে শব্দ হয় কেন, বজ্রপাতের সময় কোথায় থাকা উচিত বা বজ্রপাতের প্রতিকার, বজ্রপাত নিরোধক দন্ড কি, বজ্রপাতের উপকারিতা, টিনের ঘরে কি বজ্রপাত হয়, বজ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বজ্রপাত কত ভোল্ট, বজ্রপাতের শক্তি কত সহ যাবতীয় বিষয় আলোচনা করা হলো -
বজ্রপাত কি
আকাশে যখন অনেক মেঘ জমে তখন এক প্রকার আলোর ঝলকানি দেখা যায় এবং এর সাথে প্রচণ্ড আওয়াজ বা শব্দ হয় আর আমরা একে বজ্রপাত বলে থাকি।বায়ুমন্ডলে বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং এই বিদ্যুৎ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক বা পজেটিভ বা নেগেটিভ আকারে জমা হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ একসাথে না থাকলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় না। যখন পজেটিভ ও নেগেটিভ সার্চ বিশিষ্ট দুই মেঘ পাশাপাশি অবস্থান করে তখন বিদ্যুৎ চমকায় আর শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ গাড়ি দুর্ঘটনার আইনজীবী সম্পর্কে জেনে নিন
আকাশে মেঘ যখন জমা হয় তখন মেঘের সামনের অংশ অর্থা ভূপৃষ্ঠ দেশে থাকে ধনাত্মক চার্জ এবং মেঘের নিচের অংশে বা তলদেশে থাকে ঋণাত্মক চার্জ। বাতাসের সংকোচন এবং প্রসারণ এর জন্যই আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এই বজ্রপাতকে আবার বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন বলা হয়ে থাকে। বজ্রপাতের ফলে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয় তাকে বলা হয় ডিসি কারেন্ট। আবার মেঘে দুটি প্রভাব রেখা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ পৃথিবীতে চলে আসে তড়িৎ ক্ষরণের মাধ্যমে একে বজ্রপাত বলা হয়।
বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ওপরের অংশে কম থাকে এবং নিচের অংশে বেশি থাকে। ভূপৃষ্ঠের পানি পরিণত হয় এবং উপরের দিকে উঠে যায় মেঘের নিচের অংশ ভারি হয় এবং বড় বড় পানির কণা তৈরি করে থাকে। এই বরফ পানির কণা যুক্ত মেঘ যখন চলে ও বাষ্পের সাথে সংঘর্ষ হয় তখন এতে ইলেকট্রন যোগ হয় এবং তা হয়ে যায় ধনাত্মক। এবং এই ধনাত্বক ইলেকট্রন যখন আবার ঋণাত্বকে পরিণত হয় তখন বজ্রপাত হয়। মেঘ
সবসময় উপরের দিকে ধাবিত হয়। আর এই ধরনের মেয়েকে বলা হয় থান্ডার ক্লাউড। মেঘ যত উপরের দিকে উঠতে থাকে পানির কণাগুলো ততই বড় হতে থাকে। এভাবে মেঘ যখন পানির কণার পরিমান পাঁচ ৫ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি হয় তখন পানির কণাগুলো ভারী হয়ে যায়। এবং আর বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না তখন বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে। এই বৃষ্টি ঝরে পড়ার আগে মেঘ খন্ড আলাদা হয়ে যায় অর্থাৎ ছোট ছোট পানির কোনাযুক্ত মেঘ ও
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পনেরো ১৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন
বড় বড় পানির কনাযুক্ত মেঘ আলাদা হয়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক আধানের সৃষ্টি করে থাকে আর এভাবে বৈদ্যুতিক আধান গুলো ভূপৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হয় আর এভাবে বজ্রপাত হয়।এই ঠান্ডার ক্লাউড বা ডিসচার্জ প্রক্রিয়া তিন ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যথা - একটি মেঘের ধনাত্মক চার্জের সাথে অন্য মেঘের ঋণাত্মক চার্জ আবার অন্য মেঘের ধনাত্মক চার্জের সাথে কোন মেঘের ঋণাত্মক চার্জের মধ্যে সংঘটিত হয়।একই মেঘের ধনাত্মক ঋণাত্মক চার্জের মাধ্যমে হয়।
মেঘের ভূমির মধ্যে ও পজেটিভ আধানের মধ্যে চার্জ ও জলীয় বাষ্প যখন মেঘে পরিণত হয় তখন এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে স্থির তড়িৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। মেঘের উপরে থাকে ধনাত্মক আধান ও ঋণাত্মক আধান থাকে মেঘের নিচের অংশে। আর এই দুই মেঘ যখন বিপরীত চার্জের দিকে ধাবিত হয় তখন বজ্রপাত হয়।
বজ্রপাত কেন হয়/বজ্রপাতের কারণ
ভূপৃষ্ঠের পানি সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে উপরে দিকে উঠতে থাকে তখন এই জলীয় বাষ্প ছোট ছোট পানির কোন জমা থাকে আর এই বাষ্প কণার সাথে মেঘের সংঘর্ষ হয়। আর এ সংঘর্ষের ফলে পানির বাষ্প কণা ইলেকট্রন হারায় এবং ধনাত্মক বা পজেটিভ সার্চ সৃষ্টি করে মেঘের উপরে অবস্থান করে ইলেকট্রন তৈরি হয় তা মেঘের নিম্নতলে অবস্থান করে। আর এই মেঘে যখন অতি ইলেকট্রন তৈরি হয় তখন মেঘগুলো অধিক শক্তিশালী ধারকক্যাপাসিটর ক্ষেত্র তৈরি করে থাকে,
মেঘের নিম্ন ও উর্ধ স্তর জমা হওয়ার কারণে তৈরি হয় শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র। তবে বিজ্ঞানীদের মতে সাধারণ তো আদ্র ও উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। উত্তপ্ত বায়ু দ্রুত বেগে ঠান্ডা হওয়ার সময় বজ্র মেঘের সৃষ্টি করে থাকে। এই আদ্র মেঘের ভেতর আবার বাতাসও দ্রুতগতিতে আলোর সৃষ্টি করে থাকে আর এই আলোড়নের ফলে। বাতাসে থাকাজলীয় বাষ্প থেকে একই সাথে বৃষ্টি কণা, তুষার কণা ও শিশির বিন্দু তৈরি
হয়। তখন বৃষ্টির কোনা ও তুষার কনা বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সময় একে অপরের সাথে ধাক্কা খায়। আর এই সংঘর্ষে ইলেকট্রন তৈরি হয় যার কারণে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আর এই চার্জ ক্রমান্বয়ে বজ্রপাতের সৃষ্টি করে থাকে এবং বজ্রপাত হয়। এবং তীব্র শব্দের সৃষ্টি করে থাকে বাতাসের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি দ্রুত প্রবাহিত হলে বজ্র বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। প্রায় ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড আর এর ফলে বায়ুর প্রসারণ হয় ও বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়।
মেঘের মধ্যে ধনাত্মক যখন বিদ্যুৎ উপস্থিত থাকে তাকে ওয়ান ১ এবং বিদ্যুৎ যখন ধনাত্মক যখন বিদ্যুতের উপস্থিতি থাকেনা তখন শূন্য ০ দিয়ে প্রকাশ করা হয় বা ঋণাত্মক বলা হয়। আর পজেটিভ ও নেগেটিভ একত্রে প্রবল শব্দের সৃষ্টি করে থাকে।
বজ্রপাত হলে শব্দ হয় কেন
মেঘের ধনাত্মক চার্জ বা নেগেটিভ চার্জ বাতাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হলে সূর্যের তাপমাত্রা বেশি হয়। আমরা জানি সূর্যের আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার আর এর চেয়েও বাতাসের তাপমাত্রা ২৭ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেশি হয়। এতে বাতাসের চাপ বেড়ে যায়। সূর্য অপেক্ষা ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি এই তাপমাত্রা ও বাতাসের চাপ এত বেশি হয় যে তখন বিস্ফোরণ হয়। আর এই বিস্ফোরণের জন্য বজ্রপাতের সময় শব্দের সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার - এর ডাক্তারেরগণের তালিকা দেখুন
এই বজ্রপাতের শব্দ শোনা যায় এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই। বাতাসের গতি আশপাশের বাতাসের গতিকে সম্প্রসারিত ও বিস্ফোরিত হয় যার কারণে বজ্রপাতে সময় শব্দ হয় আর এই শব্দই আমরা শুনতে পাই। ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে বাতাসের ধনাত্মক চার্জ আর এই ধনাত্মক চার্জ ও ঋণাত্মক চার্জ অর্থাৎ পজেটিভ ও নেগেটিভ সংঘটিত হয়ে প্রবল শব্দের সৃষ্টি করে থাকে।
বজ্রপাতের সময় কোথায় থাকা উচিত/প্রতিকার
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে বেশি কালবৈশাখী ঝড় হয়। মার্চ থেকে জুলাই মাস হল কালবৈশাখীর সময় আর এই সময় বেশি বজ্রঝড় হয়ে থাকে। তবে বজ্র ঝড় সাধারণত ৩0 থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়। আর এই সময়টাতে সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়। বজ্রপাত থেকে নিরাপদে থাকতে হলে কিছু কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে ঝড় থেকে বাঁচতে যা করতে হবে তা হল -
- বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে কংক্রিটের ছাউনের নিচে আশ্রয় নিতে হবে অথবা দালান ঘরে আশ্রয় নিতে হবে। কোনক্রমে ভবনের ছাদ বা উঁচু কোন জমিতে যাওয়া উচিৎ হবে না।
- বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে বসে থাকবেন এবং অবশ্যই কানে আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে বসে থাকতে হবে।
- বজ্রপাতের সময় শিশুরা যাতে বাইরে খেলাধুলা করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং শিশুদের ঘরে অবস্থান করতে হবে।
- বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া কখনোই উচিত নয়, নদীতে বা সমুদ্রে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ করে ছাউনি যুক্ত নৌকায় আশ্রয় নিতে হবে।
- গাড়ির ভিতরে থাকলে গাড়ির ধাতবংশের সাথে কখনোই শরীর সংযোগ করে রাখা ঠিক নয় এবং বাইরে আসা যাবেনা গাড়ির ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
- বজ্র ঝড়ে সময় ধাতব পদার্থ বৈদ্যুতিক খুঁটি বা উঁচু গাছপালা এবং মোবাইল টাওয়ার এর কাছে কাছে থাকা যাবে না নিরাপদ নয়।
- বজ্রপাতের সময় অনেক বড় গাছের নিচে থাকা নিরাপদ নয়।
- বাংলাদেশে মার্চ থেকে জুলাই কালবৈশাখের সময় এই সময় নিরাপদ থাকতে হবে। এই সময় কালবৈশাখী ঝড় হয় এবং এই সময় বজ্র ঝড় বেশি হয় তাই সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা
হয়েছে। - বজ্র ঝড় সাধারণত ৩0 থেকে ৩৫ মিনিট সময় স্থায়ী হয় এই সময় সবাইকে ঘরে থাকতে
বলা হয়েছে। - বজ্র ঝড়ের সময় বাড়িতে থাকলে বাড়ির জানালার কাছাকাছি থাকা ঠিক নয় জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে থাকা উচিত।
- বজ্র ঝড়ে সবাই বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে দূরে থাকতে হবে যেমন টিভি ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও সেটা ধরা যাবে না বজ্রপাতের আভাস পেলে এগুলোর প্লাগ হলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলতে হবে।
- বজ্র ঝড়ে সময় কখনোই ভবনের ছাদে যাওয়া ঠিক নয় কারণ উচু জায়গাতে বজ্রপাত বেশি হয় উচু স্থানে থাকলে ব্রজ ঝড়ের সময় সাথে সাথে নিচে চলে আসতে হবে।
- বজ্র ঝড়ের সময় পানি থেকে নিরাপদে থাকতে হবে কারণ পানি হল সবচেয়ে বিদ্যু সুপরিবাহী তাই যদি বজ্র ঝড়ের সময় পুকুরে থাকা যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদে চলে আসতে হবে।
- বজ্র ঝড়ের সময় পরস্পর একজন থেকে আরেকজনের মাঝে কমপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে
থাকতে হবে। - কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক ঘরে থাকলেও একজন থেকে আরেকজন দূরত্ব বজায় থাকতে হবে।
- বজ্রপাতের সময়ে আপনি যদি একান্ত বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে অবশ্যই
রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন। - আকাশে মেঘ দেখলেই বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে মনে করে আপনাকে কিছু লক্ষণ অবশ্যই জানতে হবে। যেমন - আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, বিদ্যুৎ অনুভূত হবে ত্বক শিরশির করবে এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে অনেকে এই পরিস্থিতিতে ক্রিং ক্রিং শব্দ শব্দ পেতে পারেন আপনি যদি এমন পরিচিত অনুভব করেন তাহলে দ্রুত বর্জ্যপাত হবে এই ভেবে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
- বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাড়িতে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে বাড়ি করা প্রয়োজন ভুলভাবে রড স্থাপন করা হলে বজ্রপাতের সম্ভাবনা কমে যায়।
বজ্রপাত নিরোধক দন্ড কি
বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য ভবনের ছদে যে এলুমিনিয়াম বা তামার পাত যুক্ত দন্ড স্থাপন করা হয় তাকে বলা হয় বজ্র নিরোধক দন্ড। বজ্র নিরোধক দণ্ড বজ্রপাতকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে কাজ করে থাকে। বজ্রনিরোধক দন্ড সাধারণ অ্যালুমিনিয়াম ও তামার ধাতু দিয়ে তৈরি পদার্থ। অনেক বেশি রোধের কাজ করে থাকে তাই অ্যালুমিনিয়াম বা তামা দিয়ে তৈরি বজ্র নিরোধক দুই সেন্টিমিটার ব্যাসের ঘরের ছাদে খাড়াভাবে বসে দেওয়া হয়ে থাকে।
আর এই দন্ড পরিবাহী তারের মাধ্যমে এক ইঞ্চির কাছাকাছি ভূমিতে সংযুক্ত করে রাখা হয়ে থাকে। আর এই দণ্ড স্থাপনের ফলে বজ্রপাতের সময় যে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয় তাতে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি হয় না যার কারণে আগুনও ধরে না। আর এই কাজ কেবলমাত্র দন্ড নিরোধকদের মাধ্যমে করা সম্ভব হয়ে থাকে।
বজ্রপাতের উপকারিতা
বজ্রপাতের সময় আমরা ভয় পাই এবং আমরা জানি না যে বজ্রপাতের উপকারিতা রয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবীতে এমন কিছু সৃষ্টি করেননি যার উপকারিতা নেই। তেমনি বজ্রপাতেরও উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের জানার বাইরে। তাই আজকে আমি বজ্রপাতের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। মাটিতে উপস্থিত নাইটিক এসিড তৈরি হয়। বজ্রপাত ও বৃষ্টির পানি দ্বারা বজ্রপাতের সময় অক্সিজেনের সাথে নাইট্রোজেন যুক্ত হয় এবং এই দুই পদার্থ মিলে তৈরি হয় নাইট্রোজেন অক্সাইড।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহীর সেরা নবজাতক - শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের তালিকা ও ফোন নাম্বার
আর লঘু নাইট্রিক এসিড তৈরি হয় অক্সাইড ও পানির সংমিশ্রণে মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে মাটিতে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বজ্রপাত থেকে আশা নাইট্রিক এসিড আর এই নাইট্রিক এসিডের ফলে সহজে এসিডে পরিণত হয় মাঠের বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। বজ্রপাতের ফলে ধাত ও অক্সাইড ও এসিডের বিক্রিয়া হয় এবং নাইট্রোজেন লবণ উৎপন্ন হয় আর এই নাইট্রেট লবণ হলো উদ্ভিদের অন্যতম পুষ্টি উপাদান। শতকরা ৭৮.১৬ শতাংশ নাইট্রোজেন আছে বায়ুমন্ডলে কিন্তু 0.১ শতাংশ মাটিতে মিশে যায় ।
টিনের ঘরে কি বজ্রপাত হয়
যখন আকাশে মেঘ জমে তখন বজ্রপাত হয় এবং বজ্রপাত হলে আমরা সবাই ভয়ে আতকে উঠি। বজ্রপাতের সময় আমরা সাধারণত ঘরে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করি এবং আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে টিনের ঘরে কি বজ্রপাত হয় বা টিন কি বজ্রপাত সুপরিবাহী! আমাদের যাদের মনে প্রশ্ন জাগে টিনের ঘরে কি বজ্রপাত হয় আমি তাদের জন্য বলছি, টিনের ঘরে বজ্রপাত হয় কারণ টিন হলো বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।
বজ্রপাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
এক বিশাল প্রকৃতির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় বজ্রপাতের ফলে। সাধারণত ভূমি থেকে তিন মাইল দূরে বজ্রপাত শক্তি উৎপন্ন করে প্রায় এক বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট বা আওয়ার হল বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপের একক। বজ্রপাতের একটি সাধারণ ফ্লাশ প্রায় ৩০ হাজার এম্পিয়ার বা ৩০০মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। কিন্তু মানুষ তার বাসা বাড়িতে ব্যবহার করে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ১০০ থেকে ১৫০ ইউনিট। বজ্রপাতের বিদ্যুৎ যদি জমা করতে পারত তাহলে একটি পরিবার ১৮৫ মাস বা ১৫ বছর বিনা পয়সার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারত।
বজ্রপাত কত ভোল্ট
বজ্রপাতের শক্তি কত
শেষ কথা
বজ্রপাত প্রকৃতির নিয়ম এবং প্রাকৃতিক কারণেই এটি হয়ে থাকে তার পরেও মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য ও এর ব্যাপকতা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলছে এবং তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা ও বেড়ে গেছে। এক কথায় প্রকৃতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। প্রকৃতির এই ভয়াবহ বিপদ থেকে বাঁচতে আমাদের উচিত বেশি বেশি গাছ লাগানো।
প্রকৃতি যদি বিপদের হাত থেকে বাঁচে তাহলে আমরাও রক্ষা পাব। তাই বেশি করে গাছ লাগান এবং পরিবেশ বাঁচান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url