মুখে মাখার ট্যালকম পাউডার সম্পর্কে জেনে নিন


Image


ট্যালকম পাউডার হল সোপিস্টোন নামক এক প্রকার পাথরের মিহি গুঁড়ো।এই ট্যালকম পাউডার গুলো মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকে একটি  পাতলা আবরণ পড়ে আর এই আবরণ আমাদের ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি রোস্নি থেকে রক্ষা করে। ট্যালকম পাউডার কি - ট্যালকম পাউডারের রং কেন সাদা  হয় এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

মুখে মাখার ট্যালকম পাউডার 

ট্যালকম পাউডার কি

ট্যালকম পাউডার হল সোপিস্টোন নামক এক প্রকার পাথরের মিহি গুঁড়ো।  ট্যালক নামক শব্দ থেকেই ট্যালকম পাউডার শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাউডার শীত এবং গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে শীতের চেয়ে গরম ঋতুতে বেশি ব্যবহৃত হয়।  ট্যালকম পাউডার হলো সোপিস্টোন নামক একপ্রকার পাথরের অতি সূক্ষ্ম গুড়ো ।

আর এই পাউডার তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ক্লোরাইড, কার্বনেট ও ট্যালক। এগুলো ছাড়াও যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট, কেউলিন, জিংক, অক্সাইড, স্টার্স, সুগন্ধি এবং বিভিন্ন প্রকার রং। তবে  ট্যালকম পাউডারের মূল উপাদান হলো ট্যালক।  ট্যালকম পাউডার এ যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয় এদের মধ্যে ট্যালক হল প্রধান উপাদান। এই ট্যালকের পরিমাণ থাকে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। 

সুপিস্টন হলো এক ধরনের পাথর আর এই পাথর গুঁড়ো করে এর সাথে বিভিন্ন সুগন্ধি মিশিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। পাথরগুলো পাওয়া যায় প্রধানত চীন, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকাতে। ট্যালকম পাউডার হল সোপিস্টোন নামক একপ্রকার পাথরের মিহি গুঁড়ো। তাই এই গুঁড়ো গুলো একটু পিচ্ছিল ধরনের হয়। একে আরও একটু বেশি পিচ্ছিল করার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়  টাইটেনিয়াম অক্সাইড, জিংক, স্টিয়ারেট ও

ম্যাগনেসিয়াম। ট্যালকম পাউডার সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা হয় তবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই ট্যালকম পাউডার সবচেয়ে বেশি উপযোগী।এই ট্যালকম পাউডার গুলো মুখের ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকে একটি  পাতলা আবরণ পড়ে আর এই আবরণ আমাদের ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি রোস্নি থেকে রক্ষা করে। যার ফলে সারাদিন রোদে গরমে থাকার পরও আমাদের ত্বক থাকে কমল এবং মোলায়েম।

ট্যালকম পাউডারের প্রধান উপাদান

ট্যালকম পাউডারের মূল উপাদান হলো ট্যালক।এই ট্যালকের পরিমাণ থাকে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। ট্যালকম পাউডার তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ক্লোরাইড, কার্বনেট ও ট্যালক। এগুলো ছাড়াও যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট, কেউলিন, জিংক, অক্সাইড, স্টার্স, সুগন্ধি এবং বিভিন্ন প্রকার রং। এছাড়া ও পিচ্ছিল করার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়  টাইটেনিয়াম অক্সাইড, জিংক, স্টিয়ারেট ও ম্যাগনেসিয়াম। 

ট্যালকম পাউডারের রং কেন সাদা  হয়

এমন কেউ নেই যে ট্যালকম পাউডার চিনেন না অথবা ব্যবহার করেন না। কিন্তু আমরা দেখি প্রায় সকল ট্যালকম পাউডারের রং সাদা। কিন্তু আমাদের মনে কি প্রশ্ন জাগে না যে, এই ট্যালকম পাউডার কেন সাদা হয় ? তাহলে আসুন জেনে নিই ট্যালকম পাউডারের রং কেন সাদা হয়। ট্যালকম পাউডার তৈরি হয় সোপিস্টোন নামক একপ্রকার পাথর থেকে। আর এই পাথরের রং হলো সাদা।  এই সাদা পাথর যখন মেশিনে মিহি করে গুড়া করা হয় তখন এটি দেখা যায় একেবারে ধবধবে সাদা। খনি থেকে এই সোপিস্টোন  পাথর উত্তোলন করা হয়। আর এই পাথরের খনি রয়েছে প্রধানত চীন, পাকিস্তান, ফ্রান্স, আমেরিকা ও নেদারল্যান্ডে।

ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার

ট্যালকম পাউডার আমরা সবাই ব্যবহার করি। ছোট থেকে বড় আমাদের সবারই ট্যালকম পাউডার খুব প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। ট্যালকম পাউডার আমরা বিশেষত মুখ এবং শরীরে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও এর বহুবিদ ব্যবহার রয়েছে।  নিচে  ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো।-

ডিটারজেন্ট ব্যবহারের ফলে আপনার কাপড়ের রং একটু চটে গেছে ! চিন্তা নেই। কাপড় ধোয়ার সময় কাপড় ধোয়ার পানিতে সামান্য ট্যালকম পাউডার দিয়ে কাপড় গুলো একটু ভিজিয়ে রাখুন এরপর শুকাতে দিন। দেখবেন আপনার  কাপড়ের রং উজ্জ্বল হবে।

আপনার মাথার চুলের তেল তেলে ভাব দূর করতে চান ! তাহলে আপনার চুলে সামান্য ট্যালকম পাউডার দিয়ে চুলগুলো ভালোভাবে আঁচড়িয়ে নিন। আর দেখুন আপনার চুল কত ঝরঝরে হয়।
জুতা পরলে আপনার পা ঘামে ! আপনার পায়ে দুর্গন্ধ বের হয় ! তাহলে আর চিন্তা নেই। জুতা পরার আগে আপনার জুতোতে আপনি কিছু ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দিন। এরপর জুতা পরে দেখুন আপনার পা আর ঘামবে না এবং দুর্গন্ধ ও বের হবে না।

আপনি কোন অনুষ্ঠানে যাবেন অথচ আপনার চুল শ্যাম্পু করার মতো হাতে সময় নেই, তাহলে কি করবেন ভাবছেন তাইতো ! আর ভাবনা নয়, অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে আপনি আপনার চুলে কিছু ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে চুল ভালোভাবে আঁচড়িয়ে নিন। দেখবেন আপনার চুল কত ফ্রেশ দেখাবে।

আপনি সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে গেলে আপনার সাথে একটা ট্যালকম পাউডারের বোতল রাখুন। ত্বকে লেগে থাকা বালি সরাতে একটুখানি পাউডার ঘষে নিলেই আপনার শরীরের বালি দূর হয়ে যাবে।

আপনার কাপড়ে গ্রিজ এর দাগ লাগলে তার ওপর ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। পাউডার গ্রিজ শুষে নিলে ব্রাশ করে ঝেড়ে ফেলে আপনার কাপড়টি ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিন। দেখবেন আপনার কাপড়ের দাগ পুরোপুরি চলে গেছে।

অতিরিক্ত গরম পড়লে আপনার বিছানা গরম হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বিছানায় কিছু ট্যালকম পাউডার ছড়িয়ে দিন। আপনার বিছানা ঠান্ডা লাগবে এবং একটি মিষ্টি সুগন্ধে আপনার মন ভরে যাবে আর আপনার ঘুম হবে আরামদায়ক।

মহিলারা আপনারা যারা অক্সিন করেন তারা অক্সিন করার পরের আপনার শরীরে ট্যালকম বেবি পাউডার লাগিয়ে নিন দেখবেন আপনার শরীর কত ভালো লাগবে।

আপনারা যারা চুল স্টেট করেন তারা চুল ইস্টেট করার আগে ট্যালকম পাউডার চুলে ভালোভাবে ছিটিয়ে নিন এতে আপনার চুল সহজে ইস্টেট হয়ে যাবে। তাই  ট্যালকম পাউডার কি - ট্যালকম পাউডারের রং কেন সাদা  হয় এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।

আপনার চামড়ার জুতো কিংবা ব্যাগ যদি পানিতে ভিজে যায় তাহলে জুতা এবং ব্যাগ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে এতে কিছু ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে নিন। দেখবেন আপনার ব্যাগ অনেকদিন ভালো থাকবে এতে আর ছত্রাক লাগবে না।

অনেক মহিলা আছেন যারা গলায় চেইন পরেন। এই  চেইন অনেক সময় এক তারের সঙ্গে অন্য তার পেচিয়ে যায়। তখন এটা খুলতে গেলে অনেক সময় ছিড়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনি এই চেইন এ একটু ট্যালকম পাউডার লাগিয়ে নিন এবং খোলার চেষ্টা করুন। দেখবেন পাউডারের পিচ্ছিল পদার্থের জন্য আপনি খুব সহজে চেইন এর প্যাচ খুলতে পারবেন।

জনসন বেবি পাউডার মাখলে কি হয়

বহু বছর ধরে জনসন বেবি পাউডার পুরো বিশ্বের বাজার দখল করে আছে এবং এই পাউডার প্রায় সকলেরই প্রিয় একটি পাউডার। শুধু পাউডার নয় জনসন বেবি অয়েল, জনসন বেবি সাবান, শ্যাম্পু সব কিছুই যেন সবার সেরা। বেশ কিছুদিন আগে অভিযোগ উঠেছে যে, জনসন বেবি পাউডার ব্যবহারের কারণে শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এই বিষয়কে কেন্দ্র করে শুধু আমেরিকাতেই প্রায় ৩৮ হাজার মামলা হয়েছে। 

স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে এই পাউডারে অধিক মাত্রায় এসবেসটস ব্যবহার করা হয় যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। জনসন বেবি পাউডারের মূল উপাদান হল অক্সিজেন, সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম।পাউডারের বিদ্যমান এই উপাদান গুলো ত্বকের আদ্রতা শোষণ করে এবং আমাদের ত্বকে ঘর্ষণ জনিত সকল প্রকার আঘাত থেকে রক্ষা করে থাকে। ট্যালকম পাউডার এর প্রধান উপাদান হলো ট্যালক, আর পাউডারের এই উপাদান থাকে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। 

আরো পড়ুনঃ 

এই ট্যালক এর সাথে অনেক সময় মিশে থাকে ক্ষতিকারক এসবেসটস আর এই এসবেসটস নিঃশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। 

বেবি পাউডার এ কি ধরনের রাসায়নিক থাকে

শিশুদের জন্য আমরা সাধারণত বেবি পাউডার ব্যবহার করে থাকি। আর ট্যালকম  পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান হল ট্যাল্ক নামক এক ধরনের মিনারেল। আর এই ট্যাল্ক মিনারেলে থাকে উচ্চতাপ শোষণকারী খনিজ পদার্থ যার নাম এসবেসটস আর এই এসবেসটস আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও রয়েছে ফরমালিনডিহাইড ও কার্সিনো জেনিকের মতো ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ। আর ফরমালিনডিহাইড  হলো এক প্রকার ঝাঁঝালো ও বর্ণহীন রাসায়নিক। পাউডার ছাড়া বিভিন্ন আঠা তৈরিতে এই ফরমালডিহাইড ব্যবহার করা হয়।

গবেষকদের মতে ট্যালকম পাউডারের উপস্থিতি ফরমালিনডিহাইড এবং অ্যাসবেসটস এই দুই উপাদানে শিশুদের ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার জন্য দায়ী। এই রাসায়নিক যে শুধু শিশুদের ক্ষতি করে তা নয় এটি বড় মানুষেরও ক্ষতি করে থাকে। আমেরিকান একাডেমিক অফ পেডিয়াট্রিক এর গবেষকেরা বলেন, বেবি পাউডার এ এমন কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা শিশুর ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। তাদের মতে, এই বেবি পাউডার শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা জনিত সমস্যার জন্য দায়ী।

গবেষকেরা আরো বলেন, এই বেবি পাউডার শ্বাস-প্রশ্বাস এর সাথে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুসেরও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন ও বেবি পাউডারের ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন । এছাড়া ও বেবি পাউডার ব্যবহারের ফলে শিশুদের শরীরে লোমকূপ বন্ধ হয়ে র‍্যাস বের হতে পারে বা অন্যান্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

বেবি পাউডার এর বিকল্প

অতিরিক্ত গরমে শিশুর শরীর ঘেমে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায় আর এক্ষেত্রে আপনি শিশুদের পাতলা নরম সুতি কাপড় পরাতে পারেন। আবার সম্ভব হলে একটু পর পর শিশুর শরীর থেকে ঘাম মুছে দিতে পারেন।  এর পরও যদি আপনি পাউডার ব্যবহার করতে চান তাহলে শিশুর সামনে কখনোই বোতলের ঢাকনা খুলবেন না। দূর থেকে ঢাকনা খুলে একটি নরম সুতি কাপড় দিয়ে সাবধানতার সাথে শিশুকে মাখিয়ে দিবেন।

তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হলো আপনি কখনোই শিশুদের মুখে পাউডার লাগাবেন না। এতে আপনার শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। আপনি কখনোই  শিশুদের ট্যালকম পাউডার মাখাবেন না এটা আরো ক্ষতিকর।

শেষ কথা

শিশুদের জন্য আমরা সাধারণত বেবি পাউডার ব্যবহার করে থাকি। আর ট্যালকম পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান হল ট্যাল্ক নামক এক ধরনের মিনারেল। আর এই ট্যাল্ক মিনারেলে থাকে উচ্চতাপ শোষণকারী খনিজ পদার্থ যার নাম এসবেসটস আর এই এসবেসটস আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আমি ট্যালকম পাউডার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url