কৃষি উদ্যোক্তা - রচনা (২০ পয়েন্ট) সম্পর্কে জেনে নিন

বাংলাদেশ সবুজ প্রকৃতিতে ভরপুর এক লীলাভূমি। এখানে রয়েছে সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলায় ভরা আমাদের এই মাঠ কারণ বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর এই দেশের শতকরা ৮0 জন লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আর যে দেশের শতকরা ৮0 জন লোক কৃষক তাদের কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

Image

আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণীতে কৃষি উদ্যোক্তা রচনা পড়ানো হয়ে থাকে আর এর প্রধান কারণ হলো কৃষি নির্ভর এই দেশে যেন তারা ভবিষ্যতে একজন ভালো কৃষি উদ্যোক্তা হতে পারে। আর আমি তাদের কথা মাথায় রেখেই কৃষি উদ্যোক্তা রচনা যথাযথভাবে লিখার চেষ্টা করেছি-

কৃষি উদ্যোক্তা রচনা 

ভূমিকা

" একজন সফল উদ্যোক্তা সব সময় পরিবর্তনের জন্য কাজ করে, সুযোগের অনুসন্ধান করে এবং প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগায়" রিচার্ড ব্রানসন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য লাখো লাখো শিক্ষিত বেকার যুবক কৃষি কাজ করে তাদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর যখন কেউ অর্থের বিনিময়ে জনবলকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন তাকে বলা হয় উদ্যোগ আর যিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাকে বলা হয় উদ্যোক্তা। 

বাংলাদেশে অনেক ধরনের পেশা রয়েছে আর প্রত্যেক পেশাতেই উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন অর্থ এবং মনোবল কারণ একজন উদ্যোক্তা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নির্ভরশীল উদ্যোক্তা হতে পারেন। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কৃষি উদ্যোগ গ্রহণ করা একটি গর্বের বিষয়। কারণ বাংলাদেশের আয়তন মাত্র ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার এর জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। আর অধিক মাত্রার জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দিতে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার কোন বিকল্প নেই।

  • শস্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল,
  • নারী সেই মাঠে শষ্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল
  • নর বাহে হাল, নারী বহে জল, সেই জল মাটি মিশে,
  •  ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।

কৃষি উদ্যোক্তা কে

কৃষি উদ্যোক্তা হলো এখন একজন ব্যক্তি যে ব্যক্তি কৃষি ক্ষেত্রে এমন একটি নতুন কাজের চিন্তা করেন যা আগে থেকে কেউ সেই কাজের চিন্তা কখনোই করেনি বা সেই কাজের কখনোই কেউ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। একজন কৃষি উদ্যোক্তাই জানেন তিনি কিভাবে কাজ শুরু করবেন, কিভাবে কাজ করবেন, কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবেন এবং সেখান থেকে তার কতটুকু উপার্জন হবে এবং তিনি এই উপার্জনের মাধ্যমে কতটুকু লাভবান হতে পারবেন। আর সবকিছুই পরিকল্পনা যিনি করে থাকেন তাকেই বলা হয় কৃষি উদ্যোক্তা।

যখন কোন ব্যক্তি জনবল কে কাজে লাগিয়ে এবং সে ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে কোন উপার্জনের আশায় কোন কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন তাকে বলা হয় উদ্যোক্তা। আর যে নতুন কাজের চিন্তা করে তখন তাকে বলা হয় উদ্যোগ আর যারা কৃষি ক্ষেত্রে কোন চিন্তা গ্রহণ করেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাকে বলা হয় তখন কৃষি উদ্যোক্তা। বর্তমানে বাংলাদেশে সফল কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। তবে গ্রামীণভাবে এর মধ্যেই বেশ কিছু সফল কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার যুবক ও কৃষি

ছেলেটি মাস্টার্স করেছিল বাংলায়,

স্কুলে মাস্টারি করবে বলে।

যেটুকু জমি ছিল অন্ন সংস্থানের.

সেটুকু ঘুচে গেছে বিএড এর ডিগ্রী কিনতে।

এক এক করে দশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।

নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ এখনো পায়নি। 

একটু একটু করে একটা সময়

সরকারি সীমারেখার শেষ প্রান্ত ছুয়ে ফেলবে বয়স।

বাকি দীর্ঘ জীবন টুকু অবসন্নতার অন্ধকারে

বেঁচে থাকবে শুধুই জীবন্ত লাশের মত।

বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এখন কিছু শিক্ষিত বেকারেরা কৃষিকে গ্রহণ করেছে তাদের আয়ের প্রধান অবলম্বন হিসাবে। শিক্ষিত তরুণদের কৃষি ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ তাদের জাতীয়, আন্তর্জাতিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত জীবনে ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিআইডিএস এর বা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের স্নাতক পর্যায়ে বেকারের হার শতকরা ৩৭ ভাগ আর শতকরা ৩৪ শতাংশ বেকার রয়েছে যারা স্নাতকোত্তর।

বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার তিনভাগের এক ভাগে হলো যুবক। আর এই শিক্ষিত বেকার যুবকদের কৃষি ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশেকে টেকসই ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। কারণ যুবকেরাই পারে উন্নয়নের গতি এবং এদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে। বাংলাদেশের বেকার যুব সমাজ বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে উদ্বেগ গ্রহণ করেছে।

কৃষি ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তারা কৃষিকাজ, হাঁস মুরগির খামার, ফুলের চাষ, মাশরুম চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, দুধের খামার, পণ্য সরবরাহ ইত্যাদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আর এসব কাজ করে আজ বাংলার যুবসমাজ তথা বাংলার কৃষকেরা সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশে কৃষি উদ্যোক্তা এবং কৃষক বাক্য দুটি শুনতে এক রকম মনে হলেও দুটি বাক্য আসলে আলাদা। কারণ যিনি কৃষি পণ্য বাজারজাত করেন এবং মুনাফা অর্জন করেন তিনি হলেন কৃষি উদ্যোক্তা। আর একজন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য থেকে কিছু বাজারজাত করেন এবং কিছু অংশ তিনি ব্যয় করে থাকেন তার পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্য। কৃষি উদ্যোক্তাকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়।

কারণ একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে হতে হয় ব্যবসায়িক মনোভাবাসম্পন্ন আর কৃষি উদ্যোক্তা কৃষিজাত পণ্য বাজারজাত করেন মুনাফা লাভের জন্য। এরপরও একজন সফল উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়েই তিনি তার সকল কাজ সমাধা করে থাকেন। আর একজন কৃষক ঝুঁকি নিয়ে তিনি তার জমিতে ফসল ফলান আর এর জন্যই বলা হয়ে থাকে যিনি ঝুঁকি নিয়ে ফসল ফলান তিনি হলেন কৃষক এবং যিনি মুনাফা অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তিনি হলেন কৃষি উদ্যোক্তা।

কৃষি উদ্যোগের ক্ষেত্র সমূহ

কৃষিজত পণ্যসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট যেকোন বিষয় প্রাণিসম্পদ বিষয় কৃষি উদ্যোগের আওতায় আনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে যিনি কৃষি উদ্যোক্তা হবেন তার অবশ্যই মূলধন থাকতে হবে। এছাড়াও তার নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি থাকতে হবে, মাটির গুণগত মান, রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, পরিবহন ব্যবস্থা, লোকবল, উৎপাদিত দ্রব্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থা সবকিছু বিবেচনা করে তাকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে তবেই তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে পারবেন।

এছাড়াও একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তাকে ধান, গম, পাট, সবজি, ফুল, ফল, মসলা, মধু, মাশরুম, রেশম, মুরগি, গরু, ছাগল, মাছ ও ঘাস প্রভৃতি প্রাণিসম্পদ, গাছের চারা, জৈব সার, বায়োগ্যাস, দুধ ও দুধ জাত পন্যের উৎপাদন ও বিপণ সবকিছুই করার মনোভাব রাখতে হবে কারণ এগুলোর সবকিছুই কৃষি উদ্যোগের আওতাভুক্ত।

কৃষি উদ্যোক্তার করণীয়

যিনি কৃষি কাজে অনেক ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাকে বলা হয় কৃষি উদ্যোক্তা। আর একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে তাকে সজাগ থাকতে হবে। এগুলো হলো-

  • একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারেন কয়েকজন উদ্যোক্তা।
  • তবে উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমেই পণ্যের বাজার সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।
  • কয়েকজন মিলে যদি একসঙ্গে কোন কাজ করে বা উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে ঝুঁকি অনেক কম থাকে। তবে একজন কৃষি উদ্যোক্তা যার সঙ্গে কাজ করবেন অতিসতর্কতার সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব নির্বাচন করবেন।
  • বাংলাদেশ সরকার কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য কয়েকটি উদ্যোগ বিশেষ করে কৃষি উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আর এই উদ্বেগ গুলোকে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
  • একজন সফল উদ্যোক্তাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় হ্রাস করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে অনেক রকমের ঝুঁকি নিতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে কৃষি উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে লাভ - ক্ষতি সম্পর্কে যথাযথ প্রস্তুতি রাখতে হবে এবং বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তাকে প্রয়োজনীয় ঝুঁকি গ্রহণ করতে হবে।
  • তবে একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে অবশ্যই তার উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বে সে বিষয়ে যাবতীয় বিষয়ের খোঁজখবর নিয়মিত ভাবে রাখতে হবে।
  • বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার জানতে হবে। কারণ উদ্যোক্তাদের এই ডিভাইস গুলো অনেক সহায়তা করে থাকে। আর একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে অবশ্যই এই ডিভাইস গুলো রাখতে হবে।
  • যিনি কৃষি উদ্যোক্তা হবেন তার উদ্বাবনী ক্ষমতা থাকতে হবে কারণ তার এই উৎপাদন বৃদ্ধি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করবে।
  • আমাদের এই প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল যার কারণে শ্রমিক ও পণ্য পরিবহন, বাজার পরিস্থিতি ও প্রতিযোগীদের কথা চিন্তা করে কাজে অগ্রসর হতে হবে। আর এই সব পরিকল্পনা করে কাজে উদ্যোগী হলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আর এর প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশে কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন। আর বাংলাদেশ সরকার কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা হল -

  • একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে হলে তার মূলধন প্রয়োজন তাই বাংলাদেশ সরকার স্বল্প সুদে বিভিন্ন অংকের ঋণ প্রদান করছেন কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য।
  • বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পানিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের যেকোন প্রয়োজনে সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  • বাংলাদেশের কৃষকদের বছরব্যাপী চাষ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের ডিজিটাল শস্য ক্যালেন্ডার ও বালাই নাশক নির্দেশনা দেওয়া আছে যা কৃষকদের সঠিক ফসল ফলাতে সাহায্য করে থাকে।
  • কৃষি প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার নামে মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে থাকে।
  • কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষক প্রাপ্ত বাজার দর, সাপ্তাহিক ও প্রক্ষিক ভিত্তিতে তথ্য প্রেরণ করে থাকে।
  • কৃষি উদ্যোক্তা এবং কৃষক যেকোনো কৃষি সম্পর্কে সমস্যা সমাধানের জন্য বা যে কোন তথ্য পাওয়ার জন্য আপনারা ১৬১২৩ নম্বরে ফোন করবেন তাহলে আপনারা যেকোন সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।

কৃষি উদ্যোক্তার গুনাবলী

যেকোনো কাজ করার জন্য সে কাজ সম্পর্কে তার যথেষ্ট গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। আর একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হতে হলেও তার কিছু বিশেষ গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে তার যে সকল গুনাহ গুলি প্রয়োজন তা হলো-

  • কোন কাজের সফলতা এমনিতেই আসে না সফলতা অর্জন করতে হলে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। আর এক্ষেত্রে ও একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তাকে দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করতে হয়। আর এই দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করার সখ্য ক্ষমতায় তার সবচেয়ে বড় গুন।
  • একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা উপস্থাপন করতে পারেন তার নতুন ধারণাকে আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময় করে উপস্থাপন করতে পারেন তার বিনিয়োগকারীদের কাছে।
  • একজন কৃষি উদ্যোক্তার একটি সঠিক ধারণা থাকতে হবে আর যখন ধারণাটির আকর্ষণ তিনি বুঝতে পারবেন তখন তিনি বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন এবং তখন তিনি বিভিন্ন কাজের উৎসাহ প্রদান করে থাকেন।
  • একজন কৃষি উদ্যোক্তাকে তার দক্ষতা অনুযায়ী বিনিয়োগকারী সম্পদ, জনবল ও পণ্য বরাদ্দ দিতে উৎসাহ দিতে হবে।
  • একজন কৃষি উদ্যোক্তা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, সার, সেচ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তার কৃষি উন্নয়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে পারবেন
  • গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরি করতে হলে কৃষিতে মূলধন সংযোজন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে উৎপাদন ব্যবস্থা বাড়াতে হবে এবং লাভবান হতে হবে।

কৃষিতে নারী উদ্যোক্তা

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বাংলাদেশের ক্রমশতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো নারী আর বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি নির্ভরশীল দেশ তাই কৃষির উন্নয়ন করতে হলে উদ্যোক্তা হিসাবে নারীদের অবদান অত্যাবশ্যক কৃষি উদ্যোক্তা নারীদের মধ্যে শতকরা ৬৮ভাগ নারী কৃষি বনায়ন এবং মৎস্য খাতের সাথে জড়িত আর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কয়েক দশকে প্রায় প্রয়োগ কোটি নারী শ্রমশক্তির সাথে জড়িত হয়েছেন এবং এরকম একজন নারী কৃষি উদ্যোক্তা হলেন সাহিদা খানম

তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তার ছাদ বাগানের মাধ্যমে। আবার গ্রাম্যবধূ নুরুন্নাহার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি একজন কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে অনেক পুরস্কার এবং সম্মাননা কুড়িয়েছেন আর যে কোন দেশের উন্নয়ন করতে হলে নারীদের বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। 

কৃষি উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান

সোনালী ফসলের আগমনে আনবো নতুন ভোর।

অভাব অনটন রইবে নাকো থাকবে না কোন ক্লেশ

বিশ্বের মাঝে পরিচিতি পাবে সোনার বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে এই কবিতার মতোই হয়তো বিশ্বের দরবারে একদিন পরিচিতি লাভ করবে। কারণ কৃষি পণ্য সরবরাহ, নার্সারি, দুধের খামার, ফুলের চাষ, হাঁস - মুরগির খামার, মাশরুম চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, শুটকি এই সকল কাজ সাধারণত কৃষি উদ্যোক্তারা করে থাকেন। আর এই সকল কাজ করতে আরো অনেক লোকের প্রয়োজন হয় আর এতে লোকের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপ সৃষ্টির জন্য ফান্ড তৈরি করেছে এবং এই ফান্ড করা হয়েছে ৫00 কোটি টাকার।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও এক ১ শতাংশ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। আর কৃষি উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কর্মসংস্থানের জন্য এইসব ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদের ঋণ নিতে পারেন এবং নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন।

কৃষি উদ্যোক্তা তৈরীর কারিগর

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে অফলাইন এবং অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। অনলাইনের মাধ্যমে ও ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেক তরুণ সমাজ আজ সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পেরেছে। আবার হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছে গত তিন বছরে প্রায় ৪০০ তরুণ তরুণী। আর এদের মধ্য থেকে খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাফল্য পেয়েছে প্রায় ৩১২ জন আর তারা যে খামার তৈরি করেছে তাতে আরো কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে প্রায় ২০০ জন লোকের।

শিক্ষিত যুবক ও সফল কৃষি উদ্যোক্তা

বাংলাদেশের কৃষিতে সফলতার রয়েছে অপার সম্ভাবনা কারণ পৃথিবীর অন্য দেশে সোনার খনি থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে সোনার চেয়েও খাঁটি বাংলার উর্বর মাটি। বাংলাদেশের শতকরা আশি ৮০ জন লোক কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আর এজন্যই শিক্ষিত যুবক হয়ে উঠতে পারে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। আর যদি কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে তাহলে উদ্যোক্তা হয়ে সহজে তারা সফলতা অর্জন করতে পারবে।

আর শিক্ষিত যুবক যদি বেকার না থেকে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করে তাহলে বাংলাদেশে তাদের মাধ্যমে - " মাছে ভাতে বাঙালি" এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে। শিক্ষিত যুবকরা তাদের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠবে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের করণীয়

একজন সফল উদ্যোক্তা তৈরি করতে হলে সেই দেশের সরকারেরও কিছু করণীয় রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা হলো -

  • যুব ও মহিলা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণে উদ্যোক্তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
  • প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের পণ্যের গুণগত মান, প্যাকেটিং, লেভেলিং, ব্র্যান্ড, বাইন্ডিং, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি রাখতে হবে।
  • বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্যাকেজের আকারে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • নিয়োজিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রক্রিয়ার ব্যবসা সম্পর্কে  কাজ করতে হবে।
  • ফসলের মান পরীক্ষার আধুনিক সুবিধা ও দক্ষ জনবল সৃষ্টি করে গবেষণা উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের সংগঠিত করতে হবে।
  • উদ্যোগ পরবর্তী সময়ে মূল ধারার বাজারে প্রবেশ করতে পারে সকল উদ্ভাবনাকে পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে।
  • কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব বা স্থানীয় প্রযুক্তির সহায়তায় কৃষি ব্যবসা ইনকিউবেসন কেন্দ্র বা এক্সেলেটর চালু করে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।
  • কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সাহায্যে কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে হবে, প্রাথমিকভাবে যথাযথ মান পরীক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃষি উদ্যোক্তা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এজন্যই বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কৃষি একটি শক্তিশালী উদ্যোক্তা ক্ষেত্র। তবে প্রত্যেকটি পেশাতেই উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্র বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃষি গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না যদিও বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলে রয়েছে প্রধানত কৃষি ব্যবস্থা। বাংলাদেশের মানুষের মানসিক অবস্থা এমন যে -

তাদের ধারণা "একজন ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে মাঠে কাজ করবে সেটা কখনোই হতে পারে না" আর এরকম দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আগেকার দিনের মানুষের। তবে বর্তমানে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। মানুষের চিন্তাধারায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছেন। তাই কৃষি ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে অনেকেই উৎসাহ প্রদান করছেন। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক এখন কৃষিকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন।

আর উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ অফ ৫০০ কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করেছে। আর যেসব উদ্যোক্তাদের বয়স ২১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে তাদের এক কোটি টাকা স্বল্প সুদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এই ঋণ ও নানান সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা অনেক লাভবান হতে পারেন।

উপসংহার

জৈব সার রক্ষা করবে সকল জমির ক্ষয়।

চেষ্টা যদি করে কৃষক ব্যর্থ হবে না।

এর চেয়ে সহজ উপায় আর তো পাবে না।

পন করো আজ সবাই মিলে কৃষক, শ্রমিক, জেলে

রাখবে না আর কোন জমি অনাবাদি ফেলে।

একজন কৃষি উদ্যোক্তা যখন জাতীয় জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে তখন অর্থনীতির ভিত্তি ও শক্ত হয় এবং দারিদ্র দূরীভূত হয়। আর একজন কৃষি উদ্যোক্তা পারে উৎপাদন করে খাবারের চাহিদা মেটাতে। আমরা পৃথিবীর সকল উদ্যোক্তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পায় তারা মানুষের সমসাকে নিজের সমস্যা হিসেবে দেখেছেন এবং তা সমাধানের চেষ্টাও করেছেন। আর একজন সফল উদ্যোক্তা এভাবেই নিজের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে দেশের কথা তথা দেশের মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করে থাকেন।

তারা সব সময় একটি কথাই ভাবেন কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। আর এভাবেই একজন উদ্যোক্তা খুঁজে পায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পথ। তাই বাংলাদেশের জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url