আমলকি খাওয়ার উপকারিতা - আমলকির ব্যবহার জেনে নিন

 আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আমলকির ব্যবহার সবাই জানেন । এটি একটি ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ ফল । এই সব গুন পেতে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আমলকির ব্যবহার সঠিকভাবে জানা দরকার । আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  - আমলকির ব্যবহার জানতে নিচের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন 

যাদের চোখের ফোলা ভাব আছে ও চোখের ছানির সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন আমলকি খেতে পারেন ।আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আমলকির ব্যবহার অনেক ।  পাশাপাশি চোখ দিয়ে পানি পড়া , চোখ চুলকানি ও চোখ লালচে হয় তাদের জন্য আমলকি খাওয়ার উপকারিতার শেষ নেই । আপনার ওজন কমাতে খাবারের পূর্বে একগ্লাস আমলকীর গুঁড়া মিশ্রিত পানি খেয়ে নিতে পারেন । আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আমলকির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা যাক ।

পোস্ট সূচিপত্র ঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  -  আমলকির
ব্যবহার

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি একটি ফল হিসেবে আমরা সবাই চিনি । একটি উদ্ভিদ হিসেবে আমলকিতে রয়েছে নানা গুণ ।  তাহলে এবার চলুন আমলকি খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেয়া যাক ।

  1. আমলকি চুলের গোড়া মজবুত রাখে এবং আমাদের চুলকে বেশি শক্তিশালী এবং ঘন করে তুলতে সাহায্য করে । তাই চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমলকি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন । চুলকে  শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে ।

  2. খুশকির সমস্যা আমাদের প্রায় সকলেরই একটি কমন সমস্যা ।  তাই খুশকির সমস্যা
    দূর করতে আমলকিতে থাকা উপাদান বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।

  3. আমাদের পাকস্থলীর জনিত নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করে আমলকি । আর এই আমলকি খাবার হজম করতে সহায়তা করে ।

  4. আমলকি নিয়মিত খেলে শরীরের অশ্ব গেজ এর সমস্যা সমাধান সহ পাইলসের সমস্যার
    সমাধান করে থাকে ।

  5. খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে । যাদের খাবারের অরুচি আছে তারা আমলকির আচার
    খেতে পারেন 

  6. আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল পাকস্থলীতে গ্যাসের সমস্যা । আমলকি খাওয়ার
    উপকারিতা হিসেবে আপনার পাকস্থলীর গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে ।

  7. ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।  আমলকিতে ভিটামিন
    সি সহ আরো অনেক উপাদান আছে যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করবে ও আপনার তারুণ্যকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে ।

  8. আমলকি খেলে আপনার দৃষ্টি শক্তি বাড়বে এবং আপনার চোখকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে
    বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।

  9. আমলকিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে
    আপনি মানসিক চাপ থেকে রক্ষা পাবেন । আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা
    আপনার সকল সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে ।

  10. যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিয়মিত আমলকি খেতে পারেন । কারণ আমলকি সুগার
    নিয়ন্ত্রণ করে কোলেস্টরেল এর পরিমাণ কমাতে আমলকি খেতে পারেন । এতে আপনার
    ফ্যাট কমবে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে ।

আমলকির রস খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি পুষ্টিগুণে ভরা একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল । আমলকি খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি জুস বানিয়ে খেতে পারেন । তবে আমলকি খাওয়ার নিয়ম মেনে  খাবেন । আমলকির রস আপনার শরীরের হাজারো সমস্যার সমাধান করবে । আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে নিমিষেই আপনার শরীর হয়ে উঠবে সতেজ । ক্যান্সারের মতো রোগের সেলের সংখ্যা কমাতে পারে আমলকি । আমলকির রসে থাকে ভিটামিন ও মিনারেল যা আপনার শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখবে ।

আরো পড়ুন ঃ নিয়মিত কলা  খাওয়ার  উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার  নিয়ম      বিস্তারিত জেনে নিন

আমলকির রস আপনার শরীরের মেটাবলিজম ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে সর্দি-কাশিসহ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করবে । এছাড়া বাত ব্যথা সারাতে ও কাজ করে । প্রতিদিন ১0 মিলিগ্রাম থেকে ১৫ মিলিগ্রাম আমলকির রস পান করতে পারেন । আমলকির রস এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং মুখের বলিরেখা , ছোপ ছোপ  কালো দাগ , ব্রণের দাগ দূর হয় । দেখলেন তো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা । তবে আমলকির  ব্যবহার ও নানা বিধ ।

চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা

অনেকেই চুলপড়া সমস্যায় ভুগে থাকেন । গবেষণায় উঠে এসেছে যে চুলকে ভালো রাখতে আমলকি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে । চলুন আমরা জেনে নিন চুলের জন্য আমলকি খাওয়ার উপকারিতা এবং আমলকির ব্যবহার ।

চুলের বৃদ্ধিতে আমলকির ভূমিকা

আমলকিতে ভিটামিন, খনিজ , ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও মিনারেল আছে । যা আপনার মাথার স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে এবং চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । আমলকিতে উপস্থিত ভিটামিন সি ক্লোজেন প্রোটিনের উৎপাদান বাড়িয়ে আপনার চুলকে সতেজ করে তোলে । এছাড়াও আমলকিতে রয়েছে কোলাজেন যা ফলিকলের মৃত কোষ কে নতুন ভাবে চুলের সজীব কোষে পরিণত করে ।

খুশকি সমস্যার সমাধান

খুশকির সমস্যা আমাদের সবার জন্য একটি কমন সমস্যা । মাথায় খুশকি তৈরি হয় মাথার ত্বকের শুষ্কতার কারণে । আর আমলকিতে আছে ভিটামিন সি যা আপনার চুলের রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব কাটিয়ে তুলে জেল্লা তৈরি করে এবং খুশকি জমতে দেয়না । তবে আরো ভালো উপকার পেতে আপনি আমলকির রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নেবেন । 

আরো পড়ুন ঃ   সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা- জেনে নিন বিস্তারিত

এক চামচ আমলকির রস , এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ অলিভ ওয়েল  নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । এবার হাতের সাহায্যে মাথার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগান । ১0 থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন । এটি সপ্তাহে একবার করবেন ।

চুলের কন্ডিশনারের কাজ করে

আমলকি চুলে ভলিয়ম যোগ করে চুলকে মজবুত ও কন্ডিশনিং করে । যা আপনার চুলকে চকচকে করবে সাধারণত একটি আমলকিতে শতকরা ৮১.২ ভাগ পর্যন্ত আদ্রতা থাকে । যা আপনার চুলের জন্য উপকারী ।

আমলকি পাউডার এর উপকারিতা

আপনার চুল যদি তৈলাক্ত ও চিটচিটে থাকে তাহলে আপনি আমলকি  পাউডার ব্যবহার করুন । এই আমলকি আপনার মাথার ত্বকের উপস্থিত সমস্ত বাড়তি তেল কে ভিজিয়ে রাখবে এবং আপনার চুলকে কন্ডিশনিং  করবে । আমলকীর গুঁড়া নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন ।আমলকি পাউডার ও মেহেদির গুড়া একসাথে মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন । তাহলে আপনার চুল আরও উজ্জ্বল দেখাবে  । 

আমলকীর গুঁড়া সামান্য কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন । এরপর মিশ্রণটি আপনার চুলে ভালভাবে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন । তারপর ধুয়ে ফেলুন । দেখবেন এতে আপনার চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে , চুল মসৃণ হবে এবং চুল দ্রুত লম্বা হবে ।

আমলকি খাওয়ার নিয়ম

আমরা সবাই জানি আমলকি খাওয়ার উপকারিতা , তবে আমলকির  ব্যবহার জানা দরকার । আমলকি আমরা কয়েকভাবে খেতে পারি । আপনি কাঁচা আমলকী চিবিয়ে খেতে পারেন তবে এর স্বাদ একটু তিতা ধরনের হলেও আমলকি খাওয়ার পরে পানি খেয়ে দেখবেন পানির স্বাদ কতটা মিষ্টি লাগে । আপনি আমলকির জুস তৈরি করে খেতে পারেন ।  আমলকির আচার তৈরি করে ও খাওয়া যায় ।

আমলকির তেলের উপকারিতা

আপনার চুল অকালে পেকে যাচ্ছে ! তাহলে ব্যবহার করুন আমলকির তেল । আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ডান্ড্রিয়াম চুলের যেকোন আক্রমণে বাধা দেয় এবং আপনার মাথার চুল পাকা প্রতিরোধ করে । এটি আপনার চুলের টনিক হিসেবে ও কাজ করে ।

আমলকির তেল তৈরির নিয়ম

কয়েকটি আমলকি নিয়ে সেগুলো টুকরো করে কেটে নিন । এবার শ্বাস গুলো নিয়ে বিচি গুলো ফেলে দিন । এবার টুকরোগুলো কিছু নারকেল তেলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩0 মিনিট খুব অল্প তাপে গরম করে নিন । এবার ঠান্ডা হওয়ার পর একটি স্টেনারে পাতলা কাপড় দিয়ে তাতে ছেঁকে নিন । একটি কাঁচের জারে সংরক্ষণ করুন । আরো বেশি উপকার পেতে আপনি এই তেল তৈরিতে আরো কিছু যোগ করে তৈরি করতে পারেন ।

আরো পড়ুন ঃ   নাক ডাকার কারণ কী - এবং এর সমাধান       জেনে নিন

সেগুলো হলো ঃ-

  • আমলকি ১0 থেকে ১৫ টি

  • নারকেলের তেল অথবা তিলের তেল ৩ থেকে ৪ কাপ

  • কারি পাতা ৭ থেকে ৮ টি

  • ভিটামিন ই ক্যাপসুল কয়েকটি

এই উপকরণ গুলো একসাথে নিয়ে ২৫ থেকে ৩0 মিনিট জ্বাল করুন । তারপর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একই নিয়মে সংরক্ষণ করুন । এই তেল সপ্তাহে ২ - ৩দিন ব্যবহার করুন ।

উপসংহার

আমলকি ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল । যা  আমাদের  শরীরের জন্য অনেক উপকারী । আমলকিতে রয়েছে ফাইবার যা আপনার পেটে সমস্যা সমাধান করবে । আপনি আমলকি কাঁচা অথবা শুকনো আমলকির গুঁড়া যেকোনো একটি খেতে পারেন । কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল ও  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার পেট জ্বালাপোড়া ,ব্যথা , ক্রাম্পের সমস্যা ও পেটের বিষাক্ততা কমায় ।

আমি আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও আমলকির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছি । আশাকরি এই পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে । যদি আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url