নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

কলা পুষ্টিগুণে ভরা একটি বারোমাসি ফল । এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল যারা নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না । তবে নিয়ম মেনে কলা খাওয়া উচিত । এই ফলটি অতি সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায় এবং এর দাম ওআপনার হাতের নাগালের মধ্যেই । আপনি কাঁচা কলাতে পাবেন প্রিবায়োটিক ফাইবার । তাই আপনি নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা জানতে আমার পোস্টটি মনোযোগ এর সাথে পড়ুন।

Image

কলাপাকা হোক বা কাঁচা দুটোতেই আয়রনে পরিপূর্ণ । তাই আপনি নিয়মিতকলা খাওয়ার উপকারিতা জানুন এবং   কলা খাওয়ার নিয়ম মানুন । আপনি কাঁচা কলা সবজি হিসেবে খেতে পারেন কাঁচা কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ফাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সকল ধরনের ভিটামিন এ পরিপূর্ণ তাই অনেক সময় কলা কে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে আমি এখন আপনাদের সাথে কলা খাওয়া নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব -

পোস্ট সূচিপত্র ঃ নিয়মিত কলা  খাওয়ার  উপকারিতা - কলা খাওয়ার  নিয়ম

নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলাপটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফল ।  যা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে । দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন ! তারা প্রতিদিন কলা খেতে পারেন । কারণ কলায় থাকে পেকটিন নামক ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য । করে রোদে গরমে ক্লান্ত অনুভব করছেন , চাঙ্গা হতে চান ! তাহলে কলা খান । কারণ শরীরে শক্তি যোগাতে কলার জুড়ি মেলা ভার । ওজন কমে গেলেও চিকিৎসকেরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । 

কলা যদিও মিষ্টি ফল তবুও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ খুবই কম থাকে । তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা   কলা খেতে পারেন ।কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল ।  একটি মাঝারি সাইজের কলায় রয়েছে ৪00 মিলিগ্রাম পটাসিয়াম যা আপনার হৃদযন্ত্র ভালো রাখবে ।  আর এই পটাশিয়াম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনি হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে মুক্তি পাবেন ।

 আরো পড়ুন ঃ  নাক ডাকার কারণ কী - এবং এর সমাধান       জেনে নিন

এটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণে ভরা তাই অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো দুধ আর  কর্নফ্লেক্স এর সাথে কলা খান । কলাতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল । শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ দূর করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দারুন ভাবে কাজ করে । আর কলায় রয়েছে ক্যারোটিন এডের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনি এই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন ।

দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা

১৯৩৪ সালে ডাঃ জর্জ হারোপ  দুধ কলা ডায়েট তৈরি করেছেন । একটি মাঝারি সাইজের কলায় ১00 গ্রাম ক্যালোরি থাকে এবং এক কাপ দুধে ৮০ গ্রামের চেয়েও বেশি ক্যালরি থাকে । দুধ এবং কলা খাবার উপকারিতা আমাদের সবারই জানা আছে । তবে দুধ ও কলা যদি একসাথে খাওয়া হয় তাহলে উপকারিতা আরো বেশি পাওয়া যায় । এই খাবারটি তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে । 


আপনার ত্বক মসৃন করতে তিনটি কলা ও ফ্যাট মুক্ত এক কাপ দুধ খেতে হবে । এবং কলা খাওয়ার উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে ।আপনার দাঁত সাদা করতে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে দুধ ও কলা খাওয়ার উপকারিতার শেষ নেই । এই দুধ কলার ডায়েট আপনার ব্রণের দাগ দূর করবে । কলাতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বি সি এবং ই ।

 আরো পড়ুন ঃ কালোজিরা - খাওয়ার উপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম  জেনে নিন

এছাড়াও কলাতে থাকা পটাশিয়াম  , খনিজ, জিংক এবং আয়রন রয়েছে । আবার ফ্যাটমুক্ত দুধে চর্বির মাত্রা কম থাকে বলে এটি আপনার শরীরের ওজনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে । দুধে থাকা প্রোটিন আপনার মাংসপেশি মজবুত করবে । তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার নিয়ম ।

সাগর কলা খাওয়ার উপকারিতা

বাঙালি পলা প্রিয় মানুষ । তাই আমাদের দেশে প্রায় সব মানুষই কলা খেতে ভালোবাসেন । সাগর কলা খেতে অনেকেই ভালোবাসেন কারণ এর একটি আলাদা সুঘ্রান রয়েছে । যাদের আয়রনের ঘাটতি আছে তারা সাগর কলা খাবেন । আয়রন আপনার রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে । সাগরকলা নিয়মিত খেলে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে । কোন চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ৩0 মিনিট পর একটি সাগর কলা খেয়ে নিন । চর্বি হজম হয়ে যাবে ।

চর্বির ক্ষতিকর অংশ দ্রুত হজম কলা খাওয়ার কারণে । কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এটি হজমে সাহায্য করে ।  তাহলে এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কলা  নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতা । সাগরকলা আপনার শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের বুকের দুধের মাত্রাও বাড়িয়ে  দিতে সাহায্য করে ।  আর এইসব উপকার পেতে আপনাকে কলা খাওয়ার নিয়ম মানতে হবে।

পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে নিয়মিত কলা পাকা কলা খেলে আপনার যে উপকার হবে তা হল 

1 -ধূমপান ছাড়তে চান তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত পাকা কলা খান এই পাকা কলা আপনার
শরীরের নিকোটিন এর মাত্রা কমিয়ে দিবে


2- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাকা কলা উপকারী এটি আপনাকে স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা করবে

3- ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে সাহায্য করে

4 - দাঁতকে সাদা ঝকঝকে করতে চান তাহলে পাকা কলার খোসা দিয়ে আপনার দাঁত ঘষুন দেখবেন আপনার দাঁত কেমন সাদা ঝকঝকে হয়ে গেছে

5 -যাদের নিয়মিত বুক জ্বালাপোড়া করে তারা পাকা কলা খান এটা আপনার এন্টাসিড এর কাজ করবে

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা চেয়ে অপকারিতা বেশি । রাতে ঘুমাতে যাবার অনেক আগে খাবার খেতে হয় । যাতে করে হজমের কোন সমস্যা না হয় । আর কলাতে থাকে ফাইবার যা হজম হতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় । আর ঘুমানোর আগে খাবার হজম না হলে শরীর খাবারে হজমের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে । যার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় । তাই আপনি যদি রাত্রে কলা খান তাহলে অন্ততপক্ষে ঘুমানোর এক ঘণ্টা পূর্বে কলা খাবেন । তবে রাতে কলা না খাওয়াই ভালো ।


বিচি কলা খাওয়ার উপকারিত

কলা সাধারণত বিচিবিহীন ফল হলেও বিচি কলায় থাকে প্রচুর বিচি । আর এই  বিচির কারণে এর নাম বিচি কলা । এই  বিচি কলা ও পুষ্টিগুণে ভরা । সাধারণত অন্য জাতের কলা গুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে । অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিচি কলা খেতে চান না । তবে পাকা বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যা আমাদের শরীরের শক্তির অন্যতম উৎস ।

 আরো পড়ুন ঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত

এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ , বি ৬ সি এবং  ডি । একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় প্রায় ৩0% পটাশিয়াম থেকে পাওয়া যায় । গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি দুটি কলা খায় তাহলে সে ৯0 মিনিট কাজ করার শক্তি পায় । অতএব বুঝতেই পারছেন নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা কত বেশি ।তবে যাই করুন না কেন নিয়ম মেনে কলা খাবেন।

কলা খাওয়ার নিয়ম

আমরা সবাই জানি কলা পুষ্টিগুণে ভরা একটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল । নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা যেমন আছে তেমনি এটি খাওয়ার নিয়ম ও আছে । সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয় কারণ কলাতে ভিটামিন-সি থাকার কারণে  অ্যাসিডি রিফ্লাক্স বাড়তে পারে । যার কারণে আপনার হাইপার এসিডিটি হতে পারে । এছাড়াও যারা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের আক্রান্ত তারাও সকালে খালি পেটে কলা খাবেন না । 

সকালে নাস্তা খাওয়ার পর এবং  বিকেলে নিয়মিত কলা খেলে এবং কলা খাওয়ার নিয়ম মেনে কলা খেলে উপকৃত হবেন । যারা কাশি , হাঁপানি ও বদহজম এ ভুগছেন তারা কখনোই রাতে কলা খাবেন না ।এটা আপনার শরীরের শ্লেষ্মা তৈরি করবে এবং কফ দোষ  কে বাড়িয়ে দিবে । প্রোটিন ও ফাইবার হজম করতে দিনে বা সকালে কলা খাওয়া উচিত । তাহলেই আপনি জানতে পারলেন কলা খাওয়ার নিয়ম

কলার মধ্যে কি কি ভিটামিন আছে

কলার মধ্যে আপনি প্রায় সকল ধরনের ভিটামিন পাবেন তবে কলার আকৃতির এর ভিটামিন কিছুটা আলাদা হতে পারে যেমন -

  • কাঁচা কলা - ফাইবার

  • সামান্য পাকা কলা - ফাইবার ও চিনি

  • পাকা কলা - ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

  • বেশি পাকা কলা - পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

  • অতিরিক্ত পাকা কলা - ক্যান্সার বিরোধী উপাদান থাকে

পাকা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে 

নিয়মিত কলা খেলে ওজন বাড়ে না কমে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে । অনেকে মনে করেন কলা যেহেতু  শর্করা ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল তাই কলা খেলে ওজন বাড়ে ।আবার অনেকে মনে করেন   কলাতে শুধু শর্করা ও পটাশিয়াম রয়েছে তা নয় এতে রয়েছে ফাইবার সহ আরো অনেক উপাদান আর ফাইবার । এই   ফাইবার মানুষের হজমশক্তি বাড়ায় এবং খাদ্য হজমে সহায়তা করে ।

 আরো পড়ুন ঃ সজনে পাতা রান্না করার পদ্ধতি বা রেসিপি জেনে নিন বিস্তারিত

কলাতে ফাইবার থাকার কারণে মানুষের পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে যার কারণে তার আর খাবার খেতে ইচ্ছে করে না । আর এর ফলে মানুষের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায় । তাই নিয়মিত  কলা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনার ওজন বাড়বে না  বরং কমবে । তবে কলা খাওয়ার নিয়ম মেনে তারপর খাবেন ।

শেষ কথা

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে ও দেহের শক্তি যোগাতে কলা  সবচেয়ে উপকারী ফল । কলা দূর করে দিতে পারে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি। এটা বারোমাসি এবং সস্তা হওয়ায় সবাই কলা পছন্দ করেন । পুষ্টিগুণে ভরা এই কলা আপনার পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খিদে মেটাতে ও সাহায্য করবে । এর পাশাপাশি সহজলভ্য  সবজি হিসেবে আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলা রাখতে পারেন । এতে আপনার পুষ্টি চাহিদা ও মিটবে ।

সবশেষে আমরা বলতে পারি , কলা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই । তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা জানুন এবং নিয়ম মেনে কলা খান ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url