হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
হজ একটি ফরজ ইবাদত । হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি আমরা যদি না জানি তাহলে আমরা সঠিকভাবে হজ পালন করতে পারবোনা। হজ্ব সঠিকভাবে পালন করতে হলে হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি আমাদের সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন। হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি জানতে আমার পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল সংকল্প করা, ইচ্ছা করা ইত্যাদি। হজ মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত। হজ হল বান্দার প্রতি আল্লাহর হক। নির্দিষ্ট কতিপয় ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বায়তুল জিয়ারতের সংকল্প করাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ বলা হয়। হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি
হজ কাকে বলে
হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল সংকল্প করা, ইচ্ছা করা ইত্যাদি। হজ মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত। হজ হল বান্দার প্রতি আল্লাহর হক। ঈমানের আলোকিত নিদর্শন । নির্দিষ্ট কতিপয় ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বায়তুল জিয়ারতের সংকল্প করাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ বলা হয়।কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে "মানুষের ওপর আল্লাহর বিধান ওই ঘরে হজ করা , যার আছে সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য, আর কেউ কুফর করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের মুখাপেক্ষী নন (সূরা আলে ইমরান,(৩)ঃ ৯৭।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন - "আর লোকদেরকে হজ করার জন্য প্রকাশ্য ভাবে আহ্বান জানাও - তারা যেন তোমার কাছে আসে ,পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দিন দুনিয়ার কল্যাণের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেওয়া জন্তু গুলোকে কুরবানী করবে , তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাব গ্রস্ত লোকদের কেও খেতে দেবে (সূরা আল হজ , আয়াত ২৬-২৮)।
হাজরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহকে বলেছিলেন , "হে আল্লাহ আমার এই ক্ষুদ্র আওয়াজ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কিভাবে শুনবে ? উত্তরে আল্লাহ বলেছিলেন , তুমি ডাক দিয়ে দাও আওয়াজ পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার" । হজ একবার এরপর যে বেশি করে তা ঐচ্ছিক (মুসনদে,হাদিস -১২০৪) । সামর্থ থাকা সত্বেও হজ না করা কুফর। কারণ ইসলামের একটি রোকন হল হজ ।
আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূল স.আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। কাজেই তোমরা হজ্জ করবে। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছর কি হজ্জ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অত:পর রাসূল স. বললেন,আমি যদি হ্যা বলতাম,তাহলে তা (প্রতি বছরের জন্যেই) ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হত না।
তিনি আরো বললেন, যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে বিষয় সে রুপ থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বেশী বেশী প্রশ্ন করার ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারনেই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই আমি যখন তোমাদের কোন নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে, আর যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করবে (সহিহ মুসলিম:৩১২০)।
হজ্জ কত প্রকার ও কি কি
হজ তিন প্রকার । ১) কিরান হজ ২) তামাত্তু হজ ৩) ইরফাদ হজ । যারা মক্কার বাইরে অবস্থান করেন তারা এই তিনটি হজের মধ্যে যেকোনো একটি হজ করতে পারেন । তবে এই তিন প্রকার হজের মধ্যে কিরান হজ সবচেয়ে উত্তম। এরপর তামাত্তু হজ এবং এরপরই ইফারাদ হজ।
কিরান হজ
কিরান হজ বলতে বুঝায় একই ইহরামে ওমরা এবং হজ একসাথে পালন করা। জেনি কিরান হজ পালন করবেন তিনি প্রথমে মক্কা মুকাররমা পৌঁছে ওমরা করবে এবং এরপর ইহরাম না ভেঙ্গেই উক্ত ইহরামে হজের সময় হজ আদায় করবে এবং কুরবানী করবে।
- উমরা ও হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাধা। ফরজ।
- বাইতুল্লাহ প্রবেশ করে ওমরার তাওয়াফ করা ফরজ
- তাওয়াফে কুদুম করা । সুন্নত।
- ৮ই জিলহজ্জ যোহর থেকে ৯ই জিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায়
করা। সুন্নত। - তাওয়াফের পর উমরার সায়ী করা। ওয়াজিব।
- সায়ী করা। ওয়াজিব।
- ৯ই জিলহজ্জ সূর্য ঢলা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত উকুফে আরাফা (আরাফায়
অবস্থান) করা। হজের অন্যতম ফরজ। - ৯ই জিলহজ দিবাগত রাত উকুফে মুজদালিফা (মুজদালিফায় অবস্থান) করা। পুরুষের
জন্য ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়। - ১০,১১ ও ১২ই জিলহজ্ব মিনায় জামারাতে (কংকর নিক্ষেপের স্থানে) কংকর নিক্ষেপ
করা। ওয়াজিব। - কোরবানি করা ওয়াজিব।
- হলক করে ইহরাম খোলা । ওয়াজিব (হলক বা কছর )
- তাওয়াফে যিয়ারত করা ফরজ।
- সর্বশেষ মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করা। ওয়াজিব।
বিদায়ী তাওয়াফ করলে হজ্জে কিরান হজের কার্যাবলী শেষ হবে।
হজ্জে তামাত্তু
তামাত্তু হজ আদাই কারি মিকাত থেকে শুধু ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধবে । এরপর মক্কা মুকাররমা পৌঁছ ওমরার কাজ সম্পন্ন করবে । এরপর চুল কেটে ইহরাম মুক্ত হবে ।এরপর মক্কা থেকে পুনরায় মক্কার মুকিম হিসেবে হজের ইহরাম বাঁধতে এবং নির্ধারিত কাজ সম্পূর্ণ করবে ও কুরবানী করবে।
- উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা।ফরজ।
- বায়তুল্লায় উমরার তাওয়াফ করা। ফরজ।
- ৮ই জিলহজ্জ হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধা।ফরজ।
- ৯ই জিলহজ্জ উকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। আর উকুফে আরাফা
হজ্জের একটি অন্যতম ফরজ। - তাওয়াফে জিয়ারত করা। ফরজ।
- ৮ই জিলহজ্জ মিনায় গমন করে সেখান থেকে যোহর আসর মাগরিব এশা এবং ৯ই জিলহজ্জ এর
ফজর সর্বমোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। সুন্নত। - উমরার সায়ী করা।ওয়াজিব।
- হলক করে উমরার ইহরাম খোলা। ওয়াজিব।
- ৯ই জিলহজ্জ দিবাগত রাতে উকুফে মুজদালিফা বা মুজদালিফায় অবস্থান করা।
পুরুষদের জন্য ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়। - ১০ ১১ ও ১২ই জিলহজ্জ জামারাতে (কংকর নিক্ষেপের স্থানে) কংকর নিক্ষেপ
করা। ওয়াজিব। - পশু কোরবানি করা। ওয়াজিব।
- হলক করা। ওয়াজিব।
- তাওয়াফে জিয়ারত এর সায়ী করা। ওয়াজিব।
- সর্বশেষ মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বিদায়ী তাওয়াফ করার মাধ্যমে হজ্জে তামাত্তু হজ শেষ হবে।
ইরফাদ হজ
ইরফাদ হজ্ব আদায় কারী মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধবে। মক্কা মুকাররমায় পৌঁছানোর পর ওমরা না করে তাওয়াফে কুদুম করে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে । এরপর নির্ধারিত সময়ে হজের আমল গুলো সম্পন্ন করবে।
আরো পড়ুনঃ রোজা কাকে বলে - রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে নিন
- হজের ইহরাম বাঁধা। ফরজ।
- ৯ই জিলহজ্জ আরাফায় অবস্থান করা। এটি হজের প্রধানতম ফরজ।
- তাওয়াফে জিয়ারত করা ফরজ।
- বাইতুল্লায় প্রবেশ করে তাওয়াফ করা। এটাকে তাওয়াফে কুদুম বলে। এটি সুন্নত।
- ৮ই জিলহজ যোহর থেকে ৯ই জিলহজ ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সেখানে আদায় করা সুন্নত।
- ৯ই জিলহজ দিবাগত রাত মুজদালিফায় অবস্থান করা। এই অবস্থান পুরুষদের জন্য ওয়াজিব। মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়।
- ১০ ১১ ও১২ ই জিলহজ্জ জামারাতে (কংকর নিক্ষেপের স্থানে) কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
- হলক করে ইহরাম খোলা ওয়াজিব।
- তাওয়াফে জিয়ারতে সায়ী করা ওয়াজিব।
- সর্বশেষ মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বিদায়ী তওয়াফ করলে হজ্জে ইফরাদের কার্যাবলী শেষ হবে। বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, - " বিদায় হজ্বে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ (তামাত্তুর নিয়তে প্রথমে) উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন, কেউ (কিরানের নিয়তে) হজ্ব ও উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন এবং কেউ (ইফরাদের নিয়তে) শুধু হজ্বের ইহরাম করলেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ্জে ইফরাদের জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। যারা শুধু হজ্ব বা একত্রে
হজ্ব-উমরার (কিরানের) ইহরাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ১০ যিলহজ্বের পূর্ব পর্যন্ত ইহরাম থেকে মুক্ত হননি"। [সহিহ বুখারি ১/২১২]
শেষ কথা
হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল সংকল্প করা, ইচ্ছা করা ইত্যাদি। হজ মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত। হজ হল বান্দার প্রতি আল্লাহর হক। ঈমানের আলোকিত নিদর্শন । নির্দিষ্ট কতিপয় ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বায়তুল জিয়ারতের সংকল্প করাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ বলা হয়। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে "মানুষের ওপর আল্লাহর বিধান ওই ঘরে হজ করা , যার আছে সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য, আর কেউ কুফর করলে আল্লাহ তো বিশ্ব জগতের মুখাপেক্ষী নন (সূরা আলে ইমরান,(৩) ৯৭।
হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি এনে আমি আমার পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আমার এই পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url