ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম জানুন
মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি ভিটামিন রয়েছে। এর মধ্যে ভিটামিন ই হল অন্যতম। আর তাই আমাদের ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমরা যদি ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে না জানি তাহলে আমাদের ভিটামিনের অভাব পূরণ হবে না।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমার আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিচে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি - ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি
- ভিটামিন ই এর উৎস
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম
- ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয়
- ভিটামিন ই খেলে কি হয়/ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়
- ভিটামিন ই মুখে মাখলে কি হয়
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- কি পরিমান ভিটামিন ই খাওয়া উচিত
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
- ভিটামিন ই জাতীয় সবজি
- শেষ কথা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল
ভিটামিন ই হল এক ধরনের আবশ্যকীয় ভিটামিন এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার কারণে এটি সহজে চর্বি সঙ্গে মিশে যেতে পারে মানুষের দেহের ও তাপসকীয় ভিটামিন হলো ছয়টি যথা এ A, বি B,সি C,ডি D,ই E এবং কে K। ভিটামিন ই রাসায়নিক গঠনের দিক থেকে প্রধানত চার প্রকার এর মধ্যে চার রকমের টোকোফেরোল এবং চার প্রকার টোকোট্রাইনল।
এদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় টোকোফেরোল এবং কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত করা হয় টোকোট্রাইনল। ১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম ভিটামিন ই আবিষ্কার করেন ক্যাথরিন স্কট বিসপ এবং হার্বাট ম্যাকলিন ইভান্স। আর ১৯৩৫ সালে ভিটামিন ই সর্বপ্রথম আইসোলেশন করা সম্ভব হয়।
ভিটামিন ই এর উৎস
ভিটামিন ই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকারক কোষগুলিকে ধ্বংস করে। তাই আমাদের ভিটামিন ই খাওয়া উচিত। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার চেয়ে আমাদের খুঁজে নিতে হবে ভিটামিন ই এর উৎস বা ভিটামিন ই জাতীয় খাবার। যে খাবার গুলোর মধ্যে ভিটামিন ই আছে সেগুলো হল - বাদাম, শাকসবজি, বীজ, সূর্যমুখী বীজ, আমল্ড, পালং শাক, টমেটো, আম, ব্রকলি,
কিউই, ডিমের কুসুম, শালগম, বিভিন্ন ধরনের মরিচ, এভোকাডো ফল, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি,
সেলমন মাছ, চর্বি হীন মাছ, সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, কুমড়ো, বিট
ইত্যাদি। তবে আপনাকে একটি বিষয়ে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত ভিটামিন ই
সমৃদ্ধ খাবার খেলে ফুড সাপ্লিমেন্ট এর কারণে পোস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম
ভিটামিন ই আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। শুধু তাই নয় ভিটামিন ই আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না আমাদের কোন ভিটামিন শরীরে কতটুকু প্রয়োজন আর না জেনে আমরা তা ব্যবহার করে থাকি। তবে প্রতিটি জিনিস ব্যবহারের পূর্বে আপনাকে তার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
এবং সেই উপাদান ব্যবহারের আপনার প্রয়োজন আছে কিনা সেটাও আপনাকে জেনে নিতে হবে।
তবে ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকে এন্টি অক্সিজেন যা মাথার স্কাল্পের জন্য দারুন
স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহারের নিয়ম নিচে আলোচনা করা
হলো-
ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই
অনেকেই মুখের ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ব্যবহার করে থাকেন। ভিটামিন ই ত্বকের যে সব উপকার করে থাকে তা হল-
- ভিটামিন ই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।
- ব্রণের সমস্যা দূর করে
- ত্বকের বলি রেখা কমায়
- পুরনো কাটা দাগ দূর করে।
তাই ভিটামিন ই ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন প্যাকে ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে মাখতে পারেন। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা এক চামচ মধু ও এক চামচ টক দই এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মাখতে পারেন এতে আপনার ত্বক কোমল ও মোলায়েম হবে।তবে আপনাকে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হলো আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত না হয় তাহলে আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল সরাসরি মুখে মেসেজ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার - এর ডাক্তারেরগণের তালিকা দেখুন
আর যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে আপনি তেলের সঙ্গে কিছুটা গোলাপজল মিশিয়ে
নিয়ে তারপর আপনার মুখে মেসেজ করবেন।এছাড়াও আপনি মুখে যে ক্রিম ব্যবহার করেন এর
সঙ্গেও আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে মাখতে পারেন।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করে
এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। হয়তো অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে অথবা দুশ্চিন্তার কারণে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে যায় এবং চোখের ফোলা ভাব ও হয়ে থাকে। তবে যাদের এসব সমস্যা রয়েছে তাদের কোন চিন্তা নেই। আপনারা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। তারপর ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে অয়েল বের করে চোখের চারপাশে একটু সময় নিয়ে আলতো হাতে মেসেজ করুন।
এরপর রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ফেসওয়াশ দিয়ে আপনার মুখ
পরিষ্কার করুন এবং কোন ম্যাঞ্জার ক্রিম লাগান। এই কাজটি আপনি নিয়মিত
করবেন। তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার চোখের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে এবং
চোখের নিচের ফোলা ভাবও চলে যাবে। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে আপনি খাঁটি বাদাম
তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন ই
এমন অনেকেই আছেন যাদের ঠোঁটে কালচে দাগ পড়ে যায়, ঠোঁট ফাটে এবং ঠোঁট শুকিয়ে যায়। আবার অনেকের ঠোঁটের চামড়া উঠে যায়। আর আপনার যদি এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আর চিন্তা নেই আপনি নিশ্চিন্তে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি ভিটামিন ই থেকে ওয়েল বের করে সরাসরি ঠোঁটে মাখতে পারেন। আবার ভিটামিন ই অয়েল এর সাথে একটু মধু মিশিয়ে ঠোঁটে মাখতে পারেন।
এছাড়াও আপনি ঠোঁটে যে লিপবাম বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করেন এর সঙ্গে ভিটামিন ই
ক্যাপসুল ভেঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। আর এই
কাজটি যদি আপনি নিয়মিত করেন তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার এই সমস্যা
সমাধান হয়ে গেছে।
চুলের যত্নে ভিটামিন ই
ভিটামিন ই ক্যাপসুলে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার স্কাল্পের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। আর এই এন্টি অক্সিডেন্ট চুলের গ্রোথ বা বৃদ্ধিতে উপকারে আসে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেকের মাথার চুলের আগা ফাটার সমস্যা রয়েছে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এই সমস্যাও সমাধান করে থাকে।
আর এইসব সমস্যা থেকে সমাধান পেতে অনেকেই চুলের যত্নে তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করেন।এতে আপনার নতুন চুল গজাবে, মাথার ত্বকে সংক্রমণ কমাবে এবং খুশির সমস্যা ও দূর করবে। তবে ভিটামিন ই এর সাথে আপনি দুই চামচ নারকেলের তেল এবং দুই চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন এতে বেশি উপকার পাবেন।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানুন
তবে আপনিএই উপকরণটি রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৫ মিনিট ধরে মাথার স্কাল্পে ভালোভাবে মেসেজ করবেন তারপর সকালে শ্যাম্পু করে ফেলবেন। আর আপনি এই উপকরণগুলো সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন এতে উপকার পাবেন। তবে আপনি এই কাজটি অবশ্যই এক থেকে দুই মাস নিয়মিত করবেন।
হাতের নখের যত্নে ভিটামিন ই
এমন অনেকেই আছে যাদের ত্বক অনেক শুষ্ক এবং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার ফলে হাতের নখের চারপাশের ছাল উঠে যায়। আর যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে পারেন এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার পাশাপাশি আপনি এই ক্যাপসুলে থাকা অয়েল বের করে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নখের চারপাশে মেখে ঘুমাতে পারেন। এছাড়াও আপনি বডি লোশনের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে তা মাখতে পারেন।
এতে অনেক উপকার পাবেন। এছাড়াও আপনার হাতের কনুই এবং হাঁটুতে যদি কালো দাগ থেকে
থাকে তাহলে আপনি এই স্থানে ও সপ্তাহে দুই তিন দিন ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল
ব্যবহার করতে পারেন।
ভিটামিন ই এর অভাবে কি হয়
ভিটামিন ই তে রয়েছে একটি অক্সিডেন্ট যা সহজে আমাদের শরীরের চর্বির সঙ্গে মিশে
যেতে পারে। ভিটামিন ই এর অভাব হলে শরীরে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হল-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
- চলাফেরা বা নড়াচড়া অর্থাৎ এটাক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ থাকে না
- রেটিনোপ্যাথি বা চোখের রেটিনায় সংক্রমণ হয়
- পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি অর্থাৎ পেরিফেরাল বা সহায়ক নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষয় হয় যার ফলে হাত ও পায়ের পেশীতে ব্যথা অনুভূত হয়।
- হাত ও পায়ের চামড়া খসখসে হয়ে যায়
- মাথার চুল ঝরে পড়ে, চুলের ডগা ফেটে যায়।
মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৬ টি ভিটামিন রয়েছে। এর মধ্যে ভিটামিন ই হল অন্যতম
একটি ভিটামিন। যার অভাবে মানুষের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। তাই অবশ্যই ভিটামিন ই
খাওয়া উচিত।
ভিটামিন ই খেলে কি হয়/ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়
ভিটামিন ই আমাদের শরীরে নানা উপকার করে। চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে ভিটামিন ই উপকার করে না। ভিটামিন ই আপনার হাড়ের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে বন্ধ্যাতের সমস্যা দূর করা, বার্ধক্য জনিত সমস্যার সমাধান দিতে ভিটামিন ই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকেন। চুলে দ্রুত বৃদ্ধিতে উপকার করে এছাড়াও চুলের মাথা ফেটে গেলে এবং চুল অতিরিক্ত ঝরা শুরু করলে ই ক্যাপসুল আপনার অনেক উপকার করবে।
২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় ভিটামিন ই কিডনি রোগের আশঙ্কা কমায়। আবার ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায়। আমরা জানি উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে আর ভিটামিন ই রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুকি কমিয়ে দেয়।
যদি নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায় তাহলে লিভারের ফ্যাটি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। নিয়মিত ভিটামিন ই খেলে চর্মরোগ হয় না, এছাড়া আলঝাইমাস রোগ দূর করতেও ভিটামিন ই অনেক কাজ করে থাকে। আপনার যদি হাঁপানির সমস্যা থাকে আপনি ভিটামিন ই খেতে পারেন। ভিটামিন ই খাওয়ার ফলে ত্বক কুচকে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ভিটামিন ই আপনার ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
ভিটামিন ই মুখে মাখলে কি হয়
আমরা জানি ভিটামিন ই ত্বকের যত্নে খুব বেশি উপকারী। ভিটামিন ই মুখে মাখলে মুখের কালো ছোপ ছোপ দাগ দূর হয়, বয়সের ছাপ দূর হয়, চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য ভিটামিন ই এর জুড়ি মেলা ভার। অনেকেই মুখের ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ব্যবহার করে থাকেন। ভিটামিন ই ত্বকের যে সব উপকার করে থাকে তা হল-
- ভিটামিন ই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।
- ব্রণের সমস্যা দূর করে
- ত্বকের বলি রেখা কমায়
- পুরনো কাটা দাগ দূর করে।
তাই ভিটামিন ই ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন প্যাকে ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে মাখতে পারেন। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা এক চামচ মধু ও এক চামচ টক দই এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মাখতে পারেন এতে আপনার ত্বক কোমল ও মোলায়েম হবে।তবে আপনাকে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হলো আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত না হয় তাহলে আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল সরাসরি মুখে মেসেজ করতে পারেন।
আর যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় তাহলে আপনি তেলের সঙ্গে কিছুটা গোলাপজল মিশিয়ে নিয়ে তারপর আপনার মুখে মেসেজ করবেন।এছাড়াও আপনি মুখে যে ক্রিম ব্যবহার করেন এর সঙ্গেও আপনি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে মাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। হয়তো অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে অথবা দুশ্চিন্তার কারণে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে যায় এবং চোখের ফোলা ভাব ও হয়ে থাকে। তবে যাদের এসব সমস্যা রয়েছে তাদের কোন চিন্তা নেই। আপনারা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। তারপর ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে অয়েল বের করে চোখের চারপাশে একটু সময় নিয়ে আলতো হাতে মেসেজ করুন।
এরপর রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ফেসওয়াশ দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করুন এবং কোন ম্যাঞ্জার ক্রিম লাগান। এই কাজটি আপনি নিয়মিত করবেন। তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে আপনার চোখের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে এবং চোখের নিচের ফোলা ভাবও চলে যাবে। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে আপনি খাঁটি বাদাম তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের প্রতিদিন শরীর গঠনে ভিটামিন ই এর ভূমিকা অনিস্কার্য। ভিটামিন ই ছাড়া
আমাদের শরীরের পুষ্টি সব সময় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই আমরা প্রতিদিনের খাবারের
ভিটামিন ই গ্রহণ করে থাকি। তবে ভিটামিন ই এর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর
অপকারিতা ও রয়েছে। নিচে গুলো আলোচনা করা হলো -
উপকারিতা
ভিটামিন ই আমাদের শরীরে নানা উপকার করে। চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে ভিটামিন ই উপকার করে না। ভিটামিন ই আপনার হাড়ের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে বন্ধ্যাতের সমস্যা দূর করা, বার্ধক্য জনিত সমস্যার সমাধান দিতে ভিটামিন ই কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকেন। চুলে দ্রুত বৃদ্ধিতে উপকার করে এছাড়াও চুলের মাথা ফেটে গেলে এবং চুল অতিরিক্ত ঝরা শুরু করলে ই ক্যাপসুল আপনার অনেক উপকার করবে।
২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায় ভিটামিন ই কিডনি রোগের আশঙ্কা কমায়। আবার ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায়। আমরা জানি উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে আর ভিটামিন ই রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুকি কমিয়ে দেয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পনেরো ১৫ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন
যদি নিয়মিত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায় তাহলে লিভারের ফ্যাটি হওয়ার
আশঙ্কাও কমে যায়। নিয়মিত ভিটামিন ই খেলে চর্মরোগ হয় না, এছাড়া আলঝাইমাস রোগ
দূর করতেও ভিটামিন ই অনেক কাজ করে থাকে। আপনার যদি হাঁপানির সমস্যা থাকে আপনি
ভিটামিন ই খেতে পারেন।
অপকারিতা
আমাদের সবার মাঝে একটি ধারণা রয়েছে যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে সব ধরনের উপকার
পাওয়া যায় আর এতে কোন ক্ষতিকর দিক নেই কিন্তু আমাদের এ ধারণাটা সঠিক নয় কারণ
আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যার উপকারিতা আছে তার অবশ্যই অপকারিতা ও রয়েছে
কিন্তু অনেকেই এইগুলো না ভেবে নিজের ইচ্ছে মত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেয়ে থাকেন আর
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার অভ্যাস খুব অল্প
সময়ের মধ্যে আপনার যে রোগের সৃষ্টি করবে তা হলো
- প্রেসারের জটিলতা বৃদ্ধি পায়
- অতি দ্রুত ওজন বেড়ে যায়
- হরমোন ইন্মব্যালেন্স হয়ে যায়
- ক্লান্তি বাড়ে
- মাথা ব্যথা হয়
- ত্বকে ফুসকুড়ি হয়
- দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হয়
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে
- মাথা ঘোরানো
- শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা
- প্রোস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা
- প্রসাবে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি
- বমি ও বমি বমি ভাব
- ডায়রিয়া
- ফ্যাটিগ
তাই ভিটামিন ই খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকবেন। মনে রাখবেন কোন কিছুই বেশি
বেশি ভালো নয়। যার উপকারিতা আছে তার অপকারিতা আছে।
কি পরিমান ভিটামিন ই খাওয়া উচিত
ভিটামিন ই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তাই আমাদের নিয়মিত ভিটামিন ই খাওয়া
উচিত। কিন্তু বয়স ভেদে ভিটামিন ই এর মাত্রা আলাদা তাই আমাদের জানতে হবে কোন
বয়সে কতটুকু ভিটামিন ই খাওয়া প্রয়োজন।চিকিৎসকদের মতে কোন বয়সে কতটুকু ভিটামিন
ই খাওয়া প্রয়োজন তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত প্রতিদিন চার ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই প্রয়োজন
- সাত ৭ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচ ৫ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন।
- বয়স এক বছর থেকে তিন ৩ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন ৬ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই দরকার।
- ৪ থেকে আট ৮ বছর পর্যন্ত ৭ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন
- ৯ বছর থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন।
- বয়স ১৪ বছর অতিক্রম করলে প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম থেকে ১৯ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
আমরা জানি ভিটামিন ই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ই কিডনি রোগ, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় তাই ভিটামিন ই খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি জিনিস খাওয়ার একটা আলাদা নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ও একটি সঠিক নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ মত ভিটামিন ই খান তাহলে ডাক্তার আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন ই রাত্রে খাওয়ার পরামর্শ দিবেন।
আরো পড়ুনঃবাত জ্বর কাকে বলে - বাত জ্বরের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন
আর এক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো রাত্রে খাবার খাওয়ার ৪০
মিনিট পর আপনাকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে হবে। তবে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন
রাত্রে খাওয়ার ৪০ মিনিট পর ভিটামিন ই খেলে। আবার অনেকেই সকালে এবং রাত্রে দুবেলা
খেয়ে থাকেন তবে আপনাকে অবশ্যই একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আপনার বয়স কত আর সেই
অনুপাতেই আপনাকে ভিটামিন ই খেতে হবে।
ভিটামিন ই জাতীয় সবজি
ভিটামিন ই এর সবচেয়ে বড় উৎস হলো আমাদের প্রতিদিনের নানা রকমের খাবার। আমরা
বিভিন্ন রকমের খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ই পেয়ে থাকি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন
ধরনের সবজি যেমন- কুমড়ো, পালং শাক, বিট, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, টমেটো, ব্রকলি,
পালং শাক, কুমড়ো ইত্যাদি।
শেষ কথা
ভিটামিন ই হল মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এমন একটি ভিটামিন যার উপকারিতা মানব
শরীরের মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত। তাই আমাদের উচিত
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ই জাতীয় খাবার যেন থাকে সেদিকে দৃষ্টি রাখা।
আমি ভিটামিন ই সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার
এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url