ধান রচনা - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ধান বাংলাদেশের একটি প্রধান খাদ্য শস্য এবং অর্থকারী ফসল। আর অর্থকারী ফসল হিসেবে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় ধান রচনা লিখার প্রয়োজন হয়। তাই আমি ধান রচনা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় ধান রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

Image

প্রিয় শিক্ষার্থী আমি তোমাদের জন্য ধান রচনা,ধান সম্পর্কে ২০টি বাক্য এবং ধানের শীষ বাক্য রচনা সহ ধান রচনা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই লিখা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে। নিচে ধান রচনা বিস্তারিত লিখা হলো-

পোস্ট সূচিপত্রঃ  ধান রচনা 

ভূমিকা

ধান হলো বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল এবং প্রধান খাদ্যশস্য। একে আবার অর্থকারী ফসল ও বলা হয়। ধান গাছ একবার ফসল দিয়ে মারা যায় তাই একে ঔষধি গাছ ও বলা হয়। এই গাছ একবার ফসল উৎপাদন করে মরে যায় তাই প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ধানের চাষ করতে হয়। ধান প্রক্রিয়াকরণ করে চাল উৎপাদন করা হয় এবং এই চাল থেকে তৈরি হয় ভাত যা বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য। 

এই পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে তাদের প্রায় অর্ধেকই ভাত খেয়ে জীবন ধারন করে। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য হলো ভাত। ধান উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটলে খাদ্যের অভাবে হাহাকার পড়ে যায়।তখন দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী। তাই অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের সাথে ধানের কখনোই তুলনা হতে পারে না। তাই কবি জসীমউদ্দীন বলেছেন-

পথের কিনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত,

সবুজে হলুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত।

উৎপত্তিস্থান

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম বেশি ধানের চাষ করা হয়ে থাকে। তবে গ্রীষ্ম প্রধান দেশে ধান বেশি উৎপন্ন হয়। আর এই জন্য এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন করা হয়। তবে যেসব দেশে ধান বেশি উৎপন্ন হয় সেগুলো হল - বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও মিশর। এছাড়াও স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, আমেরিকা, মেক্সিকোর উপসাগরীয় অঞ্চলে অধিক পরিমাণে ধান উৎপন্ন হয়।

বাংলাদেশের বরিশালে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপন্ন হয় বলে বরিশাল কে বাংলাদেশের খাদ্য শস্য ভান্ডার ও বলা হয়। তবে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন লোক সংখ্যা অনুপাতে আশানুরূপ নয়। তাই বাংলাদেশ সরকার ধান উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চাষবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।

ধান গাছের বর্ণনা

ধান গাছ এক প্রকার তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। ধান গাছ সাধারণত দুই ২ থেকে তিন ৩ হাত লম্বা হয়ে থাকে। তবে যদি বেশি পানির মধ্যে আমন ধানের চারা রোপন করা হয় সে ক্ষেত্রে আমন ধানের চারা চার ৪ থেকে সাড়ে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ধান গাছের অগ্রভাগে শীষ বের হয় এবং এই শিষে থাকে ধান। যখন ধান কাঁচা থাকে তখন মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সবুজের মেলা বসেছে। আর যখন ধান পেকে যায় তখন সোনালী রং ধারণ করে আর এদিক থেকে ধানকে সোনালী ফসল ও বলা হয়।

ধানের প্রকারভেদ

আমাদের দেশ তথা বাংলাদেশে প্রধানত তিন প্রকারের ধান পাওয়া যায়। যথা - আউশ, আমন ও বোরো। তবে কৃষি গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় শতাধিক রকমের ধান রয়েছে আর এর মধ্যে অনেক রকমের ধানের নাম আমাদের জানা। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ইরি নামক একপ্রকার ধানের। আর এই ধান উন্নত জাতের ধান হওয়াই বছরের যে কোন সময় এ ধানের চাষ করা যায়। তবে এই ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সেচের প্রয়োজন হয়।

কেমন মাটিতে ধান চাষ ভালো হয়

ধান উৎপাদনের জন্য বেলে-দো আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। ধান চাষের জন্য উত্তম হলো সমতল জমি। আউস ধান সাধারণত উঁচু জমিতে ভালো হয় এবং আমন ধান নিচু জমিতে বপন করা হয় এবং বোরো ধানের চারা নিচু জমিতে লাগাতে হয় এবং এই জমিতে সব সময় সেচের প্রয়োজন হয়।

ধানের চাষ প্রণালী

ধান চাষ করার পূর্বে জমিকে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করে নিতে হয়। ধান চাষ করার পূর্বে জমিতে যেন বৃষ্টি হলে অধিক পরিমাণে পানি জমে না থাকে সেদিকে ও দৃষ্টি রাখতে হয়। আউস ধানের বীজ সাধারণত বৈশাখ মাসে বপন করতে হয় এবং এই ধান শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পাকে এবং এই ধান সাধারণত উঁচু জমিতে ভালো জন্মে। বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ মাসে আমন ধানের চারা রোপন করা হয় এবং কার্তিক ও অঘ্রাণ মাসে এই ধান পেকে কৃষকের ঘরে ওঠে।

আরো পড়ুনঃ  আমার প্রিয় খেলা - ফুটবল খেলা রচনা জানুন

ধান কখনো সরাসরি জমিতে বীজ হিসেবে বপন করা হয় আবার কখনো তা  বীজ তলায় রোপণ করতে হয়। এবং জমি উত্তম রূপে প্রস্তুত করে তা লাগাতে হয়। বিশেষ করে ইরি ধানের চাষ এইভাবে করা হয়ে থাকে। ধান গাছ লাগানোর পরে যখন কিছুটা বড় হয় তখন এতে সার প্রয়োগ করতে হয় এবং আগাছা হলে তা পরিষ্কার করে দিতে হয়। ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাঝেমধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

তবে ধানক্ষেতে খুব একটা বেশি কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ধান গাছে যখন শীষ আসার সময় হয় সাধারণত ইরি ধানের ক্ষেত্রে তখন একটু বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। তবে চারা রোপনের ৯০ দিনের মধ্যেই ধান পরিপক্ক হয়ে যায়।

ধান ক্ষেতের দৃশ্য

ধানের চারা যখন সবুজ হয়ে ওঠে এবং বাতাসে দোল খায় তখন এটি দেখতে বড়ই মন মুগ্ধকর হয়। কচি কচি ধানের চারা থেকে যখন শীষ বের হয় এবং এই শীষ গুলো যখন মাথা তুলে বাতাসে ঢেউ খায় তখন মনে হয় পৃথিবী যেন সবুজ আস্তরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। আবার যখন আশ্বিন- কার্তিক মাসে ধান গুলো পেকে সোনালী রং ধারণ করে তখন মনে হয় চারিদিকে যেন সোনালী আভায় ভরে গিয়েছে। আর এই  সোনালী ধান কে কেন্দ্র করেই হয়তো আমাদের জাতীয় সংগীত রচিত হয়েছে "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"।

ধান গাছের সবুজ আর সোনালী রঙে বিমোহিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাইতো মনের অজান্তেই গেয়ে উঠেছেন-

"আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা,

নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা"।

ধান সংগ্রহ

ধান সাধারণত ৯০ দিন পরেই পরিপক্ক হয়ে যায় আর ধান যখন পেকে যায় তখন কৃষকেরা এই ধান কেটে আটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে আসে। আর আমাদের দেশে সাধারণত উঠানে বা শক্ত পরিষ্কার মাটিতে ধান গাছ গুলো ছড়িয়ে গরু মহিষ দিয়ে মাড়িয়ে গাছ থেকে ধান পৃথক করে নেয়া হয়। আবার এখন উন্নত প্রযুক্তির কারণে মেশিন দিয়েও ধান মাড়াই করা হয়ে থাকে। ধান মাড়াই করা হয়ে গেলে ধান এবং খড় আলাদা হয়ে যায়। আর ধানের খড় আমাদের গবাদি পশুর একটি উৎকৃষ্ট খাবার।

ধান থেকে চাল প্রস্তুত প্রণালী

ধান থেকেই সাধারণত চাল হয়ে থাকে। আমাদের দেশে দুই ধরনের চাল উৎপাদন করা হয় - আতপ চাল এবং সেদ্ধ চাল। আতপ চাল তৈরি করতে ধানগুলো রোদ্রে শুকিয়ে ধান মেশিনে ভাঙ্গালে আতপ চাল তৈরি হয়ে যায়। আর সেদ্ধ চাল বা যে চালের আমরা ভাত খেয়ে থাকি সেই চাল তৈরি করতে ধান পানিতে ভিজিয়ে তারপরে সিদ্ধ করে রোদে শুকাতে হয়। এবং রোদ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকানোর পরে সেগুলো মেশিনে ভাঙ্গিয়ে তারপরে চাল উৎপাদন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ  রচনা - কৃষি উদ্যোক্তা - সম্পর্কে জেনে নিন

ধান ভাঙ্গানোর পর ধানের যে খোশাগুলো থাকে সেগুলোকে বলা হয় কুঁড়া বা গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় তুষ। আর এই চাউলের কুঁড়া হাঁস, মুরগি এবং গরু বাছুরের পুষ্টিকর খাবার। গ্রামের মানুষ জ্বালানি হিসেবেও এগুলো ব্যবহার করে থাকে।

 ধানের উপকারিতা/প্রয়োজনীয়তা

ধানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম কারণ ধান আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি ফসল। ধান থেকে তৈরি হয় চাল এবং এই চাল থেকে তৈরি হয় ভাত। আর ভাত ছাড়া বাঙালির জীবন যেন কল্পনাই করা যায় না। ধান থেকে চাল প্রস্তুত করার সময় ধানের যে খোসাগুলো বের হয় তাকে বলা হয় কুঁড়া বা তুষ। আর চালের তুষ গ্রামের মহিলারা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।

এবং ধানের মধ্যে থেকে যে মিহি গুড়া গুলো বের হয় সেগুলো গরু, মহিষ এবং হাঁস মুরগির পুষ্টিকর খাবার। আবার চাউলের কুঁড়া মাছ চাষে ও ব্যবহার করা হয়। ধানের চাল থেকে আমরা ভাত ছাড়াও পোলাও, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে খেয়ে থাকি। এছাড়াও ধান থেকে তৈরি হয় খই, মুড়ি, চিড়া প্রভৃতি।

উপসংহার

ধান বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থকারী ফসল। খাদ্যে বাংলাদেশ একসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল এবং নিজেদের খাদের চাহিদা মিটিয়ে ও চাল বিদেশের রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে যদিও উন্নত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সার, সেচ ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে বাংলাদেশে প্রচুর ধান উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যায়। কারণ বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি।

ধান সম্পর্কে ২০টি বাক্য

ধান হলো বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল

ধান থেকে তৈরি ভাত বাঙালিদের প্রধান খাদ্য । 

ধান প্রধান অর্থকারী ফসল

ধান একবার ফসল দিয়ে মারা যায় তাই একে ঔষধি গাছ বলা হয়

ধান প্রক্রিয়াকরণ করার মাধ্যমে চাল তৈরি করা হয়

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ধান উৎপন্ন হয়

ধান প্রধানত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে বেশি উৎপন্ন হয়

ধান বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় প্রচুর উৎপন্ন হয় বলে বরিশালকে খাদ্যের শস্য ভান্ডার বলা হয়

বাংলাদেশে প্রধানত তিন প্রকারের ধান পাওয়া যায় 

ধান চাষে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের প্রয়োজন হয় 

ধান উৎপাদনের জন্য বেলে-দো আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী

ধানের চারা যখন সবুজ হয়ে ওঠে এবং বাতাসে দোল খায় তখন এটি দেখতে বড়ই মন মুগ্ধকর হয়। 

ধান সাধারণত ৯০ দিন পরেই পরিপক্ক হয়ে যায়।

ধান মাড়াই করা হয়ে গেলে ধান এবং খড় আলাদা হয়ে যায়।

 ধান উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার আধুনিক বৈজ্ঞানিক চাষবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

ধানের কুঁড়া মাছ চাষে ও ব্যবহার করা হয়। 

ধানের চাল থেকে আমরা ভাত ছাড়াও পোলাও, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে খেয়ে থাকি। 

ধানের খড় আমাদের গবাদি পশুর একটি উৎকৃষ্ট খাবার।

ধান চাষ করার পূর্বে জমিকে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করে নিতে হয়। 

ধান চাষ করার পূর্বে জমিতে যেন বৃষ্টি হলে অধিক পরিমাণে পানি জমে না থাকে সেদিকে ও দৃষ্টি রাখতে হয়। 

ধানের শীষ বাক্য রচনা

 ধানের শীষ - ধানের শীষ বাতাসে দোল খায়

 ধানের শীষ -  ধানের শীষ যখন পেকে যায় তখন সোনালী রঙ ধারণ করে

 ধানের শীষ -  ধানের শীষ যখন প্রথম বের হয় তখন এটি সবুজ থাকে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url