বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বৃক্ষরোপণ করা একান্ত প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনীয় তাকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরীক্ষায় বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা লিখতে আসে। তাই আমি বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা যারা পরীক্ষায় বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয় কারণ এই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টির সময় গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। নিচে বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা হলো-
পোস্ট সূচীপত্রঃ বৃক্ষরোপণ রচনা -বৃক্ষরোপণ অভিযান রচনা
- ভূমিকা
- বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তা
- জীবন ও পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ
- বাংলাদেশের বনাঞ্চল পরিস্থিতি
- বৃক্ষ হীনতার প্রতিক্রিয়া
- বাংলাদেশে বৃক্ষ নিধন ও তার প্রভাব
- বৃক্ষরোপণ কেন প্রয়োজন
- বনায়নের উপায়
- বৃক্ষরোপণ অভিযান
- গাছের চারা সংগ্রহ ও রোপন
- বন উন্নয়নের জন্য সরকারি উদ্যোগ
- বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও গৃহীত পদক্ষেপ
- বৃক্ষরোপনের সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াস
- বৃক্ষ সংরক্ষণ
- বনভূমি উন্নয়নে করণীয়
- উপসংহার
ভূমিকা
গাছই জীবন তাতেই ভুবন, তাই কর সবে বৃক্ষরোপণ,
দিয়েছি তন্মন, যোদ্ধারোহী, সবুজে ভরাবো ধরার চারকোণ।
জীবজগতের অপরিহার্য একটি অংশ হলো বৃক্ষ। বৃক্ষ যেমন একদিকে প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে তেমনি অপরদিকে প্রাণীকুলকে রক্ষা করে। তাই বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। আর বৃক্ষ শুধু যে প্রকৃতির শোভা বাড়ায় তাই নয় বৃক্ষ মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে মানব এবং প্রাণিসম্পদকে রক্ষা করে থাকে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই গাছ কিভাবে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এই পৃথিবীতে যদি গাছ না থাকতো তাহলে এই পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যেত। আর গাছ
থেকে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করে জীবন ধারণ করি। তাই এই
পৃথিবীর বুকে বৃক্ষ ছাড়া কোন প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনায় করা যায় না। একটি দেশের
ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে দেশের মোট বনভূমির সংখ্যা হতে হবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ।
তাই আমাদের এই পরিবেশকে তথা দেশকে প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে
বৃক্ষরোপণের কোন বিকল্প নেই।
বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তা
এই পৃথিবীতে প্রতিটা প্রাণীর জন্যই বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ গাছের সাথে আমাদের অস্তিত্ব জড়িত। আমাদের জীবনধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আমরা বৃক্ষ থেকেই পেয়ে থাকি। আবার আমরা যে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি এটাও গাছ গ্রহণ করে আমাদের এই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীর জন্যই খাদ্যের একমাত্র উৎস হল বৃক্ষ। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে অনিষ্টকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে পরিবেশকে দূষণ রোধ করে।
আরো পড়ুনঃ একটি ঝড়ের রাত - রাত্রি রচনা সম্পর্কে জানুন
তাই মানব জীবনে বৃক্ষ রোপনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি বৃক্ষের পাতা, ফুল, ফ,ল বীজ। আর বৃক্ষ থেকে তন্ত আরোহন করে আমরা আমাদের পরিদেয় বস্ত্র প্রস্তুত করি। বৃক্ষ থেকে যে কাঠ আমরা পাই তা দিয়ে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি, আসবো পত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তৈরি করি।এছাড়াও আমরা জীবনধারণের জন্য রোগ নিরাময়ের যে ঔষধ সেটাও আমরা বৃক্ষ থেকে তৈরি করে থাকি।
এছাড়া বৃক্ষ বন্যা, বৃষ্টি, ঝড় নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে
আবহাওয়া এবং জলবায়ুকে রাখে সঠিক নিয়ন্ত্রণে। মাটিকে করে তুলে উর্বর। এছাড়াও
আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, জ্বালানি, কাঠ, আবাস,ন রেলওয়ে শিল্পার,
নৌকা, লঞ্চ, বাঁধ, শিল্পের কাঁচামাল যেমন - রেয়ন, পেন্সিল, কাগজ, ম্যাচ, ইস্টিক,
বক্স সবকিছুই আমরা গাছ থেকে পেয়ে থাকি। তাই মানব জীবন রক্ষার জন্য বৃক্ষ রোপনের
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
জীবন ও পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন বনভূমি উজাড় করার কারণেই বর্তমানে পৃথিবীর এই বিপর্যয় নেমে এসেছে। জীবন ও পরিবেশের সাথে সম্পর্ক অবিচ্ছিন্নভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হলে পরিবেশকে রাখতে হবে সমুন্নত। আর প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে একমাত্র বৃক্ষ। বৃক্ষ বায়ুমণ্ডলের শীতলী ভবনের অন্যতম উৎস। গাছ তার মূলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি গ্রহণ করে এবং প্রসাদন ও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার সাহায্যে আবহাওয়া মন্ডলকে বিশুদ্ধ রাখে।
এবং জলীয় বাষ্প তৈরি করে বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি করে আর এর কারণেই আবহাওয়া শীতল থাকে। জীবজগৎ কে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা প্রতিদিন যে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি গাছ তা গ্রহণ করে এবং আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে যা আমরা জীবনধারণের জন্য গ্রহণ করে থাকি।
গাছ যদি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ না করতো তাহলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর কারণে পৃথিবী হয়ে উঠতো উষ্ণ এবং ঘটে যেত জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর প্রকৃতি হয়ে উঠতো জীবজগতের জন্য বসবাসের অনুপযোগী। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল পরিস্থিতি
বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। একটি দেশের মোট বনভূমি
থাকা প্রয়োজন সেই দেশের আয়তনের ২৫ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের রয়েছে মোট ১৬
শতাংশ যা বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশের জন্য নিতান্তই স্বল্প। উদ্ভিদের
বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বনভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এগুলো হলো-
স্রোতজ বন
স্রোতজ বন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা যেমন - খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও
কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলীয়
সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন আর এই বনের প্রধান বৃক্ষ হল সুন্দরী। আর
সুন্দরী বৃক্ষের জন্য এই বনের নাম দেয়া হয়েছে সুন্দরবন।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় চির সবুজ বন
সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম মিলে এই গ্রীষ্ম মন্ডলীয় চিরসবুজ
বন অবস্থিত। এই বনের প্রধান বৃক্ষ হল চাপালিস, গামারি, জারুল, কড়ই, গর্জন
ইত্যাদি।
শালবন
এই বন অবস্থিত মধুপুরের ভাওয়েল, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে। এছাড়া দিনাজপুর এবং রংপুরেও কিছু পরিমাণে বনভূমি রয়েছে। আর এই বনভূমির প্রধান গাছ গুলো হল - হিজল, কড়ই, ছাতিম, শাল ইত্যাদি।
বৃক্ষ হীনতার প্রতিক্রিয়া
আজ আমরা পুরো পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখতে পায় বৃক্ষ হীনতার প্রতিক্রিয়ার কি ভয়াবহ রূপ। আর এই রূপ আজ আমাদের দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৃক্ষহীনতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া। আর এই গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড আটকা পড়ে এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা অনেক বেড়ে গেছে। আর এর প্রমাণ বিশ্ব বাসীর কাছে অনেক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুনঃ সুন্দরবন - রচনা - সম্পর্কে জেনে নিন
এছাড়াও ওজন স্তরের কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নি পৃথিবীতে চলে আসছে যার কারণে
মানুষ সহ জীব জন্তু ও নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই
মানুষের খাদ্যবস্তু এবং জীবজন্তুর খাদ্যবস্ত সহ আবাসিক স্থলের প্রধান সহায়ক ছিল
বৃক্ষ। আর এখন অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে জীববৈচিত্র বিলুপ্তির পথে। শুধু
জীব বৈচিত্রই নয় বিশ্ব পরিবেশ ও এখন হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশে বৃক্ষ নিধন ও তার প্রভাব
সুজলা - সুফলা, শস্য - শ্যামলা আমাদের এই প্রকৃতি। কিন্তু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজকে আমাদের সেই প্রকৃতি বিলীন হতে বসেছে। কোন দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সেই দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। আর সে হিসাবে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড রিসোস ইনস্টিটিউটের বনভূমি মাত্র পাঁচ ৫ শতাংশ যা প্রয়োজন এর তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু সেই অনুপাতে বনভূমির
পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।আর মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে নির্দ্বিধায় বনভূমি
উজাড় করে ফেলছে আর এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ দেশের উত্তর অঞ্চলে দিনের বেলায়
দুঃসহ গরম এবং রাতের বেলায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়। আবার ঋতু বৈচিত্রের কারণে
এখানে সময় মত বৃষ্টি হয় না, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক
উষ্ণতা ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃক্ষরোপণ কেন প্রয়োজন
দেশের পরিবেশকে তথা বিশ্ব পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বৃক্ষরোপণ একান্ত প্রয়োজন। আধুনিক সভ্যতায় শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে আজ বহু জায়গা বৃক্ষ হীন হয়ে পড়েছে। আর সবুজ - শ্যামল - শীতল ছায়া পেতে হলে বৃক্ষরোপন অপরিহার্য। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। আবার উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের আরো উন্নতি করার চেষ্টা করছে এবং উন্নত দেশগুলো আরো উন্নত হচ্ছে।
আর এর প্রতিক্রিয়া পড়ছে আমাদের বনভূমির উপর। বনভূমির অভাবে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, পানির ওজন স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্য বনায়ন একান্ত প্রয়োজন। আর বনায়ন আমাদের যে সকল সমস্যার সমাধান করে তা হল-
বৃক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে
বৃক্ষ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যথা আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। এই
জন্য বৃক্ষকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিলয় বলা হয়ে থাকে। গাছপালা অধিক বৃষ্টিপাত
ঘটাতে সহায়তা করে এছাড়া নদী ভাঙ্গন থেকে ভূগর্ভ কে রক্ষা করে। তাই আমাদের
পরিবেশকে বিরু আবহাওয়া ও বিপর্যয়ের হাত থেকে এবং সর্ব পরি খাদ্য ঘাটতির হাত
থেকে রক্ষা করতে বনাঞ্চল সৃষ্টি বা বৃক্ষরোপণের কোন বিকল্প নেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করে
মানুষ নির্বিচারে বনভূমি উজাড় করে তার নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করছে। আর দিন দিন বন নিধনের ফলে আমরা বিভিন্ন প্রকার খরা, ঝড়, নদী ক্ষয় এবং বন্যার মুখোমুখি হচ্ছি। ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত আমেরিকান রাজনীতিবিদ এল গরে Al Gore প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য গ্লোবাল ওয়ার্মিং কে দোষারোপ করেছেন। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নারিকেল গাছ - রচনা - সম্পর্কে জেনে নিন
ভূমিক্ষয় রোধ করে
বৃক্ষ তার মূল দ্বারা মাটি থেকে পানি শোষণ করে যার কারনে মাটিকে সে তার মূলের সাথে আঁকড়ে ধরে রাখে। আর এভাবেই বৃক্ষ ভূমিক্ষয় রোধ করে। তাই মাটির ক্ষয় রোধ করতে হলে বেশি পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন।
বায়ু দূষণ রোধ করে
বৃক্ষ বায়ু দূষণ রোধ করে থাকে। আমরা প্রতিদিন নিঃশ্বাসের সাথে যে
কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করি বৃক্ষ তা গ্রহণ করে এবং আমরা যে অক্সিজেন
গ্রহণ করি বৃক্ষ তা ত্যাগ করে। আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড হলো অতি বিষাক্ত একটি গ্যাস
আর এই বিষাক্ত গ্যাস বৃক্ষ শোষণ করে আমাদের পরিবেশকে দূষণ রোধ করে। তাই আমাদের এই
পরিবেশকে বায়ু দূষণ এবং এর দ্বারা সৃষ্ট রোগ থেকে বাঁচাতে হলে বৃক্ষরোপণ একান্ত
প্রয়োজন।
গ্রীন হাউজ প্রভাব প্রতিরোধ করে
গ্রিন হাউজের প্রভাবে বায়ু দূষণ হয় বিশেষ করে শীত প্রধান দেশে গ্রীন হাউজের
প্রভাব অত্যন্ত বেশি। আর বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে, গ্রিন হাউজের প্রভাবের কারণে
মহাসাগরের বরফ একদিন গলে যাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রের নিচের স্তর আরো এক
ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে। আর এভাবে যদি পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে
তাহলে বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশ কমপক্ষে ১0 ফুট পানির নিচে চলে যাবে।
আর এই জন্য বৃক্ষরোপণ একান্ত প্রয়োজন।
বনায়নের উপায়
বাংলাদেশে বৃক্ষরোপনে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা কারণ বাংলাদেশের মাটি অনেক উর্বর। এজন্যই হয়তো বলা হয়ে থাকে বাংলার মাটি সোনার চেয়েও খাটি। আর পরিকল্পিত উপায়ে যদি বৃক্ষরোপণ করা যায় তাহলে অনেক বৃক্ষরোপন করা সম্ভব। আর এই কর্মকান্ডে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সড়ক, রেললাইন, খালের পাড়, পুকুরপাড়, বাঁধ, পতিত জমি অর্থাৎ যেখানে খালি জায়গা থাকবে সেখানেই জনগণকে গাছ লাগাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
আর জনগণের পাশাপাশি সরকারকেও আগ্রহী হতে হবে। তবে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে একটি
বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গ্রামবাসী খাদ্য, ফল ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে
পারে। আর বনায়নের জন্য প্রয়োজনে সরকারি ঋণ, অনুদান, ভর্তুকি এবং
বিনামূল্যে বীজও সার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের
মাধ্যমেও জনগণকে বৃক্ষ রোপনের উপকারিতা সম্বন্ধে অবহিত করা যেতে পারে। এক কথায়
জনগণকে গাছ লাগাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
বৃক্ষরোপণ অভিযান
প্রতিবছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছ লাগানো সপ্তাহ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। কারণ সরকার বৃক্ষরোপণকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছেন। গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা ও পরিসীম। আর এজন্যই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "সেই জঙ্গল ফিরিয়ে দাও, এই শহরটা নিয়ে যাও"। অর্থাৎ এই কথাটির দ্বারা তিনি তার সময়ে বনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ প্লাস্টিক দূষণ - অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন
আমরা সাধারণত মেহগনি,সেগুণ, ইউক্যালি পটাশ, ইপিল ইপিল, আম, জাম, পিয়ারা, জামরুল
প্রভৃতি নানা জাতের বৃক্ষ নার্সারি থেকে সরবরাহ করে রোপণ করতে পারি। কিন্তু শুধু
গাছ লাগালেই হবে না অবহেলা অযত্নে অধিকাংশ গাছ লাগানোর কিছু দিনের মধ্যেই মারা
যায়। তাই গাছ লাগানোর পর গাছের পরিচর্যা করা একান্ত প্রয়োজন।
গাছের চারা সংগ্রহ ও রোপন
বাংলাদেশ বন বিভাগ চারা উৎপাদন করে সেই চারা জনগণের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ
করেছে। এর জন্য চারা বিতরণ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে তা
জনগণ রোপন করতে পারেন। আর এ অভিযান কে জনপ্রিয় করার জন্য প্রতিবছর আয়োজন করা
হয় বৃক্ষ মেলা। এছাড়াও আমরা যে ফল খেয়ে থাকি তার বীজগুলো নষ্ট না করে সেই
বীজগুলো থেকেও আমরা চারা উৎপাদন করতে পারি। আর এভাবে বৃক্ষরোপণ করতে দেশবাসীকে
সচেতন করে তুলতে হবে।
বন উন্নয়নের জন্য সরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন গঠন করেছেন বনজ সম্পদ বিকাশ ও তাদের
যথাযথ ব্যবহারের জন্য। বর্তমানে বন সম্প্রসারণ এর জন্য বনের আশেপাশে যে জমি
রয়েছে সরকার তা দখল করে নিয়েছেন এবং সেখানে গাছ লাগানো হয়েছে। সরকারের প্রথম
পঞ্চবার্ষিকী সম্মেলনের সময় সারাদেশে ৫২ হাজার একর বনভূমি এবং উপকূলে বরাবর ৪০
হাজার একর বনভূমি তৈরি করা হয়েছে। এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ১৩
হাজার এ করে জমিতে নতুন বন তৈরি করা হয়েছে এবং প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে নতুন
বন তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও গৃহীত পদক্ষেপ
বৃক্ষরোপনের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের পর অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। আর এ উপলক্ষে ১৯৮২ সাল থেকে উত্তর অঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় গৃহীত কমিউনিটি বনায়ন কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। আর সাত হাজার গ্রামকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
১৯৮৭-৮৮ সালে দেশের ৬১টি জেলা ও থানায় নাসারী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া
হয়েছে। আর এ প্রকল্পের আওতায় ৮০ হাজার ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদের প্রশিক্ষণ
দেয়া হয়েছে এবং জনসাধারণের মধ্যে ৬ কোটি চারা বিতরণ করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে
আয়োজন করা হয় বৃক্ষ মেলার এবং এই বৃক্ষমেলায় এক কোটি আট ৮ লাখ চারা বিতরণ করা
হয়েছিল। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশে গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করা হয়েছে আর এটি হলো বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
বৃক্ষরোপনের সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াস
জনসাধারণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াসের উপর যে কোন কর্মসূচির সফলতা নির্ভর করে।
তেমনি বৃক্ষরোপণ অভিযান কেও সফল করতে হলে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে হতে হবে
সচেতন আর তাদের বুঝতে হবে বৃক্ষ নিধনের ভয়াবহতা সম্পর্কে। মানুষ যখন সচেতন হবে
এবং এর ভয়াবহতা বুঝতে পারবে তখন মানুষ পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য এ মহৎ উদ্দেশ্য
সফল করতে সচেষ্ট হবে। আর জনগণকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ,
পথনাটক, পোস্টার ছাপানো, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
বৃক্ষ সংরক্ষণ
শুধু বৃক্ষরোপন করলে হবে না এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। দেখা যায়
বৃক্ষরোপনের কিছুদিন পরে যত্নের অভাবে অধিকাংশ বৃক্ষয় মারা যায়। আর বৃক্ষ
সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারিভাবে বনবিভাগ নামে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি অধিদপ্তর। এবং এ অধিদপ্তরের সক্রিয় প্রচেষ্টা হল অরণ্য
সংরক্ষণের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।
বনভূমি উন্নয়নে করণীয়
বৃক্ষ যে কোন দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে আমাদের দেশের বনভূমি যেহেতু প্রয়োজনে তুলনায় অনেক কম এরপরেও
মানুষ বিনা প্রয়োজনে গাছ কেটে বন উজাড় করছে তাই বৃক্ষ নিধন কঠোর হাতে
নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন আর বনভূমি উন্নয়নে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়
তা হল-
আরো পড়ুনঃ পরিবেশ সচেতনতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
- নতুন বন তৈরি করতে হবে নদী অঞ্চল উপত্যকা পার্বত্য অঞ্চল এবং বিভিন্ন উপকূলে অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করতে হবে
- অরণ্যের অবাধ ও যথেষ্ট উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে
- নির্বিচারের বন উজার বন্ধ করতে হবে এবং সরকারের অনুমতি ব্যতীত মূল্যবান গাছ কাটা ও নিষিদ্ধ করতে হবে
- নতুন চারা গাছ লাগানো এবং তার সঠিক পরিচর্যা করা
- সরকারি তত্ত্বাবধানে বন সংরক্ষণ ও রোপন করতে হবে
- বন সম্পদ সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে
- বন বিভাগের সাথে জড়িত লোকদের দুর্নীতি দমন করতে হবে
- কেবল পরিণত বৃক্ষ ছেদ অপরিণত বৃক্ষ ছেদ যাতে না হয় সে বিষয়ে আইন করতে হবে
- অভারয়ন গুলি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য তৈরি এবং সংরক্ষণ করা দরকার
- মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন
- মানুষের মাঝে বিন আমলে চারা বিতরণ করা প্রয়োজন
- বন থেকে কাট সংগ্রহের জন্য যেন আর গাছ কাটানো হয় সেদিকে ব্যবস্থা নিতে হবে
- একটি গাছ কাটা হলে সেই স্থানে নতুন করে আরেকটি গাছ লাগাতে হবে
- বৃক্ষ নিধন বন্ধে সরকার এবং জনসাধারণকে সচেষ্ট প্রচেষ্টা চালাতে হবে
- নতুন বনভূমিতে পশুচরণ নিষিদ্ধ করতে হবে
- বনভূমিকে কীট পতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে
উপসংহার
গাছ মানুষের পরম বন্ধু। মানুষের সুখ দুখের সাথী হল গাছ। কাজেই বৃক্ষ রোপনের
মাধ্যমে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সাজাতে হবে। সবুজ সুফল ভাবে মানব জীবনে গাছের
নানামুখী ও ব্যাপক অবদান রয়েছে আর সুন্দর সুস্থ সুবিন্যস্ত পরিবেশের ক্ষেত্রেও
রয়েছে এর বিরাট ভূমিকা। তাই পরিবেশকে বাঁচাতে এবং সাধারণ জীবন যাপনকে সমৃদ্ধ
করতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি একান্ত প্রয়োজন। আর তাই বলা হয় গাছ লাগান পরিবেশ
বাঁচান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url