একটি ঝড়ের রাত - রচনা ( ৬- ১২) সম্পর্কে জানুন

 

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেক শ্রেণীতেই রচনা লেখার প্রয়োজন হয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সময় একটি ঝড়ের রাত্রি-রাত রচনা সম্পর্কে লিখার প্রয়োজন হয়। তাই আমি আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ঝড়ের রাত্রি-রাত রচনা লেখার চেষ্টা করেছি।

Image

আমি আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য আমার এই একটি ঝড়ের রাত্রি-রাত রচনা সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রকৃতি যে কতটা ভয়ঙ্কর তা তোমরা এই রচনা পড়লে বুঝতে পারবে। নিচে একটি ঝড়ের রাত্রি-রাত রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হলো-

পোস্ট সূচীপত্রঃ একটি ঝড়ের রাত - রাত্রি রচনা 

ভূমিকা

আমাদের এই পৃথিবী প্রকৃতির একটি লীলাভূমি। এই পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে ঝড় তার মধ্যে একটি অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একজন মানুষ তার জীবনে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হয়। ঠিক তেমনি আমার জীবনেও এমন একটি রাত এসেছে যা আমার হৃদয় পটে আজ ও দাগ কাটে। যদিও মানুষ সবসময় সব কথা মনে রাখেনা তবুও এই ঝড়ের রাত্রি এমন একটি বিপর্যয় যে আমি আজকেও তা ভুলতে পারিনি।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ঝড়কে যেমন একদিকে ভয় করেছে অন্যদিকে আবার ঝড়ের উপসনাও করেছে। এই ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে অবলম্বন করেছে বিভিন্ন উপায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা কালবৈশাখী ঝড়ে তান্ডব লীলা দেখেছি এবং আশ্বিন মাসের ঝড়ের যে দৃশ্য সেটাও অবলোকন করেছি। যখন ঝড় আসে মানুষ তার সামনে পড়লে তখন যেন সে অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষ সন্ধান করে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের।

এই শক্তিশালী ঝড়ের সামনে সবকিছু যেন মূল্যহীন হয়ে যায়। প্রকৃতি তাকে মনে করে একেবারে তুচ্ছ। বর্তমান সময়ে যদি ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষের পক্ষে অনেক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তবে ঝড়ের প্রতিরোধ করা না গেলেও ঝড়ের ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব লীলা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। তেমনি একটি ঝড় সম্প্রতি আমার জীবনে এসেছিল আর এই ঝড় আমার জীবনের গতি প্রকৃতিকে করেছে ওলট পালট।

ঝড়ের পূর্ব মুহূর্ত

 যেদিন ঝড় এসেছিল সেই দিনের শুরুটা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। আকাশ ছিল নীল মেঘে আচ্ছন্ন। প্রখর রোদের সাথে বই ছিল ঝিরঝির বাতাস। হঠাৎ করেই সেদিন আকাশ জুড়ে মেঘের অবাধ বিচরণ। সন্ধ্যার প্রাক্কালে উত্তর-পশ্চিম কোণে মানুষকে অবাক করে দেখা দিল বিশাল ঘন কালো মেঘ। রেডিও, টিভি থেকে ঘোষণা হতে লাগলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপের। আর এই নিম্নচাপ ঝড়ের আকার ধারণ করছে এবং আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে উত্তর পশ্চিম দিকে।

আরো পড়ুনঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

প্রতিবার ঝড়ের মুহূর্ত গুলো খুব গোমট ধরণের হয় এবং একঘেয়ে মনে হয় কিন্তু এইবারে ঝড়ের মুহূর্ত ছিল অসাধারণ নিস্তব্ধ। গাছপালা, লতাপাতা এমনকি আকাশ সব কিছুই নিস্তব্ধ। গাছের একটি পাতাও যেন নড়ে না। এমনকি সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখিগুলো ও নীরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সমস্ত আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকার কালো মেঘে ছেয়ে গেল। রেডিও, টেলিভিশন থেকে বিপদ সংকেত দেওয়া হল এক নম্বর থেকে ১০ নম্বরে।

চারদিকে মাইকে এলাউন্স শুরু হলো সবাই সাবধান! সবার বুক যেন আতঙ্কে দূর দূর করে কাঁপতে লাগলো। যে কোন মুহূর্তে একটি ভয়াবহ বিপদ যেন আছড়ে পড়বে এই আশঙ্কায় সবাই প্রহর গুনতে লাগলো। কোথাও কোন শব্দ নেই। শুধু মাঝে মধ্যে কোথাও থেকে শন শন করে বাতাসের আওয়াজ এসে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভয়ের সৃষ্টি করতে লাগলো।

ঝড়ের পূর্বাভাস

সন্ধ্যা নামতে না নামতেই রেডিও, টেলিভিশন থেকে ঘোষণা শুরু হল বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করেই শোনা গেল ঝড়ের বুলেটিন বিপদ সংকেত ১ নম্বর থেকে ১০ নাম্বারে দেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। তবে সাগরের ফলে যে ঘূর্ণিঝড় তা শুধু সাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে পারে এমনটি নয়, এটি দেশের বিভিন্ন স্থানেও আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।

 আতঙ্কের সবার বুক দুরু দুরু করে কাপতে লাগলো। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই ভেবে যেন সবাই প্রহর গুনতে লাগলো। রেডিওতে ঘোষণা হতে শুরু করল উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আম্ফান নামের একটি ঘূর্ণিঝড় পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে ধেয়ে আসছে। এই ঘোষণা থেকেই জানতে পারলাম পূর্বের তুলনায় এই ঘূর্ণিঝড় অনেক শক্তি নিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে। সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিল ঝড়ের তান্ডব লীলা দেখার জন্য।

ঝড়ের তান্ডব লীলা

রাত শুরু হতে না হতেই হঠাৎ করে শুনতে পেলাম বাতাসের শন শন শব্দ। বাতাস সাগরের উত্তল তরঙ্গের মতো শব্দ করে চতুর্দিক অন্ধকার করে ছেয়ে গেল। দূর থেকে বয়ে আসা বাতাসগুলো ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। আগে থেকে বন্ধ করে রাখা ঘরের জানালাগুলোর সর্ষিতে বাতাসের আঘাতে ঝন ঝন শব্দ হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাতাসের সাথে শুরু হয়ে গেল প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি। সময় যত গড়াতে লাগলো বাতাসের বেগ ও তত বাড়তে লাগলো। চারিদিকে কেবল বৃষ্টি এবং বাতাসের শন শন শব্দ।

একের পর এক বজ্রপাতের বিকট আওয়াজ আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানিতে যেন মনে হচ্ছিল যেন মহাপ্রলয় এসে গেছে। মানুষের চিৎকার আর আযানের ধ্বনি শুনে শরীরে যেন কাঁপন শুরু করল। ঘরের জানালা দিয়ে বন্যার পানির মত হুড়মুড় করে ঢুকছে মাতাল হাওয়া আর বাতাসের সাথে ঢুকছে সব ধুলোবালি। জানালার কপাটগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে একবার খুলে যাচ্ছে আবার বন্ধ হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ  একটি পাহাড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

আবার কিছুক্ষনের পরেই হাহা শব্দ করে খুলে যাচ্ছে জানালাগুলো। সবকিছু তছনছ ও লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাচ্ছে আম্ফান ঝড়। বাইরে বইছে সীমাহীন বজ্র। কালো অন্ধকার মেঘের হাওয়ায় গাছপালা  মাতামাতি করছে। বাতাসের দাপটে ঘরে টাঙ্গানো ছবিগুলো পড়ে যাচ্ছে নিচে। আমাদের ঘরের পাশের বড় আম গাছটি পড়ে গেল মড় মড় শব্দ করে। আমরা ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। একবার ঘরের জানালা একটু ফাঁক করে দেখি আমাদের রান্না ঘরের টিনের চালা আর বৈঠক ঘরের চালা উড়ে গেছে।

উঠানে পড়ে আছে ঘরের বেড়া আর খুটি গুলো। এমন সময় হঠাৎ করে কোথায় থেকে যেন একটি টিনের চালা এসে পড়লো আমাদের ঘরের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রবল বেগে। আর এর প্রকাণ্ড শব্দে আমরা ভয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠলাম। তবে আমাদের ঘরটা ছিল বেশ শক্ত পোক্ত যার কারণে আমাদের ঘরের কোন ক্ষতি হয়নি। তবুও আমরা আতঙ্কিত ছিলাম আম্ফানের ভয়ে। সারাক্ষণ আমাদের সমস্ত শরীর, শিরা, উপসিরা যেন ভয়ে হিম হয়ে আসছিল ।

মনে হচ্ছে পৃথিবীর যত অন্ধকার রয়েছে সব যেন আমাদের ঘিরে ধরেছে। আর বিদ্যুৎ সে তো ঝড়ের শুরুতেই চলে গেছে। আমাদের ঘরে জ্বলছে একটি হারিকেন সেটাও আবার একটি বড় পাতিলের মধ্যে বন্দি। কারন বাতাসের প্রবল হাওয়ায় হারিকেন নিভে যেতে পারে এই ভয়ে। ঝড়ের গতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আমাদের মনে দারুন উৎকণ্ঠা। দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হলো ঝড়ো হাওয়া আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারের বুকে।

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা 

রাত যত গভীর হতে লাগলো অন্ধকারের সমুদ্র যেন হয়ে উঠছে তত ভয়ংকর এবং উত্তাল মাঝরাতে ছয় ঘন্টা ব্যাপী ঘন্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলছে। একদিকে ঝড়ের তান্ডব লীলা অপরদিকে আগুনের বৃষ্টি সব মিলিয়ে যেন মহলয়ের সিংঙ্গা ধনী। আর এই ঝড়ের সাথে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট জলোচ্ছ্বাস। সমস্ত পৃথিবীর যেন দুলে উঠেছে ঝড়ের প্রচন্ড বেগে। কাঠের বাড়িঘর গুলো বিকট শব্দ করে যেন ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। 

একদিকে ঘন কালো মেঘের অন্ধকার, অপরদিকে আকাশব্যাপী বিদ্যুতের চমক এবং মেঘের গর্জনে যেন খন্ড-বিখন্ড হওয়ার উপক্রম হচ্ছে আমাদের এই ধরনী। আমাদের এই ধরণী মনে হচ্ছে একেবারে ধ্বংসের অন্তিম সীমায় এসে পৌঁছেছে আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যাবে আমাদের এই পুরো পৃথিবী। প্রকৃতির এই ঝড় যে কতটা ভয়াবহ তা স্বচক্ষে না দেখলে কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে না। ঝড় যেন সকল কিছু ধ্বংসের প্রতীক আর এক ভয়াবহ তান্ডব লীলা।

ঝড় চলাকালীন একপর্যায়ে

ঝড় চলা কালীন সময়ে হঠাৎ হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে এলো এই পৃথিবী  মানুষের বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার এই শব্দে। মানুষের বাঁচাও বাঁচাও এই বুকফাটা আর্তনাদে আমরা কেউ স্থির থাকতে পারলাম না উঠে গেলাম উপরে। দোতালার জানালা খুলে দেখি পুরো শহরের যেন ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষ সাঁতার কেটে এগিয়ে আসছে বাঁচার জন্য।

 আমরাও তাদের সহযোগিতা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের ঘর ভর্তি হয়ে গেল মানুষে। আমরা সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। ব্যস্ততা আর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল আমাদের পুরো রাত্রি । সেই সময় হঠাৎ করে শুনতে পেলাম ইলেকট্রিকের ট্রান্সফরমারে বিদ্যুতের তার ছিড়ে শর্ট-সার্কিট হয়েছে। এই বীভৎস ঝড়ের পানির মধ্যে ও যেন ট্রান্সফরমার থেকে আগুনের ফুলকি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

ঘরের বারান্দা দিয়ে সেই আলোর ফুলকি আমাদের চোখে এসে পড়ল। হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি তাতে বিন্দুমাত্র ও নেটওয়ার্ক নেই। তাই এই মহা বিপদের মধ্যেও ফোন করে সাহায্য চাওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি আর থাকলো না।

নিদ্রাহীন রাত্রি

ঝড়ের এই রাতটুকু আমাদের কাছে অভিশাপ মনে হল। কারো চোখে ঘুম তো দূরের কথা পরের দিন সকালে আমরা সূর্য দেখতে পাবো কিনা সে যেন আমাদের কাছে একটা বড় বিষ্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের দুই পাশের জানালা যেন আর আস্ত নেই। প্রচন্ড ঝড়ে ঘরের জানালা যেন আর বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। জানালার ওপর হঠাৎ করেই ঝড়ের বীভৎস ঝাপটা এসে পড়ল এবং জানালা আর কবজা গুলি ভেঙ্গে উপরে পড়ে গেল। খোলা জানালার ভিতর দিয়ে হু হু করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো ঝড়ো হাওয়া।

ঝড়ের বীভৎস হাওয়া আর বৃষ্টির ঝাপটায় আমরা যেন সবাই ঠকঠক করে কাঁপছি। আর অন্যদিকে মাথার উপর ভীষণ আওয়াজ এর মধ্যেই মেঘের গর্জন করে উঠছে। কিছুক্ষণ হল ঝড় থেমেছে তবু যেন মনে হচ্ছে আমাদের ওপর ঝড় আছড়ে পড়ছে। আমরা সবাই যেন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। সময় জ্ঞান যেন আমরা সবাই হারিয়ে ফেলেছি। অন্ধকারে ঘড়িতে কয়টা বাজে তাও দেখার কোনো উপায় নেই।

ঝড় পরবর্তী অনুভুতি

মধ্য রাতের দিকে ঝড় থামলো তবু যেন মাঝেমধ্যে দমকা বাতাস বয়ে চলেছে। চারিদিক থেকে ভেসে আসতে লাগলো মানুষের কান্নার শব্দ। কিন্তু সাহস হলো না বাইরে বের হতে। ঘুমাতে চেষ্টা করলাম বিছানায় শুয়ে কিন্তু ঘুম আসলো না। ধ্বংসের তাণ্ডবে মেতে উঠেছে সমস্ত এলাকা। মনে হচ্ছে সমস্ত এলাকা যেন পরিণত হয়েছে মহাশ্মশানে। কত ঘর বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়েছে, আর কত গাছপালা ভেঙ্গে গেছে তার কোন হিসেব নেই।

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

গবাদি পশুর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে যেখানে সেখানেই। তাদের সরানোর মত যেন কোন জনমানব নেই। মানুষের কান্না আর আহাজারিতে যেন মনে হচ্ছে গ্রামের বাড়ি ঘর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মানুষ যেন ছোটাছুটি করছে আপন জনের খোঁজে। গাছের উপরেও দেখলাম আটকে আছে অনেক মৃতদেহ। সবই বুঝি শেষ করে দিয়ে গেছে সর্বনাশা আম্ফান ঝড়। চারিদিকে দেখতে পেলাম সকল পরিবার যেন একে একে রাস্তায় নেমে এসেছে।

ঝড়ের দাপটে গ্রামের সকল বাড়িঘর গুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। সকল মানুষ এখন বিপর্যস্ত। শুনতে পেলাম আশ্রয়হীন মানুষের জন্য নিকটবর্তী স্কুল গুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই মিলে চলে গেলাম সেখানে। আমাদের সমস্ত রাত্রি কাটল উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে।

পরের দিন সকালের চিত্র

ভোর হতে না হতেই আমরা সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। সীমাহীন মেঘ মুক্ত নীল আকাশ। চারপাশের প্রকৃতি যেন নিরব আর নিস্তব্ধ হয়ে ধ্বংসস্ত স্তূপে পরিণত হয়েছে। বেদনায় এবং ভয়ে বুক কাঁপতে থাকলো থরথর করে। ঘরবাড়ি, গাছপালা সবই যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। ফসলের মাঠের দিকে তাকানোর কোন উপায় নেই। ঘর -বাড়ি আর গাছপালার নিচে চাপা পড়ে আছে কত সে মানুষের মৃতদেহ। আর এসব দেখে মানুষের চোখ যেন পানিতে ছলছল করে উঠছে।

আরো পড়ুনঃ  বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে  জেনে নিন

চারিদিকের আকাশ, বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠছে মানুষের বুকফাটা আর্তনাদে। এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য যে না দেখেছে তাকে বোঝানোর কোন উপায় নেই। আমার দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে লাগলো আর মনের অজান্তেই যেন ধ্বনিত হল সেই গানের সুর -" আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়াও করিতে পারিনা চিৎকার"। চারিদিক থেকে শুধু মানুষের মৃত্যুর খবর আর ধ্বংসের তাণ্ডব লীলার খবর আসতে লাগলো। মনে হল ঝড় যেন গরিব মানুষের গজব আর মৃত্যুর অমানিশা। চারিদিকে মানুষের আর্তনাদ স্বজন হারানোর বেদনায়।

ঝড়ের পরবর্তী পূর্ণবাসন কার্যক্রম

আম্ফান ঝড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছে পুরো উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলকে। এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের স্বজন হারানোর বেদনা নেই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলের জমি। বিধ্বস্ত মানুষগুলো আবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বাড়িঘর গুলো নির্মাণের। সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবীরা ও এগিয়ে এসেছে বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য। নিঃস্ব পরিবার গুলোর সাহায্য সহযোগিতা করা হয় তাদের ভরণপোষণের জন্য। সত্যিই এ যেন এই এক বিশাল অভিজ্ঞতা।

উপসংহার

আমাদের সকলের উপর দিয়ে সেদিন রাতে যে দুর্যোগের মেঘ বয়ে গিয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা সত্যিই অসম্ভব। এমন ঝড়ের  বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার এর আগে কখনো হয়নি। এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা আর বীভৎস মৃত্যুর দৃশ্য আমি কখনো ভুলব না, এটা ভুলার কথাও নয়। এই বীভৎস পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে মানুষের সময় লাগবে অনেক দিন। এই আম্ফান ঝড় যেন আমাদের আরও একবার বুঝিয়ে দিয়ে গেল প্রকৃতির ইচ্ছার কাছে আমরা কতখানি তুচ্ছ এবং কতখানি অসহায়।

এই ঝড়ের রাত্রি যেন আমাদের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে কাল রাত্রি হিসেবে। ঝড়ের এই তান্ডব লীলা থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের সময় লাগবে অনেকদিন, অনেক বছর। যারা ঝড় নিয়ে কাব্য বিলাস করে তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বোঝা দরকার ঝড় কতটা বিপদজনক, আর কতটা ভয়ংকর। আর প্রকৃতির এই তান্ডব লীলার কাছে মানুষ কতটা অসহায়।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা আমার এই রচনা পড়লে আরো যে রচনা গুলো লিখতে পারবে তাহলো-

একটি ঝড়ের রাত

একটি ঝড়ের রাত্রি

ঝড়ের অভিজ্ঞতা

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা

নিদ্রাহীন একটি রাত্রি।


 একটি ঝড়ের রাত্রি রচনা  

ভূমিকা

আমাদের এই পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসেছে ঝড় তার মধ্যে অন্যতম। একজন মানুষ তার জীবনে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হয়। আমার জীবনে অনেক ঝড়ের রাত্রি এসেছে এমন কিছু ঘটনা আছে যা মানুষের হৃদয়পটে মুদ্রিত হয় স্থায়ীভাবে। আবার সব সময় মানুষ সব কথা মনেও রাখেনা। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষ একদিকে যেমন ঝড় কে ভয় করেছে আবার অন্যদিকে উপষণাও করেছে। এই ঝড়ের কবর থেকে রক্ষা পেতে অবলম্বন করেছে বিভিন্ন বাঁচার উপায়।

আমরা কালবৈশাখী ঝড়ে তান্ডব লীলা ও দেখেছি আবার আশ্বিন মাসের ঝড়ের দৃশ্য ও অবলোকন করেছি। যখন ঝড় আসে মানুষ তার সামনে পড়লে তখন সে অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষ সন্ধান করে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের। এই শক্তিশালী ঝড়ের সামনে সবকিছুই যেন তছনছ হয়ে যায়। ঝড় সৃষ্টি হয় সাগরের মধ্যে থেকে আর ভূমিতে এসে বুঝিয়ে দেয় মানুষ সভ্যতা যতই উন্নতির শিকরে আরোহন করুক না কেন প্রকৃতির কাছে তা একেবারেই তুচ্ছ।

যদিও বর্তমানকালে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অনেক সুরক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। তবে ঝড়ের প্রতিরোধ করা না গেলেও ঝড়ের ধ্বংসাত্মক তান্ডবলীলা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। তেমনি একটি ঝড় সম্প্রতি আমার জীবনে এসেছিল আর এই ঝড় আমার জীবনের গতি প্রকৃতিকে করেছে ওলট পালট।

ঝড়ের আগের মুহূর্ত

সেই দিনটা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। নীল আকাশ ছিল মেঘমুক্ত। প্রখর রোদের সাথে বয়ছিল ঝিরঝিরি বাতাস। হঠাৎ সেদিন আকাশ জুড়ে মেঘের অবাধ বিচরণ। সন্ধ্যারা প্রাক্কালে সমস্ত মানুষকে অবাক করে উত্তর-পশ্চিম কোণে দেখা দিল বিশাল ঘন কালো মেঘ। রেডিও টিভি থেকে ঘোষণা করা হলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপের আর এই ঝড়ের আকার ধারণ করছে এবং আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে উত্তর দিকে।

আকাশ, গাছপালা, লতাপাতা সব কিছুই নিস্তব্ধ। গাছের একটি পাতাবো যেন নড়েনা, এমনকি সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখিগুলো  নিরবতা  নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সমস্ত আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে ছেয়ে গেল। বিপদ সংকেত দেওয়া হল এক ১ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে। মাইকে এলাউন্স করা হলো সবাই সাবধান। সবার বুক যেন আতঙ্কে দূর দূর করে কাঁপছে। যে কোন মুহূর্তে একটি ভয়াবহ বিপদের যেন সবাই প্রহর গুনতে লাগলো।

ঝড়ের পূর্বাভাস

সন্ধ্যা হতে না হতেই রেডিও টিভি থেকে ঘোষণা করা হলো বঙ্গোপসাগরে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়েছে।  হঠাৎ করেই শোনা গেল ঝড়ের বুলেটিন বিপদ সংকেত ১ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে দেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী মানুষকে সরে যেতে বলা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। সাগরের নিম্ন চাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি শুধু উপকূল বর্তি এলাকায় আঘাত হানতে পারে দেশের বিভিন্ন স্থানে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আতঙ্কে সবার বুক দুরু দুরু করে কাঁপছে। যে কোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এই ভেবে প্রহর গুনছে সবাই।

ঝড়ের তাণ্ডব লীলা

রাতে হঠাৎ করে শুনতে পেলাম বাতাসের সই সই শব্দ। বাতাস সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো শব্দ করে চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। দূর থেকে বয়ে আসা বাতাসগুলো ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল। আগে থেকে বন্ধ করে রাখা ঘরের কাছের জানালাগুলোর সর্ষিতে বাতাসের আঘাতে সন সন শব্দ হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর বাতাসের সাথে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। ক্রমে বাতাসের বেগ বাড়তে লাগলো। চারিদিকে কেবল বাতাসের শব্দ।

বজ্রপাতের একের পর এক বিকট আওয়াজ আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানিতে মনে হল যেন মহাপ্রলয় এসে গেছে। মানুষের চিৎকার আর আযানের ধ্বনি শুনে শরীরে যেন কাঁপন ধরেছে। জানালা দিয়ে বন্যার পানির মত হুড়মুড় করে ঢুকছে মাতাল হাওয়া। আর বাতাসের সাথে ঢুকছে ধুলোবালি। জানালার কপাটগুলো ঝড়ের তাণ্ডবে একবার বন্ধ হচ্ছে আবার একবার খুলছে।


আবার  হাহা শব্দ খুলে যাচ্ছে জানালা। সবকিছু তছনছ, লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। আর বাইরে সীমাহীন সাম্রাজ্য কালো অন্ধকার মেঘের। গাছপালায় হাওয়ায় মাতামাতি। বাতাসের দাপটে ঘরে টাঙানো ছবিগুলো ঝনাট করে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের ঘরের পাশের বড় আম গাছটি পড়ে গেল মটমট শব্দ করে আমরা চিৎকার করে উঠলাম ভয়ে। একবার জানালা একটু ফাঁক করে দেখি আমাদের রান্না ঘরের চালা আর বৈঠক ঘরের চালা উড়ে গেছে।

আর ঘরের বেড়া গুলো খুঁটি সহ উঠানে পড়ে আছে। এমন সময় হঠাৎ করে কোথায় থেকে যেন একটি টিনের চালা এসে আমাদের ঘরের  সাথে ধাক্কা খেলো প্রবল বেগে। আর এর প্রকাণ্ড শব্দে আমরা ভয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠলাম। তবে আমাদের ঘরটা ছিল বেশ শক্ত যার কারণে আমাদের ঘরের কোন ক্ষতি হয়নি তবু আমাদের ভয়ের অন্ত ছিল না। সারাক্ষণ আমরা ভয়ে আতঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সমস্ত শরীর, শিরা-উপশিরা যেন ভয়ে হিম হয়ে আসছিল।

পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার যেন আমাদের ঘিরে ধরেছে আর বিদ্যুৎ সেতো ঝড়ের শুরুতেই চলে গেছে। আমাদের ঘরে জ্বলছে একটি হারিকেন, সেটাও আবার একটি বড় পাতিলের মধ্যে বন্দি কারন বাতাসের প্রবল বেগে হারিকেন নিভে যেতে পারে। ঝড়ের বেগ এদিকে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আমার মনে দারুন উৎকণ্ঠা। দরজা খুলে বেড়িয়ে এলাম বারান্দায় সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুরন্ত ঝড়ো হাওয়া মনে হলো ঝড়ো হাওয়া আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের বুকে।


অন্ধকারের সমুদ্র হয়ে উঠেছে যেন  উত্তল ও ভয়ংকর। মাঝরাতে ঘন্টায় ২৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলেছে ৬ ঘন্টা ব্যাপী। এই ঝড়ের তান্ডব লীলা, চারদিকে আগুনের বৃষ্টি সব মিলিয়ে যেন মহাপ্রলয়ের সিংগা ধনী। আর এই ঝড়ের সাথে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস। সমস্ত পৃথিবী যেন দুলে উঠেছে ঝড়ের প্রচন্ড বেগে। কাঠের বাড়িঘর গুলো যেন ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে বিকট শব্দ করে।

মাঝে মাঝে আকাশব্যাপী বিদ্যুতের চমক এবং মেঘের গর্জনে খন্ড-বিখন্ড হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আমাদের এই ধরণী মনে হচ্ছে  একেবারে ধ্বংসের অন্তিম সীমায় এসে পৌঁছেছে। আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যাবে আমাদের এই পৃথিবী। প্রকৃতির এই ভয়ালরুপ স্বচক্ষে না দেখলে কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে না। ঝড় যেন সকল কিছু ধ্বংসের প্রতীক আর এক ভয়াবহ তাণ্ডব লীলা।

ঝড় চলাকালীন একপর্যায়ে

ঝড় চলাকালীন সময়ে হঠাৎ মানুষের চিৎকার বাঁচাও বাঁচাও আর এই শব্দে হৃদয় বিদির্ণ হয়ে এলো পৃথিবী। আমরা কেউ স্থির থাকতে পারলাম না উঠে গেলাম উপরে। দোতালার জানালা খুলে দেখি পুরো শহর যেন ৮ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষ সাঁতার কেটে বাঁচার জন্য এগিয়ে আসছে আমরা ও তাদের সহযোগিতা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের ঘর মানুষে ভর্তি হয়ে গেল। আমরা সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। ব্যস্ততা আর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমাদের রাত্রি কেটে গেল।

নিদ্রাহীন রাত্রি

ঝড়ের সেই রাতটুকু আমাদের কাছে মনে হল অভিশাপ। কারো চোখে ঘুম তো দূরের কথা পরের দিন সকালে আমরা সূর্য দেখতে পাবো কিনা সে যেন আমাদের কাছে ঘোর সন্দেহ। ঘরে দুই পাশের জানালা যেন আর আস্ত নেই। কিছুক্ষণ হলো ঝড় থেমেছে তবু যেন মনে হচ্ছে ঝড় আছড়ে পড়ছে আমাদের ওপর। আমরা সবাই যেন তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। সময় জ্ঞান যেন তখন সবার হারিয়ে গেছে। অন্ধকারে ঘড়িতে কয়টা বাজে তাও দেখার উপায় নেই।

ঝড় পরবর্তী অনুভূতি

ঝড় থামলো প্রায় মধ্য রাতের দিকে তবে মাঝে মধ্যে দমকা বাতাস যেন বইছে। চারদিক থেকে ভেসে আসতে লাগল মানুষের কান্না শব্দ কিন্তু সাহস হলো না বাইরে বের হতে। ঘুমাতে চেষ্টা করলাম বিছানায় শুয়ে, কিন্তু ঘুম আসলো না। ধ্বংসের তাণ্ডবে মেতে উঠেছে সমস্ত এলাকা যেন সৃষ্টি হয়েছে মহাশ্মশান। কত গাছপালা ভেঙ্গে গেছে আর কত ঘর বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তার কোন হিসেব নেই।

আর যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে পশু পাখির মৃতদেহ। তাদের সরানোর মত যেন কোন লোক নেই। মানুষের কান্না আর আহাজারিতে যেন মনে হচ্ছে গ্রামের বাড়ি ঘর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। মানুষ যেন ছোটাছুটি করছে আপন জনের খোঁজে। গাছের ওপরেও মৃতদেহ দেখলাম আটকে আছে। সবই বুঝি শেষ করে দিয়ে গেছে সর্বনাশা ঝড়। সমস্ত রাত্রি কাটল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে।


পরের দিন সকালের চিত্র

আমরা বেরিয়ে পড়লাম ভোর হতে না হতেই। সীমাহীন মেঘ মুক্ত নীল আকাশ। চারপাশে প্রকৃতি যেন নিরব নিস্তব্ধ ধ্বংস স্তুপে ঢেকে আছে চারিদিক। বেদনায় এবং ভয়ে বুক কাঁপতে থাকলো থরথর করে। ঘরবাড়ি, গাছপালা, বৈদ্যুতিক তারের খুটি সবই যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। ফসলের মাঠের দিকে তাকানোর কোন উপায় নেই। গাছপালা আর ঘর বাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে মানুষের মৃতদেহ এসব দেখে মানুষের চোখ যেন ছল ছল করে উঠছে।

অসহায় মানুষের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠেছে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য যে না দেখেছে তাকে বোঝানোর অনেক কঠিন। আমার দুচোখ দিয়ে অনবরত ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো ঠিক যেন সেই গানের মত- "আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়াও করিতে পারিনি চিৎকার"। চারিদিক থেকে শুধু মৃত্যুর খবর আর ধ্বংসের খবর আসতে লাগলো। মনে হল ঝড় যেন গরিব মানুষের গজব আর মৃত্যুর অমানিশা। স্বজন হারানোর বেদনায় মানুষের আর্তনাদ।

ঝড় পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রম

পুরো অঞ্চলকে ঝড় যেন করে দিয়েছে ক্ষতবিক্ষত। এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল যাদের সজন হারানোর বেদনা নেই। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলের জমি। বিধ্বস্ত মানুষগুলো আবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বাড়িঘর গুলো নির্মাণের। সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। স্বেচ্ছাসেবিরাও এগিয়ে এসেছে বিপদ গ্রস্ত্রদের পাশে দাঁড়াতে।  নিঃস্ব পরিবারগুলোর সাহায্য সহযোগিতা করা হয় তাদের ভরণপোষণের জন্য। সত্যি যেন এক বিশাল অভিজ্ঞতা।

উপসংহার

ঝড়ের এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা আর কখনো হয়নি। এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা আর বীভৎস ও মৃত্যুর দৃশ্য আমি কখনো ভুলবো না এটা ভুলার কথাও নয়। এই ঝড়ে রাত্রে আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে কাল রাত্রি হিসাবে। ঝড়ের এই তান্ডব লীলা থেকে পরিত্রান পেতে মানুষের সময় লাগে অনেক দিন অনেক বছর। এই ঝড় আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে গেল প্রকৃতির শক্তির কাছে আমরা কতটা অসহায়, কতটা নিঃস্ব। যারা ঝড়কে নিয়ে যারা কাব্য  বিলাস করে তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বোঝা দরকার ঝড় কতটা বিপদজনক। মানুষ ঝড়ের কাছে কতটা অসহায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url