কিডনি রোগের লক্ষণ - প্রতিকার জেনে নিন

 

কিডনি রোগ একটি ঘাতক ব্যাধি। বাংলাদেশ কিডনি রোগ আগের তুলনায় এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে ঘন্টায় পাঁচ জনের বেশি মানুষ কিডনি রোগে মারা যায়। তাই কিডনি রোগের লক্ষণ -  প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। 

Image

কিডনি রোগ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নষ্ট হওয়ার আগে জানা সম্ভব হয় না বা এর উপসর্গ বোঝা যায় না। যার কারণে কিডনি রোগের প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। কিডনি রোগের লক্ষণ -  প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচি পত্রঃ কিডনি রোগের লক্ষণ - প্রতিকার 

কিডনি কি

মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রত্যেক মানুষের দেহে দুইটি করে কিডনি রয়েছে। কিডনিগুলো দেখতে সাধারণত কলাই এর মত হয়ে থাকে। মানুষের দেহের প্রতিটি কিডনির প্রস্থ ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্য ৯ থেকে ১২ সেন্টিমিটার। মানব দেহে কিডনি মেরুদন্ডের দুই পাশে দুই কিডনি অবস্থান করে। কিডনি দুটি সাধারণত তিন ৩ থেকে চার ৪ সেন্টি মিটার পুরু হয়ে থাকে।

মানব দেহের মেরুদন্ডের দুই পাশে কোমর থেকে একটু উপরে কিডনির অবস্থান। কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সহায়তায় মানুষের শরীরের সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়। কিডনি মানব দেহের ছাকনি হিসেবে কাজ করে।

কিডনি রোগ কি

মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গের নাম হল কিডনি যাকে বৃক্ক ও বলা হয়ে থাকে। কিডনি মানবদেহের রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থ গুলো পরিশোধন করে এবং তা মূত্রের মাধ্যমে মানব দেহ থেকে বের করে দেয়। মানবদেহে যখন কিডনিতে কোন সমস্যা হয় অথবা একটি কিডনি অথবা উভয় কিডনিই যখন কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন তাকে কিডনি রোগ বলা হয়। কিডনি রোগের অনেক সময় কোন উপসর্গ বোঝা যায় না।

কিডনি রোগ হলে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতায় ভুগে থাকেন এবং ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হন। মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে প্রথমে তার কিডনিকে সুস্থ রাখতে হবে। কিডনিতে কোন সমস্যা হওয়ার আগেই মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি।

কিডনি বিকল কি

মানুষের শরীরে সাধারণত দুইটি কিডনি থাকে। আর এই দুইটি কিডনির মধ্যে একটি কিডনি অথবা উভয় কিডনিই যখন কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন তাকে বলা হয় কিডনি বিকল। যদি কারো কিডনি বিকল বা খারাপ হয়ে যায় তাহলে কিডনি ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করাই হলো কিডনি রোগের একমাত্র চিকিৎসা। আবার অনেক সময় এমন হয় যে কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না তখন সঠিকভাবে কিডনির যত্ন না নিলে কিডনি ক্ষনস্থায়ী অথবা স্থায়ীভাবেই কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

তাই সময় থাকতেই কিডনির যত্ন নেওয়া উচিত। সময় থাকতে যত্ন না নিলে লালন শাহের গানের মতোই হয়ে যাবে "সময় গেলে সাধন হবে না"।

কিডনি রোগের প্রকারভেদ

মানব দেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিটি মানুষের শরীরে দুইটি করে কিডনি থাকে। মানুষের শরীরের কিডনি যখন তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন তাকে বলা হয় কিডনি রোগ। কিডনি রোগকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা

আকস্মিক কিডনি বৈকল্য (একিউট কিডনি ইনজুরি)

দীর্ঘ মেয়াদী কিডনি রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিস)

মানবদেহের কিডনি যখন ধীরে ধীরে তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে তখন তাকে বলা হয় কিডনি ডিজিজ। তবে চিকিৎসকদের মতে যদি সচেতন থাকা যায় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা যায় তাহলে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিডনি রোগ আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা-

মেডিকেল ও

সার্জিক্যাল

মেডিকেল

মেডিকেল কিডনি রোগের চিকিৎসা  নেফ্রলজিস্টরা সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে করে থাকেন। যেসব রোগীদের কিডনি বিকল হয়েছে বা রোগাক্রান্ত হয়েছে তাদের কিডনি ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনও দেখা দেয়। এদের মধ্যে আছে কিডনি ফেইলিওর, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থেকে কিডনির অসুখ, সিনড্রোম, প্রসাবের সংক্রমণ রোগ ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ  এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানুন

সার্জিক্যাল

যেসব কিডনি রোগ হলে ইউরোলজিস্টরা এন্ডোসকপি, অপারেশন প্রয়োগ করে চিকিৎসা করে থাকেন তাকে বলা হয় সার্জিক্যাল কিডনি রোগ। এই রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুত্রনালীতে জন্মগত অসুখ, মূত্রনালীতে পাথর, ক্যান্সার, রেনাল ক্যান্সার, প্রোস্টেটের রোগ,কিডনি প্রতিস্থাপন প্রভৃতি।

কিডনি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ

মানব দেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক না থাকলে মানুষ সুস্থ থাকে না। কিডনি রোগ হল একটি ঘাতক ব্যাধি যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। তবে শুরুতেই যদি কিডনি রোগ চিহ্নিত করা যায় তাহলে বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়। তাই শুরুতেই কিডনি রোগ শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। শতকরা ৭0 থেকে ৮0 ভাগ কার্যক্ষমতা হারানোর পরে কিডনি রোগ প্রকাশ পায়। তবে কিডনি রোগ হলে যে লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হল-

  • প্রসাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া
  • প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • প্রসাব কম বা বেশি হওয়া
  • অসুস্থ বোধ হওয়া 
  • উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া
  • শরীরে ক্লান্তি ভাব আসা
  • মনোযোগ কমে যাওয়া
  • মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া
  • সব সময় শীত শীত অনুভূত হওয়া
  • শরীরে ক্লান্তি ভাব আসা
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পায়ে এবং চোখে পানি জমে ফুলে যাওয়া
  • প্রসবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া
  • ক্ষুধা মন্দ হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • দেহে রক্ত শূন্যতা দেখা দেওয়া
  • ঘুম থেকে উঠলে চোখ মুখ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যাওয়া
  • কোমরের দুই পাশে ব্যথা হওয়া এবং তল পেট পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
  • কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেলে শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং শরীরের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে

উপরোক্ত যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ কিডনি একটি ঘাতক ব্যাধি। যদি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর যেকোনো একটি লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

কিডনি রোগের কারণ

কিডনি মানবদেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি রোগের বিভিন্ন কারণ রয়েছে তবে নেফ্রেটিস কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষই নেফ্রাইটিসের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ আর কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ১১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে।

এছাড়া ও বংশগত কারণেও অনেকেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ও কিডনি রোগ হয়ে থাকে। এছাড়াও যেসব কারণে কিডনি রোগ হতে পারে তা হলো-

পর্যাপ্ত পানি পান না করা

একটি সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। কিডনি ভালো রাখতে হলে পানি পান করার কোন বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ না করলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।

মূত্র চেপে রাখা

কিডনি মানব দেহের রক্তের দূষিত পদার্থ মুত্রের সাহায্যে দেহ থেকে বের করে দেয়। কিন্তু এমন অনেক লোক আছে যারা অধিক সময় ধরে মূত্র ধরে রাখে আর এই মুত্র ধরে রাখার কারণে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যেতে পারে না যার কারণে কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে।

কিডনি রোগ মানবদেহের কঠিন এবং জটিল রোগ। যে কোন বয়সের মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নেফ্রাইটিস হল কিডনির প্রধান রোগ। কিডনি রোগ বড়দের জন্য ভয়াবহ হলেও ছোটদের ক্ষেত্রে অনেক সময় তা নিরাময় করা সম্ভব হয়। কিডনি রোগ সংক্রামক এবং অসংক্রামক উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে তবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে কিডনি রোগ বেশি দেখা যায়। শতকরা ৮০ভাগ লোক সংক্রমণ নেফ্রাইটিস জনিত কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।

আর অসংক্রমক তথ্য গুলো মানুষের সম্পন্ন অজানা থাকে যার কারণে কিডনি রোগের চিকিৎসাও অনেক সময় দেরি এবং জটিল হয়ে যায়। যেসব কারণে মানুষের কিডনি রোগ হয়ে থাকে তা হল-

  • প্রসাবের সাথে আমিষ বের হয়
  • শরীর ফুলে যায়
  • রক্তচাপ বেড়ে যায়
  • রক্ত ক্রিয়েটিনিন  নামক উপাদান বেড়ে যায়
  • রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে

তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি কিডনি রোগ শনাক্ত করা যায় তাহলে শতকরা ৩0 জন লোকের এই কিডনি রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। তবে যদি একবার এই কিডনি রোগ হয় তাহলে ভালো হওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শতকরা ৬0 থেকে ৬৫ ভাগ রোগীর  কিডনি আবার বিকল হয়ে যায় এবং তারা মৃত্যুবরণ করে।

ডায়াবেটিস

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ডায়াবেটিস হলো কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে নিয়ম মেনে চলে ডায়াবেটিস কিডনির কোন ক্ষতি করতে পারেনা। নিয়ম মানা বাদ দিলে শুরু হয় কিডনির সংক্রমণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিসে শতকরা প্রায় ৪0 ভাগ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।

যেহেতু কিডনি রোগ ডায়াবেটিসের কারণে হয়ে থাকে এবং কিডনি রোগে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয় তাই তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। তবে যদি নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে ডায়াবেটিস কিডনির কোন ক্ষতি করতে পারে না। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের উচিত কিছুদিন পর পর কিডনি পরীক্ষা করা আর ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই কিডনি বিষয়ে বেশি সচেতন হওয়া উচিত।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ (যাকে হাই প্রেসার বলা হয়) কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের পাশাপাশি  হৃদ জনিত রোগের ও কারণ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে কিডনি রোগ থেকে বাঁচার সম্ভব নয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা উচ্চ রক্তচাপ গুরুত্বের সাথে দেখেন না এবং তারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করেন না। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কিডনি আক্রান্ত হয় ।

বংশগত কারণ

বংশগত কারণেও অনেক সময় কিডনি রোগ হয়ে থাকে। বংশের যদি কারো অতীতে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে অন্যজনের কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। বংশগত কারণে যে কিডনি রোগ হয় তাকে বলা হয় পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিস। আর পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ হলে জন্মগতভাবে কিডনির কার্য ক্ষমতা অনেক কমে যায়। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে এই কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

কিডনি রোগে মৃত্যু ঝুকির কারণ

কিডনি রোগ বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে বর্তমানে কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হলে হার্ট ও মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, হঠাৎ কিডনি অকেজো হয়ে যায়, স্থূলতা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের কারণে কিডনি রোগ হয়। এছাড়া ধুমপান এবং যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।এছাড়া ও নানা কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, নেফ্রাইটিসের কারণে শতকরা ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং ডায়াবেটিসের কারণে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কিডনি বিকল হয়ে যায়। এছাড়াও বংশগত কারণে, কিডনিতে পাথর হলে, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে, অস্বাস্থ্যকর ভাবে ডায়েট করলে এবং বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ও কিডনি রোগ হয়ে থাকে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কিডনি রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ও কিডনি রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে নানা কারণে কিডনি রোগের চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র যার কারণে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহুল হওয়ার কারণে মানুষ কিডনি রোগের চিকিৎসা সঠিকভাবে করতে পারেনা। কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ হলো ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ।

এমন অনেকে মানুষ আছেন যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কিন্তু তারা সচেতন নন। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে তাদের উচিত নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করা এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা। কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এছাড়াও যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত তা হলো-

  • উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
  • নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম করা
  • নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন না করা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা দ্রুত কমিয়ে ফেলা
  • অতিরিক্ত খাবার লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকা
  • নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো
  • কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ সেবন করা
  • প্রতিনিয়ত শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাথা সব সময় স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা

কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তাই কিডনি রোগ হওয়ার আগে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রত্যেকটা মানুষের জন্য জরুরী। কারণ সমস্যার সৃষ্টি হলে তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অনেক মুশকিল যার কারনে প্রতিটি মানুষের উচিত স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা

যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন কারণ এসব রোগীদের খাদ্য তালিকা বিভিন্ন নিয়ম-নীতি মাথায় রেখে তারপর তৈরি করতে হয়। তবে এগুলোর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস মাথায় রেখে খাদ্য তালিকা তৈরি করা উচিত। তবে 

কিডনি রোগীদের যেসব খাবার খাওয়া যাবে সেগুলো হল-

আনারস, আপেল, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেদানা, নাশপাতি, বরই, আনারস ইত্যাদি ফল খাওয়া যাবে। এছাড়াও যেসব খাবার খাওয়া যাবে সেগুলো হল- মটরশুটি, বেগুন, চাল কুমড়া, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। এছাড়া ও মুরগির মাংস, কবুতরের মাংস, পনির, ডিম খাওয়া যাবে। তবে ডায়াবেটিস না থাকলে শর্করা জাতীয় খাদ্য ও পরিমিতভাবে খাওয়া যাবে।

যেসব খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে সেগুলো হল

যেসব খাবারে বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যেমন- শুকনো ফল, টমেটো, ড্রাইফুডস, কলা অল্প পরিমাণে খেতে হবে বা খাওয়া বাদ দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। এছাড়াও অল্প পরিমাণে যেসব খাবার খাওয়া যাবে তা হলো- পেয়াজ, মুলা, গাজর, সবুজ শাক, পাতা জাতীয় শাকসবজি ইত্যাদি।

খাদ্য তালিকা থেকে যেসব খাবার বাদ দিতে হবে সেগুলো হল-

যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের টক জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। টক জাতীয় বিভিন্ন ফল যেমন- লেবু, আমলকি, আম, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি খাবার বাদ দিতে হবে। আবার সবজির ক্ষেত্রে যেগুলো বাদ দিতে হবে সেগুলো হল- মিষ্টি আলু- পিউরিন যুক্ত ডাল,কচু, শিমের বিচি, বরবটি, আলু, দুধ, দুধ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। কারণ দুধ জাতীয় খাবারে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যার কারণে এসব খাবার খাওয়া যাবেনা।

এছাড়াও গরুর মাংস, খাসির মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া ও প্যাকেট জাতীয় বিভিন্ন খাবার, ডাবের পানি, ড্রাই ফুডস, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, ধূমপান সম্পন্নরূপে বাদ দিতে হবে।

কিডনি রোগ সমস্যা বোঝার উপায়

কিডনি রোগকে বলা হয় নিরব ঘাতক। একজন মানুষের শরীরের ৭0 থেকে ৮0 ভাগ কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর অনেক দেরি হয়ে যায়। মানুষের নিজের অজান্তেই কিডনি রোগ মানুষকে অনেক বিপদের মুখে ফেলে। কিডনি রোগ হলে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু ও হতে পারে। তবে যে সব সমস্যা হলে বুঝতে হবে মানুষের কিডনি রোগ হয়েছে সেগুলো হল-

  • মুখের চারপাশও চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
  • পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া
  • মুখে দুর্গন্ধ ও খাবারে অরুচি হওয়া
  • ত্বকে চুলকানি ও রাশ বের হওয়া
  • পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হওয়া
  • ঘন ঘন প্রসব করা
  • প্রসাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া বা ফেনা যুক্ত প্রসাব হওয়া
  • প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • গরম আবহাওয়াতেও শীত শীত অনুভূত হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে মানুষের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিডনি রোগের লক্ষণ সঠিকভাবে জানা থাকলে এবং যদি প্রতিরোধের উপায় গুলো জানা যায় তাহলে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হয়। তবে যদি সচেতন থাকা যায় এবং সঠিকভাবে রোগ প্রতিরোধ করতে পারা যায় তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা সম্ভব।

 কিডনি রোগ হলে সঠিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে এবং সঠিকভাবে জীবন যাপন করলে এই জটিল রোগ থেকে অনেক অংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি ভালো আছে কিনা এবং কিডনির কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা জানতে হলে আপনাকে কিডনির সক্ষমতা সম্পর্কে বুঝতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও রক্তের ইউরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। আপনার কিডনি যদি রোগে আক্রান্ত হয় অথবা বিকল হয় তাহলে আপনার এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন। কারণ রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও রক্তের ইউরিয়া পরিমাণের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যাবে।

এছাড়াও আপনার কিডনি কতটুকু ভালো আছে তা বুঝে আপনি সি সি আর ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট এবং জিএফআর অর্থাৎ গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট টেস্ট করতে পারেন। তবে আপনার শরীরের জিএফ আর যদি ৯০ এর উপরে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। আপনার কিডনি ভালো আছে এটা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন।

কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি মানবদেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি মানবদেহের রক্তের ক্ষতিকারক পদার্থ ছাকুনির মাধ্যমে মুত্রের সাহায্যে বের করে দেয়। কিডনি ভালো রাখতে হলে কিডনি সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারণা থাকতে হবে। যেসব উপায়ে কিডনি ভালো রাখা যায় তা হল-

  • নিয়মিত এবং পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে
  • তরল খাবারে ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি খেতে হবে
  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • সকল প্রকার শারীরিক নিয়ম মেনে চলতে হবে
  • বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে কিডনি রোগ হয় তাই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে
  • যেকোনো সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করতে হবে।

একজন মানুষ যদি তার কিডনি ভালো রাখতে চায় তাহলে উপরের নিয়মগুলো অবশ্যই তাকে মেনে চলতে হবে। মনে রাখবেন রোগের প্রতিষেধকের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করাটাই জরুরী।

কিডনি রোগ নির্ণয় পরীক্ষা

কিডনি রোগ দেখা দিলে বা কোন উপসর্গ দেখা দিলে তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে বা প্রয়োজন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিডনি রোগ নির্ণয় মাত্র দুটি পরীক্ষা ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হল

রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা

প্রসবের এলবুমিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করা

কিডনি যদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে প্রসবের সাথে অ্যালবুিন যেতে পারে তাই প্রসাবের সাথে অ্যালবুমিন যাওয়া হলো কিডনির রোগের অশনি সংকেত। আর রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা হল কিডনির মাপকাঠি পরীক্ষা আর এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনি ১০০ ভাগের মধ্যে কত ভাগ ভালো আছে এবং কাজ করছে। আমাদের দুইটি কিডনিতে ছাকনি থাকে প্রায় ২৪ লাখ।

আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অভিজ্ঞ ডাক্তারেরগণের তালিকা দেখুন

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে কিডনির এই ছাকুনি গুলোই নষ্ট হয়ে যায়। যখন এই ছাকুনি গুলোর প্রায় ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায় তখন রক্তের ক্রিটিনিন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরী। একিউট কিডনি রোগের ক্ষেত্রে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং কিডনি রোগের চিকিৎসা নিতে হবে। প্রথমে রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ক্রিয়েটিনিন ইলেকট্রো লাইটস এবং রক্তের ইউরিয়া সহ অন্যান্য পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।

যেসব লোকের ডায়রিয়া এবং অতিরিক্ত বমি হয় তাদের একিউট কিডনি রোগ বেশি হয়ে থাকে এবং এসব রোগীদের শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দেয়।তখন ডাক্তারেরা এসব রোগীদের পটাশিয়াম ও স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আবার এমন অনেক রোগী আছে যাদের কিডনি রোগ হলে রক্তচাপ অনেক কম থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা রক্তচাপ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করে থাকেন। আর এসব ক্ষেত্রে অনেক রোগী সুস্থ হয়ে যায়।

তবে রোগী সুস্থ হতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে হবে। যদি সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারেন তাহলে কিডনি ডিজিজ আরো খারাপের দিকে অগ্রসর হয়ে কিডনি ফেইলিওয়র হয়ে থাকে এবং মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আবার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হলে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার ও প্রয়োজন হতে পারে।

কিডনি রোগ কি ভাল হয়

এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের মনে প্রশ্ন জাগে কিডনি রোগ ভালো হয় কিনা ! আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ বলতে চাই, যদি কোন আকস্মিকভাবে কিডনি রোগ হয় তাহলে সঠিকভাবে চিকিৎসায় তা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। তবে কিডনি রোগ ভালো হয়ে গেলেও  ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আবার ১০ থেকে ১৫ বছর পর এই রোগ ফিরে আসতে পারে বা দেখা দিতে পারে এবং

পরবর্তী সময় কিডনি রোগ হলে তা দীর্ঘ মেয়াদী কষ্টের কারণ হতে পারে। তবে যদি কোন কারণে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ হয় তাহলে আর কিডনি রোগ ভালো হয় না। সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকে অনেক বেড়ে যায়।

কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ গুলো কি কি

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে বা বিবিকিড নিয়ে বিকল হয়ে গেলে তাকে অনেক সময় কিডনি ফেইলিয়র ও বলা হয়। কিডনি ফেইলিওর হলে যেসব লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তা হল-

  • রোগীর শরীর ফুলে যায়
  • হঠাৎ করে প্রসবের পরিমাণ কমে যায়
  • শ্বাসকষ্ট হয়
  • উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়
  • ক্ষুধা মন্দ হয় বা ক্ষুধা কমে যায়
  • বারবার বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়
  • খিচুনি হয়
  • অজ্ঞান হয়ে যায়
  • অনেক রোগীদের হৃদ যন্ত্রের সমস্যা হয়
  • ডায়রিয়া হয়
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হয়
  • যাদের গর্ভকালীন জোটিলতা থেকেই কিডনি ইনফেকশন হয় তাদের জ্বর থাকতে পারে
  • জন্ডিস দেখা দেয়
  • অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়
  • কিডনি ফেইলিয়র কোন সাংঘাতিক ধরনের নেফ্রাইটিসের কারণে হয়ে থাকলে নেফ্রাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়।
  • অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্ত যায়।

কিডনি রোগ সম্পর্কে শেষ কথা

কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি। কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। তাই এই রোগের চিকিৎসা করানো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় অসম্ভব। যার কারনে কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী। কিডনি রোগের চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাই নিয়ম মেনে চললে কিডনি রোগ থেকে সুস্থ থাকার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।

আমি কিডনি রোগ সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আপনারা সবাই সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করবেন এটাই আমাদের কামনা।


কিডনি রোগ - কি- রোগের লক্ষণ- কারণ-প্রতিকার

 কিডনি কি

কিডনি হলো আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রত্যেক মানুষের দেহে দুইটি কিডনি রয়েছে। কিডনি দেখতে সাধারণত কলাই এর মত। মানুষের দেহের প্রতিটি কিডনি দৈর্ঘ্য ৯ থেকে ১২ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার। কিডনি দুটি সাধারণত তিন ৩ থেকে চার ৪ সেন্টিমিটার পুরু হয়। মানুষের দেহে কিডনি মেরুদন্ডের দুই পাশে অবস্থান করে অর্থাৎ কোমর থেকে একটু উপরে কিডনির অবস্থান। কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সাহায্যে মানুষের শরীরের সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।

কিডনি রোগ কি

কিডনি যাকে বাংলায় বৃক্ক বলা হয় এবং এটি মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি মানব দেহের রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং দেহ থেকে এগুলো বের করে দেয় মুত্রের সাহায্যে। কিডনিতে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় বা কোন সমস্যার কারণে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন তাকে কিডনি রোগ বলা হয়। অনেক সময় কোন উপসর্গ ছাড়াই কিডনি রোগ হতে পারে।

কিডনি রোগ হলে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগে থাকেন এবং ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তাই একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই কিডনি সুস্থ রাখতে হবে তবে মনে রাখতে হবে কিডনিতে কোন সমস্যা হলে তা দ্রুত টের পাওয়া যায় না।

কিডনি রোগের প্রকারভেদ

কিডনি রোগে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।যথা-


  • আকস্মিক কিডনি বৈকল্য (একিউট কিডনি ইনজুরি)

  • দীর্ঘ মিয়াদি কিডনি রোগ (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ)

ধীরে ধীরে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকলে তাকে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলা হয়। তবে চিকিৎসকদের মতে সচেতন থাকলে এবং সঠিক সময়ে যদি এই রোগ শনাক্ত করা যায় তাহলে এই দুই ধরনের কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আবার কিডনি রোগকে আরো দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা-

  • মেডিকেল ও

  • সার্জিক্যাল

মেডিকেল 

সাধারণত নেফ্রলজিস্টরা ওষুধের মাধ্যমে মেডিকেল কিডনি রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে যাদের কিডনি বিকল হয়ে যায় তাদের কিডনি প্রতিস্থাপন বা কিডনি ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে আছে ডায়াবেটিস থেকে কিডনির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, নেপ্রটিস সিনড্রোম, কিডনি ফেইলিওর, প্রস্রাবের সংক্রমণের রোগ ইত্যাদি।

সার্জিক্যাল

ইউরোলজিস্টরা এন্ডোসকপি, অপারেশন প্রয়োগ করে সেই চিকিৎসা করেন যেগুলো কে বলা হয় সার্জিক্যাল কিডনি রোগ। এই রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মূত্রনালীতে জন্মগত অসুখ, মূত্রনালীতে পাথর, মুত্রনালীর ক্যান্সার, রেনাল ক্যান্সার, কিডনি প্রতি স্থাপন, প্রোস্টেটের রোগ প্রভৃতি।

কিডনি রোগের কারণ

কিডনি রোগের বিভিন্ন কারণ রয়েছে এমনকি কিডনি বিকলব হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় নেফ্রাইটিসের কারণে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ। আর ১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয় উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে। এছাড়াও বংশগত কারণ অথবা বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে ও কিডনি রোগ হতে পারে। এছাড়াও যেসব কারণে কিডনি রোগ হতে পারে তা হল-

পর্যাপ্ত পানি পান না করা 

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি গ্রহণ না করলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।

মূত্র চেপে রাখা 

এমন অনেক লোক আছে যারা অধিক সময় ধরে মূত্র ধরে রাখে। আর এই কারণে কিডনি খারাপ
হয়ে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস

বিশেষজ্ঞদের মতে কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস কোনো ক্ষতি করতে পারে না। নিয়ম মানা বাদ দিলে শুরু হয় কিডনির আক্রমণ। এক গবেষণায় দেখা যায় ডায়াবেটিস শতকরা প্রায় ৪0 ভাগ মানুষ কিডনি রোগে মারা যায় ডায়াবেটিসের কারণে।

কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ৪0 শতাংশ রোগী। তবে যদি নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে ডায়াবেটিস কিডনি রোগে তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তাই যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের উচিত কিছুদিন পরপর কিডনি পরীক্ষা করা আর ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই কিডনি বিষয়ে বেশি সচেতর হতে হবে।

নেফ্রাইটিস

নেফ্রাইটিস হলো কিডনির প্রধান রোগ। যে কোন বয়সের মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিডনি রোগ বড়দের জন্য ভয়াবহ হলেও ছোটদের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিরাময় হয়ে যায়। কিডনি রোগ সংক্রামক এবং অসংক্রামক উভয় ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে কিডনি রোগ বেশি দেখা যায়। সংক্রামক নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত হয় শতকরা ৮০ ভাগ লোক। অসক্রামক তথ্য গুলো সম্পূর্ণ অজানা থাকে যার কারণে কিডনি রোগের চিকিৎসা ও অনেক জটিল হয়ে যায়। যেসব লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা হল-

  • শরীর ফুলে যায়।

  • প্রসবের সাথে আমিষ বের হয়।

  • রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে।

  • রক্ত ক্রিয়েটিনিন নামক উপাদান বেড়ে যায়।

  • রক্তচাপ বেড়ে যায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এই রোগ সনাক্ত করা যায় তাহলে শতকরা ৩0 জন লোকের এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। তবে একবার এই রোগ হলে রোগ ভালো হওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে শতকরা ৬0 থেকে ৬৫ ভাগ রোগী কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে।

বংশগত কারণ

অনেক সময় কিডনি রোগ বংশগত কারণেও হতে পারে। যদি কেউ অতীতে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে অন্যজনের হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। বংশগত কারণে যে কিডনি রোগ হয় তাকে বলা হয় পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ। আর এই রোগে আক্রান্ত হলে জন্মগতভাবে কিডনির কার্যকারিতা কম থাকে। তবে নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের অন্যতম কারণ ও রক্তচাপের কারণে কিডনি রোগের পাশাপাশি স্ট্রোক ও হৃদরোগ জনিত রোগ হতে পারে। তাই কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। এমন অনেকেই আছে যারা উচ্চ রক্তচাপে গুরুত্ব দেন না এবং নিয়মিত ওষুধ খেতে চান না। তবে তাদের বুঝতে হবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কিডনির ক্ষতি হয়।

কিডনি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ

মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনি সুস্থ এবং স্বাভাবিক না থাকলে মানুষ মারা যেতে পারে। তবে শুরুতে যদি কিডনি রোগ চিহ্নিত করা যায় তাহলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব তাই এই রোগের শুরুতেই কিডনি রোগ সনাক্ত করা অনেক জরুরি। ধীরে ধীরে কিডনি কার্যক্ষমতা হারাতে থাকলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হল-

  • প্রসাবের সাথে রক্ত যাওয়া।

  • প্রসাব কম বা বেশি হওয়া।

  • প্রসবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া।

  • দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।

  • ক্ষুধামন্দা হওয়া।

  • ওজন কমে যাওয়া।

  • প্রসাবে সময় জ্বালাপোড়া হওয়া।

  • শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে ফুলে যাওয়া।

  • বমি বমি ভাব হওয়া।

  • শরীরের বিভিন্ন অংশের চুলকানি  হওয়া।

  • মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া।

  •  সব সময় শীত শীত লাগা।

  • শরীরে ক্লান্তি ভাব আসা।

  • মনোযোগ কমে যাওয়া।

  • অসুস্থ বোধ হওয়া।

  • উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া।

  • কোমরের দুই পাশে ব্যথা হয় এবং তলপেট পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।

  • দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

  • ঘুম থেকে উঠলে চোখ মুখ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়।


  • কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেলে শরীর ফ্যাকাসে হয় ও শরীরের রঙ পরিবর্তন হতে
    শুরু করে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়

বর্তমানে সারা বিশ্বে কিডনি রোগে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে ও প্রচুর পরিমাণে কিডনি রোগ বেড়ে চলেছে। কিন্তু আমাদের দেশে নানা কারণে বিশেষ করে দারিদ্রতার কারণে যথাযথ চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই এই রোগের চিকিৎসার চাইতে রোগ প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরী। কিডনি রোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। 

তাই যারা এই সমস্যায় আক্রান্ত তাদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করা এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা বাধ্যতামূলক।উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এছাড়া ও যে কাজগুলো করা জরুরী তা হল-

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম করা

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • নিয়মিত ব্যায়াম ও দৈহিক পরিশ্রম করা

  • নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন রোগের ঔষধ সেবন না করা

  • ধূমপান থেকে বিরত থাকা

  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা

  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা

  • অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমিয়ে ফেলা

  • রক্তে কোলেস্ট্রল সব সময় স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা

  • প্রতিদিন শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা

  • কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ সেবন করা

  • নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চেকআপ করানো

একিউট কিডনি রোগের ক্ষেত্রে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। প্রথমেই রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ক্রিয়েটিনিন ইলেকট্রোলাইটস এবং রক্তের ইউরিয়া সহ অন্যান্য পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। যেসব লোকের  ডায়রিয়া এবং অতিরিক্ত বমি হয়ে থাকে তাদের একিউট কিডনি রোগ বেশি হয়ে থাকে এবং এসব রোগীদের শরীরের পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ডাক্তারেরা তখন এসব রোগীদের পটাশিয়াম ও স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। 

রোগীরা যদি রক্তচাপ কম থাকে তাহলে সেটা স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করা  হয়ে থাকে।  আর  এগুলো  করলে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে সুস্থ হতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে না পারলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ আরো খারাপের দিকে অগ্রসর হয়ে কিডনি ফেইলিওর হয়ে থাকে এবং মৃত্যু ঝুঁকে অনেক বেড়ে যায়। আর কোনই কিডনি ডিজিজ হলে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার ও প্রয়োজন হতে পারে।

কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা

যাদের কিডনি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এসব রোগীর খাদ্য তালিকা সাজাতে হয় বিভিন্ন নিয়ম মাথায় রেখে। তবে এগুলোর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস মাথায় রেখে খাদ্য তালিকা সাজাতে হয়।

খাদ্য তালিকা থেকে যেসব খাবার বাদ দিতে হবে-

টক জাতীয় খাবার যেমন আম, মালটা, লেবু, আমলকি, কমলা ইত্যাদি খাবার বাদ দিতে হবে। সবজির ক্ষেত্রে যেগুলো বাদ দিতে হবে সেগুলো হলো কচু, মিষ্টি আলু, পিউরিন যুক্ত ডাল, সিমের বিচি, বরবটি, আলু। দুধু দুধ জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যার কারণে এসব খাবার খাওয়া যাবেনা। গরুর মাংস, খাসির মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও প্যাকেট জাতীয় খাবার, কোমল পানীয়, ডাবের পানি, ড্রাই ফুড, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার, ধূমপান সম্পন্নরূপে বাদ দিতে হবে।

যেসব খাবার অল্প পরিমাণে খেতে হবে

এছাড়া যে সব খাবারে বেশি পটাশিয়াম রয়েছে যেমন- শুকনো ফল, টমেটো, ড্রাই ফুডস, কলা, অল্প পরিমাণে খেতে হবে অথবা খাওয়া বাদ দিতে হবে। অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে যেসব খাওয়া তা হল- পেঁয়াজ, মূলা, গাজর, সবুজ শাক বা পাতা জাতীয় শাক।

যেসব ফল খাওয়া যাবে সেগুলো হলো

আপেল, আনারস, পেয়ারা, কাঁঠাল, নাশপাতি, বেদানা, বরই, আনারস ইত্যাদি। কিডনি রোগী যেসব খাবার খেতে পারবে সেগুলো হল - কাঁকরোল, মটরশুটি, বেগুন, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি ইত্যাদি। মুরগির মাংস, কবুতরের মাংস পনির, ডিম খাওয়া যাবে। ডায়াবেটিস না থাকলে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।

কিডনির সমস্যা বোঝার উপায়

কিডনি রোগ কে বলা হয় নীরব ঘাতক।  কারণ নিজের অজান্তে কিডনি রোগ ভেতরে সবকিছু শেষ করে ফেলে। কিডনি রোগ হলে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু ও হতে পারে। কিডনির সমস্যা হলে যেসব উপসর্গ বোঝা যাবে সেগুলো হল-

  • মুখের চারপাশ ও পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া

  • খাবারে অরুচি ও মুখে দুর্গন্ধ হওয়া

  • শ্বাসকষ্ট হওয়া

  • গরম আবহাওয়াতে শীত অনুভূত হওয়া

  • তোকে চুলকানি ও রেস হওয়া হ্রাস হওয়া

  • পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হওয়া

  • বারবার প্রসাব করা

  • সা মুত্রের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া

  • মুতে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া বা ফেনা যুক্ত প্রস্তাব হওয়া
কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে মানুষ নানা রকম শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। সচেতন থাকলে এবং সঠিকভাবে প্রতিরোধ করতে পারলে অনেক সময় স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা সম্ভব। কিডনি রোগ হলে সঠিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে, খাদ্য ভাসে পরিবর্তন আনলে এবং সঠিকভাবে জীবন যাপন করলে এই রোগে জটিলতা অনেক অংশে এড়ানো সম্ভব হবে।


কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি ভালো রাখতে হলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-

  • তরল খাবারের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে

  • নিয়মিত পরিশ্রম করতে হবে

  • বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে

  • নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাবার খেতে হবে

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

  • সকল প্রকার শারীরিক নিয়ম মেনে চলতে হবে

  • যে কোন রোগে ডাক্তারের পরামশ মোতাবেক ওষুধ সেবন করতে হবে

  • বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে কিডনি রোগ হয় তাই এ ব্যাপারে সচেতন
    হতে হবে

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা তা বুঝতে হলে আপনাকে কিডনির সক্ষমতা বুঝতে আপনার রক্তের সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও রক্তে ইউরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। আপনার কিডনি যদি বিকল হয় তাহলে এই দুইটি বেড়ে যাবে স্বাভাবিকের চাইতে। এছাড়াও আপনার কিডনি কতটুকু ভালো আছে তা বুঝতে আপনি সিসিআর (ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট) এবং জিএফআর অর্থাৎ(গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট) টেস্ট করতে হবে। জিএফ আর যদি ৯০ এর উপরে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

কিডনি রোগ কি ভাল হয়

আপনাদের অনেকের প্রশ্ন থাকে কিডনি রোগ ভালো হয় কিনা? তাহলে জানুন আকস্মিক যদি কোন কিডনি রোগ হয় তাহলে তার সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। তবে মনে রাখবেন সাময়িক ভালো হলেও পাঁচ ৫ থেকে ১0 শতাংশ রোগের ক্ষেত্রে আবার ১০ থেকে ১৫ বছর পর এই রোগ দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তী সময় কিডনি রোগ হলে আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদী ভুক্ত হতে পারে। তবে যদি কোন কারণে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ হয় তাহলে আর কিডনি রোগ ভালো হয় না। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

কিডনি রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা

কিডনি রোগ নির্ণয়ে মাত্র দুটি পরীক্ষা করা হয়

  • প্রসাবের এলবুমিন আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা

  • রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা

যদি কিডনি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে প্রসাবে এলবুমিন যেতে পারে। তাই প্রসবের সাথে অ্যালবুমিন যাওয়া হলো কিডনির অশনি সংকেত। আর রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা হল কিডনির মাপকাঠি পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনি ১০০ ভাগের মধ্যে কত ভাগ কাজ করছে। আমাদের দুইটি কিডনিতে ছাকনি থাকে প্রায় ২৪ লাখ।

আর সেই সাঁকুনিগুলো আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। যখন এই ছাঁকনিগুলোর প্রায় ৫০ ভাগ শেষ হয়ে যায় তখন রক্তের ক্রিয়েটিনিন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি।

শেষ কথা

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তাই এই চিকিৎসা করানো আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় অসম্ভব। তাই কিডনি রোগের চিকিৎসা করানোর চেয়ে আমাদের উচিত কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। তাই যদি নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে কিডনি রোগ এড়ানোর পাশাপাশি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।

সুপ্রিয় সুধী আমি কিডনি রোগ সম্পর্কে যাবতীয় কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই লেখা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর যদি উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই একটি লাইক এবং কমেন্টস দিয়ে আমাকে জানাবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url