নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

 

একজন মানুষকে সৎ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। কারণ মানুষের মধ্যে যদি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকে তাহলে সে অন্যায়, অবিচার, অনুচিত কোন কাজই পরিহার করতে পারে না। তাই  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।

Image

আমি সকল শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা  লিখলে তোমরা মানসম্মত নাম্বার পাবে। নিচে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা বিস্তারিত লিখা হলো-

পোস্ট সূচীপত্রঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা 

ভূমিকা

সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। তাই মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত। এই বৈচিত্রময় পৃথিবীতে সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। মানুষ মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে তার বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ মানব জীবনকে করে সৌন্দর্যমন্ডিত। তাই নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হলো মনুষত্ব অর্জনের স্বাধীনতা।

মানুষের জীবনে নৈতিকতার স্বরূপ প্রকাশিত হয় সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদীতা ইত্যাদি গুণের সমাবেশের মাধ্যমে। আর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় গুণ। সেই আদিম যুগ থেকে মানুষ এখন পর্যন্ত তৈরি করেছে বিভিন্ন জাতি, সমাজ ও দেশ। এই বিবর্তনের মাধ্যমে সময় যত এগিয়ে চলেছে মানুষের বন্ধন ততই দৃঢ় হয়েছে। 

আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাবো মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য জীব থেকে আলাদা হয়ে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। প্রচলিত প্রবাদ বাক্য অনুসরণ করলে এ প্রসঙ্গে বলা যায়, বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের ফলে আত্মার অন্তঃস্থলে মান এবং হুঁশের জাগরণী মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে আলাদা করেছে।

নৈতিকতা কি

মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম ও সামাজিক ক্রিয়া-কলাপ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যেসব নিয়ম-নীতি, আদর্শ, আইনগত ও ধর্মীয়, সামাজিক কোন শাসন বা নিয়ম নীতি মেনে চলে তাকে সার্বিকভাবে বলা হয় নৈতিকতা। নৈতিকতার অনুশাসনের প্রভাবেই মানুষ আইন শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং নৈতিকতা বিরোধী কোনো কাজ সে করে না এবং আইনের শাসনকেও  শ্রদ্ধা করে। 

ন্যায় পরায়নতা, সত্যবাদিতা, প্রতিশ্রুতি রক্ষার মনোভাব, সাধুতা ইত্যাদি মহৎ গুণের সমন্বয়কে আমরা নৈতিকতা বলতে পারি। আর এসব নৈতিক গুণের শিক্ষা লাভ করাই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা।

মূল্যবোধ কি

যে নিয়ম-নীতি বা মনদণ্ড মানুষের আচরণকে পরিচালনা করে তাকে বলা হয় মূল্যবোধ। অনেক সময় নৈতিকতাকে মূল্যবোধের সাথে সামর্থক শব্দ বলে মনে করা হয় কিন্তু নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ সম্পূর্ণ দুইটা ভিন্ন অর্থবোধক বাক্য। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের স্বরূপ অনুধাবন করার আগে আমাদের জানতে হবে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ কি  বা কাকে বলা হয়। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ  দুটি একই ধরনের বা কাছাকাছি অর্থ বোঝালেও শব্দ দুটার মাঝে পার্থক্য বিদ্যমান।

আরো পড়ুনঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা 

তবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলে একটির সাথে অপরটির সম্পর্ক অতপ্রোত ভাবে জড়িত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শব্দ দুটি সঠিক ব্যাখ্যা দর্শন শাস্ত্রে উল্লেখ করা আছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব আমাদের পরিবার তথা সমাজ তথা রাষ্ট্র আজ অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নীতি - আদর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থার অভিব্যক্তি হল নৈতিক মূল্যবোধ।

মানুষের জীবন সকল প্রকার অবিচার, অনাচার, অন্যায় ও স্বার্থপরতার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকবে। আর এমন হলেই আমরা ধরে নেব সেখানে নৈতিক মূল্যবোধ বিদ্যমান আছে। সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার এবং দুর্নীতিমুক্ত জীবন ব্যবস্থায় হল মূল্যবোধ। নৈতিক মূল্যবোধের ফল হচ্ছে মানবিক গুনে গুণান্বিত হওয়া।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ

মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সাথে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের রয়েছে অবিচ্ছেদ সম্পর্ক। আমাদের সভ্য সমাজে বসবাস করতে হলে কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয় কারণ মানুষ প্রাণী জগতের সদস্য হলেও সে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। তাই মানুষের সাধনা হলো মনুষত্ব অর্জনের সাধনা। যা মানুষের গুণাবলী অর্জনই হলো মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা যা মানুষের গুণাবলী ন্য়ায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ,অনুচিত- উচিত বিচার করার শক্তি প্রদান করে থাকে।

নৈতিকতা আমাদের অন্যায় ও অনুচিত মন্দ কাজকে পরিহার করে নৈতিক আদর্শের অনুগত করে তোলে। বর্তমান প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই নৈতিকতাও মূল্যবোধ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে আর ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে উঠছে অনৈতিক ও স্বার্থপর। নৈতিকতা সমাজে অশান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। আধ্যাত্মিকতার মত গুনাবলীকে মানুষ হারিয়ে ফেলেছে নৈতিকতার অভাবের কারণ। মানুষের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন,লোভ, কামনা-বাসনা ও সর্বোপরি বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষকে আষ্টে-পিষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।

আর এরই ফলশ্রুতিতে সমাজ, পরিবার, দেশ সর্বক্ষেত্রে অশান্তি লক্ষ্য করা যায়। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষ যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে মানুষ জীবন ধারণের জন্য চাকরি মুখী শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বিকশিত হওয়া। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হলে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা গ্রহণ। তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে উজ্জীবিত।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মধ্যে সম্পর্ক

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকলে মানুষের জীবন পরিচালিত হয় বিপথে এবং জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা জানি পরিবার তথা সমাজ তথা রাষ্ট্র একই সূত্রে গাঁথা তাই পরিবারের অবক্ষয় হলে তার প্রভাব সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের উপরও আবর্তিত হয়। এর জন্য সবার আগে আমাদের জানতে হবে নৈতিকতা কি বা কাকে বলে। এর উত্তরে আমরা বলতে নীতি সম্পর্কিত বোধ বা অনুভূতি হল নৈতিকতা।

এটি মানব গুণাবলী সহ অন্যান্য গুণাবলী কে বোঝায়। মানুষের আচরণ বা চরিত্রকে প্রকাশ করে মানুষের নৈতিক গুণাবলী বা চারিত্রিক আদর্শ হলো নৈতিকতা। নৈতিকতার আরেকটি অর্থ হলো আত্মসুদ্ধি বোধ। নৈতিকতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদীতা ও উত্তম আচরণ। এই পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি লোক বসবাস করে এই ৭০০ কোটি লোকের বিশ্বাস ও নীতি ভিন্ন ভিন্ন।

আরো পড়ুনঃ  শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের দশটি ১০টি  ব্যবহার  বিস্তারিত 

যেমন একেক জন মানুষ একেক ধর্মের অনুসারী বা বিশ্বাসী। আর সে ক্ষেত্রে তারা নিজ নিজ ধর্মের আদর্শ, নীতি ও বিশ্বাসকে মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন মুসলিম  অপর মুসলিমের সাথে দেখা হলে তাকে সম্মান জানানোর জন্য নিজস্ব রীতি নীতি অনুযায়ী তাকে সালাম দেয়। আবার অন্যদিকে তেমনি অন্য ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করে তাদের ধর্মীয় রীতি নীতি অনুযায়ী।

আর এগুলোকে আমরা মূল্যবোধ বলে থাকি। একজন সচেতন মানুষ তার দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করে মূল্যবোধ তথা বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে। কোন সামাজিক চাপে পড়ে বা ব্যক্তিগত অথবা সমষ্টিগত স্বার্থের কারণে সে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারবে না। তবে তিনি সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে একজন মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই বলা হয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ মানুষকে তার মানবতা বোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করে থাকে। একই সমাজে একসঙ্গে বসবাস করার ফলে যে অভিজ্ঞতা আবর্তিত হয় তা থেকে মানুষের মূল্যবোধ গড়ে ওঠে আর একটি পরিবার তথা সমাজ তথা রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি হলো নৈতিকতা। আর এই নৈতিকতার অভাবে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানদণ্ডকে সমালোচিত করে তোলে।

মানুষের আচরণগত রীতিনীতি, মানদণ্ড ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। আর সেই রীতি-নীতি ও বিশ্বাসই হলো নৈতিকতা। নৈতিকতা সম্পর্কে মানুষের যে শিক্ষা সে শিক্ষায় মানুষকে মূল্যবোধ সম্পর্কে সজাগ করে তোলে। আদর্শ সৎ মহৎ ও সুন্দর জীবন যাপন এর জন্য এবং নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের জন্য নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের গুণাবলী

স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালবাসা, প্রেম, প্রীতি,- দান দক্ষিণা, সহানুভূতি সবকিছুই হলো মানব হৃদয়ের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে এসব গুণের বিকাশ ঘটে থাকে। মানুষের জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রধান সোপান হল নৈতিকতা ও মূল্যবোধ আর এই সোপান প্রশস্ত হয় মানুষের পারিবারিক গুণাবলীর মাধ্যমে। যেখানে থাকে পারিবারিক সু শিক্ষা, সৎসঙ্গ, শিক্ষক ও গুরুজনের উপদেশ। আর এগুলোর মাধ্যমে একজন মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের গুণাবলী বিকশিত হয়।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সামাজিক গুরুত্ব

মানব জীবনে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের এই স্বার্থপর পৃথিবীতে মানুষ সত্যকে বাদ দিয়ে মিথ্যা কে আঁকড়ে ধরেছে জীবনের অবলম্বনে হিসেবে। বর্তমান সমাজে সততা, ন্যায়পরতা ও সুন্দরের বড়ই অভাব। মানুষ অভাব- অনটন, দারিদ্রতা, মিথ্যাচারিতা ও অসোভনীয় আচরণে হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। অসত্যের মধ্যে থেকে মানুষ জীবনের সুখ শান্তি খুঁজে ফিরছে।

সমাজ জীবনে মানুষ খুঁজে খুঁজে ও শান্তির দেখা পাচ্ছে না। শান্তিহীন এই সমাজে মানব জীবন যেন হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই সমাজ থেকে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, হানাহানি সবকিছু দূর করে ফিরিয়ে আনতে হবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। আর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে পারলেই সমাজ হয়ে উঠবে সুন্দর ও সাবলীল।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ অর্জনে করণীয়

পরিবার হলো মানুষের প্রাথমিক শিক্ষার স্থান। তাই নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ এর প্রাথমিক সূচনা হয় একটি পরিবার থেকেই। প্রতিটি পরিবারের উচিত তার পরিবারের প্রত্যেকটি শিশুকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং মূল্যবোধ জাগ্রত করে তোলা। প্রতিটি পরিবারের উচিত তাদের শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা কারণ ধর্ম নৈতিকতা শেখায় এবং মূল্যবোধ জাগ্রত করে।বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গণমাধ্যম থেকে আমরা অনেক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি।

আরো পড়ুনঃ  বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে  জেনে নিন

তাই গণমাধ্যমগুলোর উচিত নৈতিক শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা যাতে করে প্রত্যেকটা শিশুসহ সকলে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। একজন মানুষ নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তার ভিতরে মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। এছাড়াও মানুষের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষে মানুষের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্বেগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সর্বোপরিব একজন মানুষকে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধে জাগ্রত হতে হলে তার পরিবারের ভূমিকায় সর্বশ্রেষ্ঠ।

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট

বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে দুর্নীতি প্রবেশ করার কারণে। জীবনের সর্বস্তরে এখন দুর্নীতির রাজত্ব করে চলেছে। বর্তমান সমাজের মানুষ এখন অন্যায়কে অন্যায় বলে বিবেচনা করতে ভয় পায়। অন্যায় যেন সমাজ জীবনে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আজকে দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ সমাজে সম্পদের পাহাড় গড়েছে আর ন্যায় পরায়ণ মানুষ অনাহারে ভুগছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হয় সমাজে অন্যায়ের প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমান যুগে দুর্নীতি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সারের মত।

মানুষকে অন্যায় ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করতে হলে তাদেরকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধে জাগ্রত করে তুলতে হবে। একমাত্র সচেতনতাই পারে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে। যদিও বর্তমান সরকার দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে এরপরেও দুর্নীতি কোথাও থেমে নেই। তাই মানুষকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধে জাগ্রত করতে হবে।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মধ্যে পার্থক্য

মানব জীবনে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মধ্যে পার্থক্য পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো-

নৈতিকতা নীতি নির্ধারণ করে। আমাদের জীবনের পরিকল্পনাগুলি কতটা সঠিক বা ভুল সেই মানগুলির বিপরীতে যা জীবনের জন্য আমাদের অগ্রাধিকার গুলি সংজ্ঞায়িত করে থাকে। 

মূল্যবোধ আমাদের মূল্যবোধ গুলি কে জানান দেয় যে আমরা জীবনে কি করতে বা অর্জন করতে চায়। যেখানে নৈতিকতা আমাদের প্রদত্ত পরিস্থিতিতে নৈতিকভাবে সঠিক বা ভুল কি তা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

নৈতিকতা আমাদের আচরণের নির্দেশনা গুলিকে বোঝায়। মনকে নীতি ও আদর্শ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা তাদেরকে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির বিচার করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

মূল্যবোধ কাজের মান গুলিকে দৃঢ় ভাবে মনের সংবেদর্শীল অবস্থাকে প্রভাবিত করে তাই এটি একটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে নীতি শাস্ত্র হলো এমন একটি বিষয় যা বিশেষ ক্রিয়া অনুসরণ করতে বাধ্য করে।

নৈতিকতা যেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেখানে মান বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য পৃথক অর্থাৎ যা একজন ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা অন্য ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে।

নৈতিকতা হলো নৈতিক নীতি শাস্ত্রের একটি ব্যবস্থা যা আমাদের চিন্তার উদ্দীপনা এবং মান গুলির বিপরীতে কাজ করে থাকে।

ইসলামে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হল ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা। সব আসমানী কিতাবেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। নৈতিকতা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তোলে যার নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নেই সেই ব্যক্তি কখনোই ধার্মিক হতে পারে না। কারণ ধর্মের মূল শিক্ষা হলো সত্যতা, পবিত্রতা এবং সততা।

মিথ্যাকে ইসলামের সব পাপের জননী বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যারা প্রতারক তারা আমার উম্মত নয়"। (মুসলিম, ১০১) কোরআনে পরনিন্দা বা গীবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া শাস্তির যোগ্য অপরাধ। ধারণা করা হতে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে।

বলা হয়েছে-" হে বিশ্বাসীগণ তোমরা ধারণা পোষণ হতে বিরত থাকো, অনেক ধারণাই পাপ হয়। তোমরা পরচর্চা করো না, একে অন্যের গীবত করো না, তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে; অবশ্যই তোমরা তা অপছন্দ করবে। আল্লাহকে ভয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী দয়ালু"। (সূরা হুজরাত, আয়াতঃ ১২)।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, এই মক্কা নগরী যেমন সম্মানিত, এই আরাফাতের প্রান্তর যেমন মর্যাদাবান, এই হজের দিবস যেমন ফজিলতপূর্ণ, এই কাবা ঘর যেমন পবিত্র ,প্রত্যেক মানুষের জান মাল ও ইজ্জত অনুরুপ সম্মানীয় ও পবিত্র এবং তা অপরের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ"। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আংশিক পরিবর্তন করা, সত্য গোপন করা এবং সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণ অথবা বিষয় বা বিবরণ অসম্পূর্ণ রাখা ইসলামে হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা জেনে শুনে সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলোনা। আর সত্যকে গোপন করো না"। (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ৪২)। কারণ এই মিথ্যা বলার কারনে তোমাদের পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।

এর অর্থ হলো আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত যে সব খবর বা তথ্য আসে তার সত্যতা যাচাই না করে এর সূত্রের বা উৎসের নির্ভরযোগ্যতা না জেনে তা কখনো প্রচার করা ঠিক নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু বলেছেন, "যা শুনে তাই বলতে থাকা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট"। মুসলিম কোন ব্যক্তির দোষ গোপন করার ব্যাপারে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, "যে ব্যক্তি কারো দোষ গোপন করলো কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন"। (তাবরানি)।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হল ইসলামের শিক্ষা। হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আমানতদারি নেই, যার কাছে নিরাপত্তা নেই, সেই ঈমানদার নয়। যার ওয়াদা ঠিক নেই তার কোন ধর্ম নেই"।( মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ১২৩৪, বায়হাকী৬.৩৮৮, ইবনে হিব্বান ৪১ঃ ৪৭)।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে মনীষীদের উক্তি

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে বিভিন্ন বিখ্যাত মনীষী বিভিন্নভাবে উক্তি করেছেন নিচে এগুলো তুলে ধরা হলো-

অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনদিন একসাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশ সেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।

💨 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সম্মান কেবল শ্রেষ্ঠ পুরুষদের  নৈতিকতার জন্য।

💨 এইচ এল মেন কেন

নৈতিকতার নিয়ম আমাদের কারণের উপসংহার নয়।

💨ডেভিড হিউম

যার নৈতিকতা নেই তার চরিত্র বলতে কিছু নেই।

💨কবির চৌধুরী 

পৃথিবী যে বইগুলিকে অনৈতিক বলে সেগুলো এমন বই যা পৃথিবীকে তার নিজের লজ্জা দেখায়।

💨 অস্কার ওয়াইল্ড

প্রতিটি দিন তার নিজস্ব উপহার প্রদান করে।

💨 মার্কাস এরেলিয়াস

কেবলমাত্র আমরা যে ধারনাগুলো বাস করি তার কোন মূল্য থাকে

💨 হারমান হেসে

ভালো মানুষটি সেই ব্যক্তি জিনি যতই নৈতিকভাবে অযোগ্য হয়ে থাকুন না কেন উন্নত হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন। 

💨 জন ডিউই

স্বাধিকার সংগ্রাম থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। আজ যদি সেই জাতীয়তাবাদী চেতনা বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমা সাংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ করি তা আমাদের চরম দীনতা ও নৈতিক পরাজয় আমাদের বিশ্বায়নের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বাংলায়ন।

💨 সৈয়দ আবুল মকসুদ

আরো পড়ুনঃ  লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

নৈতিকতার প্রকৃত ভিত্তি হলো উপযোগিতা অর্থাৎ সাধারণ কল্যাণ ও সুখের উন্নয়নে আমাদের কর্মের অভিযোজন। আমাদের জীবনকে শাসন করার প্রচেষ্টা যাতে আমরা মানবজাতির সেবা এবং আশীর্বাদ করতে পারি।

💨 অ্যানি বেসান্ট

একটি সমাজের নৈতিকতার পরীক্ষাটি এটি তার বাচ্চাদের সাথে যা করে

💨 ডায়েরিচ বনহফার

যে ব্যক্তি নৈতিকতা বোধ হারিয়ে ফেলেছে সে যুদ্ধের মতো একজনের মত যার পা দুটোই কেটে ফেলা হয়েছে তার দাঁড়াবার মত কিছুই নেই।

💨 হেনরি ওয়ার্ড বিচার

এক উষ্ণ চিন্তা আভা আমার কাছে অর্থের চেয়েও বেশি মূল্যবান

💨 থমাস জেফারসন

সর্বদা স্বীকৃতি দেন যে মানব ব্যক্তি গুলি শেষ এবং এগুলি আপনার শেষের উপায় হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

 💨 ইমানুয়েল কান্ত

চিত্রাঙ্গন যেখানে দুর্বল যথা সর্বাধিক নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ধারণা গুলির বহিঃপ্রকাশ এখানে সংগীত সংরক্ষণ শক্তিশালী।

💨 হ্যারিট বিচার স্টো

নৈতিকতার সম্ভবত অনাগত পুরুষদের আবিষ্কার ছিল এটা আসলে কারো উপকারে আসে।

💨 মনু জোসেফ

অনৈতিক কাজগুলো কেবল অনৈতিকে হয়ে থেমে থাকে না কারণ সেগুলো আইন মানে না।

💨 ই এ বুচিয়ানেরি

প্রকৃতির নিয়মে নৈতিকতা নেই, গতির সমীকরণে ন্যায্যতার কোন নিয়ম নেই। মহাবিশ্ব বা মন্দ না ভালো এটি কেবল পরোয়া করে না নক্ষত্ররা, পরোয়া করে না, না সূর্য, না আকাশ কিন্তু তাদের করতে হবে না আমরা যত্ন নিই পৃথিবী আলো আসে এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

💨 এলিয়েজার ইউডকো ভস্কি

নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের চরিত্র বলতে কিছুই থাকে না।

💨 কবির চৌধুরী

দশ ১০ টি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ

  • সামাজিক রীতিনীতি ব্যক্তিকে মূল্যবোধে সঞ্জীবিত করে।
  • সামাজিক রীতিনীতি হতে মূল্যবোধের একটি জটিল যেখানে আমরা বসবাস করি।
  • সামাজিক রীতিনীতি মানুষের মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
  • সামাজিক রীতিনীতি মানুষকে সমাজের সাথে পরিচয় করায় মূল্যবোধের কারণে মানুষ তা গ্রহণ করে।
  • একেক সমাজে একেক রকম রীতিনীতি থাকে কিন্তু মূল্যবোধের কারণে মানুষ তা মেনে চলে।
  • কারো সাথে দেখা হলে কুশল বিনিময় করা এবং বড়দের শ্রদ্ধা করা।
  • কোন জিনিস বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং সেগুলোকে ডান হাতে দেওয়া।
  • কারো সাথে ঝগড়া মারামারি না করা শান্ত ও ভদ্রভাবে থাকা।
  • সামাজিক রীতিনীতি সমাজের মানুষের উপকার করে মূল্যবোধ তৈরি হতে সাহায্য করে।
  • দৈনন্দিন জীবন যাপনে শৃঙ্খলা বোধ জাগ্রত করে আর মানুষ এই শৃঙ্খলা মেনে চলে।
  • সামাজিক রীতিনীতি মানুষের মধ্যে ভিন্নমত তৈরি করলেও মূল্যবোধের কারণে মানুষ তা মেনে নেয়।
  • মানুষ নিজের রীতিনীতি বদলে ফেলতে পারে এবং অন্যদের নিয়ম নীতি কে সম্মান করে।

উপসংহার

পরিশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, নৈতিকতা হলো নিজে দায়মুক্ত থাকা, আর মূল্যবোধ হলো মানুষ আমার কাছে যা আশা করে তার চেয়েও ভালো কিছু করা। সততা হলো নিজের কাছে সৎ থাকা। পৃথিবীর সকল মহামানব তাদের নিজের স্থান করে নিয়েছেন আপন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কারণে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হলে সমাজের সকল প্রকারের অবসান ঘটাতে হবে।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধে জাগ্রত হয়ে শত্রুর সঙ্গেও মিত্রতা ভাব গড়ে তুলতে হবে এর পেছনের মূল চালিকা শক্তি হলো বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসা। এ সবই হল ধর্মের মূল আদর্শ। একজন মুসলিম বা বিশ্বাসী মানুষ মানে একজন সৎ, ঈমানদার মানুষ। একজন উন্নত মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ প্রকৃতপক্ষে ধার্মিক মানুষ।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণ একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য সততা ও পবিত্রতার চর্চা শুরু করতে হবে। আমি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা নিয়ে বিস্তারিত রেখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমাদের লিখা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url