ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
ডেঙ্গু হল এক প্রকার ভাইরাস জনিত মারাত্মক রোগ। তাই আমাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে। আমরা যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানি তাহলে এই মারাত্মক রোগের হাত থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারবো না।ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে তাই এই সময়ে সবাইকে সাবধানে থাকা উচিত।ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার
- ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি
- ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সময়
- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
- ডেঙ্গু নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
- ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
- ডেঙ্গু রোগের কারণ ও প্রতিকার
- ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
- ডেঙ্গু রোগের ঔষধ
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
- ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হতে কত সময় লাগে
- ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
- শেষ কথা
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর হলো এক প্রকার ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। তবে স্ত্রী জাতীয় এ ডিস মশার কামড়ে সাধারণত ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর হয়। তাই এই ডেঙ্গু জ্বর কে আবার অনেক সময় ডেঙ্গি নামে ও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই ডেঙ্গু ভাইরাসটি সংক্রামিত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু সংক্রামিত মশা অন্য যে কোন ব্যক্তিকে কামড় দিলে ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু সংক্রামিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষের ডেঙ্গু জ্বর বা রোগ হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সময়
ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু হলো মশা বাহিত একটি ভাইরাল সংক্রমণ। ডেঙ্গু সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত তবে এপ্রিল মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি থাকে। কখনো তা আবার আগস্ট সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কারণ ডেঙ্গু রোগ সাধারণত বর্ষা মৌসুমী হয়ে থাকে। তবে বর্ষার প্রকোপ কমতে থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে থাকে। তবে ভারতবর্ষে ডেঙ্গু প্রাক গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে বেশি দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ ব্যায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশে ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গুর পাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার শহরগুলোতে এবং গ্রামগুলোতে ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি দেখা যায়। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর হল এডিস মশার কামড়ে সংঘটিত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। অনেক সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তাদের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। অল্প কিছু ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে ডেঙ্গু জ্বরে যেসব উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে তা হল-
- উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর
- জ্বরের পরিমাণ ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কখনো কখনো আবার এর চেয়েও বেশিও তাপমাত্রা থাকতে পারে।
- জ্বর একটানা থাকতে পারে
- ঘাম দিয়ে জ্বর ২-৩ ঘণ্টার জন্য ছেড়েও যেতে পারে
- শরীর প্রচন্ড ব্যথা হয়
- প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে
- চোখের পেছনে ব্যথা হয়
- পেশীও অস্থি সন্ধিতে ব্যথা হয়
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়
- বমি বমি ভাব বা কখনো বমি হয়
- ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠে তবে ফুসকুড়ি জ্বর হওয়ার দুই ২ থেকে পাঁচ ৫ দিন পর দেখা দেয়
- হালকা রক্তপাত যেমন - নাক ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে
- ক্ষুধা কমে যায়
- শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে
- অনেক সময় শরীর ঠান্ডা মনে হয়
- তীব্র পেট ব্যথা করে
- পেট ফুলে যায়
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়
- দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন
- ঘুমঘুম ভাব
- চেতনা হারানো বা অজ্ঞান হওয়া
- পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া
- রক্তচাপ কমে যাওয়া
- রোগীর অস্থির ভাব
উপরোক্ত সমস্যা গুলো দেখা দিলে আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা উচিত। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমনের তিন ৩ থেকে পাঁচ ৫ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং তা ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় লক্ষণ গুলো এতটাই হালকা হয় যে অন্য কোন ভাইরাসের সংরক্ষণ বলে মনে হতে পারে। অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে আর মারাত্মক আকার ধারণ করলে যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তা হল -
- ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
- রক্তনালীর ক্ষতি
- নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে অধিক রক্তপাত
- লিভার এবং সংবহনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস
- অনেক সময় মল দ্বার দিয়ে ও রক্ত যায়
রোগীর এই অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস) বলা হয়ে থাকে। আর যদি এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের দ্বিতীয় বারের মতো ডেঙ্গু জ্বর হয় তাদের হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ডেঙ্গু নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সাল থেকে ডেঙ্গু চিকিৎসার খরচ কমানোর প্রয়াসে সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার পূর্বে এবং চিকিৎসা চলাকালীন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য ফি হার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আপনি যদি ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই ফি নির্ধারণ আছে কিনা দেখে নিবেন।
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকেরা সাধারণত সিবিসি (CBC) পরীক্ষা দিয়ে থাকেন এবং এর সাথে ইএসআর (ESR) ও পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তবে সিবিসি (CBC) হলো ডেঙ্গু জ্বরের আসল পরীক্ষা। এর মাধ্যমে চিকিৎসকগন রক্তের প্লাটিলেট নির্ণয় করে থাকেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সাধারণত প্লাটিলের থাকে দেড় লক্ষ ১৫০০০০ থেকে ৪৫০০০০ পর্যন্ত। যদি পরীক্ষায় প্লাটিলের কম থাকে তাহলে বুঝতে হবে অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানুন
তবে এখন চিকিৎসকেরা প্লাটিলের পাশাপাশি এই সিটি HCT এর সংখ্যার গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। একজন সুস্থ মানুষের এইচ সিটি HCT এর পরিমাণ হল ৩৮.৯০ থেকে ৫0.৯0 যদি এইচ সিটি HCT এর পরিমাণ ৩৮.৯০ নিচে নেমে যায় তাহলে অবশ্যই তাকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে হবে। কারণ এই সময় রোগী ডেঞ্জার জোনে থাকবে।
ডেঙ্গু রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর স্ত্রী এডিস জাতীয় মশার কামড়ে হয়ে থাকে। এই ডেঙ্গু ভাইরাসটি সংক্রামিত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু সংক্রামিত মশা অন্য যে কোন ব্যক্তিকে কামড় দিলে ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু সংক্রামিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে।
- ডেঙ্গু হলো মশা বাহিত রোগ। তাই মশার কামড় থেকে রোগীকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে হবে।
- শরীর ঢাকা জামা কাপড় পড়তে হবে। যেমন- লম্বা হাতার শার্ট, লম্বা প্যান্ট এবং মোজা ব্যবহার করতে হবে।
- ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা বা এডিস মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশি কামড় দেয় তাই এই সময়গুলোতে বেশি সচেতন থাকতে হবে।
- ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সারাদিন - রাত মশারির মধ্যে রাখতে হবে যেন মশা কামড়াতে না পারে।
- মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- মস্কেটো অ্যান্টিস্যাপটিক লোশন ব্যবহার করতে হবে।
- বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- বাড়ির চারপাশে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হবে।
- একটু পর পর প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে।
- রোগীর শরীর বারবার নরম সুতি কাপড় ভিজিয়ে মুছে দিতে হবে।
- প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ সেবন করাতে হবে।
- জ্বর নেমে যাওয়ার পর যদি শরীর খারাপ লাগে তাহলে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে।
- ডেঙ্গু রোগীকে কখনোই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া অন্য কোন ঔষধ খাওয়ানো যাবে না।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
ডেঙ্গু সংক্রমনের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। তবে চিকিৎসকগণ ডেঙ্গু জ্বর উপশমের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে বলেন। ডেঙ্গু জ্বর হলে জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি থাকে তাই এক্ষেত্রে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য নাপা NAPA 500 mg এমজি ৬ ঘন্টা পর পর খাওয়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর যদি এই ওষুধেও কাজ না হয় তাহলে SUPP: NAPA 500mg দিনে চারবার মলদ্বারে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার - এর ডাক্তারেরগণের তালিকা দেখুন
আবার অনেক চিকিৎসকেরা ACE Power 1000 mg দিনে তিন ৩ বার বা ৬ ঘন্টা পর পর খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেন এর মত ননস্টোরেরডাল এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়।কারণ ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে আর এইসব জাতীয় ওষুধ রক্তপাতের প্রবণতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
প্লাটিলেট হলো রক্ত রস আর ডেঙ্গু হলে এই রক্ত রস কমে যায়। তাই স্মৃতিসকেরা ডেঙ্গু হলে মুখে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি শরীরেও স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সবচেয়ে বেশি উপযোগী হল তরল জাতীয় খাবার। তবে যেকোন ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ডেঙ্গু রোগের ঔষধ
ডেঙ্গু রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। ডাক্তারেরা ডেঙ্গু রোগীর জন্য একমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই ডেঙ্গু হলে যদি জ্বরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে তাহলে NAPA 500 mg+2 দুইটা করে দিনে ছয় ৬ ঘন্টা পর পর খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন । আবার অনেক চিকিৎসকেরা TAB: ACE Power 1000 mg দিনে তিন ৩ বার অথবা জ্বরের মাত্রা অনেক বেশি থাকলে ৬ ঘন্টা পর পর খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এছাড়া ও জ্বরের মাত্রা যদি অধিক পরিমাণে থাকে এবং জ্বর যদি না ছাড়ে তাহলে চিকিৎসকেরা SUPP: Napa 500 mg দিনে চার ৪ বার মলদ্বারে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর সাথে ডিএনএস 5% DNS স্যালাইন প্রতি মিনিটে বিশ ২০ ফোঁটা করে শিরায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। সেই সাথে খাবার সেলাইন ORS (Oral Rehydration Salts) Oral Saline খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেই সাথে তরল জাতীয় খাবার এবং পানি বেশি করে খাবার নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
তবে মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। যেকোনো রোগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে ওষুধ খাবেন। নইলে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই এই সময় বেশি পরিমাণে খাদ্য তালিকার প্রতি নজর দিতে হয়। ডেঙ্গু হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে তা হলো
- পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার
- দিনে আট থেকে দশ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পানির সাথে ওর স্যালাইন মিশিয়ে খেতে পারেন
- ডাবের পানি
- সহজ পাচ্য কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার যেমন অটমিল
- আইরন জাতীয় খাবার
- জিঙ্ক (সামুদ্রিক মাছ মটরশুঁটি এবং বাদাম)
- ভিটামিন সি জাতীয় ফল বা খাবার
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্লাটিলেট কমে যায় তাই প্লাটিলেট বাড়ানো খাবার খেতে হবে যেমন- সাইট্রাস ফল, দই, সূর্যমুখী বীজ, কাঠবাদাম, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালং শাক, হলুদ, আদা, রসুন, লেবুর শরবত, ফলের জুস, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ফোলেট এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহীর -পপুলার- ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল ডাক্তারগণের তালিকা
ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব খাবার খাওয়া একেবারে উচিত নয় সেগুলো হল-
- আমিষ জাতীয় খাবার
- তৈলাক্ত খাবার
- ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। কারণ এই সময় মানুষের শরীরে রক্ত রস বা প্লাটিলেটের পরিমাণ এত বেশি কমে যায় যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। তাই এই সময় খাবারের প্রতি একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। যতদূর সম্ভব তরল জাতীয় খাবার এবং সেই সাথে ফল খাওয়ানো উচিত। মনে রাখবেন রোগীর সুস্থতা নির্ভর করবে খাওয়ার যত্নের উপর।
ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হতে কত সময় লাগে
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস বাহিত সাংঘাতিক রোগ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে একজন মানুষ এত বেশি দুর্বল হয়ে যায় যে তার সুস্থ হতে সাধারণ অসুখের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগে। তবে একজন রোগীর সুস্থতা নির্ভর করে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। তাই এই সময় রোগীর বেশি যত্ন নেওয়া উচিত এবং খাবারের প্রতি একটু বেশি দৃষ্টি রাখা উচিত।
মনে রাখবেন, একজন রোগীর সব ধরনের যত্নের উপর নির্ভর করবে সে কতদিনে সুস্থ হবে। তবে ডেঙ্গুর জীবাণু শরীর থেকে দ্রুত চলে গেলেও দুর্বলতা থাকে দীর্ঘদিন। তাই যদি কোন ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাকে বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে এবং অধিক পরিমাণে যত্ন নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা
ডেঙ্গু হলো একটি মশা বাহিত ভাইরাস রোগ তাই এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধমূলক যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তা হল-
- জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা
- ডেঙ্গু মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশি কামড় দেয় তাই এই সময় সচেতন থাকতে হবে
- অতিরিক্ত ঘনবসতি এলাকায় না থাকার চেষ্টা করতে হবে
- দিনে রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে
- মশা তাড়ানো ঔষধ ব্যবহার করতে হবে
- ফুলহাতা জামা ব্যবহার করতে হবে
- মোজা ব্যবহার করতে হবে
- ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
- ঘরের জানালায় নেট লাগাতে হবে।
- শরীরের অনাবৃত স্থানে মসকুইটো অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে
- বাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে
- ভোলা ও পাতলা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে
- মশার কয়েল ব্যবহার করতে হবে
- বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে তা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। ডেঙ্গু জ্বরকে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যথা-
এ (A)
বি (B) ও
সি (C) ক্যাটাগরি
এ (A) ক্যাটাগরির রোগীদের শরীরে শুধু জ্বর থাকে। তাই তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা করানো যেতে পারে।
বি (B) ক্যাটাগরীর রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি তাদের পেটে ব্যথা থাকে, অন্তঃসত্তা হয়, লিভারের সমস্যা থাকে, জন্মগত সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি সমস্যা থাকে তাহলে তাদের বাসায় না রেখে হাসপাতালে ভর্তি করাই ভালো। কারণ তাদের বাসায় রাখলে ক্ষতি হতে পারে।
সি (C) ক্যাটাগরি হলো ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এই পর্যায়ে রোগীর লিভার, কিডনি এমনকি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এই পর্যায়ে রোগীকে শুধু মেডিকেলে ভর্তি নয় আইসিইউ (ICU) এর প্রয়োজন হতে পারে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আমাদের এই দেশের জনসংখ্যা বাস করে ঘনবসতিপূর্ণভাবে তাই আমাদের জনগণের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে। কারণ একমাত্র সচেতনতাই পারে যে কোন রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে। বর্তমানে ডেঙ্গু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই প্রত্যেকের উচিত এই সময় সচেতন থাকা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url