মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বর্তমানে একটি জিনিস ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায় আর তা হল মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ - রচনা। আর যুব সমাজ মানেই তারা এখন ছাত্র আর আমাদের এই ছাত্রদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা লিখতে হয়। তোমরা যারা মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

Image

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের যুবসমাজ ও আজকে মাদকের ভয়াল কবলে আসক্ত। মাদকাসক্তি যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। তাই আমাদের ছাত্রদের মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা জানা একান্ত প্রয়োজন। নিচে মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা হলো-

পোস্ট সূচীপত্রঃ মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা 

ভূমিকা

যুব সমাজ হলো প্রতিটা দেশের চালিকাশক্তি। যুবকেরা দেশের সম্পদ আর যুব সমাজ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে জাতির ধ্বংস অনিবার্য। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন যুবক বয়স গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তেমনি যুবক বয়স একজন ব্যক্তির শক্তির অন্যতম প্রতীক। ঠিক তেমনি একটি জাতির জন্য যুব সমাজ হলো কর্ম ও প্রেরণার প্রাণশক্তি। তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন তার অমর কাব্য ১৮ আঠারো কবিতা।

 ১৮ আঠারো বছর বয়সের যেমন রয়েছে ভালো দিক তেমনি এই ১৮ বছর বয়সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে এরচেয়ে আর খারাপ কিছুই হতে পারে না। আমাদের যুব সমাজকে নিয়োজিত করতে হবে ভালো কাজে। যুবসমাজকে উদ্দেশ্য করে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৮ আঠারো বছর বয়স কবিতায় লিখেছেন-

 আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ

স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,

আঠারো বছর বয়সেই অহরহ

বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

মাদকাসক্তি কি

যেসব দ্রব্য সামগ্রী গ্রহণ করলে মানুষ নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাকে বলা হয় মাদকাসক্তি। আর যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তাদের বলা হয় মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তি যুব সমাজ তথা যে কোন বয়সের লোকের জন্যই মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। মাদকের নেশায় একবার জড়িয়ে পড়লে তার কবল থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন কাজ। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মকান্ড ভুলে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

আর দেশের যুবসমাজ যদি মাদকে আসক্ত হয় এবং পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে তাহলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। মাদকের প্রতি যখন আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন মানুষ হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত। মাদকের সর্বনাশা নেশা থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।

বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য

আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাওয়া যায় এবং এই মাদকদ্রব্য খুব সহজে পাওয়া যায় যার কারণে আমাদের যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে সাধারণত যেসব মাদকদ্রব্য গুলো পাওয়া যায় তা হল - হেরোইন, কোকেন, মরফিন, প্যাথডিন, অ্যালকোহল, শূরা, সঞ্জীবনী ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে - গাঁজা, ভাঙ,আফিম, তাড়ি, চরস ইত্যাদি।

কবি ও মনীষীদের মতে মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ

যুব সমাজ ও মাদকাসক্তি নিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন - "আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুব সমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা ঐতিহাসিক মর্যাদায় চিহ্নিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে পশ্চিমা দেশের মতো বাংলাদেশের যুব সমাজের অবক্ষয় নেমে আসে"।

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা ২০-৩০ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে নিন

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দেশের তরুণ সমাজকে উদ্দীপ্ত করতে বলেছিলেন তার বিখ্যাত প্রবন্ধ "তারুণ্যের স্বপ্ন" এর মাধ্যমে। কারন নেতাজি খুব ভালো করেই জানতেন যে, তরুণ সমাজ দেশের কল্যাণে কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু মাদকাসক্তির কারণে তরুণ সমাজ আজ বিপথগামী।

বিজ্ঞানীদের মতে যুবসমাজ মাদকাসক্তির কারণ

মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীদের মতে যুবসমাজ অবক্ষয়ের অনেক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের যুব সমাজ আজ মাদকাসক্তির জন্য বিপথগামী হয়েছে। তবে মাদকাসক্তি হওয়ার পেছনে যেসব কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হল-

  • ধ্বনি পরিবারের ঐশ্বর্য
  • অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতা
  • ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা
  • অশ্লীল সিনেমা
  • পত্র-পত্রিকার প্রভাব
  • নৈতিক শিক্ষার অভাব
  • বেকারত্ব
  • হতাশা ও বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনা
  • পারিবারিক অশান্তি
  • পাশ্চাত্য জীবনের অন্ধ অনুকরণ
  • মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের প্ররোচনা
  • সৌখিনতা এবং কৌতুহল বসত
  • প্রেমে ব্যর্থতা
  • মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদি।

যুব সমাজ - মাদকাসক্তির কারণ

আমাদের যুব সমাজ আজ বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী ধর্ষণ  ইত্যাদি আজ তারা সংঘটিত করে মাদকাসক্তির কারণে। তবে এ কথা আজকে বলা যায় যে, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবের ফলে আমাদের মতো অউন্নত দেশের যুবসমাজ আজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও মাদকাসক্তির যেসব মুখ্য কারণগুলো রয়েছে তা হলো-

কুসংসর্গ

একজন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার সঙ্গ। মানুষ সঙ্গ দোষে নিজের অজান্তেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আর এজন্যই বলা হয় - "সৎ সঙ্গ স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গ সর্বনাশ"। তাই যুব সমাজকে বন্ধু নির্বাচন করার আগে ভেবেচিন্তে তারপরে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে।

হতাশা

আমাদের যুব সমাজ হতাশা গ্রস্তের কারণেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আর তাদের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হলো তারা যে পরিমাণ আশা করে হয়তো সে পরিমাণ পরিশ্রম করে না যার কারণে তারা সঠিক ফলাফল করতে পারেনা। আর যখন সে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারেনা তখন সে হতাশায় ভোগে এবং এর থেকে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

কৌতূহল বসত

আমাদের যুব সমাজ সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে কৌতুহল বসত। কারণ নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সবসময় বেশি থাকে। আর মাদক হল এমন একটা জিনিস যার প্রতি সব সময় যুব সমাজের কৌতূহল বেশি কাজ করে আর ঠিক এ কারণে যুব সমাজ বেশি মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে।

মাদক দ্রব্যের সহজলভ্যতা

বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে চোরা চালানীর মাধ্যমে মাদকদ্রব্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে অতি সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারনে বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে ও মাদকদ্রব্য ইদানিং সুলভ হয়ে পড়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের যুবসমাজ খুব সহজেই মাদকদ্রব্য হাতে পেয়ে যাচ্ছে আর মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতায় আমাদের যুব সমাজের মাদকাসক্তের প্রধান কারণ।

পারিবারিক কলহ

আমাদের যুব সমাজকে সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত করে তুলে পারিবারিক কলহ। বর্তমানে আধুনিক সমাজে মানুষ এত বেশি অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে যে একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা ও সৌহাদের অভাব লেগেই থাকে যার কারণে একজন যুবক পারিবারিক ভালবাসার অভাবে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে।

যুব সমাজকে মাদকাসক্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি পদক্ষেপ

মাদকাসক্তির হাত থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে সরকার বহু আগে থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছেন। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকার মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে এবং মাদকের ক্ষতিকর প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণ সচেতনতা বিকাশ ও মাদকাসক্তি আইন প্রণয়ন করেন। ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয় পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১৮ সালে এ আইন সংশোধন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ নামে প্রণয়ন করা হয়।

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা 

আর এই আইনকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিনিয়ত সরকারের বিভিন্ন ফোর্স যেমন- পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের গ্রেফতার করছে। এছাড়া ও বাংলাদেশ সরকার মাদক সেবী ও মাদক গ্রহণকারীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

যুব সমাজ মাদকাসক্তি রোধে করণীয়

আমাদের যুব সমাজকে মাদক এর হাত থেকে বাঁচাতে হলে তাদের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে ধারণা জাগাতে হবে এবং মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে দেশের সকল যুব সমাজকে অবহিত করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে দেশি ও বিদেশী অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া বিদেশি অপসংস্কৃতির প্রবেশ বন্ধ করতে হবে এবং এ সম্পর্কিত বই আমদানি ও বন্ধ করতে হবে। আমাদের যুব সমাজের মধ্যে যাতে হতাশা নেমে না আসে এজন্য তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা সম্পর্কে জানুন

তাদের হাতে তুলে দিতে হবে জীবনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পত্র। এক কথায় আমাদের যুব সমাজকে মাদকাসক্তের হাত থেকে বাঁচাতে হলে তাদেরকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। এছাড়া মাদকাসক্তির পেছনে রয়েছে চোরা চালানি আর এই চোরা চালানি বন্ধ করতে হবে। অবশ্য এজন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্বেগ। আর বিশ্বের প্রতিটি দেশ যদি একসঙ্গে আন্দোলন গড়ে তোলে এই ব্যবস্থা করতে হবে।তবেই আমাদের যুব সমাজকে মাদকাসক্তির ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

উপসংহার

মাদকের ভয়াল কবল থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে তার পরিবারকে সচেতন হতে হবে। আমাদের একটা কথাই সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে পিতা-মাতার চরিত্রের প্রভাব সব সময় সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে। কাজেই নিজেদের সন্তানকে সুপথে পরিচালিত করতে হলে প্রথমে নিজেকে সাবধানে ভূমিকা পালন করতে হবে। যুব সমাজ হলো একটি দেশের ভবিষ্যৎ তাই মাদকের কোড়াল গ্রাস থেকে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে। তাইতো কবি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন-

  • এ বয়স যেন ভীরু কাপুরুষ নয়
  • পথ চলতে এ বয়স যায়না থেমে, 
  • এ বয়সে তাই নেই কোন সংশয়-
  • এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।

তোমরা এই রচনা পড়লে আর যে রচনা লিখতে পারবে তা হল-

মাদকাসক্তির কুফল

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url