গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন
গীবত সামাজিক বন্ধন কে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস প্রত্যেকটি মুমিন মুসলমানের জানা প্রয়োজন। কারণ গীবত আজ সমাজে ক্যান্সারের আকার ধারণ করেছে আর এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচতে গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস জানতে হবে। তাই আমি গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
গীবত কাকে বলে, গীবত কত প্রকার, গীবতের পরিচয় ও কুফল, গীবত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত, গীবত সম্পর্কে হাদিস, গিবতের গুনাহ মাপের উপায়, গীবত নিয়ে উক্তি সহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যারা গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস জানতে চান আমার আজকের পোস্ট তাদের জন্য। নিচে গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচিপত্রঃ গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস
- গীবত কাকে বলে
- গীবত কত প্রকার
- গীবতের পরিচয় ও কুফল
- গীবত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
- গীবত সম্পর্কে হাদিস
- গীবতের গুনাহ মাপের উপায়
- গীবত নিয়ে উক্তি / ইসলামিক উক্তি
- শেষ কথা
গীবত কাকে বলে
গীবত অর্থ পরনিন্দা পরচর্চা করা। কোন ব্যক্তির অসাক্ষাতে তার দোষ ত্রুটি আলোচনা করা যা শুনলে ওই ব্যক্তির মন খারাপ হয় তাকে গীবত বলা হয়। গীবত হলো জঘন্য গুনাহ আর এই গুনাহ থেকে প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানদের বেঁচে থাকা অবশ্য কর্তব্য। গীবত ও পরনিন্দা কোরআন এবং হাদিসের আলোকে নিষিদ্ধ রয়েছে। গীবত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "যা তোমার ভাই অপছন্দ করে তা তার অসাক্ষাতে আলোচনা করলে তাই গীবত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো - দোষের কথা আমরা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবু ও কি তা গীবত হবে! রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন, যে দোষ তোমার ভাইয়ের মধ্যে আছে তা যদি বল তবে এটা গীবত। আর যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে ওই দোষ না থাকে তবে তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হল"।
আরো পড়ুনঃ শুক্রবারে - বা জুমার দিনের - অতি গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি বিশেষ আমল সম্পর্কে জেনে নিন
গীবত সম্পর্কে ইবনুল আসির বলেন, "গীবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা হয় যা সে অপছন্দ করে যদিও তার মধ্যে সেগুলো বিদ্যমান থাকে। সুতরাং কারো অনুপস্থিতিতে পরনিন্দা,পরচর্চা, সমালোচনা করা বা কুৎসা রটানো ইত্যাদি হলো গীবত। গীবত সম্পর্কে হাদিসে আরো উল্লেখ আছে, আন আবি মুসা রহমতুল্লাহ ও হযরত আবু মুসা রহমতউল্লাহ থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মুসলমানদের মধ্যে কে সর্বোত্তম।
তিনি বললেন যার মুখ ও হাতের অনিষ্ঠ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)। গীবত সম্পর্কে অপর হাদিসে আছে, আল গিবাতু আশাদ্দু মিনাযযিনা। অর্থাৎ গীবত যিনা অপেক্ষা কঠিন তর গুনাহ। সাহাবীগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূল (সাঃ) গীবত যিনা হতে অধিকার কঠিন গুনা কিরূপে! তিনি উত্তরে বললেন, কোন ব্যক্তি যিনা করে তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করে তাকে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু গীবতকারীর জন্য তওবার কোন বিধান নেই, যে পর্যন্ত না তার গীবত করা হয়েছে সে মাপ করবে"।
গীবত কত প্রকার
গীবত বা পরনিন্দা বা পরচর্চা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং নিষিদ্ধ কাজ।
গীবত করা যেমন হারাম গীবত শোনাও তেমনি হারাম। কিন্তু অনেকেই গীবতকে তেমন কোন পাপ
বলে মনে করেন না। তাই মানুষ নানা ভাবে গীবত করে থাকেন। আর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে
গীবতকে ৮ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-
গীবত আট ৮ প্রকার।যথা-
- শারীরিক গীবত
- পোশাক সম্পর্কিত গীবত
- বংশ সম্পর্কিত গীবত
- পাপাচার সম্পর্কিত গীবত
- বদ অভ্যাস সম্পর্কিত গীবত
- প্রত্যক্ষ গীবত
- পরোক্ষ গীবত
- মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে গীবত
- গীবত শ্রবণ
আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আমরা যেন গীবত থেকে দূরে থাকতে পারি। কারো সংশোধনের
জন্য বলতে চাইলে তাকে নিজে তা সরাসরি বলতে হবে। অন্যকে দিয়ে বলা যাবে না
সমালোচনা কারীকে বিচারের দিনে নিজের নেক আমল দিয়ে এর বিনিময় পরিশোধ করতে হবে
এবং যার সমালোচনা করা হয়েছে তার গুনাহ নিয়ে সমালোচনা করি জাহান্নামে যাবে। তাই
সকল মুসলিমের উচিত গীবত সম্পর্কে সচেতন থাকা।
গীবতের পরিচয় ও কুফল
গীবত শব্দটির অর্থ হলো কারো অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করা, পরচর্চা করা, কুৎসারটানো, সমালোচনা করা ইত্যাদি। গীবত হল কোন মানুষ সম্পর্কে এমন কোন দোষের কথা উল্লেখ করা যায় সে গোপন রেখেছে অথবা সে তা উল্লেখ করতে অপছন্দ করে।পবিত্র আল-কুরআনে গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর হাদিসে একে যেনাকারী চেয়েও মারাত্মক অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অথচ গীবত বা পরনিন্দা এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যে কোন বৈঠক যেন গীবত ছাড়া এখন অসমাপ্ত থেকে যায়। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল-কুরআনের সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াতে গীবত সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, "আর তোমরা একে অপরের গীবত করো না. তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে? নিশ্চয়ই তোমরা এটাকে অপছন্দ করবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহতালা সীমাহীন ক্ষমাকারী এবং দয়ালু"।
আরো পড়ুনঃ রোজা কাকে বলে - রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে নিন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ কারো গীবত করুন না
গীবত করলে তোমরা ধ্বংস হবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন
তোমরা গীব থেকে বেঁচে থাকো কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে যেমন-
- গীবত কারীর আমল নামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে
- গীবত কারীর কোন নেক আমল কবুল হয় না
- গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না
এছাড়াও গীবতের যেসব অপকারিতা রয়েছে তা হল-
- গীবতকারীর মানসিক শান্তি থাকে না কারণ সে কারো দ্বারা অপমানিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে
- তার হিসাব কঠিন হয়।
- পরকালে তাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ানো হবে
- গীবতকারী মানুষের চোখে দোষ চর্চাকারী সাব্যস্ত হয়
মিশকাত শরীফের এক হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় গীবতের কুফল এবং ভয়াবহতা
সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাঃ বলেছেন, গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক
গুনাহ। সায়েবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুল
(সাঃ) গীবত কিভাবে যিনা থেকে ও গুরুত্বর গুনাহ, রাসুল
(সাঃ) বললেন, যিনা করার পর তওবা করলে আল্লাহ সেই তওবা কবুল করেন
কিন্তু গীবত করার পর তওবা করার কোন পথ নেই যতক্ষণ না যে ব্যক্তির গীবত করা হয়েছে
সেই ব্যক্তি মাফ করে দেন।
গীবতের আরো মারাত্মক কুফল হলো - যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় যত পাপ থাকে যে গীবত করে তার আমলনামায় সেই পাপ এসে যুক্ত হয়। এজন্য হযরত হাসান বসরী রঃ যখন শুনতে পেতেন তার সম্পর্কে কেউ গীবত করছে তখন তিনি সেই ব্যক্তির জন্য অনেক ফল ও বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্য হাদিয়া হিসেবে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেন, মাশাল্লাহ! তিনি আমার অনেক উপকার করেছেন। গীবত হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুনাহ যাকে কবিরা গুনা বলা হয়।
মহান আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে সূরা হুজরাতের এক ১ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। গীবত মানুষের আমল এবং
ঈমান সবকিছু নষ্ট করে দেয়। গীবত নিজেকে এবং যে গীবত শুনে তাকেও ধ্বংস করে দেয়
সুতরাং গীবতের এই ধ্বংসাত্মক ছোবল থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের
কর্তব্য।
গীবত সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
সূরা হুজরাত এর ১২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর তোমরা অন্যের দোষ
খুঁজে বেড়াবে না"।
সূরা হুমাজার ১ -৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা
পশ্চাতেও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নাম) নিক্ষিপ্ত
হবে। তুমি কি জানো হুতামা কি? হুতামা হলো আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, যা
হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয়ই বেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভ সমূহে"।
সূরা বনী ইসরাইলের ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, "তুমি এমন বিষয়ের
অনুসরণ করো না যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। কর্ণ,চক্ষু ও মন সহ প্রত্যেকটি
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে"।
সূরা কাহাফ এর ১৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "সে যা উচ্চারণ করে তার
নিকটতম অপেক্ষা মান প্রহরী তা সংরক্ষণ করে থাকে"।
সূরা হুজরাত এর বারো ১২ নং আয়াতে মহান আল্লাহতালা বলেন, "আর তোমরা অন্যের দোষ
খুঁজে বেড়াবে না"।
আরো পড়ুনঃ সালাত কাকে বলে - সালাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াতে আরো উল্লেখ আছে, "হে মুমিনরা, ধারণা থেকে তোমরা দূরে
থাকো। কেননা কিছু ধারনা পাপের কারণ হয়ে থাকে। আর তোমরা কারো গোপন খোঁজ করো না,
একে অপরের গীবত করো না, তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া পছন্দ কর!
তোমরা অপছন্দই করবে। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু"।
সূরা বাকারার ১৬০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "কিন্তু যারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করে এরাই তারা যাদের তওবা আমি কবুল করি আমি অতিশয় তওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু"।
পবিত্র কোরআনে সূরা হুদ এর ১১৪ নং আয়াতে এভাবে এসেছে, "নিশ্চয়ই ভালো কাজ খারাপ কাজের ক্ষতিপূরণ হয়"।
গীবত সম্পর্কে হাদিস
যারা অগ্রপাশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ
(মুসলিম)।
পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কি জানো গীবত কি?সাহাবীরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) ভালো জানেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমরা কোন ভাই সম্পর্কে এমন কথা বল যা সে অপছন্দ করে তাই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে দোষের কথা বলি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে ও কি তা গীবত হবে! উত্তরের রাসুল সালাম বলেন, তুমি যে দোষের কথা বলো তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গিবত করলে, আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছ (মুসলিম)।
হযরত আয়েশা রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
"দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে কিয়ামতের
দিন গীবতকারীকে পচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও
চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে"। (বুখারী)।
আরো পড়ুনঃ হজ কাকে বলে - হজ কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
(সাঃ) বলেছেন, "যখন আমাকে মিরাজেরে নিয়ে যাওয়া হল তখন আমাকে তামার নখ
বিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয়
মুখমণ্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করতে করতে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে
জিব্রাইল, এরা কারা? জিব্রাইল আলাই সালাম বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত
ভক্ষণ করত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের মান সম্মান নষ্ট করত অর্থাৎ তারা মানুষের
গীবত ও চোগলখুরি করতো"।( আবু দাউদ)।
রাসুল সাঃ বলেছেন, গীবত করা যিনা থেকেও মারাত্মক গুনাহ। সায়েবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুল (সাঃ) গীবত কিভাবে যিনা থেকে ও গুরুত্বর গুনাহ, রাসুল (সাঃ) বললেন, যিনা করার পর তওবা করলে আল্লাহ সেই তওবা কবুল করেন কিন্তু গীবত করার পর তওবা করার কোন পথ নেই যতক্ষণ না যে ব্যক্তির গীবত করা হয়েছে সেই ব্যক্তি মাফ করে দেন। (মুসলিম)।
গীবতের গুনাহ মাপের উপায়
গীবতের কাফফারা হল তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে তুমি এভাবে বলবে, হে আল্লাহ! তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও (বাইহাকি)। যদি কারো সম্পর্কে গীবত করা হয়ে থাকে তাহলে গীবতের গুনাহ মাপের একমাত্র উপায় হল তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। আর যদি কোন কারণে তা সম্ভব না হয় তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে তার গুনাহ সমূহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
গুনহা মাপের জন্য আপনি আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন-" সুবহানাকা
আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া
আতুবু ইলাইক"। এই আয়াতের অর্থ হলো- হে আল্লাহ, আমি আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা
ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তওবা করছি"। (তিরমিজি, ৩৪ ৩৩)।
আপনি যে ব্যক্তির গীবত করেছেন সেই ব্যক্তির প্রশংসিত কাজগুলো মানুষের সামনে তুলে
ধরতে পারেন তাহলে তার প্রশংসা করার জন্য আপনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেতে পারেন।
কারণ হাদিসে এসেছে কেউ যদি কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য অগোচরে দোয়া করে তাহলে তার
জন্য ফেরেশতারাও দোয়া করেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম তার
ভাইয়ের জন্য তার পশ্চাতে দোয়া করে তখন তার মাথার কাছে নিযুক্ত একজন ফেরেশতা
তাকে লক্ষ্য করে বলে "তোমার জন্য এমনই হোক" (মুসলিম, ২৭৩২)।
আরো পড়ুনঃ নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় - নারীদের হজ পালন করার শর্ত জেনে নিন
আপনি বেশি বেশি করে তওবা ইস্তেগফার পাঠ করবেন এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে তওবা
করবেন গীবত করেছেন এই মর্মে আল্লাহর কাছে লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হয়ে নিজেকে ভৎসনা
করবেন এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবেন আপনি আর এই ধরনের কাজ কখনো করবেন না। সূরা বাকারার
১৬০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "কিন্তু যারা তওবা করে এবং নিজেদের
সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করে এরাই তারা যাদের তওবা আমি কবুল
করি আমি অতিশয় তওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু"।
আপনি যে ব্যক্তির নামে কুৎসা রটিয়েছেন আপনি তার প্রশংসা করবেন এতে আপনার গুনাহ
কিছুটা কমে যেতে পারে। পবিত্র কোরআনে সূরা হুদ এর ১১৪ নং আয়াতে এভাবে এসেছে,
"নিশ্চয়ই ভালো কাজ খারাপ কাজের ক্ষতিপূরণ হয়"।
গীবত নিয়ে উক্তি / ইসলামিক উক্তি
গীবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
গীবতকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বুখারী
সমাজে গীবত করার মত মানুষের অভাব নেই তবে উৎসাহ দেওয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া
কঠিন। নিগেল ফারাজে
গীবত এত জঘন্য যে এটি মানব চরিত্র কে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম। লি ইন্টস্টিন
প্রতিটি ধর্মেই গীবতকে জঘন্য কাজ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, তবুও কিছু মানুষ
গীবত করে প্রমাণ করে যে তারা কতটা জঘন্য। গৌতম বুদ্ধ
গীবত মনুষ্যত্বকে মেরে ফেলে তাই এটি অত্যন্ত জঘন্যতম কাজ যা কোন মানুষের করা উচিত
নয়। ইং কল্বা রট
গীবত মানুষ বাইরে থেকেই করতে পারে তবে ওই বিষয়ে সঠিক বিচার করতে হলে তাকে ভিতরে
প্রবেশ করতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
যারা গীবত করে তারা সাময়িকভাবে জিতে যায় আর যারা এটি এড়িয়ে যায় তারা সারা
জীবনের জন্য জিতে যায়। -ভোলাটিয়ার
আরো পড়ুনঃ হায়েজ কি - হায়েজ অবস্থায় নামাজ - কোরআন পড়ার বিধান জেনে নিন
মানুষ যত নিন্দা করে নিন্দা মানুষকে ভেতর থেকে ততই নষ্ট করতে থাকে।- ক্রিসজামি
তুমি যদি সৎ হও তবে নিন্দা তোমার কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। শেখ সাদী
সেই মানুষই জয়লাভ করতে পারে যে জীবনে তীব্র নিন্দার ভয় করেনা এবং নিজের পথে
এগিয়ে চলতে থাকে। -হেন্স শেইলে
গীবত মানুষের সম্মানকে কমাতে থাকে এবং ধীরে ধীরে মূল্যহীন করে তোলে। -অগাস্টিন
আমাদের সকলের নিন্দার দিকে না ঝুঁকে উচিত মানুষকে সম্মান করা।- এগুয়া তিচ
অ্যান্টিওচ
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত গীবত থেকে বেঁচে থাকা। কারণ গীবত কোন অবস্থাতে জায়েজ নয়। গীবত অর্থ-অগোচরে তার দোষ ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা যা শুনলে সেই ব্যক্তি মন খারাপ করে। মানুষ বিভিন্ন কারণে গীবত করে থাকে কিন্তু সে মনে করে না যে এতে তার কত বড় পাপ হচ্ছে বা সে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজের অজান্তে গীবত করে থাকে। মানুষ কল্পনাও করেনা যে সে কত বড় ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
গীবত আজ ছড়িয়ে পড়েছে এমন ভাবে যে মনে হয় সমাজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
তাই গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত জরুরী। যারা গীবত করেন
তাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ যিনার গুনাহ ক্ষমা করে দেন কিন্তু গীবত কারীর গোনা
ক্ষমা করেন না। আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহকে গীবত করার হাত থেকে রক্ষা করুন।
আমীন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url