সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আর এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে মাদকের সাথে তুলনা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা। আর এই আসক্তির হাত থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে।
প্রিয় বন্ধুরা, আমি তোমাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই লেখা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে। নিচে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা এ সম্পর্কে লিখা হলো-
পোস্ট সূচীপত্রঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা
- ভূমিকা
- জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী সংখ্যা
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণ
- তরুণ সমাজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণ
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির ধরন
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি থেকে প্রতিকার
- উপসংহার
ভূমিকা
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আর বর্তমানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বিশ্বগ্রাম।
বিশ্বগ্রাম হল ইন্টারনেটের সাহায্যে পুরো বিশ্বকে একটি একক কমিউনিটিতে পরিণত করন।
আর এই বিশ্বগ্রাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের আধুনিক
জীবনের এক নতুন বাস্তবতা হলো এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রযুক্তির অনেক
কল্যাণকর দিক রয়েছে যা অস্বীকার করার মত কোন উপায় নেই। আধুনিক প্রযুক্তি
বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ আর কেড়ে নিয়েছে তাদের আবেগ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আধুনিক পৃথিবী মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে অনেক সহজলভ্য।
আর এই সহজলভ্যতার কারণে সামাজিক যোগাযোগের ব্যবস্থা অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আর এই
অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বেশি
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের তরুণ সমাজের প্রতি। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের
নেতিবাচক দিকগুলোই হয়ে উঠেছে আমাদের তরুণ সমাজের কাছে ভয়ংকর।
আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
যদিও প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহার
মানুষের মাঝে তৈরি করে আসক্তি। আর এই আসক্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
আমাদের কাছে আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। এই সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের পরিণত করতে আসক্তিতে এবং
তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হল - ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, স্কাইপ, গুগল প্লাস, হোয়াইট অ্যাপ, ইমো, মেসেঞ্জার(Facebook, Messanger, Google, instagram, Linkedln, Pinterest, Tumbler, Snapchat, Twitter, Viber, Wechat, WhatsApp, Youtube) ইত্যাদি। বর্তমানে এগুলো ছাড়া মানুষ যেন অচল হয়ে পড়েছে। ফেসবুক ছাড়া মানুষের জীবন যেন আর কল্পনাই করা যায় না।
বর্তমানে শিশু, তরুন, যুবক এমন কি বৃদ্ধরা ও জড়িয়ে পড়েছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তারা শুধু জড়িয়ে পড়েছে তা নয় তারা পরিণত হয়েছে আসক্তিতে। আর এই আসক্তির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী সংখ্যা
পৃথিবীর সর্বোচ্চ ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে আমাদের দেশ তথা বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে আনুমানিক ১০ কোটি লোক আধুনিক এবং ইউনিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর প্রতি দুইজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন ফেসবুক ব্যবহার করে।
২০২০ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন( বিটিআরসি) এর হিসাব মতে, বাংলাদেশে মোট তিন ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার লোক মেসেঞ্জার ব্যবহার করে। এখনো এমন অনেক মানুষ আছে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে শুধু ফেসবুক মনে করে থাকেন। কিন্তু ফেসবুক ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হল- Facebook, Messanger, Google, instagram, Linkedln, Pinterest, Tumbler, Snapchat, Twitter, Viber, Wechat, WhatsApp, Youtube।
আরো পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
সারা বিশ্বে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে তার মধ্যে শতকরা ৭0 ভাগ মানুষ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। তরুণদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ তরুণ সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ
লোক ফেসবুক ব্যবহার করে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি
জনপ্রিয় হলো facebook।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারী কারীর মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের
সংখ্যায় বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। আর এর ফলে মানুষ এতে আসক্ত
হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির প্রধান কারণ হলো এর সহজলভ্যতা।
করোনা মহামারীর কারণে মানুষ হয়ে উঠেছে অনলাইন নির্ভর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ব্যবহার করে মানুষ অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছে। আর অনলাইন এর মাধ্যমে
ব্যবসা করাকে বলা হয় ই-কমার্স।
আর এর একটি বড় অংশের উদ্যোক্তা হয়েছে নারী। শহর থেকে গ্রামসহ সকল জায়গাতেই এখন অনেক ধরনের অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। আর এই ব্যবহার পরিণত হয়েছে আসক্তিতে। আগে মানুষ শখ করে বাগান করেছে আর এখন মানুষের জীবনের বাগানের স্থান কেড়ে নিয়েছে স্মার্টফোন।
আবার কেউ যদি একটি বাগান করে তাহলে আবার তা পোস্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আর এই বাগান দেখতে আসক্তি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার মোবাইলের অ্যাপস
গুলো এমন আকর্ষণীয় থিমে তৈরি করা হয়েছে যে ২ মিনিটের জন্য কোন অ্যাপস এ ঢুকলে
দুই ২ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়ে যায় বা পার হয়ে যায় আর বেরুতে ইচ্ছে করে না। এতে
অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় অনেক সময় পার হয়ে যায়।
তরুণ সমাজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির কারণ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের তরুণ - তরুণীদের মগজ গুলো খুব সহজেই ধোলাই
করতে সক্ষম হচ্ছে। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তরুণ সমাজের আঙ্গুলের ছাপের কিছু লাইক,
কমেন্ট এবং শেয়ার সেকশনে সীমাবদ্ধ করে কেড়ে নিয়েছে তাদের মনোযোগ। সোশ্যাল
মিডিয়া গুলো তরুণ সমাজের উপকারের চেয়ে তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে
সবচেয়ে বেশি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুণ সমাজের যে ক্ষতি করে তা হল-
সৃজনশীলতা হ্রাস
একজন তরুণ তরুণী ঘন্টার পর ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। আর তারা
নিজেদের মস্তিষ্ক ব্যবহার না করে নির্ভর করছে অন্যের ওপর এবং লুফে নিচ্ছে তাদের
বিনোদনগুলোকে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস গুলোতে নিজেদের মনকে সেট আপ করে নিচ্ছে।
আর এইসব কারণেই তরুণদের তাদের নিজেদের অজান্তেই তাদের মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা কমে
যাচ্ছে।
সক্রিয়তা হ্রাস
সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র টানে তরুণ তরুণীরা স্কিনের সামনে একটানা বসে থাকছে এতে
প্রোডাক্টিভ কিছুই হচ্ছে না বরং তাদের চিন্তাশক্তিসহ কর্মশক্তি চলে যাচ্ছে অন্যের
দখলে। আর এক সময় তারা পরিণত হচ্ছে নিষ্ক্রিয় জড় পদার্থে।
কর্ম ঘন্টা নষ্ট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তারা তাদের
হোম ওয়ার্ক বা নিজেদের কোন কাজ করতে পারেনা। সোশ্যাল মিডিয়া তাদের চুম্বকের মতো
আকর্ষণ করে যার কারণে তারা ভুলে যায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের কাজগুলো শেষ
করতে হবে। তারা সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না বলে তারা জীবনে সফল হতে পারেনা।
আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি তাদের কর্ম ঘন্টা নষ্ট করে দেয়।
শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
তরুণেরা আসক্তির কারণে অনেক সময় ধরে বসে থাকে ফোন, ল্যাপটপ এবং আইপ্যাডে। যার
কারণে তাদের অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন - মাথা
ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, কানে কম শোনা, মেরুদন্ডের
সমস্যা সহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়।
মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে মাদকের সাথে তুলনা করা হয় এবং মাদকাসক্তির চেয়েও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের আসক্তি বেশি ভয়ংকর। আর এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। আর এই আসক্তি শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি তৈরি করে থাকে। তরুণদের মাঝে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম একটি জগত যার কারণে একে ফেসবুক না বলে ফেইকবুক ও বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
এছাড়াও তরুণদের মধ্যে যে ক্ষতিগুলো হয় তা হলো-
- আবেগ অনুভূতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে
- হতাশা ও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে
- একাকী বোধ করে
- আসক্ত ব্যক্তি নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে
- কাজের সময় ঠিকঠাক থাকে না
- কাজের আগ্রহ হারিয়ে যাই
- সময় জ্ঞান লোপ পায়
- অসৎ পথে পরিচালিত হতে বাধ্য হয়
- নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে যার কারণে তাদের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাব বেড়ে যায়
- দায়-দায়িত্ব ভুলে ফেসবুকে ডুবে থাকে
- শারীরিক ওজনের সমস্যা হয়
- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা করে
- শারীরিক ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়
- ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
- দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়
- সাইবার অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির ধরন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ইন্টারনেট অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে আসক্তি সৃষ্টি হয় তার নাম হলো বিহেভিয়ার অ্যাডিকশন। আর এই মাধ্যমে একবার আসক্ত হয়ে পড়লে আর এখান থেকে বের হয়ে আসা যায় না। আর এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ সমাজ বেশি আসক্ত হয়। আমাদের তরুণ সমাজ আসক্তির ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি।বিশেষ করে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি বেশি হয়।
এই নেশার অপর নাম হল মরণ নেশা। আর এই নেশায় আসক্তির কারণে আমাদের তরুণ সমাজ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেঁচে নেয়। ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৮ বছর বয়সের শিশু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে আর এর প্রধান কারণ ছিল তাকে মোবাইলে গেম খেলতে না দেওয়া। তাই আমাদের তরুণ সমাজকে এই আসক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি থেকে প্রতিকার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি আমাদের তরুণ সমাজের জন্য ভয়ংকর। তবে তরুণেরা যদি
আসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে হবে। আমরা তরুণ সমাজের
আসক্তি কমাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি তা হল-
পরিবারের দায়িত্ব
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে তার পরিবারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আগে আমাদের পরিবারগুলো ছিল যৌথ পরিবার। আর যৌথ পরিবারের সন্তানেরা একজন আরেকজনের সাথে মেলামেশা করে বেড়ে উঠতো। কিন্তু এখন একক পরিবারের সন্তানেরা একা একা বেড়ে ওঠে।
আবার অনেক পরিবার আছে যেখানে মা-বাবা দুজনেই চাকরি করেন যার কারণে সন্তানেরা একা একা সময় কাটায়। আর এই একাকীত্ব দূর করতে সন্তানেরা তথা তরুন সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি হয়ে পড়ে। আর এই আসক্তি থেকে রক্ষা করতে হলে বাবা-মাকে তার সন্তানের সাথে সময় কাটানো উচিত। সন্তানের সামনে বাবা-মার উচিত কোন আসক্তি হয় এমন ডিভাইস ব্যবহার না করা।
বাবা-মা যদি সন্তানকে সঠিকভাবে সময় দেয় তাহলে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং সন্তানেরা তথা আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
সমাজের দায়িত্ব
আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে রক্ষা করতে পরিবারের পাশাপাশি সমাজেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা অধিকাংশ সময় যে কোন অপরাধে তরুণদের বেশি দোষারোপ করে থাকি। আমরা কেউ মনে রাখিনা যে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি একটি বড় বিষয়। আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে আজকের তরুণেরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মেধা বিকাশের জন্য তাদের সৃষ্টিশীল কাজের সাথে যুক্ত রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
তাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে। তরুণেরা যেন সকলের
সাথে মিলেমিশে চলতে পারে এবং একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য
এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সমাজের সকলকেই।
সরকারের দায়িত্ব
আমাদের তরুণ সমাজকে সোশ্যাল মিডিয়া তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে রক্ষা করতে সরকারকে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারকে প্রতিটি এলাকায় পাঠাগার গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। একমাত্র বই পারে আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখতে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
যেন প্রতিটি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে সে দিকে ও খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন আইন প্রয়োগ করে সোশ্যাল মিডিয়া গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। একটি বাচ্চাকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বড় করতে বাবা-মায়ের ভূমিকায় সবচেয়ে বেশি। তাই বাবা মায়েদের জন্য প্যারেন্টিং এর ওয়ার্কশপ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
উপসংহার
পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের তরুণ সমাজকে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিবার, সমাজ এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগই পারে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে। তবে এই আসক্তির হাত থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
মনে রাখতে হবে আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করার
গুরু দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাই সঠিকভাবে দিকনির্দেশনায় পারে আমাদের তরুণ
সমাজকে সঠিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url