মহাস্থানগড় রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম স্থান। আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাচীন নিদর্শন নিয়ে একটি রচনা লেখার প্রয়োজন হয়। তাই আমি মহাস্থানগড় রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। তোমরা যারা  মহাস্থানগড় রচনা সম্পর্কে জানতে চাও আমার আজকের আর্টিকেল তাদের জন্য।

Image

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমি তোমাদের জন্য  মহাস্থানগড় রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আমি আশা করি এই রচনা তোমরা পরীক্ষায় লিখলে বেশ ভালো নম্বর পাবে। নিচে মহাস্থানগড় রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

পোস্ট সূচিপত্রঃ মহাস্থানগড় রচনা 

ভূমিকা

মহাস্থানগড় হলো বাংলাদেশের বগুড়া জেলার একটি অন্যতম পুরা কীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন। মহাস্থানগড় এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল। ২০১৬ সালে একে ঘোষণা করা হয় সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে। মহাস্থানগড়ে গুপ্ত, মৌর্য, সেন ও পাল বংশের পচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। একটি দেশের পুরা কীর্তিই বহন করে সেই দেশের অতীত কালের স্বাক্ষর, 

একটি দেশের সভ্যতার মান, নির্মিত হয় সেই দেশটি কত উন্নত ছিল তার সংস্কৃতি কত উন্নতি লাভ করেছিল এবং তার কৃষ্টি সে সম্পর্কে সে দেশের পুরাকীর্তি যে স্বাক্ষর তুলে ধরে তার ওপর ভিত্তি করে। আমাদের দেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় এমনই একটি পুরা কীর্তির পরিচয় বহন করে।

মহাস্থানগড় এর অবস্থান

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। তবে এখন শুধু এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এই ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড় ঢাকা - দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে মহাস্থানগড় এর উচ্চতা প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট। বিভিন্ন সময় খনন করে এ গড় থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন আমলের শিলা, পাথর, বিভিন্ন আমলের মুদ্রা ও ঘরবাড়ি।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে  জেনে নিন

 আর এগুলো থেকে বুঝা যায় মহাস্থানগড় একটি পুরা কীর্তির অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন।এই নগরী সমগ্র বাংলার সর্ব প্রাচীন ও সর্ব প্রধান দুর্গ নগরী। পর্যায়ক্রমে এই নগরী মাটি ও ইটের বেষ্টনী দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে যা পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৭০ মিটার প্রশস্ত এবং উত্তর দক্ষিণে ১৫২৫ মিটার দীর্ঘ। এর চারপাশে সমতল ভূমি হতে ৫ মিটার উঁচু।এই নগরীতে বেষ্টনী প্রাচীর ছাড়াও পূর্বদিকে রয়েছে নদী এবং অপর তিন দিকে রয়েছে পরীক্ষা নগরী যা অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস

৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। মহাস্থানগড় বা পুন্ড্রনগর সুদীর্ঘ আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস বাংলার পুরাকৃতির এক নীরব ইতিহাস। বৌদ্ধ শিক্ষাই প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুকরা মহাস্থানগড়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে আসতে এবং লেখাপড়া শেষ হলে তারা আবার বেরিয়ে পড়তো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন গৌড় রাজ্যের রাজা ছিলেন ১০৮২ সাল থেকে ১০২৫ সাল পর্যন্ত। আর যখন লক্ষণ সেন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন গৌড় রাজ্য ছিল অরক্ষিত। মহাস্থানগড়ের রাজা ছিলেন নল। নীল নামে তার এক ভাই ছিল যার সাথে নল এর বিরোধ লেগেই থাকতো। এই সময় ভারতের দক্ষিণান্তের শ্রী ক্ষেত্র নামক স্থান থেকে পাপের প্রায়শ্চিত্য করতে এক অভিশপ্ত ব্রাক্ষণ এখানে আসেন।

আরো পড়ুনঃ  দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

এই ব্রাক্ষণ কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নল ও নিল এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং তিনি সেখানকার রাজা হন। তখন উত্তরবঙ্গের নাম ছিল পুন্ড্রনগর। শশাঙ্ক নামক এক বাঙালি রাজা পুরাজ্য দখল করেন এবং সবকিছু নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। সবকিছু দখলের পরে তিনি রাজধানী স্থাপন করেন মালদা জেলার গৌড় রাজ্যে। 

এবং তিনি পুন্ড্র বর্ধনকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করেন।সেই সময় পুন্ড্র বর্ধনের রাজা ছিলেন পরশুরাম নামে এক হিন্দু রাজা। কথিত আছে পরশুরামের আমলে মহাস্থানগড় সমৃদ্ধি লাভ করেছিল।

রাজধানী হিসেবে মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় ছিল করোতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। আর নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারণে এখানকার পরিবেশ ছিল মনোরম। যার কারণে রাজা পরশুরাম মহাস্থানগড়কে রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করতেন। পরশুরামের আমলেই মহাস্থানগড় সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল।

মাহী সাওয়ারের আগমন

হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ ইব্রাহিম বোলখী মাহী সওয়ার রহমাতুল্লাহ হিজরী ৪৪০ সনে ইসলাম ধর্ম প্রচার এর উদ্দেশ্যে মহাস্থানগড়ে আগমন করেন। এরপরে তিনি তার আস্তানা স্থাপন করেন ধাপ সুলতানগঞ্জ নামক স্থানে। হিজরী ৪৪৭ সনে সুলতান মাহিসওয়ার মহাস্থানগড়ে ইন্তেকাল করেন। মাহি সওয়ারের দরবেশের নাম ছিল ছায়াতপুর। এছাড়া ও দরবেশ বোরহান উদ্দিনের মাজা রয়েছে গৌড়ের একটু দক্ষিনে।

মাহী সওয়ারের সাথে রাজা পরশুরামের যুদ্ধ

মাহী সওয়ার মহাস্থানগড়ে ইসলাম প্রচার শুরু করলে তৎকালীন মহাস্থানগড়ের রাজা পরশুরামের সাথে তার ভীষণ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজা পরশুরাম এর সাথে তার ভগ্নি শিলা দেবী ও ছিলেন। মাহী সওয়ার এর সাথে যুদ্ধে রাজা পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন এবং তার ভগ্নী শীলা দেবী মন্দিরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান এবং করোতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আর এই যুদ্ধের রাজা পরশুরামের পরাজয়ের ফলে সেখানকার অগণিত লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন

মহাস্থানগড় এ রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সুলতান সাহেবের মাজার শরীফ, গোকুলের ম্যাড, বেহুলা সুন্দরী ও লক্ষিন্দরের বাসর ঘরের ধ্বংসাবশেষ, বোশনিয়া সওদাগর এর বাড়ি, পশ্চিমে কালিদহ সাগর, উজানী ভাইটালিনগর, শীলা দেবীর ঘাট ও রাজা পরশুরামের রাজ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, জিয়ৎ কুন্ড নামক আশ্চর্য কুপ। শীলা দেবীর ঘাট হলো হিন্দুদের জন্য তীর্থস্থান। প্রতিবছর এখানে মেলা বসে এবং গঙ্গাস্নান করা হয়।

মহাস্থানগড় এর দর্শনীয় স্থান

মহাস্থানগড়ে যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে নিচে তা আলোচনা করা হলো-

মাহী সাওয়ারের মাজার শরীফ

মহাস্থানগড়ে হযরত শাহ সুলতান মাহী সওয়ারের মাজার শরীফ রয়েছে। কথিত আছে, হযরত শাহ সুলতান ইব্রাহিম বোলখী মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্রভূমিতে এসেছিলেন যার কারণে তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। তখনকার সময়ে প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায় এখানে একজন মুসলমান বাস করতেন যার নাম ছিল মীর বোরহান। 

তিনি পুত্র মানত করে গরু কোরবানী করেন যার অপরাধ স্বরূপ রাজা পরশুরাম তাকে বলির আদেশ দেন। আর মীর বোরহানকে সাহায্য করতে ইব্রাহিম বোলখি মাছের পিঠে আরোহন করে মহাস্থানগড়ে আসেন।

শীলা দেবীর ঘাট

শীলা দেবীর ঘাট রয়েছে গড়ের পূর্ব পাশে করতোয়া নদীর তীরে। এখানে হিন্দুদের তীর্থস্থান। এখানে প্রতিবছর একদিনের মেলা বসে এবং হিন্দুরা গঙ্গাস্নান করে।

মহাস্থানগড়ে মুনীর ঘোন

শীলা দেবীর ঘাট সংলগ্ন একটি দুর্গ প্রাচীর রয়েছে যার নাম মুনীর ঘোন।এই প্রাচীর টির উচ্চতা র ছিল ১০ ফুট এবং চওড়া প্রায় ১১ ফুট। এই দুর্গটি উত্তর দক্ষিনে প্রায়ই লম্বায় ১০০ ফুট। অনুমান করা হয় যে, পাল যুগে নির্মিত এই দুর্গটি নদীপথের ওপর দৃষ্টি রাখার জন্য এবং প্রহরীদের সুবিধার্থেই নির্মাণ করা হয়েছিল।

কালিদহ সাগর

ঐতিহাসিক কালিদহ সাগর এবং পদ্মা দেবীর বাসভবন রয়েছে গড়ের পশ্চিম অংশে। এখানে ঐতিহাসিক গড় জরিপা নামক একটি মাটির দুর্গ রয়েছে এবং এটি প্রায় কালিদহ সাগর সংলগ্ন। প্রতিবছর মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মাম্বলি দের রারুন্নি স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রাচীন কালিদাহ সাগর পাড়ে স্নান শেষে পুণ্যার্থী গন গঙ্গা পূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।

মহাস্থানগড় এর বৈরাগী ভিটা

মহাস্থানগড়ে বৈরাগীর ভিটা নামক দুটি বড় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যা পাল আমলে স্থাপিত হয়েছিল। এই বৈরাগী ভিটাটি ৩০০ ফুট দীর্ঘ এবং ২৬ ফুট প্রশস্ত এবং এটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উচু। মন্দির দুটি ছিল ইট দিয়ে তৈরি এবং কারুকার্যক খোচিত। আর এই কারুকার্যের জন্য সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি বহু কক্ষ বিশিষ্ট এবং স্নানহীন মানুষ এই পথ দিয়ে চলাচল করে। এই মন্দিরে ধর্মীয় এবং রাজকীয় সকল অনুষ্ঠান সঠিকভাবে সম্পাদন করা হতো।

মহাস্থানগড়ে জাদুঘর

মহাস্থানগড়ে একটি জাদুঘর রয়েছে। মহাস্থানগড় খননের ফলে গুপ্ত, মৌর্য, সেন ও পাল যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। এই দ্রব্যাদি সহ বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থানগড় এর নিদর্শন সহ আরো বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক ও এখানে সংরক্ষিত আছে।

মহাস্থানগড়ে গোবিন্দ ভিটা

মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনে এবং দুর্গ প্রাচীরের উত্তর পাশে গোবিন্দ ভিটা মন্দির অবস্থিত। এই গোবিন্দ ভিটা মন্দিরটি বিষ্ণু মন্দির নামেও পরিচিত। গোবিন্দ একটি খননকৃত প্রত্নস্থল। গোবিন্দ ভীটা শব্দের অর্থ হলো হিন্দুদের দেবতা গোবিন্দ তথা বিষ্ণুর আবাসস্থল। এই মন্দিরটি গড়ে তোলা হয় খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ বা সপ্তম শতকে। দেবীর মূর্তি ছিল এই গোবিন্দ ভিটা মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে । 

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রাচীন বাংলার অন্যতম কারু কার্যক খোচিত স্থাপত্যের নিদর্শন হল এই গোবিন্দ ভিটা মন্দির। এই ভিটায় পাওয়া গেছে বিভিন্ন তৈজসপত্র,তাম্র- ব্রোঞ্জের বিভিন্ন প্রকার অলংকর এবং পোড়া মাটির মূর্তি। তবে বৈষ্ণব ধর্মের কোন নিদর্শন এই স্থান থেকে পাওয়া যায়নি।

জিউৎ কুন্ড কূপ

জিউৎ কুন্ড কূপ নামে একটি বড় কুপ আছে মহাস্থানগড়ের শিলা দেবীর ঘাটের পশ্চিমে। কথিত আছে রাজা পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত এই জিউৎ কুন্ড কূপের পানি পান করে। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।

মহাস্থানগড়ে খোদার পাথর ভিটা

খোদার পাথর ঢিবির অপর নাম হল খোদার পাথর ভিটা। এর পূর্ব নকশা দেখে এই ভীটার নামকরণ করা হয়। এটি মূলত পূর্বমুখী বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এই মন্দিরটির আয়তন ২৪ গুন ১৫ ফুট। এই ভিটায় যে পাথরের আবিষ্কার হয় তার আয়তন ৯ ফুট ৪ ইঞ্চি,  ২ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং ২ ফুট ৪ ইঞ্চি। এই ভিটায় এক সময় বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ সমাজের প্রভাব ছিল।

বেহুলার বাসর ঘর

মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে সম্রাট অশোক নির্মিত একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে। এই স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্ব পাশে রয়েছে চৌবাচ্চা সদৃশ্য একটি গোসলখানা। আর এটি বেশি পরিচিত বেহুলার বাসর ঘর নামে।

মহাস্থানগড়ে পর ব্রামের প্রাসাদ ও সভা বাটী

এই প্রাসাদ টি পরশুরামের রাজ প্রাসাদের সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষ। এই প্রাসাদের আয়তন ২০০ ফুট ও ১০০ ফুট। রাজা পরশুরাম এই রাজপ্রাসাদে তার কাজ পরিচালনা করতেন। খোদার পাথর ভিটা থেকে যে বিস্তৃত রাস্তাটি মথুরা গ্রাম ও বসু বিহার পর্যন্ত প্রসারিত পরশুরামের সভা বাটী তার পাশেই অবস্থিত।

মহাস্থানগড় এ লক্ষিন্দরের মেধ

মহাস্থানগড়ে একটি ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যা বেহুলা লক্ষিন্দরের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই মেধ মন্দিরটি অবস্থিত মূল মহাস্থানগড় থেকে এক মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং প্রায় ৪৩ ফুট উচু এক ঢিবির ওপর এই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মেধটি বৌদ্ধদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় উপাসনালয় ছিল।

ভাসু বিহার

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন হলো ভাসু বিহার। এই বিহারটি ভাসু বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত যা বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানীয়রা একে চেনেন নরপতির ধাপ হিসাবে। এটি সংঘা রামের ধ্বংসাবশেষ নামেও পরিচিত। এটি খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমূর্তি পোড়ামাটির ফলক।

আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

১৮৭৯ সালে হিউয়েন সাং,সার আলেকজান্ডার কানিংহাম ঐতিহাসিক এবং ইতিহাস বিখ্যাত ভাসু  বিহার বলে সনাক্ত করেছিলেন। এই বৌদ্ধ বিহার দুইটি দশম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এর একটি উত্তর দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ দিকে। তবে উত্তর দিকের বিহারটি বড় এবং দক্ষিণ দিকের বিহার টি ছোট। উত্তর দিকের বড় বিহাটি বানানো হয়েছিল দুর্গের মতো করে যা পূর্ব পশ্চিম দিকে লম্বা ১৮৪ ফুট বা ১৬১ ফুট। এর পেছনের দেয়ালটি পুরো ৮ ফুট। এই বিহারে রয়েছে মোট ৩১ টি কক্ষ। এছাড়া রয়েছে বারান্দা ও ভেতরে প্রবেশ কক্ষ এবং দুইটি প্রহরী কক্ষ।

ছোট বিহারটি বড় বিহারের ৭৫ ফুট দক্ষিণে অবস্থিত। এই বিহার টি নির্মিত হয়েছে ইট এবং কাঁদার গাঁথুনি দিয়ে। এর দেয়ালটি পুরো সাড়ে ছয় ফুট। এর বারান্দা ৮ ফুট চওড়া এবং কক্ষগুলো বারান্দার সাথে যুক্ত। বিহারের কেন্দ্রের প্রাঙ্গণটির আয়তন ৮২ বা ৮০ ফুট। বারান্দা থেকে সামান্য পশ্চিমের দিকে প্রসারিত পাঁচটি ধাপ বিশিষ্ট একটি সিঁড়ি নেমে গেছে। এই বিহারের বাইরের কারুকার্য ছিল বাঁকানো ইটের কার্নিশ যুক্ত চমৎকার।

মহাস্থানগড় এর বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে মহাস্থানগড়ে বহু সংখ্যক প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে  এর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। এখানে খনন কাজের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকে শুরু করে মুসলিম যুগের শেষ পর্যন্ত অনেক প্রাচীন নিদর্শন। সত্যিই মহাস্থানগড় যে একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান তা বোঝা যায় এসব নিদর্শন দেখে।

মাহাস্থানগড় সম্পর্কে ২০টি বাক্য

মহাস্থানগড় হল বাংলাদেশের প্রাচীন নিদর্শন।নিচে মহাস্থানগড় সম্পর্কে ২০টি বাক্য আলোচনা করা হলো-

মহাস্থানগড় হল বাংলাদেশের বগুড়া জেলার একটি অন্যতম পুরা কীর্তি।

মহাস্থানগড় এর পূর্ব নাম ছিল পুন্ড্র নগর। 

মহাস্থানগড় একসময় বাংলার রাজধানী ছিল।

মস্তান গড়ে গুপ্ত মৌর্য সেন পাল বংশের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায়।

 মহাস্থানগড় বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় অবস্থিত।

মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার করতা নদীর তীরে অবস্থিত।

মহাস্থানগড়ের  উচ্চতা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট।

মহাস্থানগড় খনন করে এখান থেকে বিভিন্ন আমলের শিলা, পাথর এবং মুদ্রা পাওয়া গেছে।

মহাস্থানগড় সুদীর্ঘ আড়াইহাজার বছরের ইতিহাসে বাংলার পুরা কীর্তির এক নীরব ইতিহাস।

মহাস্থানগড়ের রাজা ছিলেন নল।

 মহাস্থানগড় সমৃদ্ধি লাভ করে রাজা পরশুরামের আমলে।

মহাস্থানগড় কে রাজা পরশুরাম রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন।

মহাস্তানগড়ের দক্ষিণ পশ্চিমে সম্রাট আশোক নির্মিত একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে। 

মহাস্তানগড়ের শিলা দেবীর ঘাটের পশ্চিমের জিউৎ কুন্ড কূপ নামে একটি বড় কুপ আছে। 

মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনে উত্তর পাশে গোবিন্দ ভিটা মন্দির অবস্থিত। 

মহাস্থানগড়ে বৈরাগী ভিটা নামক দুইটা বড় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

মহাস্থানগড়ে হযরত শাহ সুলতান এর মাজার শরীফ রয়েছে।

মহাস্থানগড়ের রাজা পরশুরামের সাথে মাহিশাওয়ারের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়।

মহাস্থানগড়ে সুলতান মাহিশ শাওয়ার ইন্তেকাল করেন।

মহাস্থানগড়ে একটি ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যা বেহুলা লক্ষিন্দরের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

উপসংহার

পরিশেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, মহাস্থানগড় সুদূর অতীতের স্মৃতি বুকে ধরে ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে থাকলেও মানুষ তাকে ভুলেনি। কালের আবর্তনে এর নাম হয়েছে মহাস্থানগড়। বিভিন্ন কারণে এটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। মহাস্থানগড় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পত্নস্থল বলে সারা পৃথিবীতে পর্যটকদের কাছে এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে আকর্ষণীয়।

এই মহাস্থানগড় আজও চঞ্চলতা ও আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়ে আছে বহু পর্যটক, গবেষক এবং বনভোজন পার্টির আনাগোনা ও ভিড়ের কারণে। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক পুরাকৃতির তত্ত্বাবধান করা একান্ত প্রয়োজন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url