বর্ষাকাল রচনা - বর্ষাকাল সম্পর্কে ১০টি বাক্য জানতে বিস্তারিত পড়ুন
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। চক্রে বর্ষা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঋতু। আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে হয় বর্ষা কাল। আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের এই বর্ষাকাল রচনা পরীক্ষায় লিখতে আসে। তাই আমি বর্ষাকাল রচনা লিখেছি। তোমরা যারা বর্ষাকাল রচনা পরীক্ষায় লিখতে চাও আমার এই রচনা তাদের জন্য।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আমি তোমাদের জন্য বর্ষাকাল রচনা অনেক সুন্দর ভাবে লিখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই রচনা যদি তোমরা পরীক্ষার খাতায় লিখ তাহলে ২০ মার্কের রচনা হিসেবে বেশ ভালো নম্বর পাবে। বর্ষাকাল রচনা নিচে বিস্তারিত লেখা হলো-
পোস্ট সূচীপত্রঃ বর্ষাকাল রচনা
- ভূমিকা
- বর্ষার সময়
- বর্ষার আগমন
- বর্ষার কারণ
- বর্ষার প্রকৃতি
- বর্ষার আবহাওয়া
- বর্ষার রূপ
- বর্ষার বৈশিষ্ট্য
- বর্ষায় প্রাকৃতিক দৃশ্য
- মানব মনে বর্ষার প্রভাব
- বর্ষায় পল্লীর অবস্থা
- বর্ষায় শহরের অবস্থা
- বর্ষার ফুল
- বর্ষার ফল
- বর্ষায় মানুষের জীবন
- কৃষিতে বর্ষার প্রভাব
- সাহিত্য সংস্কৃতিতে বর্ষার অবদান
- বাঙ্গালীদের অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা
- বর্ষার উপকারিতা
- বর্ষার অপকারিতা
- বর্ষাকাল সম্পর্কে ১০টি বাক্য
- উপসংহার
ভূমিকা
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঋতু চক্রে বর্ষা দ্বিতীয় ঋতু। বসন্তকে যদিও ঋতুরাজ বলা হয় কিন্তু রূপের দিক থেকে বর্ষাকে শ্রেষ্ঠ ঋতু বলা হয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নিয়ে বর্ষা ঋতু আমাদের সামনে হাজির হয়। গ্রীষ্মের তীব্র তাপে যখন প্রকৃতির উত্তপ্ত হয়ে উঠে তখন বর্ষা আসে আমাদের সামনে শীতল জীবনের নিঃশ্বাস হয়ে। তাইতো কবি বলেছেন-
সকাল দুপুর
টাপুর টুপুর
রিমঝিম ঝিম বৃষ্টি
আকাশ উপুর
ধাপুর ঝুপুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি
বিভিন্ন ঋতুর আগমনে প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্রের অতুলনীয় সমারোহ ঘটে এই বর্ষা ঋতুতে। আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে হয় বর্ষা কাল। গ্রীষ্মের পরেই আমাদের সামনে এসে হাজির হয় এই বর্ষা কাল। আমাদের এই দেশে ঋতু বৈচিত্র্যে বর্ষাকাল লাভ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
বর্ষার সময়
বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে হয় বর্ষাকাল।
বাংলাদেশের ঋতুচক্রে বর্ষা দ্বিতীয় ঋতু। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী যদিও আষাঢ় এবং
শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল কিন্তু অনেক সময় আমাদের এই দেশে বর্ষার আগমন ঘটে
অনেক আগে থেকেই এবং বর্ষাকাল স্থায়ী হয় প্রায় আশ্বিন মাস পর্যন্ত। আবার অনেক
সময় বর্ষা শুরু হয় তাড়াতাড়ি এবং শেষ হয় অনেক দেরিতে।
বর্ষার আগমন
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহ এর পরে আমাদের সামনে বর্ষা উপস্থিত হয় শান্তির বার্তা নিয়ে। বর্ষা আমাদের আকাশে - বাতাসে ও মাটিতে আনে নতুন রঙ ও রসের অফুরন্ত ছোঁয়া এবং উপহার। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের দিনগুলোতে মানুষ যখন অসহ্য গরমে ছটফট করতে থাকে তখন বর্ষা আমাদের সামনে হাজির হয় বৃষ্টিস্নাত দুপুর নিয়ে। আর বৃষ্টিস্নাত এই বর্ষা দেখে আমাদের মনে হয় বর্ষা যেন আমাদের সামনে হাজির হয় প্রকৃতির বুক জড়াতে। বাংলার আকাশে বাতাসে বর্ষাকাল মেতে উঠে এক নতুন খেলায় আর আনমনা মনে বলে ওঠে-
আমি বর্ষা, আমি আসলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি,
মায়ার কাজল চোখে মমতার আঁচল ভরি।
বর্ষার এই রূপ সৌন্দর্য দেখে মানুষের মনে আসে আনন্দের জোয়ার। প্রকৃতির নতুন সাজ
ময়ূরের নাচের মত মানুষের মনে নেচে ওঠে। প্রচন্ড গরমে বর্ষা যেন ছুটে আসে রূপকথার
রাজপুত্রের মত। বর্ষার শন শন শব্দে যেন শোনা যায় তার রথের মর্মর ধ্বনি এবং ঝলসে
ওঠা বাঁকা তলোয়ার। আর এ সময় পানিতে ভরপুর হয়ে ওঠে নদী-নালা- খাল- বিল-
মাট-ঘাট- পথ- প্রান্তর ।আর এই বর্ষার আগমনে খর তপ্ত দুপুরের অবসান ঘটে।
আরো পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আর এই সময় আমাদের সামনে আবির্ভূত হয় কঠিন মাটির বাধা অতিক্রম করে শস্য শিশুর
দল। আর এই সময় তাদের হাতে থাকে যেন নব অংকুরের জয় পতাকা। সামনে আরো হাজির
হয় পুষ্প বিকাশের লগ্ন। বর্ষার সমারোহ উৎসবে বাংলাদেশের আকাশ- বাতাস যেন ভরে ওঠে
রূপ- রস- গন্ধ- শব্দ এবং গীতে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাইতো বলেছেন-
"এ আসে অতি ভৈরব হরষে
জল জল সঞ্চিত সৌরভ ভরসে
ঘন গৌরবে নব যৌনা বর্ষা
সেম গম্ভীরে সরসা"।
বর্ষার কারণ
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আমাদের দেশে বর্ষা সংঘটিত হয়ে থাকে। আষাঢ় এবং শ্রাবণ
মাসে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় মৌসুমী বায়ু আর এই মৌসুমী বায়ু
বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আনে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প। আর এই জলীয় বাষ্প
বৃষ্টিপাত ঘটায়। আর এই মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাসে আমাদের
দেশে বর্ষাকাল শুরু হয়ে যায়।
বর্ষার প্রকৃতি
বর্ষার আগমনে মেঘ এবং বৃষ্টির মধুর খেলা হয়। আর গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি প্রকৃতি
যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। সবুজ প্রকৃতি এবং গাছপালা প্রাণ ফিরে পায়। আর এই
বৃষ্টিতে বনানী হয়ে উঠে সবুজ। কখনো বৃষ্টি নামে গুড়ি গুড়ি এবং কখনো মুষলধারে।
তাপদাহের দুপুরে শীতল বৃষ্টি প্রকৃতি ও জনমনে এনে দেয় প্রশান্তি। গ্রীষ্মকালে
শুকিয়ে যাওয়া নদী-নালা, খাল- বিল পরিপূর্ণ হয়ে যায় বর্ষার পানিতে। মাঠ
প্লাবিত হয়ে যায় বর্ষার সময়। গাছপালা গ্রীষ্মের ক্লান্তি শেষ করে প্রাণ
ভরে নিঃশ্বাস নেয় সবুজের বুকে।
বর্ষার আবহাওয়া
বর্ষাকালে কখনো বৃষ্টি হয় খুব ঘন ঘন এবং কখনো বৃষ্টি হয় থেমে থেমে। বর্ষাকালে
মেঘের গুরু গম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে উঠে। কারণ এই সময় আকাশ কালো
মেঘে ঢাকা থাকে। অনেক সময় একটানা কয়েক দিন সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায় না।
ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকায়, ঠান্ডা বাতাস বয়। বর্ষাকালে অনেক সময় এত বৃষ্টি হয় যে
বন্যা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বর্ষার রূপ
বর্ষার পানিতে নদী- নালা- খাল- বিল পানিতে ভরে একাকার হয়ে যায়। চারিদিকে থৈথৈ
করে বর্ষার পানি। ঘন কালো মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন থাকে। আকাশের বুকে চলে বিদ্যুতের
খেলা সূর্যের মুখ কয়েক দিন পর্যন্ত দেখা যায় না। মাঝে মাঝেই নীল আকাশে ভেসে
বেড়াই মেঘগুলো। একবার মনে হয় মেঘগুলো দূরে সরে যায় আবার ফিরে আসে নতুন সাজে
সজ্জিত হয়ে। মাঝেমধ্যেই চারদিকে মুখরিত হয় মেঘের গুড়গুরু শব্দে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আকাশের বুক চিরে অজস্র ধরার বৃষ্টি নেমে আসে। সারাদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি নামে।
আকাশে কালো মেঘ দেখে ময়ূরেরা পেখম মেলে। বৃষ্টি নেমে আসে আকাশের বুক ফেটে আর এই
সময় বাংলার কৃষকেরা ব্যস্ত থাকে বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফসল তোলার কাজে। বর্ষা কাল
আমাদের দেশে ধান এবং পাট কাটার সঠিক সময়। নতুন পানিতে আনন্দে এ সময় ব্যাঙেরা
গান ধরে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। কিন্তু বৃষ্টির চাপে বাহিরে যাওয়া যায় না। তাইতো বিশ্ব
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
বর্ষার বৈশিষ্ট্য
বর্ষার সময় আমাদের দেশের আকাশ সারাদিন কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে আর এটাই হলো বর্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য। খাল বিল সবকিছুই বর্ষার পানিতে টই টুম্বুর থাকে। গ্রীষ্মকালে নিমিষেই শুষ্ক নদী ভরে যায় বর্ষার পানিতে। নদীর দুই কুল ছাপিয়ে কুল কুল করে পানি বয়ে চলে। বর্ষার সময় যেন নদীগুলো নতুন যৌবন লাভ করে। সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরে। তাইতো কবি বলেছেন-
বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভড়ভড়
কালি মাখা মেঘে ওপারে আধার
ঘনিয়েছে দেখো চাহি রে
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে"।
বর্ষায় প্রাকৃতিক দৃশ্য
বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি যেন সাজে নতুন ভাবে। গাছপালা হয়ে ওঠে সতেজ এবং সবুজ
বর্ষার সময় নানা ধরনের ফুল ফোটে। প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরে আসে। গাছে গাছে দেখা
যায় সবুজ পাতা। হাসনা হেনা ফুলের গন্ধে এ ঋতু বিমোহিত করে তোলে সকল মানুষকে।
সবমিলিয়ে প্রকৃতি ধারণ করে নতুন সাজে।
মানব মনে বর্ষার প্রভাব
মানব মনে বর্ষার প্রভাব অপরিসীম। বর্ষা মানবতাকে সৃষ্টিশীল ও সহজ সরল করে তোলে। বর্ষা আমাদের মানব মনে অফুরন্ত আবেগের প্রবাহ নিয়ে আসে। বাংলার বর্ষা কাব্য সাহিত্যকে রস সমৃদ্ধ করেছে। বর্ষা আমাদেরকে প্রেম ও ভালোবাসার অনুভূতি উপহার দিয়েছে। বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ছায়ায় বনভূমি শ্যামল হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বর্ষা মানুষের মনকে সহজ সরল ভাবে সৃষ্টিশীল করে তুলে। তাইতো মন হয়ে যায় উদাস। বর্ষা মুখর দিনে মন চায় কারো সান্নিধ্য লাভ করতে। তাইতো পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বলেছেন-
"আজকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন
চুল ছল ছল ধরে
বেনুবনে বায়ু নড়ে এলোকেশে
মন যেন চায় তারে"।
বর্ষায় পল্লীর অবস্থা
গ্রামের নদী, নালা, খাল, বিল,ডোবা, পুকুর সব কিছুই বর্ষার পানিতে থৈথৈ করে। নৌকা
ছাড়া যেন চলাচল করা যায় না। গ্রামের রাস্তাঘাট হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত যার কারণে
চলাফেরা করতে অনেক অসুবিধা হয়। কৃষকেরা মাঠে যায় অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যেই।
গৃহিণীরা ঘরে কাজ করে। বর্ষায় নদীতে নতুন পানি জমে আর এই কারণে নদীতে মাছ ধরার
ধুম পড়ে যায়। আবার বর্ষার পানিতে মাছগুলো সাজে নতুন সাজে। খাল বিলে ফুটে শাপলা
ফুল।
বর্ষায় শহরের অবস্থা
বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে যায় শহরের নিম্ন অঞ্চল গুলো। এছাড়াও রাস্তায় জমে
থাকে পানি যার কারণে ঘর থেকে বের হতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবুও বিভিন্ন প্রয়োজনে
মানুষকে যেতে হয় বাহিরে। মানুষকে পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। এ সময় জিনিসপত্রের
দাম অনেক বেড়ে যায় বিশেষ করে দাম বাড়ে কাঁচা তরকারির। যার কারণে মধ্যবিত্ত এবং
নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্ট বেড়ে যায় অনেক গুণ।
বর্ষার ফুল
বর্ষাকালে চারিদিকে যেন বসে ফুলের মেলা। বর্ষাকালে আমাদের নদী, নালা ও খাল, বিল
পানিতে ভরে যায় যার কারণে এ সময় বিলে ফোটে শাপলা পদ্ম ও কলমি সহ নানা রঙের ফুল।
এছাড়াও বর্ষার সময় ডাঙ্গাতে ফোটে কদম, কেয়া, হিজল, বেলি, গন্ধরাজ ও বেলি ফুল।
এসব ফুল বর্ষার পানিতে ভিজে যেন সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষাকালে চারিদিকে ফুটে থাকে
হাজারো রঙের ফুল।
বর্ষার ফল
বর্ষাকালে আমাদের দেশে পাওয়া যায় নানা রকম ফল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল গুলো
হল- আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম ,আমড়া, আতা, বাতাবি লেবু ও লটকন ইত্যাদি। আর এইসব
ফল বর্ষার বৈশিষ্ট্যকে আমাদের সামনে স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরে।
বর্ষায় মানুষের জীবন
বর্ষাকালে মানুষের জীবন অনেক সময় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিচু জায়গা গুলো ভরে যায়
পানিতে। এছাড়াও যখন বর্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তখন নিম্ন অঞ্চল গুলোতে
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। চারদিকে পানিতে ছোট ছোট গ্রামগুলো মনে হয় এক
একটি ছোট ছোট দ্বীপ। আবার অনেক সময় বাইরে যেতে হলে নৌকা ব্যবহার করে বাইরে যেতে
হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে স্বল্প আয়ের মানুষেরা। ব্যাহত হয়
স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সব মিলে মানুষকে পোহাতে হয় অনেক দুর্ভোগ।
কৃষিতে বর্ষার প্রভাব
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ভাগ লোক কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আর বর্ষাকাল কৃষি ও কৃষকদের জন্য একটি ভালো দিন কারণ কৃষি কাজে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য শস্য হলো ধান। এই সময় কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য ধান চাষে। বর্ষাকালে মাঠের কচি ধানের চারা গুলো মনে হয় পানিতে দোল খাচ্ছে। অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয় যার কারণে বর্ষাকালে সব কিছুর দামও আবার বেড়ে যায়।
সাহিত্য সংস্কৃতিতে বর্ষার অবদান
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ও বর্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলে
এই বর্ষার পানি। এমনি আবার মানুষের মনকে করে সারস ও সজীব। অনেক কবি
সাহিত্যিক বর্ষার সৌন্দর্যের মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছেন বিভিন্ন গান, কবিতা ও
উপন্যাস। বিভিন্ন প্রাচীন কবি থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন কবি
সাহিত্যিক মুগ্ধ হয়েছেন বৃষ্টির পানিতে। বর্ষার পানি সিক্ত করে তোলে বিভিন্ন কবি
সাহিত্যিকদের মন। তাইতো কবি বলেছেন-
"এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘর বারিষায়"।
বাঙ্গালীদের অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা
বর্ষার পানি আমাদের এই দেশেকে শস্য শ্যামল করে তুলেছে। এ সময় বাংলার কৃষক বীজ
বোনে, চারা তোলে এবং রোপন করে। বর্ষার দাক্ষিণের উপর নির্ভরশীল বাংলার অন্ন,
বস্ত্রসহ সকল ঐশ্বর্য। বর্ষা বাঙ্গালীদের মনোভূমিকে করেছে কাব্যময় ও সারস। বর্ষা
অর্থনৈতিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ বিধান করে এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও দিয়েছে গঠন করে।
বৃক্ষরোপণ, বর্ষা মঙ্গল, জন্মাষ্টমী ও রথযাত্রা সবকিছুই যেন এই বর্ষার অবদান।
বর্ষার উপকারিতা
আমাদের এই দেশে বর্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই কৃষি
প্রধান দেশে বর্ষা নিয়ে আসে আশ্বাসের বার্তা। এদেশের চাষাবাদ ও ফলন সবকিছুই
নির্ভর করে বৃষ্টির ওপর। বর্ষার কারণে বন্যা হয় আর এই বন্যার পানিতে জমিতে
পড়ে পলিমাটি আর যার কারণে আমাদের জমি হয়ে ওঠে উর্বর এবং ভালো ফসল ফলে। বর্ষার
ফলে অনুর্বর মাটি হয়ে ওঠে অনেক উর্বর। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর বর্ষার পানিতে
শীতল হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বর্ষার নতুন পানিতে মাছ দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে যার কারণে আমাদের খাল-বিল মাছে ভরে
যায়। পানিতে ভরপুর হয় বিভিন্ন নদী ও জলাশয় যার কারণে মাছ খুঁজে পায় তার সঠিক
আবাসস্থল। বর্ষার পানি চারপাশে ময়লা আবর্জনা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। নদীতে
পানি বেড়ে যায় যার কারণে নৌকা চলাচলে সহজ হয়। বর্ষার পানিতে বাতাসের দূষিত
পদার্থ মাটিতে মিশে যায় যার কারণে প্রকৃতির বাতাস হয়ে যায় বিশুদ্ধ।
বর্ষার অপকারিতা
বর্ষার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতাও রয়েছে অনেক। বর্ষার পানিতে
রাস্তাঘাট কাদায় ভরে যায় আবার কোথাও কোথাও ডুবে যায়, কোথাও দেখা দেয় বন্যা।
যার কারণে চলাচলে অসুবিধা হয়ে থাকে। দিনমজুরেরা ঘরে আবদ্ধ হয়ে যায় তারা কোন
কাজ করতে পারে না যার কারণে তাদের দুঃখের কোন সীমা থাকে না। গরিবের ঘরে পানি পড়ে
তার ভাঙ্গা চালা দিয়ে যার কারণে বৃষ্টির পানিতে ঘরের সমস্ত কিছু ভিজে যায়।
বর্ষার সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় গবাদি পশুগুলোর। আবার বর্ষা শেষে দেখা দেয়
নানান ধরনের রোগ।
বর্ষাকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বর্ষা বাংলাদেশের ঋতুরাজ্যের দ্বিতীয় ঋতু। আষাঢ় এবং
শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে বর্ষাকাল হয়। যদিও বাংলাদেশে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রচুর
বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকাল সম্পর্কে ১০টি বাক্য নিচে আলোচনা করা হলো-
- বর্ষা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঋতু।
- আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে বর্ষাকাল।
- বর্ষাকালে চারিদিকে পানিতে ভরে যায়।
- বর্ষাকালে কদম কেয়া ফুল ফোটে।
- বর্ষাকালে প্রকৃতি নতুন সাজে সেজে ওঠে।
- বর্ষাকালের বায়ু অত্যন্ত নির্মল থাকে ঠিক সকালের বাতাসের মতো।
- বর্ষাকালে ফসলের অপার সম্ভাবনা থাকে তাই কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
- বর্ষার সময় নৌকা বাইচ, ফুটবল ইত্যাদি খেলা হয়।
- বর্ষাকালে হিন্দু সনাতন ধর্মের মনসামঙ্গল পূজা হয়।
- বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে।
- বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।
উপসংহার
বর্ষা তার নিজের স্বরূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। বর্ষার অপকারিতার
চেয়ে উপকারীতাই বেশি। বর্ষার কারণে এ দেশ হয়ে ওঠে সুজলা-সুফলা। যদি বর্ষা না
হতো তাহলে আমাদের দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো। তাই বলা যায় বর্ষা আমাদের জন্য
প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরূপ। তাইতো আমরা বর্ষাকে জানাই সাদর সম্ভাষণ। আর এ কারণেই
হয়তো কবি বলেছেন-
"হে বর্ষা, তুমি মোদের করিয়াছো দান
সুজলা- সুফলা- শস্য- শ্যামলা প্রাণ"।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url