নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় বিস্তারিত জানতে পড়ুন

হজ একটি ফরজ ইবাদত। হজ পালন করা প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মমিন মুসলিমের ওপর ফরজ।   নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় এ সম্পর্কে একজন মেয়ের অবশ্যই জানা প্রয়োজন। আর এজন্যই আমি নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি-

Image

প্রত্যেকটি পুরুষের মতো নারীদেরও হজ পালন করার বাধ্যবাধকতা আছে। তাই আমি  নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় এ সম্পর্কে আমার আর্টিকেলের যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।  নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় এ সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো-

 পোস্ট সূচীপত্রঃ নারীদের ওপর হজ কখন ফরজ হয়

নারীদের ওপর হজ কখন ফরজ হয়

ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ হল পাঁচটি। সেগুলো হল- কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ, এবং যাকাত। প্রত্যেকটি সামর্থ্যবান মুসলিম মুমিনদের ওপর হজ পালন করা ফরজ। নারীরা যদি সামর্থ্যবান হয় তাহলে তাদের উপর ও হজ পালন করা ফরজ। তবে নারীদের হজের ব্যাপারে কিছু শর্ত বা নিয়ম আছে। ইসলামের এই নিয়ম বা শর্ত ভেঙে নারীরা হজে যেতে পারবেন না। ইসলাম নারীদের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ অর্পণ করেছে যেগুলো নারীদের মেনে চলতে হয়।

কোন নারী যদি হজ পালন করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই তার স্বামী বা তার মাহারম পুরুষের সঙ্গে হজে যেতে হবে। ইসলামী বিধি মতে ৪৮ স্বরীয় মাইল বা ৫৪ মাইল বা ৮৭ কিলোমিটার পথ সফর করা হলো শরীয় সফর। আর এই সফরে পায়ে হেঁটে হোক অথবা বাস, রেল বা প্লেনে হোক, একদিনের জন্য হোক বা সাত দিনের জন্য হোক নারীরা একা হজে যেতে পারবেন না। নারীদের যদি কোন প্রয়োজন হয় তবুও নারীরা মাহরাম পুরুষ বা স্বামী ছাড়া কখনোই বাইরে বা হজে যেতে পারবেন না।

আরো পড়ুনঃ হজ কাকে বলে -  হজ কত প্রকার ও কি কি জেনে নিন

হজ পালন করা নারী এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ফরজ। মহান আল্লাহতালা সূরা আল ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে বলেন,-" মানুষের মধ্যে যারা সেখানে বায়তুল্লায় পৌঁছার সমর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের কাজ করা ফরজ। আর যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি জগতের মুখাপেক্ষী নন"। তবে নারীদের আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ও তারা পুরুষের মতো হজ করতে পারবেন না।

নারীদের হজ পালন করার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত বা বিধি বিধান রয়েছে যেগুলো নারীরা হজ পালন করতে হলে তাকে অবশ্যই পালন করতে হয়। ইসলামে হজ হলো আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। হজ করার আর্থিক ক্ষমতা হওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে হজ করা অত্যন্ত জরুরী। কেননা কোন লোকের যদি হজ করার সামর্থ্য থাকার পরেও হজ পালন না করে এবং পরবর্তীতে যদি সে গরিব হয়ে যায় তাহলে তার ওপর হজের ফরজিয়ত থেকে যাবে। পরবর্তীতে সে যদি গরিব হয়ে যায় তাহলেও তার হজের শর্ত কিছুতেই ছুটে যাবে না।

যদি একজন নারীর কাছে তার নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ করার পর আল্লাহর দরবারে পৌঁছে আবার ফিরে আসার মত আর্থিক সামর্থ্য থাকে এবং তার যদি মাহারাম পুরুষ থাকে এবং সেই পুরুষ যদি আর্থিক সামর্থ্যবান হয়ে থাকেন অথবা নারীর যদি সামর্থ্য থাকে ওই মহরম পুরুষের খরচ দেয়ার মত তাহলে একজন নারীর উপর হজ করা অবশ্যই ফরজ। আর হজ্ব ফরজ হওয়ার পরে যতক্ষণ ওই নারী হজ পালন না করবেন ততক্ষণ সে গোনাগার হতে থাকবেন।

আরো পড়ুনঃ  সালাত কাকে বলে - সালাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা হলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং অন্যতম সাহাবী। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত-" কোন ব্যক্তির ওপর যদি হজ্ব ফরজ হয় আর সে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হজ পালন করতে দেরি করে বা হজ আদায় না করে তাহলে আমি জানিনা তার ইহুদি বা খ্রিস্টান রূপে মৃত্যু হল কিনা"। আর এই উক্তি থেকে বোঝা যায় প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে হজ এবং ওমরা পালন করতে হবে মহান আল্লাহতালার বিধান হিসেবে।

হজ পালন করার পূর্বে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের মনে রাখতে হবে হজ পালন করতে হবে আল্লাহর বিধান মোতাবেক তাহলে মুক্তি মিলবে। আর যদি আল্লাহর বিধান ছাড়া মন গড়া ভাবে হজ পালন করা হয় তাহলে সওয়াবের পরিবর্তে বরং গোনাগার হতে হবে। তাই প্রত্যেক নারীদের ওপর কখন হজ্জ ফরজ হয় এ সম্পর্কে নারীদের অবশ্যই জানতে হবে।

মাহারাম কাকে বলে

শরীয়দৃষ্টিতে মাহারাম তাদেরকে বলা হয় যাদের সাথে  নারীর বিবাহ বৈধ নয়। একজন নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ হল- বাবা, ভাই, আপন চাচা, আপন মামা, মেয়ের জামাই এবং আপন শশুর। তাই নারীদের হজ পালন করার পূর্বে নারীদের ওপর হজ কখন ফরজ হয় এবং মাহারাম পুরুষ কারা বিস্তারিত জেনে হজ পালন করতে যাওয়া উচিত।

মাসয়ালা

একজন নারীর যাদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ আছে তারা কখনো ওই নারীর মাহরাম পুরুষ হতে পারেনা। তাই তাদের সাথে শুধু হজে কেন কোথাও যাওয়া যাবে না এবং তাদের সাথে পর্দা করা ওই নারীর জন্য ফরজ। যেমন- মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, চাচাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, পালক পুত্র এমনকি মুখে ডাকা বা পাতানো বাবা ছেলে বা ভাই ইসলামে মাহরাম পুরুষ হিসাবে গণ্য করা হবে না।

নারীদের হজ পালন করার শর্ত

একজন নারী আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্যবান হলেই সে পুরুষের মতো হজ করতে যেতে পারে না। হজ করার জন্য তাকে কিছু বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। ইমাম আবুল হাসান সুখদি রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর বর্ণনা মতে, মহিলাদের জন্য হজের বিধিমালাতে ১১টি বিশেষ বিধন রয়েছে। সেগুলো নিচে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো-

আরো পড়ুনঃ রোজা কাকে বলে -  রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে নিন

  • একজন নারীকে অবশ্যই আর্থিক দিক থেকে সচ্ছলতা থাকতে হবে বা সচ্ছল হতে হবে।
  • নারীর আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি তার স্বামী বা মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।
  • নারীরা সেলাইকৃত পোশাক পরিধান করতে পারবেন।
  • একজন নারীর হজে চেহারা খোলা রাখলেও মাথা ঢাকতে হবে।
  • পুরুষদের জন্য জোরে জোরে তাবলিয়া সুন্নত, নারীদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পড়া সুন্নত।
  • একজন নারীর জন্য সাফা - মারওয়া পাহাড় খালি না পেলে ওঠা সুন্নত নয়, তবে যদি পুরুষ না থাকে তাহলে উঠতে পারে।
  • মেয়েদের হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া  সুন্নত নয়, তবে যদি পুরুষ না থাকে তাহলে দিতে পারবে।
  • জিয়ারতের পর ঋতুস্রাব শুরু হলে মহিলাদের জন্য তাওয়াফে বিদ্যা করা জরুরি নয়।
  • সাফা- মারওয়া সাঁই করার সময় সবুজ চিহ্নদের মাঝে নারীরা সাধারণ গতিতে হাঁটবেন, দ্রুতগতিতে হাঁটা যাবে না।
  • পুরুষ গণের তাওয়াফ এর তিন চক্করে বুক উঁচিয়ে হাত নেড়ে এবং বাহাদুর এর মতো হাঁটা সুন্নত কিন্তু এমন নিয়ম মেয়েদের ক্ষেত্রে সুন্নত নয়।
  • হজ শেষে পুরুষদের মাথা মন্ডল করতে হয় কিন্তু মহিলাদের মাথা মন্ডল করার কোন প্রয়োজন নেই। তারা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত চুল কাটবেন। নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় তা জানা একান্ত প্রয়োজন।

নারীদের জন্য অতিরিক্ত যে বিষয়গুলো জরুরী

সহজ পালনের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য অতিরিক্ত কিছু বিষয় বা বিধি-বিধান রয়েছে যেগুলো একজন নারীকে হজ পালন করতে গেলে অবশ্যই পালন করতে হয়। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো-

  • হজ পালন করার প্রধান শর্ত হলো আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। তাই যে নারী হজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে তাকে অবশ্যই হজের খরচ নির্বাহ করার আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকতে হবে।
  • হজের সফরে নারীদের সাথে অবশ্যই মাহরাম বা বৈধ দায়িত্বশীল পুরুষ ব্যক্তি থাকতে হবে।
  • নারীরা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী তিন মাস ইদ্দত পালন পরিপূর্ণ করে তারপর হজে যেতে হবে।
  • হজ পালন করার পূর্বে যদি নারী বিবাহিত হয় তাহলে তার স্বামীর অনুমতি অবশ্যই থাকতে হবে। তবে ফরজ হজের ক্ষেত্রে অনুমতি এত জরুরী নয়।   নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় তা জানা একান্ত প্রয়োজন।

যাদের ওপর হজ ফরজ

নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় তা জানার পরে হজ পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যাদের ওপর হজ ফরজ নিচে তার উল্লেখ করা হলো-

  • হজের পূর্ণ খরচ বহন করা সক্ষমতা থাকতে হবে
  • সুস্থ ও সবল থাকতে হবে
  • প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে
  • স্বাধীন হতে হবে
  • হজের সময় বা মৌসম হতে হবে
  • হজের রাস্তা নিরাপদ ও নিবিঘ্ন হতে হবে
  • আকোলবা জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে

একজন নারীর যদি উক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে থেকে থাকে তাহলে সে নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারবে।  নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় বিস্তারিত জানতে হবে।

নারীদের অতিরিক্ত আর্থিক সক্ষমতা

পুরুষদের মতো নারীদেরও হজ পালন করা ফরজ। তাই যে নারী হজ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করবে তার সাথে যে মাহারাম পুরুষ হজ্জ পালন করতে যাবে তার যদি আর্থিক সক্ষমতা না থাকে তাহলে নারীকে অবশ্যই সেই মাহরাম পুরুষের আর্থিক খরচ বহণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। আবার যদি সেই নারীর সাথে যে মাহরাম পুরুষ হজ পালন করতে যাবে তার যদি আর্থিক স্বচলতা থাকে তাহলে সেই নারীকে আর তার মাহরাম পুরুষের খরচ বহন করতে হবে না। নারী শুধু তার একার খরচ করেই হজ পালন করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষের খরচ দেওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না।

ভিড়ের কারণে মহিলাদের শিথিলতা

হজ পালনকালে যদি অতিরিক্ত ভিড় হয় তাহলে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে মহিলাদের জন্য  নিয়মের কিছু শিথিলতা রয়েছে। যেমন- মহিলা গন যদি ভিড়ের কারণে মুজদালিফায় অবস্থান করার সুযোগ না পান এবং যদি মুজদালিফায় অবস্থান না করে মিনায় চলে যান তাহলে তাদের ওপর পশু জবাই করা ওয়াজিব হবে না। (মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ)।

আরো পড়ুনঃ শুক্রবারে - বা জুমার দিনের - অতি গুরুত্বপূর্ণ  ১১ টি  বিশেষ আমল সম্পর্কে জেনে নিন

আবার অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে যদি মহিলা গন দিনের বেলায় কংকর মারার সুযোগ না পেয়ে থাকেন তাহলে মহিলাগণ রাতের বেলায় কঙ্কর মারতে পারবেন। এটা নারীদের জন্য জায়েজ আছে, মেয়েদের জন্য এটা মাকরূহ হবে না। (রোদ্দুল মুখতারঃ২/২৪৮)।

নারী ও পুরুষের হজের মধ্যে পার্থক্য

হজ পালনের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে হজ পালনের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে খুব বেশি যে পার্থক্য রয়েছে তা নয়। হজ পালনের ক্ষেত্রে একজন পুরুষকে যেসব কাজ করতে হয় একজন নারী কেও সেই সকল কাজই পূর্ণ করতে হয়। এরপরেও নারী এবং পুরুষের হজ পালনের ক্ষেত্রে যে পার্থক্যগুলো পরিলক্ষিত হয় তা হলো-

মাহরাম পুরুষ

একজন পুরুষ যদি আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হন তাহলে তিনি অনায়াসে হজ পালন করতে পারেন কিন্তু একজন নারী আর্থিক সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও হজ পালনের ক্ষেত্রে তার মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে।

পোশাক

হজ পালনের সময় পুরুষেরা ইহরাম বাধা অবস্থায় সেলাই বিহীন চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করবেন। কিন্তু মেয়েরা স্বাভাবিক পর্দা করবেন। শুধু মুখের ওপর কাপড় লাগিয়ে রাখবেন না। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাপড় পরার পাশাপাশি মাথা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে।

তালবিয়া পাঠ

তালবিয়া পাঠ করতে হয় ইহারাম বাধার পর "লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক"। আর তালবিয়া পুরুষেরা পড়বেন উঁচু স্বরে কিন্তু মেয়েরা তা উঁচু স্বরে পড়বেন না বরং নিচু স্বরে পড়বেন।

তাওয়াফ

নারীগণ তাওয়াফ করার ক্ষেত্রে পুরুষগণ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। কারণ তাওয়াফ করার সময় পুরুষদের বুক উঁচু করে হাঁটতে হয় আর মেয়েদের স্বাভাবিক অবস্থায় হাঁটতে হয়।

নারীদের ঋতু বর্তি হওয়া

হজ আদায় করতে গিয়ে যদি একজন নারীর ঋতুবর্তী হয় তাহলে ঋতু চলাকালীন সময়ে সে সবকিছুই করতে পারবে শুধু তাওয়াফে জিয়ারত করতে পারবেন না। তাহলে এক্ষেত্রে নারীকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফে জিয়ারত করে হজ্ব পালন শেষ করতে হবে। ১২ তারিখের পর ঋতু স্রাব বন্ধ হলেও জরিমানা দিতে হবে না।

আরো পড়ুনঃ হায়েজ কি - হায়েজ অবস্থায় নামাজ - কোরআন পড়ার বিধান জেনে নিন

নারীদের ইদ্দত পালন

কোন নারী যদি তালাকপ্রাপ্ত হন বা যদি তার স্বামী মারা যায় তাহলে তাকে তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে। এ সময় কোন নারী হজ পালন করতে পারবেন না, ইদ্দত পূর্ণ হলে হজের জন্য বের হতে পারবেন। নারীদের হজ পালন করার পূর্বে অবশ্যই ইদ্দত পূর্ণ করে তারপর হজ পালন করতে হবে।

নারীদের হাঝরে আসওয়াদ স্পর্শ

হজ পালনের সময় নারীদের কাবা শরীফের হাযরে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শের জন্য পুরুষদের সাথে ঠেলাঠেলি করে স্পর্শ করা যাবে না। পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কা ধাক্কি ছাড়া যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা যায় তাহলে কোন বাধা নেই। তবে মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কা ধাক্কি করে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করবেন না।

সাঈ অবস্থা

সাফা মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো কে বলা হয় সাঈ করা। আর এই সাঈ করা একজন মহিলার কাছ থেকে এসেছে। তাই নারীরাও সাঈ করবে তবে দু সবুজ বাতির এলাকায় নারীরা সাঈ করবে।

হজ সম্পর্কিত কিছু বিশেষ মাসআলা

হজ সম্পর্কিত কিছু মাসআলা রয়েছে নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-

হযরত উম্মুল মোমেনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হজের ইহারাম অবস্থায় ছিলাম। হাজীদের কাফেলা যখন আমাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতো তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদের অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম।( ২/২৫৪, হাদিসঃ ১৮৩৩)।

তাওয়াফে জিয়ারতের পর এবং আরাফায় অবস্থানকালে যদি মহিলাদের ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে তাদের তাওয়াফ বা বিদা করা জরুরী নয়। তবে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাওয়াফে বিদ্যা আদায় করে আশা উত্তম। 

হজ শুরু করার পর যদি মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায় তাহলে শুধু তাওয়াফ ও সাঁঈ ব্যতীত অন্য সব আমল সম্পাদন করতে হবে। হজ্ব শেষে ঋতু স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অতঃপর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে তাওয়াফ ও সাঈ করে হজ শেষ করতে হবে। (আল মাসবুত ৪/১৭৯)।

আরো পড়ুনঃ গীবত কত প্রকার - গীবত সম্পর্কে হাদিস জেনে নিন

ইহারাম বাধা অবস্থায় কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা যাবেনা এটা ইসলামে নিষেধ রয়েছে। তবে পর পুরুষগণ থেকে মেয়েদের পর্দা করা ফরজ। তাই প্রত্যেক মেয়েকে বেপর্দা হওয়ার গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। মেয়েরা তাদের চেহারা এমন ভাবে ঢেকে রাখবে যাতে করে মুখের উপর কোন কাপড় না থাকে। তবে পর পুরুষের সামনে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দিবেন আবার চলে যাওয়ার পরে মুখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেবেন।

মেয়েদের মনে রাখতে হবে যদি কাপড় দিয়ে মুখ এক ঘন্টার বেশি এবং ১২ ঘণ্টার কম সময় ঢাকা থাকে তাহলে পৌনে দুই কেজি গম বা তার সমমূল্য পরিমাণ অর্থ সাদগা দিতে হবে। আবার ১২ ঘণ্টার বেশি সময় যদি কাপড় দিয়ে চেহারা ঢাকা থাকে তাহলে একটি দুম্বা বা ছাগল জবাই করা ওয়াজিব হবে (মুয়াল্লিম, পৃষ্ঠাঃ ২৩৭)

ঋতুস্রাব এর কারণে মেয়েরা যদি হজের দিনগুলোতে নামাজ পড়তে না পারে তাহলে মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার কাজগুলো হজের নিয়ম অনুযায়ী করে যেতে হবে। শুধু তাওয়াফে জিয়ারত করা যাবে না। রিতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর বা পবিত্র হওয়ার পর তা করে নিতে হবে। হজের কোরবানির পর নারীদের পূর্ণ মাথার চুল কাটার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু চুলের হাতের আঙ্গুলের চার আঙ্গুল কাটা ওয়াজিব। তবে মেয়ে যদি ছোট হয় তাহলে চুল কামানো যাবে তবে মনে রাখতে হবে চুল অবশ্যই মাহারাম ব্যক্তির মাধ্যমে কাটতে হবে পর পুরুষ বা বেগানা পুরুষ দিয়ে চুল কাটানো যাবে না। (ফাতাওয়া সামিঃ২/৫১৬) 

ঋতুস্রাবের কারণে কোন নারী যদি তাওয়াফ করতে না পারে এবং তার যদি কোনোভাবেই হজের স্থানে অবস্থান করা সম্ভব না হয় তাহলে এ অবস্থাতেই তাকে তাওয়াফ করতে হবে এবং দম হিসাবে একটি উট বা গরু জবাই করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাকে তওবা ও করে নিতে হবে। যদি তাওয়াফ না করে ফিরে আসে তাহলে মক্কায় গিয়ে আবার জিয়ারত করে আসতে হবে। আর যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন তার স্বামী স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক বৈধ হবে না। (ফাতাওয়া সামিঃ ২/৫১৮-৫১৯)।

মেয়েদের একা ঘরে নামাজ পড়ায় উত্তম এবং সেটা সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এই নিয়ম মক্কা মদিনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তাই মেয়েরা মসজিদুল হারামের পরিবর্তে নিজ অবস্থানস্থলে নামাজ আদায় করলে ও মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের সমান সওয়াব লাভ করবে।( পবিত্র মক্কা-মদিনার পথে তোকে আমি, পৃষ্ঠাঃ ২৫)।

আরো পড়ুনঃ আশুরার রোজা কয়টি - আশুরার ফজিলত সম্পর্কে  বিস্তারিত জেনে নিন

মেয়েরা যদি মসজিদে নামাজ আদায় করতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই পরিপূর্ণ পর্দার সাথে মসজিদে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের দিকে দৃষ্টি পড়ার কারণে পুরুষেরা যেমন গুনাগার হবেন তেমনি নারীরাও গোনাগার হবেন। আর নারীরা যদি পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজে শরীক হন তাহলে কোন কোন ক্ষেত্রে নারীদের নামাজ নষ্ট হয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষদের নামাজও নষ্ট হয়ে যায়। তাই নারীরা যদি মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না পান তাহলে পুরুষের একপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন। এতে করে কারো নামাজ নষ্ট হবে না। (ফাতাওয়া সামিঃ ১/৫৭৪-৫৭৬)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ করা নারীদের জন্য মুস্তাহাব। তবে নারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত সময় জেনে নিয়ে নির্ধারিত গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং পূর্ব দিকের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করবেন। ঋতুস্রাব অবস্থায় সালাম পেশ করতে মসজিদে যাওয়া যাবে না। (ওয়াফাউল ওয়াফাঃ ৪/ ১৩৬২)।

ঋতু স্রাব বন্ধের জন্য মেয়েরা হজের সময় পিল খেতে পারেন। তবে যদি তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় তাহলেই তারা এই পিল খেতে পারবেন। (কিতাবুল হজ, পৃষ্ঠাঃ ৫৩)। 

মাসআলা

নারীদের মাহারাম পুরুষ ছাড়া অন্য নারী সঙ্গে মিশেও হজ পালন করা যাবে না। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কোন নারী মাহরাম ছাড়া যেন হজ না করে"।

মাসআলা

কোন নারীর যদি  হজ করার মত আর্থিক সামর্থ্য থাকে কিন্তু তার যদি মাহরাম পুরুষ না থাকে তাহলে তার হজের পরিবর্তে ওসিয়ত করা যাবে। তার মৃত্যুর পর তারা সম্পদের এক তৃতীয়াংশ  সম্পদ দ্বারা তা আদায় করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ঘুমানোর আগে  আমল - রাতে ঘুমানোর আগে কোন সূরা পড়তে হয় জানুন

মাসআলা

নারীদের ওপর যদি হজ ফরজ হয়ে থাকে তাহলে হজ আদায়ের ক্ষেত্রে যদি স্বামী বাধা দেয় তাহলে তা মানা যাবে না। তবে যদি নফল হজ হয় তাহলে স্বামীর অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবেনা। নারীদের ওপর হজ্জ কখন ফরজ হয় তা অবশ্যই জানতে হবে।

হজ সম্পর্কিত শেষ কথা

প্রত্যেকটি সুস্থ সামর্থ্যবান মুসলিম মানুষের ওপর হজ পালন করা ফরজ। সে পুরুষ হোক অথবা নারী হোক। জীবনে একবার হজ পালন করা আর্থিক সচ্ছল মানুষের ওপর অবশ্যই ফরজ। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত আর্থিক স্বচ্ছলতা আসার সঙ্গে সঙ্গে হজ পালন করে নেয়া। হজ পালন করা পুরুষের উপর যেমন ফরজ ইবাদত তেমনি মেয়েদের ওপর ও ফরজ ইবাদত। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম আছে যেগুলো হজ পালন করতে হলে তাকে মেনে তবে হজ পালন করতে হবে।

কারণ একজন পুরুষ আর্থিক সামর্থ্যবান হলে তার হজ করা ফরজ হয়ে যায় কিন্তু একটা মেয়ের ক্ষেত্রে তা হয় না। একটা মেয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি তার মাহরাম পুরুষ প্রয়োজন হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url