বাংলাদেশের উৎসব - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
উৎসবের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের এই দেশে বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রকম উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উৎসব রচনা আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সময় রচনা লিখতে হয়।বাংলাদেশের উৎসব রচনা আমি বিস্তারিতভাবে লেখার চেষ্টা করেছি।
আমাদের এই দেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসব রয়েছে। যেমন রয়েছে ধর্মীয় উৎসব তেমনি রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক উৎসব। আমি বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য লিখার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই রচনা লিখলে তোমরা বেশ ভালো নম্বর পাবে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা
- ভূমিকা
- উৎসব কি
- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের উৎসব
- নববর্ষ বা বাংলা নববর্ষ বরণ
- ঈদ উৎসব
- দুর্গাপূজা
- বড়দিন বৌদ্ধ পূর্ণিমা
- বৈশাখী অনুষ্ঠান
- নবান্ন উৎসব
- সামাজিক উৎসব
- উপসংহার
ভূমিকা
বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। প্রাচীন সভ্যতা পূর্ণ একটি দেশ হিসাবে বাঙালি জাতি আজও
বিশ্বের দরবারে পরিচিত হয়ে আছে। উৎসব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাইতো
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,- "মানুষেরা উৎসব করে। মানুষ যেদিন আপনার
মনুষত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্মরণ করে, সেই দিন। প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দিন একাকী
কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ,
সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ"।
আমাদের এই বাংলাদেশে বসবাস করে বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের মানুষ। বাংলাদেশ মুসলিম
প্রধান দেশ হলেও এ দেশে রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ,-খ্রিস্টান। এবং এরা সবাই মিলে মিশে
পালন করে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব। কোন দেশের মানুষ সম্পর্কে যদি জানতে চান
তাহলে সেই দেশের উৎসব সম্পর্কে জানতে পারলে দেশের মানুষকে অনেকখানি জানা হয়ে
যায়। তাই বলা হয় কোন দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের উৎসব সম্পর্কে আগে জানতে
হবে।
উৎসব কি
যা মানুষের মনকে আনন্দে বিভর করে তোলে তাকে বলা হয় উৎসব। উৎসবের মধ্যে মানুষ তার
মনের আনন্দ প্রকাশ করে এবং উপভোগ করে। তবে উৎসবের আনন্দ কখনো একার পক্ষে আনন্দ
হতে পারে না। উৎসব হলো পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরি মন্ডলে সকলের সুখ
ও আনন্দ লাভের উপায়। একমাত্র উৎসবই পারে সবাইকে আনন্দ দিতে আর মানুষ নিজ নিজ
ধর্মের উৎসব পালন করে আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের উৎসব
বাংলাদেশ উৎসব মুখের দেশ। তাই মনে হয় এখানের উৎসব যেন শেষ হয় না। এজন্যই হয়তো
বলা হয়ে থাকে- "বারো মাসে তেরো পার্বণ"। আমাদের দেশের বেশিরভাগ উৎসব পালন করা
হয় বিভিন্ন ঋতু, ধর্ম, গোত্র, জনগোষ্ঠী এবং জনগণকে কেন্দ্র করে। আর বাংলাদেশের
মানুষ যেসব উৎসব পালন করে তা যেন রবীন্দ্রনাথের উক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়-" আমার
আনন্দ সকলের আনন্দ হোউক, আমার শুভ সকলের শুভ হোউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচ জনের
সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি। এই কল্যাণী স্থায়ী উৎসবের প্রাণ"।
উৎসব মানুষের মনে যে কেবল আনন্দের সৃষ্টি করে তা নয়, উৎসবের মধ্যে দিয়ে দেশের
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যায়।
নববর্ষ বা বাংলা নববর্ষ বরণ
বর্ষবরণ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষবরণ আমাদের কাছে তথা বাঙালি জাতির কাছে পহেলা বৈশাখ নামে বেশি পরিচিত। ব্যথার গ্লানি ভুলে নতুন কে বরণ করে নেয়ার উৎসব। নববর্ষের দিনে চারিদিকে শুধু ধ্বনিত হয় -
"এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বাইয়ে
মুমূষেরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, যাক, যাক,
এসো হে বৈশাখ"।
বাংলাদেশের সকল ধর্ম, গোত্র, শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষ এই বর্ষবরণ উৎসব পালন করে থাকে। নববর্ষকে ঘিরে সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। এই আয়োজনের মধ্যে থাকে মেলা ও শোভাযাত্রা। ব্যবসায়ীরা এই দিনে "হালখাতা নামক" অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। এই দিনে তারা ব্যবসার নতুন খাতা খোলেন এবং বকেয়া উপলক্ষে তাদের নির্ধারিত গ্রাহকের নামে নিমন্ত্রণ পত্র বিতরণ করেন এবং তাদের মিষ্টিমুখ করান।
আরো পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
বাংলার প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ কে উপলক্ষ করে প্রায় মজাদার খাবার রান্না
করা হয়। পহেলা বৈশাখে বিশেষ করে পান্তা, ইলিশ, আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা সহ নানা
ধরনের খাবার তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন মেলাতে এইসব খাবারের দোকান বসানো
হয়ে থাকে। রমনার বটমূলে আয়োজন করা হয় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়াও
রাজধানীর ঢাকায় আরম্বরে পালন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়াও গ্রাম্য ভাবে
বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়।
গ্রামীণ বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রং মেখে মেলা, লাঠি খেলা, চরকি খেলা
ইত্যাদি। এছাড়াও গ্রামের মানুষ আরেকটি খেলা খেলেন যার নাম বলা হয় চৌড়ব গাছ। এই
খেলায় একজন পুরুষ মানুষের পিঠে বড় বড় কালা গেঁথে কলা গাছের মাথায় জড়িয়ে
তাকে ঘোরানো হয়। সত্যিই যা হৃদয়বিদারক এবং ভয়ংকর।
ঈদ উৎসব
ঈদ হল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ঈদ মুসলমানদের মাঝে আসে
মিলন আর আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই দিনে ধনী গরিব
ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং একে অপরের সাথে তাদের আনন্দ ভাগাভাগ করে নেয়।
বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের মুসলিমগণ মহা আনন্দে ঈদের উৎসব পালন করে থাকে।
মুসলিমদের জন্য বছরে দুটি ঈদ আসে আর তা হল- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। রমজান মাসের
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে শাওয়াল মাসের ১
তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আবার ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ পালন করা হয় সাওয়াল মাসের ১০ তারিখে। এই দিনে
ধর্মপ্রাণ মুসলমান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাদের সাধ্যমত পশু কোরবানির
দিয়ে থাকেন। ঈদুল আযহা কে আত্মত্যাগের ঈদ ও বলা হয়ে থাকে। এই দুটি ঈদে মুসলিমগণ
নতুন পোশাক পরিধান করে এবং ঈদগাহে একত্র হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে
তারা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে। প্রত্যেকের বাড়িতে ভালো খাবারের আয়োজন করা
হয় এবং তারা একে অপরের কে খাইয়ে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
তাইতো শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে বাংলাদেশের টেলিভিশন, বেতারে একটি গানই
বাঁজতে থাকে আর তা হলো-" ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ
বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ, সোনা দানা বালাখানা সব"। ঈদুল ফিতর মুসলিমদের সামনে
হাজির হয় তাদের সম্পদের পবিত্রতার বার্তা নিয়ে। ঈদুল আযহাতে পশু কোরবানির
মাধ্যমে মহান আল্লাহকে খুশি করা হয়। এটি আত্মত্যাগের ঈদ।
দুর্গাপূজা
হিন্দু সম্প্রদায় হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। আর হিন্দু
সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হল দুর্গাপূজা। এই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত
হয় সাধারণত শরৎকালে। আর শরৎকালে পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে শারদীয় দুর্গোৎসব ও
বলা হয়ে থাকে। আশ্বিন ও কার্তিক মাস নিয়ে হয় শরৎকাল। আশ্বিন মাসে যে চাঁদ উঠে
তার প্রথম অষ্টম ও নবম দিনে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে সপ্তমীর পূর্বের দিন
ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন নামক অনুষ্ঠান হয়।
আরো পড়ুনঃ লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
নবমীর পরের দিন দশমী অনুষ্ঠিত হয় আর এই দশমীর উৎসবকে বলা হয় বিজয়া দশমী। এই
পূজা উপলক্ষে পাড়ায় পাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক পূজা মন্ডপ তৈরি করে থাকে
এবং সেখানে প্রসাদের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজা যদিও হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব
তবুও বিভিন্ন ধর্মের লোক এই উৎসবে আনন্দ করে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি অষ্টমীতে
আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
অষ্টমীর দিন বেশি আনন্দ আর জাঁকজমক হয়ে থাকে। রাতে হয় আরতি নামক অনুষ্ঠান।
দশমীর দিন দেওয়া হয় বিসর্জন আর এই বিসর্জনের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার শেষ হয়। এছাড়াও হিন্দু ধর্মাম্বলির
আরও পূজা রয়েছে। যেমন -কালী পূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি। এবং
তাদের রয়েছে বারো মাসে তেরো পার্বণ।
বড়দিন
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের খ্রিস্টান ধর্মের সম্প্রদায় বড়দিন নামক
অনুষ্ঠান পালন করে থাকে বড়দিন হল যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন আর এই দিনকে ঘিরে
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বড়দিন নামে অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। প্রতিবছর ২৫শে
ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসব পালন করা হয়। গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা করার পর কেক
কেটে, চকলেট বিতরণ করে এবং গান গেয়ে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। সবার সাথে কূশল
বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ করা হয় এই বড়দিনের উৎসব।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা
গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা এই বৌদ্ধ পূর্ণিমা নামক
অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এই অনুষ্ঠান বৈশাখ মাসে পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়
বলে একে আবার বৈসাবি পূর্ণিমা বলা হয়। এই দিনের সাথে জড়িত রয়েছে গৌতম বুদ্ধের
জন্ম, বোধি লাভের সম্মতি ও তিরোধান। এই দিনে অনুষ্ঠিত হয় প্রভাত ফেরি, প্রদীপ
পূজা, ফুল পূজা ইত্যাদি। প্রার্থনা ও দাক্ষিণ্যের মাধ্যমে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল
প্রদান করা হয় এবং ফানুষ উড়িয়ে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।
বৈসাবী অনুষ্ঠান
বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে। তবে এদের মধ্যে তিন ধরনের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বর্ষবরণ উৎসবকে বলা হয় বৈসাবি অনুষ্ঠান। এই বৈসাবি শব্দটি বাংলাদেশের তিন ক্ষুদ্র জাতির উৎসবের প্রথম তিন অক্ষর " বৈ +সা+ বি" মিলে নেওয়া হয়েছে। এই বৈসাবি অনুষ্ঠান চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন পালন করে থাকে। এই অনুষ্ঠান সাধারণত বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।
নবান্ন উৎসব
নব + অন্ন = নবান্ন। এই নবান্ন শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদটি আমরা বাংলা দ্বিতীয় হয়ে
পড়েছি নব অর্থ নতুন এবং অন্ন অর্থ ভাত বা ফসল। নবান্ন এর মূল কথা হলো নতুন
ধানের উৎসব। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতু চক্রের চতুর্থ ঋতু হলো হেমন্ত ঋতু।
কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস নিয়ে গঠিত হয় হেমন্তকাল। আর এই হেমন্ত কালে
কৃষকের ঘরে উঠে আসে নতুন ধান।
এই হেমন্ত ঋতুতে কৃষকের মুখে ফোটে নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ এবং তারা নতুন ধানের
পিঠা পুলি তৈরি করে থাকে। তারা আত্মীয় পরিজনকে আমন্ত্রণ করার মাধ্যমে নবান্ন
উৎসব পালন করে থাকে।
সামাজিক উৎসব
সামাজিক উৎসব গুলো পালন করা হয় সাধারণত আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশে
অনেক ধরনের সামাজিক উৎসব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব অনুষ্ঠান বিশেষভাবে পালন করা
হয়ে থাকে সেগুলো হল-
বইমেলা
বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে বইমেলা পালন করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফেব্রুয়ারি
মাসের এক ১ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত পুরো মাস জুড়ে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে
এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। এই বইমেলা হলো পাঠক এবং লেখকের মিলন মেলা। বর্তমানে
এই বইমেলা শুধু বই বেচাকেনা হিসেবে বিবেচিত হয় তা নয় এটি পরিণত হয়েছে একটি বড়
সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে।
পহেলা ফাল্গুন
বাঙালি জাতির জন্য আরেকটি অন্যতম উৎসব হলো পহেলা ফাল্গুন। বসন্ত কালকে বরণ করে
নিতে এই দিনে বাঙালিরা সাজে নতুন সাজে। এই দিনে মাথায় ফুল দিয়ে, হলুদ শাড়ি
পরিধান করে ফাল্গুন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। এক কথায় এই দিনে বাঙালিরা সাজে
বসন্ত সাজে। চারিপাশে মনে হয় হলুদ ফুলের মেলা বসেছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
বাংলা হল আমাদের মাতৃভাষা। পৃথিবীতে এই বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য
জীবন বিসর্জন দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান ক্ষমতা
লাভের পর থেকেই আমাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি তাই বাঙালি জাতি তা মেনে নিতে পারেনি। ১৯৫২ সালের ২১শে
ফেব্রুয়ারি বাঙালি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। সেই
দিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ আরো অনেকে।
আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
আর তাদের এই আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাঙালি জাতি লাভ করে তাদের মায়ের
ভাষা, মুখের ভাষা বাংলা ভাষা। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং
বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করা হয়। এই দিনে বাংলার আকাশে
বাতাসে শুধু একটি সুরই ধ্বনিত হয়-" আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে
ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি"।
১৯৯৯ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে
স্বীকৃতি প্রদান করে।২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলো একুশে ফেব্রুয়ারিকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
স্বাধীনতা দিবস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হল ২৬ শে মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন "বাংলাদেশ স্বাধীন"। আর এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ
অর্জন করে স্বাধীন নামক একটি ভূখণ্ড, একটি স্বাধীন পতাকা, একটি স্বাধীন দেশ।
বিজয় দিবস
১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করে থাকি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের দখলদার হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হয়। এই দিনে পৃথিবীর বুকে আবর্তিত হয় "বাংলাদেশ" নামক নতুন একটি দেশ। সরকারী এবং বেসরকারিভাবে এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে।
এই দিনে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই বিজয় দিবস পালন করা হয়। ৩০ লক্ষ
শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই আজকের আমাদের বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি বাংলার বীর
শহীদদের স্মরণ করে রাখবে আজীবন।
পারিবারিক উৎসব
বাঙালি জাতি পারিবারিকভাবে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। পারিবারিক উৎসবের
মধ্যে রয়েছে- বিয়ে, অন্নপ্রশান, জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা ইত্যাদি।
অন্যান্য উৎসব
আমাদের এই দেশে সারা বছরই কোন না কোন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশে
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, ১৫ ই আগস্ট,
১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উৎসব, মধুমেলা, ঈদে মিলাদুন্নবী, মহরম, ইস্টার
সানডে, প্রবারণ পূর্ণিমা ইত্যাদি।
উপসংহার
কর্মব্যস্ত আমাদের এই জীবনে একঘেয়েমি দূর করতে বিভিন্ন উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। উৎসব মানুষের মাঝে সঞ্চার করে থাকে নির্মল আনন্দ। উৎসব পালনে মুছে যায় মানুষের মনের ছোট বড় সকল দুঃখ ভেদাভেদ। সকল শ্রেণীর মানুষ মিলনমেলায় একত্রিত হয় তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করে ন্যায় একমাত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে। আর এই উৎসবগুলো তাদের মনে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে।
উৎসব পালনের ক্ষেত্রে সকলকে অবশ্যই শালীনতা এবং ভদ্রতা বজায় রেখে উৎসব পালন করা উচিত।উৎসবের মধ্যে রয়েছে মূল্যবোধের বীজ যা মানুষকে জাগ্রত করে। সংস্কৃতি যেমন রক্ষা করে তেমনি মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রীতি ও শোহার্যপূর্ণ সম্পর্ক। আর এটাই আমাদের কামনা।
চমৎকার হয়েছে।