এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানুন
এলার্জি মানবদেহের একটি সাধারন অবস্থা। এরপরেও আমাদের জানতে হবেএলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়। আমরা যদি সঠিকভাবে না জানিএলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় তাহলে এক সময় ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। তাইএলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় জানতে আমার পোস্টে আপনাদের জন্য।
এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় সঠিকভাবে জানুন এবং এর প্রতিকার করুন। আর যদি বেশি এলার্জি হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করান।এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -
পোস্ট সূচিপত্রঃ এলার্জি কত ধরনের - এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়
- এলার্জি কি
- এলার্জি কত ধরনের
- এলার্জির কারণ
- এলার্জির লক্ষণসমূহ
- এলার্জি জাতীয় খাবার
- ত্বকের এলার্জি
- এলার্জি হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
- ড্রাগ এলার্জি বা ওষুধের কারণে এলার্জি
- এলার্জির ভয়াবহ অবস্থা
- মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া
- এলার্জির চিকিৎসা
- এলার্জির ঔষধের নাম
- শেষ বক্তব্য
এলার্জি কি
মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমের একটি দীর্ঘ স্থায়ী অবস্থার নাম হলো এলার্জি। যা পরিবেশের কোন এলার্জেনের কারণে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায় বা শরীরে হাইপার সেন্সেভিটি দেখায়। এলার্জি হল আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি এবং যেখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এলার্জি হলো বহিরাগত কোন বস্তুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি প্রতিক্রিয়া।
অনেক মানুষের ক্ষেত্রে আবার সেই বহিরাগত বস্তুটি আবার অনেক সময় ক্ষতিকর নাও হতে পারে।যাদের স্বাস্থ্য ভালো তাদের শরীরের প্রতিরক্ষা জীবাণু আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় যাদের এলার্জি আছে। এলার্জি এমন বহিরাগত বস্তু যার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে তাকে আবার এলার্জেন ও বলা হয়ে থাকে।
এলার্জি কত ধরনের
এলার্জি অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত দুই ভাগে এলার্জিকে ভাগ করা হয়। যথা -
পরিবেশগত এলার্জি এবং
জেনেটিক এলার্জি
এলার্জির কারণ
আমাদের শরীরকে ক্ষতিকর জিনিস থেকে সুরক্ষা দেয় দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে
অনেক সময় আমরা এমন বস্তুকে ক্ষতিকর ভাবি যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। আমাদের রোগ
প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এসব জিনিসের বিরুদ্ধে দেখা দেয় এলার্জির
লক্ষণ। আমাদের শরীরে এলার্জি দেখা দেওয়ার কারণগুলো হলো-
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার - এর ডাক্তারেরগণের তালিকা দেখুন
- ধুলাবালি
- নির্দিষ্ট কিছু খাবার
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
- ডিটারজেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
- বিভিন্ন ঔষধ
- কীটনাশক
- লেটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লোবস ও কনডম
- ডাস্ট মাইট
- মোল্ড বা ছত্রাক
- সূর্য রশ্মি
- পরাগরেণু ও ফুলের রেনু
- মানুষের শরীরের ঘাম
- গৃহপালিত পশু পাখি
- গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া ইত্যাদি।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
আমাদের শরীরের একটি খুব কমন সমস্যা হল এলার্জি। তবে এলার্জি হওয়ার প্রবণতা
শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় আবার অনেক এমন আছে যাদের ছোটবেলায় এলার্জি না
থাকলেও পরবর্তীতে এলার্জি হয়ে থাকে। তবে যদি কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলা যায়
তাহলে অনেক ক্ষেত্রে এলার্জি প্রতিরোধ করা যায়। অনেক সময় আমাদের শরীর এলার্জিক
উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে এলার্জি সমস্যা দেখা যায়।
নিচে অ্যালার্জির লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো-
- শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া
- ফোসকা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া
- চামড়ায় চুলকানি বা ফুসকুড়ি হওয়া
- শ্বাস কষ্ট, বুকে চাপা লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া হওয়া
- নাক বন্ধ হওয়া
- শুকনো কাশি, হাঁচি হওয়া
- নাকে ও গলায় চুলকানি হওয়া
- চোখ চুলকানি, চোখে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
- ঠোট, জিব্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া
- বুকে ঘড় ঘড় আওয়াজ হওয়া
- দম বন্ধ বোধ হওয়া
এলার্জি জাতীয় খাবার
যেসব খাবার খেলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে সেগুলো হল-
- গরুর মাংস
- হাঁসের মাংস
- ইলিশ মাছ
- চিংড়ি মাছ
- বেগুন
- বাদাম
অনেক সময় শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ ও ডিমেও অ্যালার্জি হতে পারে। তবে একেক জন
মানুষের একেক খাবারে এলার্জি হতে পারে।
খাদ্যের এলার্জি
হাতের এলার্জি সাধারণত খাবার খাওয়া ঠিক পরেই হয়ে থাকে। আর খাদ্যের ফলে যে
এলার্জি হয় তার উপসর্গগুলো হল-
আরো পড়ুনঃ রাজশাহীর সেরা নবজাতক - শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের তালিকা ও ফোন নাম্বার
- ত্বক চুলকায় এবং লাল হয়ে যায়
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- সংকোচন এবং উদরাময় বা ডায়রিয়া হওয়া
খাদ্যের ফলে এনাফাইলেক্সিস নামক এলার্জি হয়ে থাকে যা অত্যন্ত মারাত্মক। আর এনাফাইলেক্সিস এলার্জি হলে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় তা হল-
- জিভ, গলা ও ঠোঁট ফুলে যাওয়া
- দম বন্ধ লাগা
- হাত এবং পায়ে ঝিঝি ধরা বা অবশ লাগা ইত্যাদি।
ত্বকের এলার্জি
ত্বকের এলার্জি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং এর উপসর্গলি ও ভিন্ন হয়ে থাকে
ত্বকের এলার্জি গুলি হল-
একজিমা বা কন্টাক্ট ডারমাইটিস
যাদের শরীরে এই ধরনের এলার্জি আছে তাদের ত্বক প্রায়ই শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হয় ও চুলকায়। অনেক সময় আবার ত্বক চুলকাতে গিয়ে ফেটে যায় এবং পানির মতো এক প্রকার রস বের হয়। আর ত্বক এ এলার্জি সংক্রমণ করলে এমনটা হয়ে থাকে। বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি কানের পেছনে, জোড়া গুলিতে হতে পারে। বড়দের আবার হাতেও পায়ে এলার্জি হতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে আবার শরীরের যে অংশগুলো এলার্জেন বা ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে সেখানে কন্টাক্ট ডারমাইটিস হতে পারে বা ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে সেখানে কন্টাক্ট ডারমাইটিস হতে পারে।
ছুলি জাতীয় এলার্জি
যাদের ছুলি সমস্যা রয়েছে তাদের ত্বক লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায়। শরীরের
বিভিন্ন জায়গা লাল হয়ে যায় এবং বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়। আবার শরীরের বিভিন্ন
জায়গাতেও এলার্জি হতে পারে। ত্বকে যে ছুলি জাতীয় অ্যালার্জি হয় তাকে
একজিয়ো ডিমা বলা হয়ে থাকে। আর একজিয়োডিমা হলে ত্বকের নিচের স্তরগুলি বেশি
প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেমন - চোখের চারপাশে, গালে ও ঠোঁটে এটি হতে পারে। কখনো কখনো
এই এলার্জি গলা বা পেটের ভেতর বা যৌনাঙ্গেও হতে পারে।
কীটপতঙ্গ এবং পোষ্য প্রাণী থেকে এলার্জি
সাধারণ পোষ্য প্রাণী থেকে যে এলার্জি হয় তা ধুলা থেকে যেমন অ্যালার্জি হয়
তেমনটা হয়ে থাকে। আবার কীট পতঙ্গ থেকে এলার্জি হলে এই এলার্জির উপসর্গগুলো
হল-
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
মুখমণ্ডল, ঠোঁট, গলা এবং জিহ্বা ফুলে যাওয়া
আবার অনেক সময় পোকা বা পতঙ্গ কামড়ালে বা হুল ফুটিয়ে দিলে সেখানে চুলকায়, ছুলি হয় এবং অবশেষে সেখানে ফোসকা পড়ে যায়। যার ফলে এই ফোসকায় পরবর্তীতে পুজের সৃষ্টি হয়। তবে কীটপতঙ্গ কামড়ালে সাধারণ যে লক্ষণগুলি দেখা যায় তা হল-
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ - প্রতিকার জেনে নিন
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
পেটে সংকোচন বা পেট কামড়ানো ইত্যাদি।
ধুলা থেকে এলার্জির লক্ষণ
ধুলা বালি থেকে এলার্জি হলে সাধারণত যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় তা হল-
- হাঁচি,সর্দি বা নাক বন্ধ হওয়া
- চোখ লাল হয়ে পানি পড়া
- চুলকানি
- দম বন্ধ হওয়া
- কাশি বা বুকে ঘড়ঘড় আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি।
এলার্জিক রাইনাইটিস
এলার্জি রায়নাইটিস হলে যে সমস্যাগুলো হয় তা হল-
- ত্বকে এবং চোখে চুলকানি
- সর্দি বা নাক বন্ধ
- হাঁচি
- নাক বন্ধ হওয়ার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত
- ক্লান্তি জনিত দুর্বলতা ইত্যাদি।
এলার্জির সাধারণ প্রতিক্রিয়াসমূহ
এলার্জি হলে আমাদের শরীরে সাধারণত যে প্রতিক্রিয়া গুলো সৃষ্টি হয় নিচে তা
আলোচনা করা হলো-
এলার্জিক রাইনাইটিস
এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় পুকুরে গোসল করলে, বৃষ্টিতে ভিজলে, একটু ঠান্ডা লাগলে, ঠান্ডা কোন পানীয় পান করলে, ধুলোবালিতে গেলে সর্দি শুরু হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এইসব কাজে কোন কিছুই হয় না. তাদের কাছে এই সব কাজ সাধারন ব্যাপার। আর যাদের সমস্যা হয় তাদের এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়ে থাকে। আর এলার্জিক রাইনাইটিস হলে যেখানে সেখানে হিস্টামিনের প্রভাবে সেখানে প্রচুর পরিমাণে মিউকাস তৈরি হয়।
এবং শ্বাস যন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন সমূহ আক্রান্ত হয়।লুউকোট্রিন নামক এক প্রকার পদার্থ তৈরি হয় যা শ্বাস যন্ত্রে কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্র কে উত্তেজিত করে থাকে। এলাজিক রাইনাইটিস হলে সর্দি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং গায়ে হালকা জ্বর থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় রাইনো ভাইরাস ও এলার্জি হিসেবে কাজ করে থাকে।
চোখের এলার্জি বা এলার্জিক কনজারটিভাইটিস
এলার্জিক কনজারটিভাইটিস ও হলো চোখের এলার্জি জাতীয় রোগ। এই রোগ ৬ থেকে ১২ বছরের
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এই এলার্জি হলে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখে পানি
পড়ে এবং চোখ ব্যথা করে। আবার অনেক সময় এলার্জি রায়নাইটিস এর মত এলার্জি
কনজাংভাইটিস হতে পারে। এমন অনেক বাচ্চা আছে যাদের পুকুরে গোসল করলে, ধূলা বালিতে
খেলাধুলা করলে এলার্জি হয়ে থাকে। আর এই এলার্জি হলে বাচ্চাদের চোখ লাল হয়ে
যায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখ চুলকায় এবং ব্যথা করে থাকে।
এলার্জি হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
অনেক সময় গরুর গোস্ত বা বেগুন অথবা বাইরের খাবার খেলে বমি বমি ভাব বা চুলকানি
শুরু হয়। আর এইসব হয়ে থাকে এলার্জির কারণে। যাদের শরীরে এলার্জি আছে এই খাবার
গুলো তাদের শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়। এইসব খাবার অন্যদের জন্য আবার উপযুক্ত হতে
পারে। আর যদি এই সকল খাবার খেলে সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে এলার্জির
কারণে এইসব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
ড্রাগ এলার্জি বা ওষুধের কারণে এলার্জি
এমন অনেক মানুষ আছে যাদের অনেক ধরনের ঔষধ খেলে শরীর চুলকায় এবং চুলকাতে চুলকাতে
শরীর লাল হয়ে যায়। আর যদি শরীরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে বুঝতে হবে ওষুধের
প্রতি তার হাইপার সেন্সিভিটি রয়েছে। আর মেডিসিন ব্যবহারের ফলে যদি এমন হয়ে থাকে
তাহলে বলা হয় ড্রাগ এলার্জি। আর এই সব রোগীদের কখনোই এই সকল ঔষধ সেবন করা উচিত
নয়।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ - কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
এনাফাইলেটিক্স রিএকশন
এক প্রকার ইমারজেন্সি এলার্জিক কন্ডিশন কে বলা হয় এনাফাইলেটিক্স এলার্জি। অনেক
সময় দেখা যায় কারো শরীরে মশা বা অন্য কোন কীটপতঙ্গ কামড়ালে তার শরীর লাল লাল
চাকা হয়ে যায়, চুলকায় এবং শরীর ব্যথা করে। আর এই অবস্থা কে বলা হয় এনালিটিক্স
রিএকশন।
এটপিট একজিমা
এই এলার্জি হল একপ্রকার এলার্জিক স্কিন কন্ডিশন আর এই এলার্জি ও রিয়াকশন এর
কারণে হয়ে থাকে।
এলার্জির ভয়াবহ অবস্থা
পুরো বিশ্বব্যাপী দেখা যায় এলার্জি হল সাধারণ অবস্থা গুলোর মধ্যে একটি। অনেক সময় এলার্জির লক্ষণগুলো অল্প হতে পারে আবার অনেক সময় প্রাণঘাতী ও হতে পারে। বিশ ২০ শতকের দিকে অ্যালার্জি প্রাণঘাতী সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল তবে বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা ২০% মানুষের মধ্যে এলার্জির সমস্যা হলো নিত্য নতুন সমস্যা।
তারা আশঙ্কা করেন যে এলার্জি রোগ আক্রমণ করলে মৃত্যু ও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যে কোন দেশের মানুষের মধ্যে ১০ থেকে ৪০ ভাগ মানুষের এলার্জি রয়েছে। একজন মানুষের মধ্যে এলার্জির সমস্যা জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষে এলার্জি সমস্যা বাড়ছে।
এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ভারতীয় মোট জনসংখ্যার শতকরা ২0 থেকে ৩0 ভাগ লোকের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে এবং তারা এলার্জি সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ যেমন - হাঁপানি, রেনাইটিস নামক রোগে ভুগে থাকেন।
মারাত্মক এলার্জি প্রতিক্রিয়া
এলার্জি তীব্র প্রতিক্রিয়ার ফলে অ্যানাফিলাক্সিস নামক একটি জরুরি অবস্থা তৈরি
হতে পারে। আর এ অবস্থা থেকে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে
পারে। আর এমন রোগীদের ক্ষেত্রে যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে রোগের
মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তবে সময় মতো ইনজেকশন দিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে
আপনার যদি এনাফিলিক্স হয় তাহলে এর লক্ষণ গুলো হল-
- ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যাবে
- মুখ ঠোঁট জিব্বা এবং গলা ফুলে যাবে
- বুক গলা আঁট সাট হয়ে আসছে বা আটকে আসছে বলে মনে হবে
- শ্বাসকষ্ট হওয়া বা শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ করা
- শরীরের কিছু জায়গা থেকে চামড়া উঠে আসা বা ফোসকা পড়া
- চামড়ায় চুলকানি সহ লাল লাল ফুসকুড়ি বা রেশ হওয়া
- চামড়া ফুলে উঠা
- বুক ধড়ফড় করা
- শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া
- মাথা ঘুরানো বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
- বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা করা
- জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এলার্জির চিকিৎসা
প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে এলার্জির কোন স্থায়ী চিকিৎসা নেই। কারণ এলার্জি হল
ইমিটন সিস্টেমের সাথে সম্পর্কিত একটি সমস্যা। তাই যেসব খাবারে যাদের এলার্জি হয়
তাদের সেই সব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। আর যাদের অন্য কোন কারণে এলার্জি হয় তাদের
ওষুধের মাধ্যমে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্যাভাস ও জীবন যাত্রার কিছু
বিধি-নিষেধ মেনে চলে অনেক সময় এলার্জি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
মেডিকেশন
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে হিসটামিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে কারণ এলার্জিতে
প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন রিলিজ হয়। আর এন্টিহিস্টামিন হল এলার্জির মূল চিকিৎসা।
তবে এলার্জির চিকিৎসা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক করতে হবে কারণ এলার্জির
অল্টারনেটিভ চিকিৎসা নেওয়া বিপদজনক। তাই যে কোন শারীরিক সমস্যা হলে ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা
যেসব খাবার বা ঔষধ খেলে অ্যালার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শ্বাসনালীতে কোন
সমস্যা বা হাঁপানি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। মানসিক চাপ বা
স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচতে ব্যায়াম করতে হবে।তবে যোগ ব্যায়াম বা শাঁসের
ব্যায়াম ও করা যেতে পারে।
এলার্জির ঔষধের নাম
এলার্জির চিকিৎসা হিসাবে আন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। যাদের ধুলাবালি থেকে এলার্জি হয় তাদের এসব স্থানে যাওয়ার পূর্বে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা উচিত। এইসব ঔষধ আবার বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায় যেমন- সিরাপ, ড্রপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি। তবে মনে রাখবেন, এলার্জির ঔষধ সেবন করলে মাথা ঝিমঝিম, করা ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর আপনার ওষুধটি বেছে নিবেন।
এলার্জির কারণে নাক বন্ধ হলে আপনি নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এইসব ঔষধ এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করবেন না। আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে এসব ওষুধ ব্যবহার করেন তাহলে অ্যালার্জি লক্ষণ গুলো আবার ফিরে আসতে পারে। ত্বকের এলার্জি হলে আপনি মলম বা ময়েশ্চারিং ক্রিম লাগাতে পারেন। আপনার যদি চুলকানি সমস্যা হয় তাহলে মেন্থল ক্রিম ১ শতাংশ খুব ভালো কাজ করবে।
আরো পড়ুনঃ বাত জ্বর কাকে বলে - বাত জ্বরের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন
এছাড়াও আপনি চুলকানির স্থানে ঠান্ডা শ্বেক দিলে আরাম পাবেন এক্ষেত্রে আপনি
বরফ কুচি দিয়ে চেক দিতে পারেন। তবে আপনি যদি গুরুতর ভাবে অ্যালার্জি তে আক্রান্ত
হন তাহলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন। এ জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ দিবে তবে
মনে রাখবেন স্টেরয়েড ওষুধ শক্তিশালী ওষুধ যার কারণে এর পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়াও বেশি। তাই নিজে নিজে কোন ঔষধ না কিনে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ইমিউনো থেরাপি
ইমিউনো থেরাপি গুরুতর এলার্জির ক্ষেত্রে একটি ভালো চিকিৎসা আর এই চিকিৎসায়
রোগীকে নির্দিষ্ট এ্যালাজেনের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। যার কারণে এই
এলার্জিতে আর রোগীর পূর্বের মত সমস্যার সৃষ্টি হয় না। যার কারণে অ্যালার্জির
লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়ে যায়। তবে প্রতিক্রিয়া বেশি হলে
অ্যান্ড্রেনালিন নামক জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন দিতে হবে।
এলার্জির প্রতিরোধ
এলার্জি প্রতিরোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ এলার্জির সমস্যা থেকে ওষুধের
চেয়ে প্রতিরোধে বেশি নিরাপদে থাকা যায়। এলার্জি প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায়
হলো এলার্জি জাতীয় বস্তু এড়িয়ে চলা। এলার্জি প্রতিরোধে আপনি যা করতে পারেন তা
হল - এলার্জি জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন, যাদের ধুলাবালি থেকে এলার্জির
সৃষ্টি হয় তারা ধুলাবালিতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ
সেবন করবেন।
এলার্জি একটি প্রাণঘাতী সমস্যা তাই এলার্জিকে ছোট করে দেখবেন না। যদি এলার্জি
সমস্যা গুরুতর অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অবশ্যই একজন
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
শেষ বক্তব্য
আমাদের সবার কাছে মনে হয় এলার্জি এটি সাধারণ সমস্যা। তবে এ কথা সত্যি যে,
এলার্জি একটি সাধারন অবস্থা। তবে অনেক সময় এলার্জি ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে
আর যদি এলার্জি ভয়ানক আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
পরামর্শ নিবেন এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করবেন। আর যাদের এলার্জি জাতীয় খাবারে
এলার্জি হয় তারা অবশ্যই এলার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন।
মনে রাখবেন ঔষধ এর চেয়ে প্রতিরোধে অসুখ বেশি ভালো হয় তাই অবশ্যই সচেতন থাকবেন,
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। তাহলেই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url