বর্ষাকাল - রচনা - সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমাদের দেশে ছয়টা ঋতু রয়েছে। আর এই ছয়টা ঋতুর মধ্যে যেকোনো একটি ঋতু নিয়ে আমাদের রচনা লিখতে আসে। এর মধ্যে বেশি আসে বর্ষাকাল - রচনা। আমি তোমাদের সুবিধার্থে  বর্ষাকাল - রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করেছি।

Image

বর্ষাকাল - রচনা তোমরা যদি এভাবে পড়ে লিখতে পারো তাহলে আশা করা যায় বেশ ভালো নাম্বার অর্জন করতে পারবে। বর্ষাকাল - রচনা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ভূমিকা

বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। বর্ষা বাংলাদেশের ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু। বসন্তকে যদি ও ঋতুরাজ বলা হয় তবুও সৌন্দর্যের এবং রূপের দিক থেকে বর্ষা শ্রেষ্ঠ ঋতু। বর্ষা ঋতু হাজির হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। বিভিন্ন ঋতুর আগমনে প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্রের অতুলনীয় সমারহ ঘটে। গ্রীষ্মের পরে আসে বর্ষা। আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল।

আরো পড়ুনঃ  বাংলাদেশের উৎসব রচনা - সম্পর্কে জেনে নিন 

ঋতু বৈচিত্রে আমাদের এই দেশে বর্ষাকালে লাভ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের তীব্র তাপে প্রকৃতি যখন উত্তপ্ত হয় এবং রুক্ষ হয়ে ওঠে তখন বর্ষা আসে শীতল জীবনের নিঃশ্বাস নিয়ে। তাইতো কবি বলেছেন-

"সকাল দুপুর 

টাপুর টুপুর

রিমঝিমা ঝিম বৃষ্টি

 আকাশ উপুর 

ঝাপুর ঝুপুর

বন্ধ চোখের দৃষ্টি"।

বর্ষার সময়

বাংলা বর্ষের আষাঢ় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে বর্ষা দ্বিতীয় ঋতু। যদিও আষাড় এবং শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল কিন্তু অনেক সময় বাংলায় বর্ষার আগমন ঘটে আগে থেকেই এবং বর্ষাকাল স্থায়ী হয় আশ্বিন মাস পর্যন্ত। তাই অনেক সময় বর্ষা শুরু হয় তাড়াতাড়ি এবং শেষ হয় দেরিতে।

বর্ষার আগমন

বর্ষা আমাদের সামনে উপস্থিত হয় কাক ফাটা দুপুরে স্নান করাতে আর যেন আনমনা বলে
ওঠে-

আমি বর্ষা, আমি আসলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ  শেষ করি,

 মায়ার কাজল চোখে মমতার আঁচল  ভরি।

গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর বর্ষা আমাদের সামনে উপস্থিত শান্তির বার্তা নিয়ে। বর্ষা আমাদের আকাশে - বাতাসে ও মাটিতে আনে নতুন রঙ ও রসের অফুরন্ত উপহার। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমের দিনগুলোতে মানুষ যখন অসহ্য গরমে ছটফট করতে থাকে তখন বর্ষা আমাদের সামনে হাজির হয় বৃষ্টি স্নাত দুপুর নিয়ে। বর্ষাকে দেখে মনে হয় বর্ষা যেন আসে প্রকৃতির বুক জুড়াতে। বর্ষাকালে বাংলার আকাশ - বাতাস মেতে উঠে এক নতুন খেলায়।

আরো পড়ুনঃ  বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন - রচনা  সম্পর্কে জেনে নিন

আর এতে মানুষের মনে আসে আনন্দের জোয়ার। প্রকৃতির নতুন সাজ ময়ূরের নাচের মত মানুষের মনে নেচে ওঠে। প্রচন্ড গরমে বর্ষা যেন ছুটে আসে রূপকথার রাজপুত্রের মতো। শোনা যায় তার রথের মর্মর ধ্বনি এবং ঝলসে উঠে বাঁকা তলোয়ার। আর এই সময় পানিতে ভরপুর হয়ে উঠে নদী-নালা,খাল- বিল, মাঠ- ঘাট, পথ প্রান্ত। অবসান হয় প্রকৃতির খর তপ্ত দুপুরের। 


আর এই সময়ে মাটির কঠিন বাধা অতিক্রম করে শস্য শিশুর দল আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়।আর তাদের হাতে যেন থাকে নব অঙ্কুরের জয় পতাকা। পুষ্প বিকাশের লগ্ন ও যেন হাজির হয়ে যায়। বর্ষার সমারোহ উৎসবে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস যেন ভরে ওঠে রূপ-রস- শব্দ -গন্ধ- গীতে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাইতো বলেছেন -

"এ আসে অতি ভৈরব হরষে, 

জল জলসঞ্চিত সৌরভ ভরষে।

ঘন গৌরবে নব যৌনা বরষা, 

সেম গম্ভীরে সরসা"।

বর্ষার কারণ

আমাদের দেশে বর্ষা সংঘটিত হয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় মৌসুমী বায়ু। বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আনে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প আর এই জলীয়বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটায়। যার কারণে বাংলাদেশের শুরু হয় বর্ষাকাল।

বর্ষার প্রকৃতি

মেঘ আর বৃষ্টির মধুর খেলা হলো বর্ষা, গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি প্রকৃতি থেকে মুছে যায় বর্ষার আগমনে। প্রাণ ফিরে পায় গাছপালা সহ সকল সবুজ প্রকৃতি। বৃষ্টি নামে কখনো গুড়ি গুড়ি এবং কখনো মুষলধারে। বনানী হয়ে উঠে সবুজ। তাপদাহের দুপুরে শীতল বৃষ্টি প্রকৃতি ও জনমনে এনে দেয় প্রশান্তি। গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যাওয়া নদী - নালা, খাল - বিল পরিপূর্ণ হয়ে যায় বর্ষায়। মাঠ ঘাট প্লাবিত হয় বর্ষার পানিতে। গাছপালা গ্রীষ্মের ক্লান্তি শেষ করে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয় সবুজের বুকে।

বর্ষার রূপ

নদী নালা খাল বিল ভরে একাকার হয়ে যায় বর্ষার পানিতে। বর্ষার পানি চারিদিকে থই থই করে। আকাশ আচ্ছন্ন  থাকে ঘন মেঘে। আকাশের বুকে যেন চলে বিদ্যুতের খেলা। সূর্যের মুখ কয়েক দিন পর্যন্ত দেখা যায় না। মাঝে মাঝেই নীল আকাশে মেঘগুলো বাতাসে ভেসে বেড়াই। একবার মনে হয় দূরে সরে যায় আবার ফিরে আসে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে। মাঝেমধ্যে চারদিকে মুখরিত হয় মেঘের গুড়গুরু শব্দে।

আরো পড়ুনঃ  একটি গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

আকাশের বুক চিরে নেমে আসে অজস্র ধারার বৃষ্টি। সারাদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। ময়ূরপেখম মেলে আকাশে কালো মেঘ দেখে। আকাশের বুক ফেটে বৃষ্টি নেমে আসে। বাংলার কৃষকেরা ব্যস্ত থাকে বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফসল তোলার কাজে। কারণ বর্ষাকাল হলো ধান চাষ ও পাট কাটার সঠিক সময়। ব্যাঙেরা এ সময় যেন নতুন পানির আনন্দে গান ধরে ঘেঙর ঘ্যাং। কিন্তু বৃষ্টির চাপে বাহিরে যাওয়া যায় না। তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-

"নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে,

তিল ঠাঁই আর নাহিরে।

ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে"।

বর্ষার আবহাওয়া

বর্ষাকালে মেঘের গুরু গম্বীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে কারণ এই সময় আকাশ কালো মেঘে ঢাকা থাকে। ঘন ঘন এবং থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। অনেক সময় একটানা কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকায়, ঠান্ডা বাতাস বয়। বর্ষাকালে অনেক সময় এত বৃষ্টি হয় যে বন্যা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্ষার বৈশিষ্ট্য

বর্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষার আকাশ সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন থাকে। দেখা মেলে না সূর্যের। বর্ষার পানিতে টয় টুম্বুর থাকে নদী-নালা - খাল- বিল- মাট-ঘাট সবকিছু। গ্রীষ্মকালের শুষ্ক নদী ভরে যায় নিমিষেই।  দুই কুল ছাপিয়ে ছল ছল করে পানি বয়ে চলে। সব নদ নদী রুপ লাভ করে নব যৌবনের।বৃষ্টি পড়ে সারাদিন ধরে অঝোর ধারায়। কবির ভাষায় বলতে হয়-

"বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর 

আউসের ক্ষেত জলে ভরভর

কালি মাখা মেঘে ওপারে আধার

ঘনিয়ে এসে দেখো চাহিরে

ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে"।

বর্ষার প্রাকৃতিক দৃশ্য

বর্ষা প্রকৃতিকে সাজায় নতুন সাজে। গাছপালা বৃষ্টির ফলে সতেজ হয়ে ওঠে। এ সময় ফুল ফোটে নানা ধরনের। প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরে আসে। গাছে গাছে দেখা যায় সবুজ পাতা। কদম, কেয়া, গন্ধরাজ, জুই, চামেলি, হাসনা হেনা, গন্ধরাজ ফুলের গন্ধে এ ঋতুকে বিমোহিত করে তোলে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি ধারণ করে নতুন রূপে।

মানব মনে বর্ষার প্রভাব

বর্ষার প্রভাব মানব মনে অপরিসীম। বর্ষা সৃষ্টিশীল ও সহজ সরল করে তোলে মানবমনকে। বর্ষা আমাদের মানবমনকে অফুরন্ত আবেগের প্রবাহ নিয়ে আনে। কাব্য সাহিত্যকে রস সমৃদ্ধ করেছে বাংলার বর্ষা। বর্ষা আমাদেরকে উপহার দিয়েছে প্রেম ও ভালোবাসার অনুভূতি। বনভূমি শ্যামল হয়ে ওঠে বর্ষার মেঘাছন্ন আকাশের ছায়ায়।

আরো পড়ুনঃ  গ্রীষ্মের ছুটিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বর্ষা সৃষ্টিশীল করে তুলে মানুষের মনকে সহজ ও সরল ভাবে। মন হয়ে  যায় উদাস। বর্ষা মুখর দিনে মন চাই কারো সান্নিধ্য লাভ করতে। তাই তো পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বলেছেন-

"আজকে বাহিরে শুধু কন্দন

 চুল ছল জলধারে

বেনুবনে বায়ু নড়ে এলোকেশে

 মন যেন চায় তারে"। 

বর্ষায় পল্লীর অবস্থা

বর্ষায় গ্রামের নদী - নালা-খাল- বিল -ডোবা- পুকুর সবকিছুই পানিতে থৈথৈ করে। নিম্ন অঞ্চলে নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। গ্রামের রাস্তাঘাট হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত যার কারনে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। কৃষকেরা মাঠে যাই অবিস্রান্ত বৃষ্টির মধ্যে। গৃহিণীরা করে ঘরের কাজ। বর্ষায় নদীতে নতুন পানি জমে আর এই কারণে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়, বর্ষার পানিতে মাছগুলো যেন সাজে নতুন সাজে। খাল বিলে ফোটে শাপলা ফুল।

বর্ষায় শহরের অবস্থা

বর্ষায় শহরের নিম্ন অঞ্চল মাঝে মধ্যে প্লাবিত হয়। রাস্তায় জমে থাকে পানি যার কারণে ঘর থেকে বের হতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবুও বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে বাহিরে যেতে হয়। মানুষকে পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। বিশেষ করে দাম বাড়ে কাঁচা তরকারির যার কারণে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্ট অনেক বেড়ে যায়।

বর্ষার ফুল

বর্ষাকালে আমাদের নদী-নালা ও খাল- বিল পানিতে ভরে যায় যার কারণে বিলে ফোটে শাপলা, পদ্ম ও কলমি সহ নানা রঙের ফুল। ডাঙ্গায় ফোটে কদম, কেয়া, হিজল, বেলি ও গন্ধরাজ ফুল। এসব ফুল বর্ষার পানিতে ভিজে সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষাকালে চারিদিকে ফোটে ফুলের মেলা।

বর্ষার ফল

আমাদের দেশে বর্ষাকালে নানা রকম ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফলগুলো হল - আম, কাঁঠাল, জাম, আমড়া, পেয়ারা, আতা, বাতাবি লেবু ও লটকন ইত্যাদি। এসব ফল স্বতন্ত্র ভাবে তুলে ধরে বর্ষার বৈশিষ্ট্যকে।

বর্ষায় মানুষের জীবন

অনেক সময় বর্ষায় মানুষের জীবন অনেক দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিচু জায়গা গুলোতে পানিতে ভরে যায়। যখন প্রচুর বৃষ্টি হয় তখন নিম্ন অঞ্চল গুলোতে বন্যার পানি পরিণত হয় বন্যা। চারিদিকে পানিতে ছোট ছোট গ্রাম গুলো মনে হয় এক একটি ছোট ছোট দ্বীপ। এমন অনেক সময় থাকে যখন ঘর থেকে বাইরে যেতে হলে নৌকা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এই সময় সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে স্বল্প আয়ের মানুষগুলো। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সব মিলে মানুষকে পোহাতে হয় অনেক কষ্ট।

কৃষিতে বর্ষার প্রভাব

বর্ষাকাল কৃষি ও কৃষকদের জন্য একটি ভালো দিন কারণ কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর পানির। বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য শস্য ধান।  এ সময় কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য ধান চাষে। এ সময় মাঠে কচি ধানের চারাগুলো মনে হয় পানিতে দোল খাচ্ছে। অনেক সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয় যার কারণে বর্ষাকালে সবকিছু প্রচুর দাম বেড়ে যায়।

সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বর্ষার অবদান

বর্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বর্ষার পানি প্রকৃতিকে যেমন সজীব করে তুলে তেমনি মানুষের মনকেও সারস করে তোলে। অনেক কবি সাহিত্যিক বর্ষার সৌন্দর্যের মুগ্ধ হয়ে রচনা করেছেন গান, কবিতা ও উপন্যাস। বিভিন্ন প্রাচীন কবি থেকে শুরু করে বর্তমান  পর্যন্ত বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক মুগ্ধ হয়েছেন বৃষ্টির পানিতে। বর্ষার পানি কবি- সাহিত্যিকদের ভাব রসের ধারায় সিক্ত করে তোলে। তাই তো কবি বলেছেন-

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার - অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন

"এমন দিনে তারে বলা যায়,

এমন ঘনঘর বারিষায়"।

বাঙ্গালীদের অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা

বর্ষা বাংলাকে শস্য- শ্যামল করে তুলেছে। আর এ সময় বাংলার কৃষক এ ঋতুতে বীজ বোনে, চারা গাছ তোলে ও রোপন করে। বর্ষার দাক্ষিণের ওপর নির্ভরশীল বাংলার অন্ন, বস্ত্র সহ সকল ঐশ্বর্য। বর্ষা বাঙ্গালীদের মনোভূমিকে করেছে কাব্যময় ও সারস। বর্ষা অর্থনৈতিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ বিধান করে এবং সাংস্কৃতিক জীবনেও দিয়েছে গঠন করে। বৃক্ষরোপণ, বর্ষামঙ্গল, জন্মাষ্টমী ও রথযাত্রা সবকিছুই যেন বর্ষার অবদান।

বর্ষার উপকারিতা

বাংলাদেশে বর্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর এই কৃষি প্রধান দেশে বর্ষা নিয়ে আসে আশ্বাসের বার্তা। বর্ষার বৃষ্টি ওপর নির্ভর করে এ দেশের চাষবাদ ও ফলন। বর্ষার কারণে জমিতে  জমে যায় যার কারণে জমি হয়ে ওঠে উর্বর এবং ফসল ভালো ফলে। বর্ষার ফলে অনুর্বর মাটি হয়ে ওঠে উর্বর। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুর বর্ষার পানিতে হয়ে যায় শীতল।

আরো পড়ুনঃ  অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বর্ষাকালে মাছ দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে যার কারণে খাল বিল মাছে ভরে যায়। পানিতে ভরপুর হয় বিভিন্ন নদী ও জলাশয়। যার কারণে মাছ খুঁজে পাই তার সঠিক আবাসস্থল। বর্ষার পানি চারপাশের ময়লা আবর্জনা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয়। নদীতে পানি বেড়ে যায় যার কারণে নৌকা চলাচলে সহজ হয়ে যায়। বর্ষার পানিতে বাতাসের দূষিত পদার্থ মাটিতে মিশে যায় যার কারণে প্রকৃতির বাতাস হয়ে যায় বিশুদ্ধ।

বর্ষার অপকারিতা

বর্ষার উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। বর্ষার পানিতে রাস্তাঘাট কাদায় ভরে ওঠে। আবার কোথাও কোথাও ডুবে যায়, কোথাও দেখা দেয় বন্যা যার কারণে চলাচলে অসুবিধা হয়ে থাকে। দিনমজুরেরা ঘরে আবদ্ধ হয়ে যায়। তারা কোন কাজ করতে পারে না যার কারণে তাদের দুঃখের কোন সীমা থাকে না। গরিবের ঘরে পানি পড়ে তার ভাঙ্গা চালা দিয়ে যার কারণে বৃষ্টির পানিতে ঘরের সমস্ত কিছু ভিজে যায়। গবাদি পশু গুলোর এ সময় বেশ কষ্ট হয়। বর্ষা শেষে অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয়।

উপসংহার

বর্ষা আমাদের সামনে হাজির হয় তার নিজস্ব রূপ নিয়ে। বর্ষার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি। বর্ষার কারণে এ দেশ হয়ে ওঠে সুজলা- সুফলা- শস্য- শ্যামলা। যদি বর্ষা না হতো তাহলে আমাদের দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো। তাই বলা যায় বর্ষা আমাদের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ স্বরূপ। তাইতো আমরা বর্ষাকে জানাই সাদর সম্ভাষণ। তাইতো বলা হয় -

হে বর্ষা, তুমি মোদের করিয়াছো দান ।

সুজলা- সুফলা- শস্য- শ্যামলা প্রাণ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url