বিশ্ব পরিবেশ দিবস - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস রচনা লিখতে হলে আমাদের বিশ্ব পরিবেশ দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আমি বিশ্ব পরিবেশ দিবস রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা বিশ্ব পরিবেশ দিবস রচনা পরীক্ষায় অনায়াসে লিখতে পারো। যারা এই রচনাটি লিখবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস রচনা তাদের জন্য।

Image

আমি এই রচনার মধ্যে ভূমিকা, দূষণের দিবসের কারণ, শব্দ দূষণ, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিবেশ দিবস সবকিছু বিশেষভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা তোমাদের অনেক উপকারে আসবে।বিশ্ব পরিবেশ দিবস রচনা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -

 বিশ্ব পরিবেশ দিবস

ভূমিকা

হারিয়ে গেছে বিশ্ব থেকে

প্রকৃতির পরিবেশ;

মরু শ্মশানে বসে সবাই

ভাবি এ কোন দেশ!

মানব সভ্যতার বিকাশে পরিবেশ এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এই সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকে মানুষ পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলেছে তাদের পরিবেশ। সেই আদিমকাল থেকেই মানুষ এবং পরিবেশ একে অপরের সাথে অঙ্গা অঙ্গী ভাবে জড়িত। মানুষ তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই জীবনে বেঁচে থাকা সকল উপাদান সংগ্রহ করে থাকে। মানুষের জীবন শক্তির ধারক হল এই পরিবেশ। যুগে যুগে মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণী তাদের নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে তাদের পরিবেশের সঙ্গে। 

মানব সভ্যতার শোষণের ফলে পরিবেশ মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণের ক্ষেত্রে প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়।যার ফলে পরিবেশের মধ্যে দেখা দেয় নানা ধরনের বিপর্যয়। নানা কারণে পরিবেশ দূষণ হয়ে থাকে এবং মানুষ সভ্যতার জন্য তা হুমকি  হয়ে দাঁড়ায়। আর এই প্রতিকূল পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। মানব সভ্যতাকে সচেতন করে তোলার জন্যই জাতিসংঘ ৫ জুন কে ঘোষণা করেছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে। আর মানুষ এই প্রাকৃতিক মানুষ ও প্রকৃতির চিরন্তন বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করার জন্য পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।    

পরিবেশ কাকে বলে

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ। আমাদের পরিবেশে যা কিছু আছে তারও অনেক কিছুই আমরা খালি চোখে দেখতে পায় আবার অনেক কিছুই আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এই ক্ষুদ্র উপাদানকে দেখতে হলে আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয় আবার যেমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা একেবারে দেখতেই পায় না শুধু অনুভব করতে পারি। ভূপৃষ্ঠের এই দৃশমান ও অদৃশমান উপাদান নিয়েই আমাদের পরিবেশ গঠিত। 

আমাদের পরিবেশে দুই ধরনের উপাদান রয়েছে। যথা- জৈব পদার্থ ও অজৈব পদার্থ। অজৈব পদার্থ গুলোর মধ্যে রয়েছে মাটি, পানি, বায়ু, শিলা প্রভৃতি। আমরা জানি বায়ুমণ্ডল অদৃশ্য হলেও মাটি, পানি, শিলা দৃশ্যমান।

পরিবেশের প্রকারভেদ

আমরা জানি পরিবেশ দুই প্রকার যথা 

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও 

সামাজিক পরিবেশ

প্রাকৃতিক পরিবেশ 

পাহাড় সমুদ্র নদী নালা চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র প্রভৃতি নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাকে বলা হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ

সামাজিক পরিবেশ

মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট প্রভৃতি নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে বলা হয়  সামাজিক পরিবেশ অর্থাৎ মানুষের তৈরি পরিবেশই হল সামাজিক পরিবেশ

পরিবেশ দূষণের কারণ

মানুষ বিভিন্নভাবে তার পরিবেশকে দূষণ করে। অনুকূল পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে যথা জনসংখ্যা বৃদ্ধি

  • দারিদ্রতা

  • অপরিকল্পিত গৃহ নির্মাণ

  • বনভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার

  • অপরিকল্পিত নগরায়ন

  • প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার

  • ওজোন স্তরের ক্রম অবনতি

  • গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া

  • প্লাস্টিকের ব্যবহার

  • প্রসাধনসামগ্রী

  • এসিড বৃষ্টি

  • কল কারখানার বর্জ্য পদার্থ

  • বনভূমি উজার

  • দ্রুত শিল্পায়ন

  • সার ও কীটনাশকের ব্যবহার

  • প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার ইত্যাদি।

এই সমস্ত কারণে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে যা সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শব্দ দূষণ

মাটি, পানি, বায়ু দূষণ ছাড়াও আরেকটি দূষণ আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছে আর তা হলো শব্দ দূষণ। যা আমাদের এই পরিবেশকে এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে এনে দাঁড়িয়েছে। শব্দ দূষণের ক্ষতি আমাদের চারপাশে অপ্রতিরোধ্য ভাবে ঘটে থাকে। শব্দ দূষণ শুধু মানুষের শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে না, এটা মানুষের স্বাস্থ্যের ও ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষ মাথাব্যথা, অনিদ্রা, ক্লান্তি, ক্ষুধা মন্দা হয়ে থাকে।

শরীর ও মনে নানা রকম পরিবর্তন ঘটায় এবং বিরূপ আবেগের সৃষ্টি করে থাকে। শব্দ দূষণের মূল কারণ হলো প্রবল শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, এয়ার হর্ন বাজানো, ডিজেল চালিত জেনারেটর চালানো, বোমা - পটকা ফুটানো, মিছিল - মিটিং, হঠাৎ চিৎকার, উৎসব, অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, মাইকে সরাসরি গান বাজানো ইত্যাদি।

পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা

মানুষ এক সময় প্রাকৃতিক পরিবেশকে জয় করার নেশায় বিভোর ছিল। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ পানি, স্থল, আকাশ, মহাশূন্য প্রভৃতি স্থানে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু এত কিছুর পরেও মানুষ আজ এক ভয়ংকর সমস্যার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে আর তা হলো পরিবেশ দূষণ। আর এই বিপর্যয় আজ আর কোন দেশ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর সংকট আজ পুরো বিশ্বের।

এই সমগ্র বিশ্বের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। ভয়াবহ এই পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে মানুষ আজ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। আজ পুরো বিশ্বের আকাশ, বাতাস, পানি সব কিছুই প্রায় বিষাক্ত। বিগত এই ষাট বছরে ৭৬ টির বেশি প্রাণীর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হয়েছে কয়েকশো প্রজাতির গাছপালা। বাতাসে প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এসিড বৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমি সহ গাছপালা।

যার ফলস্বরূপ প্রতি মিনিটে ২০ হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে উঠছে ।প্রতি মিনিটে প্রায় ৪৫ হেক্টর জমি বালুকাময় হয়ে উঠছে। প্রতিবছর ৭0 লক্ষ হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তর সংকুচিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পৃথিবীপৃষ্ঠের উষ্ণতা.১ থেকে.২° বেড়ে বা কমে যেতে পারে। 


ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তুষার জমতে পারে অথবা তুষার গলে গিয়ে বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি প্রাণী জগত কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। জলাশয় বা নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে মানুষ সহ মাছের নানান রোগ।

পরিবেশ দিবসের প্রেক্ষাপট

পরিবেশের উপর মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে আজ নেমে এসেছে নানা বিপর্যয় এবং মানব সভ্যতা ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক পরিবেশ মানব সভ্যতার উপর নির্ভরশীল নয় বরং মানব সভ্যতায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। প্রাণী জগতের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার আজ মানবজাতির খাদ্য ভান্ডারেও বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পরিবেশ দূষণ যেভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এই পরিবেশ আমাদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। 

দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনের জন্য প্রতিবছর পাঁচই ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্ম উদ্যোগে এক জনসচেতনতার জন্য  বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। মানব সভ্যতার সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ একে অপরের সাথে অঙ্গাভঙ্গি ভাবে জড়িত। মানুষ তার জীবনের বেঁচে থাকার সকল উপাদান তার পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে অথচ সেই মানুষই তার পরিবেশকে ব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই ভাবে। পরিবেশের এই শোষণ মানুষ তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে থাকে।

পরিবেশ দিবস

মানুষ আজ সবকিছুই জয় করেছে তাদের চেষ্টাও সাধনার দ্বারা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ আজ জয় করেছে মহাকাশ থেকে শুরু করে সাগরের তলদেশ পর্যন্ত। পরিবেশের সাথে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আমাদের এই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে নানা কারণে আর এই দূষণ আমাদের কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের মানুষ এখন এই ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে। আর এই কারণে জাতিসংঘ প্রতিবছর ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণা করেছে এবং একে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করে থাকে।

পরিবেশ দিবসের ইতিহাস

১৯৬৮ সালের বিশ ২০ শে মে সুইডেন সরকার জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এই চিঠিতে পরিবেশ দূষণের গভীর উদ্যোগের কথা তারা তুলে ধরেন। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেই বছরেই বিশ্বের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতিসংঘ পরের বছর তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সমাধানের উপায় খুঁজতে ও আলোচনা করতে বলেন।

জাতিসংঘ ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত সুইডেনের রাজধানী স্টক হোমে অনুষ্ঠিত হয় মানব পরিবেশ সম্মেলন। ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনের মর্যাদা লাভ করে আর একে কেন্দ্র করে .১৯৭২ সালের ৫ জুন কে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭২ সাল থেকে এই দিবসটি বিশ্বে প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হয়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি

১৯৭৪ সালের ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণা পর থেকেই এই দিবস টি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে। প্রথমদিকে এই দিবসটি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে এখন পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ এই পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে এই দিবস পালন করছে। সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিবস পালনের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে।


এই দিনটি প্রতিবছর পালিত হয় উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু এবং দক্ষিণ গোলার্ধ শরৎ ঋতুতে। এই দিবসের উল্লেখ যোগ্য বিষয় হলো দূষণ রোধ, বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতার প্রসার। এই দিনটি আন্তর্জাতিক পরিসরে লাভজনক ও আলাভ-জনকভাবে অন্ত দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানিগুলো পালন করে থাকে। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী বন সংরক্ষণ, বনসৃজন সকল প্রকার নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে। ২০১৮ সালে এই দিবস টি পালিত হয়েছিল বিশ্বজুড়ে এবং এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল "বিট প্লাস্টিক পলিউশন" শিরোনামে। বর্তমানে প্রত্যেকটি দেশ এই দিবসটি পালন করে বিভিন্ন  সচেতনতামূলক বিষয়কে কেন্দ্র করেই।

পরিবেশ দিবসের প্রয়াস

উনি শতকের দিকে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে পরিবেশ বিষয়টি নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলো চিন্তিত হয়ে পড়ে। .১৯৯২ সালের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন ব্রাজিলের রাজধানী রিউ ডে জেনারিয়োতে বিশ্ব পরিবেশ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে প্রায় ১৭০ টি শিল্প উন্নত দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ করে। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বৈষম্য ভুলে গিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে। পরিবেশ দূষণ রোধে শিল্প উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা অনুষ্কার্য।  শিল্প উন্নত দেশগুলোই পারে এই দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব


সারা বিশ্বে পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের এই মানব সভ্যতা পরিবেশের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। আমাদের সময়কে বর্তমানে এই সম্প্রীতি দিয়েছে পরিবেশ আমাদের এই পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতেই প্রতিবছর পাঁচ ৫জুন পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আমাদের চারপাশের প্রকৃতি বা পরিবেশ দিয়েছে বর্তমানের এই উন্নত সভ্যতা। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের এই পরিবেশকে উন্নত বলে মনে হলেও পরিবেশ দূষণের কারণে তা হয়ে পড়েছে হুমকির সম্মুখীন। তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের। মানুষকে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব অপরিহার্য।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বাংলাদেশ


বাংলাদেশে ও পরিবেশ দিবস পালনের গুরুত্ব ও পরিসীম। বাংলাদেশ বিশ্বের সকল দেশের সাথে একাত্ত হয়ে প্রতি বছর ৫জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করে থাকে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন দূষণের কুফল ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জনগণকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা 

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বিশ্ব তথা নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে হলে ছাত্র সমাজকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার প্রচারণা বাড়াতে হবে। আর প্রচার করার প্রচারণা বাড়াতে ছাত্র সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।পরিবেশ দূষণ যাতে করে আর না বাড়তে পারে এইজন্য ছাত্র সমাজ, সমস্ত নাগরিক ও অভিভাবকদের সচেতন করে তুলতে হবে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসূচি

বাংলাদেশ দেরিতে হলে ও পরিবেশ দিবস পালনের সচেতনতাকে বুঝতে পেরেছে। পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর নানা অনুষ্ঠান ও আলোচনার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে আসছে। এখানে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। আর এর সহযোগিতা হিসেবে জেলায় জেলায় বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশ সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা

সমগ্র বিশ্বে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু সম্মুখীন হয়েছে এক বিশাল সমস্যার। মানুষ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করেছে ঠিকই কিন্তু পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ নানা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের এই ভয়াবহতা আজ কোন নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এটা ভাবিয়ে তুলেছে পুরো বিশ্ববাসীকে। 

পরিবেশ দূষণের ভয়াল কবলে পড়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ বিপদের সম্মুখীন। অপেক্ষা করছে এক মহা ধ্বংসের। আর পানিতে এসেছে বিষ, বাতাসে এসেছে আতঙ্ক। বিগত ৬০ বছরের ৭৬ টির বেশি প্রজাতির পানি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কয়েকশো প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি কার্বন মনে অক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে যা পরিবেশের জন্য বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

পরিবেশ দূষণের এই ভয়াবহতা দিন দিন বাড়তে থাকলে বিজ্ঞানীদের ধারণা ভূপৃষ্ঠ ১ থেকে ২ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। আর এতে সৃষ্টি হতে পারে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, মহামারী, বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের আয়তন ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে সূর্যের মারাত্মক অতি বেগুণী রশ্নি প্রাণী জগতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বায়ুমণ্ডলের স্তর দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর সংকুচিত হওয়ার ফলে প্রাণীজগৎ, উদ্ভিদ জগত বিপন্ন। সমুদ্র - নদীতে জলাশয়ে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে এবং মাছের নানা রকম রোগ দেখা দিচ্ছে।

কত সালে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়?

১৯৭৪ সালে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। পরিবেশের কথা চিন্তা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দিবস পালন করা শুরু হয়। এরপর জাতিসংঘ ১৯৭৪ সালের জুন মাসের প্রথম পাঁচ ৫ দিন কে পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আর এভাবেই প্রতিবছর পাঁচ ৫ জুনকে পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

উপসংহার


জাতিসংঘ বিশ্ববাসীকে সচেতন করার জন্য প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং বিশ্বের দেশগুলো এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে ।এই বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতিবছর মানুষের দ্বারে এসে নাড়া দেয় এবং মানুষ তা পালন করে থাকে।পরিবেশ যদি অনুকূল না হয়ে প্রতিকূল হয় তাহলে জীবের ধ্বংস অবশ্য ভাঙবে হয়ে ওঠে। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার পথকে অবলীলা ক্রমে অবরুদ্ধ করে থাকে। 

পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়েই মানুষ এবং অন্যান্য জীবের বিকাশ ঘটে থাকে। মানুষ বেঁচে থাকার সকল প্রকার উপাদান সংগ্রহ করে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে। আবার এই মানুষই তাদের চারপাশের পরিবেশকে নষ্ট করে থাকে অথচ এই পরিবেশের উপরে ভিত্তি করে মানব সভ্যতার উন্নতি হয়ে থাকে। 




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Alinoorhossen
    Alinoorhossen May 1, 2023 at 8:39 PM

    অনেক সুন্দর হয়েছে।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url