বাত জ্বর কেন হয় - বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন

জ্বর আমাদের কাজ সবার কাছে একটি পরিচিত রোগ। কিন্তু বাজারে একটি জটিল রোগ। কিন্তুআমরা অনেকেই বাত জ্বর কেন হয় - বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় কী তা জানিনা। আমি বাত জ্বর কেন হয় - বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বাত জ্বর কেন হয় - বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় জানতে আমার পোস্টটি পড়ুন।



Image


বাত জ্বর  বিটা হিমোলাইটিক ও স্ট্রোপোকক্কাই নামক এক ধরনের জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। বাত জ্বর দরিদ্র দেশ বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যায়।বাত জ্বর কেন হয় - বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো।

বাত জ্বর কি

বাত জ্বর হল একটি জটিল এবং প্রদাহ জনিত রোগ। যাকে রিওসারটি রিউমেটিক ফিভার বলা হয়  বাংলায় বলা হয় বাত জ্বর। যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের দেহে উৎপন্ন স্ট্রোপোকক্কাই নামক এন্টি বডি থেকে হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টি বডি থেকে হয় কিন্তু এটি ব্যাকটেরিয়া নয়। ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে দেহকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অ্যান্টিবডি আমাদের শরীরের কিছু নির্দিষ্ট টিসুর বিরুদ্ধে কাজ করে। 

বাত জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের হয়ে থাকে।বাত জ্বর হলে বাচ্চাদের গায়ে জ্বর থাকে, শরীর ব্যথা হয় এবং গিরা ফুলে যায়। কখনো কখনো হাত বা পায়ের বড় গিরা ফুলে যায়।আবার কখনো কখনো ছোট গিরাও ফুলে যায়। এই সমস্যা একবার হলে বারবার হতে পারে। বাত জ্বর হলো পদাহ জনিত রোগ তাই এর সমস্যা গুলো সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে না। 

আরো পড়ুনঃ  বাত ব্যথা কি - বাত ব্যথা হলে করণীয় জেনে নিন

তবে যা অনুভব করে তা হলো ঘন ঘন জ্বর বা প্রায় গায়ে জ্বর লেগে থাকে, মাথা ব্যথা করে, বুক ধড়ফড় করে, খাবারের অরুচি হয়, ওজন কমে যায় ,খাবারের অরুচি হয় শ্বাসকষ্ট হয়, শরীরের ওজন হ্রাস পায় যার কারণে বাচ্চাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তবে বাত জ্বরের প্রধান উপসর্গ হলো গলা ব্যথা। চার ৪ বছরের কম বয়সী এবং ২০ থেকে ২২ বছরের উপরে গেলে বাত জ্বর হয় না। পাঁচ ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সে বাত জ্বর হয়ে থাকে।

বাত জ্বর কেন হয় 

বাত জ্বর  বিটা হিমোলাই টিক ও স্ট্রোপোকক্কাই নামক এক ধরনের জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। বাত জ্বর দরিদ্র দেশ বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যায়। যারা নিম্ন সামাজিক অবস্থায় থাকে, অধিক ঘনবসতি, চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব, স্যাঁতসেতে পরিবেশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবের কারণেই এই রোগ হয়ে থাকে। 

যেসব বাচ্চাদের টনসিলের সমস্যা থাকে এবং শরীরে খোঁস পচড়া বেশি দেখা যায় তাদের এই রোগ হয়ে থাকে। পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে, তবে পুরুষের চেয়ে নারীদের এই রোগ বেশি দেখা যায়।

বাত জ্বরের উপসর্গ বা লক্ষণ

যে উপসর্গগুলো প্রকাশ পেলেই আমরা বুঝতে পারবো বা জ্বর হয়েছে  তা হল -

বাত জ্বরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল  হার্টের  প্রদাহ এর ফলে যে সব লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা হল - জ্বর হওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব করা,বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট  ইত্যাদি।

  • নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে অঙ্গ সঞ্চালন, বিশেষ করে হাত ও মুখ কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই নড়াচড়া করবে।

  • শরীরের বড় বড় সন্ধিতে ব্যাথা হয় তবে একটি অঙ্গ ভালো হয়ে যাওয়ার পর আরেক অঙ্গ ব্যথা হয়।

  • শরীরের একদিকের সন্ধির একসঙ্গে ফুলে যাবে এবং ব্যথা করবে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি গিরার ব্যথা ভাল হলে আরেকটিতে ব্যথা অনুভূত হয়। এইজন্য একে মাইগ্রেটিং আর্থাইটিস বলা হয়।

  • বুকে ও পিঠে লাল বর্ণের চাকা দেখা যায়।

  • অনেক সময় চামড়ার নিচে ছোট ছোট গুটি হয়।

  • হাত -পা বা শরীরের কোন অংশের নিয়ন্ত্রণহীন কাঁপুনি।

  • ত্বকের নিচে ছোট ছোট ব্যথাযুক্ত দানা দেখা যায়।

  • শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে বুকে, পিঠে এবং মাংসপেশীতে রক্ত জমাট বাঁধার মতো গোলাপি বা কালচে লাল রঙের দাগ দেখা যায়। এই দাগ গুলো অবশ্য ১৫ দিনের মধ্যে সেরে যায় আবার নতুন করে দেখা যায়।তবে দাগ ওঠার পূর্বে শরীরের জ্বর এবং ব্যাথা অনুভূত হয়। যাকে  ইরাই থেমা  মার্জিনটাম বলা হয়।

  • ঘন ঘন জ্বর আসে।

  • শরীর সব সময় ম্যাজ ম্যাজ করে।

  • সব সময় কোন না কোন গিরা ব্যথা থাকে।

  • বুক ধড়ফড় করে।

  • ইসিজি করলে হার্টের কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়।

  • রক্তের ইএসআর বেড়ে যায়।

  • ই এস ও (ESO) টাইটার বৃদ্ধি পায়।

রোগ নির্ণয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৯৯৪ সালে জুন্স ক্রাইটেরিয়া নামে বার জন নীলার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন বা জন নির্ণয়ের জন্য বা জ্বরের লক্ষণগুলো জানাবেস জরুরী বাত জ্বরের উপসর্গ গুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। মেজর ক্রাইটেরিয়া এবং মাইনোর ক্রাইটেরিয়া এবং এর সাথে স্টেপোকক্কাস এর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাতজ্বর দ্বারা সংক্রমণের ইতিহাস থাকতে হবে। এছাড়াও গলা ব্যথা, গা ঘামানো এবং দুর্বলতা অনুভূত হলে বাতজ্বর বলে ধরে নিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হবে।

বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায়

অপরিচ্ছন্ন ঘনবসতি পরিবেশ বা বস্তি এলাকায় যারা বসবাস করে তাদের বাত জ্বরের  প্রভাব বেশি দেখা যায়। এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হলো ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সব সময় হাত-পা পরিষ্কার করা, মুখ ও জিহ্বা পরিষ্কার রাখা বিশেষ করে রাত্রে শোয়ার আগে ও সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা, প্রয়োজনীয় পরিষ্কার পানি পান করা।

ব্যথা এবং রোগের অন্যান্য উপসর্গ ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে হবে যেন শরীরের যে জয়েন্ট বা গিরা আক্রান্ত হয়েছে তা নাড়াচাড়া না করে।  তাই সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গলা ব্যথা হলে অবহেলা না করে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার ব্যথা বেশি হলে অ্যাসপিরিন নামক ট্যাবলেট খেতে পারেন। আবার প্রদাহ কমানোর জন্য  অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড, যেমন প্রেডনি সোলন ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ হেপাটাইটিসের কারণ- লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

এছাড়াও আপনি এন্টিবায়োটিক যেমন ইরাইথ্রোমাইসিন, ফিনিক্সি মিথাইল পেনিসিলিন বেনজা  থিনন পেনিসিলিন প্রভৃতি ওষুধ খেতে পারেন।  ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু স্টেপোকক্কাস দ্বারা কণ্ঠনালী আক্রান্ত হলে আপনি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন।তাহলে বাতজ্বর এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

বাত জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ

অনেকেই মনে করে থাকেন বাত জ্বর ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু তাদের ধারণা ঠিক নয়, বাত জ্বর মোটেও ছোঁয়াচে রোগ নয়। বাত জ্বরের রোগীর সাথে থাকলে বাত জ্বর  হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বাত জ্বর  সন্দেহ হলে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা রক্তের  অ্যান্টি - স্টেপটোলাইসিন বা ESO টাইটার পরীক্ষা করে থাকেন। তবে ই এস ও বেশি হলে যে বাত জ্বর  হবে এমন কিন্তু নয়। বাত জ্বর  হলে আপনার উপসর্গগুলো থাকতে হবে।

বাত জ্বর হলে কি গর্ভধারণ করা যায়

বাত জ্বরে  পুরুষ এবং নারী উভয় আক্রান্ত হতে পারে তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। মেয়েদের বাতজ্বর হলে বিয়ে এবং গর্ভধারণ করতে কোন সমস্যা নাই। গর্ভধারণ করার পরও পেনিসিলিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে, এই ঔষধের সন্তানের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে মনে রাখবেন, বাত জ্বরের কারণে যদি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সন্তান নেওয়া একজন মায়ের জন্য বিপদজনক  হতে পারে। তাই যাদের বাতজ্বর আছে তারা অবশ্যই গর্ভধারণের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে তারপর বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাত জ্বর হলে করণীয়

বাত জ্বর হলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাত জ্বর নিয়ে অবহেলা করলে মস্তিষ্কের সংক্রমণ হতে পারে। বাত জ্বরে আক্রান্ত হলে বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন কেননা বেশি নড়াচড়া করলে আক্রান্ত গিরা বা জয়েন্ট আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, বিশেষ করে দাঁত, মুখ ও জিহ্বা পরিষ্কার রাখতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে এতে উপকার পাবেন। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করুন। বাত জ্বরের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। 

বি আর বি হাসপাতালের রিমোটোলজি বিভাগের পরামর্শ বিভাগের কর্মরত বাত রোগে বিশেষজ্ঞ ডক্টর ফয়সাল আহমেদ বলেন, বাত রোগ হল একটি জটিল রোগ। তাই যদি কোন রোগী এর উপসর্গ বুঝতে পারে তাহলে সবচেয়ে ভালো যেকোন রিমোট লজিস্ট বা বাত ব্যাথা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া। যখন ডাক্তারের কাছে এই ধরনের রোগী আসে তখন লক্ষণ অনুযায়ী ডাক্তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করান এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ টিউমার কি - টিউমার কি ভালো হয় জানুন

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৬৫০ বা তারও বেশি বাত রোগ রয়েছে। বাত রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি হয়,- যেমন ওজন কমে যেতে পারে, জ্বর জ্বর অনুভূত হতে পারে, চামড়ায় লাল লাল দাগ দেখা দিতে পারে, কোমর ব্যথা হতে পারে এবং গিরা ফুলে যেতে পারে। তাই বাত জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব একজন রিমোটলজিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে সে অনুপাতে চিকিৎসা করানো উচিত।

বাত জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা


বাত জ্বরের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বাত জ্বর থেকে একটু নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।

  • নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

  • এলার্জি জাতীয় খাবারের অনেক সময় ব্যথা বাড়ে এই খাবার বাদ দিতে হবে।

  • অনেক সময় মাংস খেলে বিশেষ করে লাল মাংস খেলে ব্যথা বাড়ে আপনাকে সেটা বাদ দিতে
    হবে।

  • অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।

  • মাছের তেল এবং মাছের   ডিম যতদূর সম্ভব কম খেতে হবে।

  • লবণ দিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে।

  • নরম বিছানা পরিত্যাগ করতে হবে।

বাতজ্বরের ঔষধ এর নাম

বাত জ্বর হলে প্রদাহ সৃষ্টি হয়  আর এই প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড, যেমন প্রেডনি সোলন ব্যবহার করতেপারেন।এছাড়াও আপনি এন্টিবায়োটিক যেমন - ইরাইথ্রোমাইসিন, ফিনিক্সি মিথাইল পেনিসিলিন বেনজা  থিনন পেনিসিলিন প্রভৃতি ওষুধ খেতে পারেন।ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু স্টেপোকক্কাস দ্বারা কণ্ঠনালী আক্রান্ত হলে আপনি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন।

বাতজ্বরের হোমিও ঔষধ 

বাত জ্বরে যেসব হোমিও ওষুধ ব্যবহার করা হয় এবং যে উপসর্গগুলো দেখলে এই ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো-

একোনাইট

একনাইট বাতজ্বরের রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরী একটি হোমিও ঔষধ। যে সমস্ত রোগীর আবহাওয়া পরিবর্তন হলে যেমন - আকাশে মেঘ করলে, বৃষ্টি হলে অথবা অধিক ঠান্ডা হলে  অসহনীয় হাত-পা ব্যথা করে তাদের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধটি বেশ কার্যকর। আবার তরুণ বাত জ্বর রোগীদের জন্য বেশ উপকারী এই ওষুধটি। অনেকের ঘাড়ে টান ধরে, যাদের ব্যথার স্থান লাল হয়ে যায় তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রায়োনিয়া এলবা

যেসব রোগীরা গা , হাত, পা ব্যথা নিয়ে নড়াচড়া করতে পারে না এবং নড়াচড়া করতে গেলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়, ব্যথার স্থান কেটে ফেলতে ইচ্ছে করে, চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকলে ব্যথা কমে যায়, প্রচন্ড পানির পিপাসা লাগে, ঠোট এবং মুখ শুকিয়ে যায়, গায়ের চামড়া  শুকনো খসখসে হয়ে যায় তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

 নাক্স ভৌমিক

যাদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং যারা সব সময় গরম কাপড় যেমন - লেপ বা কম্বল দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখতে চাই তাদের জন্য এই নাক্স ভৌমিক ঔষধি ব্যবহার করা হয়। বাতজ্বর থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন

রাসটক্স

এই ওষুধটি তাদের জন্য ব্যবহার করা হয় যাদের শরীরে ব্যথার জন্য অস্থিরতা অনুভূত হয়, যাদের ঠান্ডা বাতাস সহ্য হয় না, যাদের সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাটিতে পা ফেললে ব্যথা অনুভূত হয় এবং চলাচল করলে ব্যথা থেকে আরাম পায়, বৃষ্টিতে ভিজে যাদের সমস্যা হয় তাদের জন্য এই ওষুধ টা বেশি কার্যকর।

জেলসি মিয়াম

যাদের বাত জ্বরের জন্য মাথা ঘুরে, দুর্বলতা অনুভব হয়, সহজে ভয় পায়, ঘন ঘন পানির পিপাসা পায় তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

টিউবার কুলিনাম

যাদের মাংস খেলে বাত ব্যথা বাড়ে, কুকুরে ভয় পায়, ঘুরতে পছন্দ করে কিন্তু ব্যথার জন্য বাধা গ্রস্থ হয়, গরম সেক দিলে বাত ব্যথা থেকে আরাম পায়, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে এবং যাদের বংশগত কোনো ক্ষয় রোগ আছে তাদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

মেডোরিনাম

যাদের সমস্ত শরীরে বাতের ব্যথা থাকে, যাদের পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণে হাঁটতে পারে না, যাদের ব্যথা দিনের বেলা বৃদ্ধি পায়, শরীরের গিট গুলো ফুলে যায়, গরম সেক দিলে ব্যথা কমে যায়, যাদের বংশগত সাইকোসিস আছে, যাদের চোখে পানি আসে তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

ক্যাল্কেরিয়াকার্বর

যাদের শরীর ঘামে বিশেষ করে মাথা বেশি ঘামে, যাদের ডিমের প্রতি বেশি চাহিদা থাকে, শরীরের প্রত্যেকটি গিরা ও মাংসপেশিতে ব্যথা, ঘনঘন ঠান্ডার সমস্যা আছে, যাদের শরীর মোটা ওই স্থূল তাদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

পালসেটিলা

যাদের অতিরিক্ত ব্যথা থাকে, যাদের পানির পিপাসা কম অনুভূত হয়, যারা সামান্য কারণে কান্না করে, যাদের স্বভাব নরম ও কোমল, যাদের গিরা সামান্য ফুলে যায় এবং লালচে ভাব হয় তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আর্নিকা

যাদের শরীরে স্পর্শকাতর, যার ব্যথা অনুভূত হয় তাকে কেউ আঘাত করেছে বলে মনে হয়, যাদের পড়ে গিয়ে আঘাতের কারণে বাত জ্বর হয়েছে, যাদের নরম বিছানায় ঘুমাতে ইচ্ছে করে তাদের জন্য এই ওষুধের ব্যবহার করা হয়।

কলোফাইলাম

যাদের ব্যথা এক স্থানে থাকে না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জয়েন্টে ব্যথা হয়, হাত ও পায়ের গিরাতে বেশি ব্যথা হয় তাদের জন্য এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়।

বাত জ্বরের টেস্ট এর নাম

বাত জ্বর  সন্দেহ হলে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা রক্তের  অ্যান্টি - স্টেপটোলাইসিন বা ESO টাইটার পরীক্ষা করে থাকেন। তবে ই এস ও বেশি হলে যে বাত জ্বর  হবে এমন কিন্তু নয়। বাত জ্বর  হলে আপনার উপসর্গগুলো থাকতে হবে।

রক্ত পরীক্ষা: Complete Blood Count (CBC)

 রক্ত পরীক্ষা: Blood Test For Repeated Strep Infection (ASO)

ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম: Electrocardiogram (ECG)

বাত জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত

বাতজ্বর হলো এমন একটি জ্বর যা আপনার থার্মোমিটারে আসে না অথচ সারাক্ষণ শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে এবং শরীর ব্যথা করে। তাই এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে বিভিন্ন খাবার বেছে নিতে হবে যেগুলো খেলে আপনি একটু অন্তত আরাম বোধ করতে পারবেন। এগুলো হলো -

আরো পড়ুনঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ - হাসপাতাল সম্পর্কে জেনে নিন

  • আদা, দারুচিনি, বিভিন্ন মসলা, রসুন এ সকল উপাদানে রয়েছে প্রদাহ নাশকগুন। আপনি এগুলো খেতে পারেন।
  • কালোজিরা এবং রসুন পেস্ট করে খেতে পারেন।
  • আপনি ব্রকলি খেতে পারেন কারণ ব্রকলি তেও রয়েছে প্রদাহনাশক গুন।
  • আখরোট, ওমেগা থ্রি-3 আপনি খেতে পারেন কারণ এগুলোতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড।
  • পালং শাক খেতে পারেন কারণ পালং শাকে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট
  • কিছু সামুদ্রিক মাছ রয়েছে যেগুলো খেলে আপনি বাতের ব্যথায় বেশ উপকার পাবেন এগুলো হল স্যামন, ম্যাকেরেল,সারডিন ইত্যাদি।
  • ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি তাই আপনি ছোট মাছ খেতে পারেন।
  • দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বেশি খাবেন ।

বাত জ্বর হলে কি খাবেন না

বাত জ্বর হলে অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো আপনার শরীরের জন্য উপকারী আবার তেমনি অনেক এমন খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো খেলে আপনার ব্যথা অনেকটা বাড়িয়ে দিবে। তাই আপনাকে অবশ্যই এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো হলো -

  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ লবণে রয়েছে সোডিয়াম যা আপনার ব্যথাকে অনেকটা বাড়িয়ে দেবে।
  • টমেটো, লেবু, আমড়া জাতীয় ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • শেকড় জাতীয় কোন খাবার খাবেন না এতে করে আপনার ব্যথা বেড়ে যাবে।
  • সাদা ময়দা এবং চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।


শেষ কথা

বাত জ্বর হল একটি জটিল এবং প্রদাহ জনিত রোগ। যাকে রিওসারটি রিউমেটিক ফিভার বলা হয় বাংলায় বলা হয় বাত জ্বর। যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের দেহে উৎপন্ন স্ট্রোপোকক্কাই নামক এন্টি বডি থেকে হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে অ্যান্টি বডি থেকে হয় কিন্তু এটি ব্যাকটেরিয়া নয়। বাত জ্বরে পুরুষ এবং নারী উভয় আক্রান্ত হতে পারে তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই সবারই উচিত বাদ জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন বাত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।


ডায়াবেটিস কে সবাই সব রোগের মা বলে থাকেন কিন্তু আমার মনে হয় বাত জ্বর হলো সব রোগের বাবা। তাই বাত জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। আর মনে রাখবেন বাতজ্বরের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী তাই ধৈর্য সহকারে চিকিৎসা করা উচিত।












এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url