নিয়মানুবর্তিতা রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন



আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রচনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের
পরীক্ষায় একটি রচনা লেখার প্রয়োজন হয়। তাই আমি নিয়মানুবর্তিতা রচনা সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আমার এই  নিয়মানুবর্তিতা রচনা তোমাদের
অনেক উপকারে আসবে।



Image


আমি এই রচনার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি
যেমন-ভূমিকা,নিয়মানুবর্তিতা কাকে বলে,নিয়মানুবর্তিতার শ্রেণীবিভাগ,প্রকৃতির
রাজ্যে নিয়মানুবর্তিতা সহ নিয়মানুবর্তিতা রচনা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো -



পোস্ট সূচিপত্রঃ নিয়মানুবর্তিতা রচনা






ভূমিকা



পৃথিবীর সব কিছুই নিয়মের সুতোয় গাঁথা। আমরা সবাই একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে
চলাচল করে থাকি। এই বিশ্বজগতের সবকিছুর মধ্যে নিয়ম রয়েছে। পৃথিবীর এমন কোন ঘটনা
নেই যা নিয়মের মধ্যে চলাচল করে না, আমাদের মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে
নিয়মানুবর্তিতা কাজ করে। পৃথিবীর সমস্ত কিছু যেমন - পৃথিবীর গাছপালা, ক্ষুদ্রাতি
ক্ষুদ্র কিটপতঙ্গ, সূর্যোদয় - সূর্যাস্ত সবকিছুই কঠোর নিয়মের মাধ্যমে চলে।


বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 


"যে সমাজ শৃঙ্খলা আছে, 


ঐক্যের বিধান আছে, 


সকলে স্বতন্ত্র স্থান ও অধিকার আছে,


সেই সেই সমাজেই পরকে -


আপন করিয়া লওয়ার সহজ"।



নেপোলিয়ন বলেছেন, Discipline is the key to success which is compulsory to
follow to balance the system. নিয়মানুবর্তিতায় পারে মানুষকে সঠিক পথে
পরিচালনা করতে এবং সঠিকভাবে জীবন গড়ে তুলতে।


নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে Mock Gandhi বলেছেন,


 Discipline Maintenance Systems


Systems Maintenance Development


Development Vibrates Human Life


So  Discipline Most Bay  Follower



নিয়মানুবর্তিতা কাকে বলে



কোন নির্দিষ্ট একটি কাজ যে সময় শেষ হওয়ার কথা এবং যেভাবে হওয়ার কথা ঠিক সেই
ভাবেই সম্পাদন করাকে বলা হয় নিয়মানুবর্তিতা। নিয়মানুবর্তিতা হল যখন যে কাজ করা
উচিত তা যথাযথভাবে করা। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়
পর্যন্ত সবাইকে নিয়মানুবর্তী হতে হয়। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব আর স্বভাবতই মানুষ
সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হলে তাকে কিছু নিয়ম-কানুন
মেনে চলতে হয়।



আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত



বেঁচে থাকার তাগিদেই মানুষ যে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তাকে বলা হয়
নিয়মানুবর্তিতা। ব্যক্তি, দেশ জাতি সবার কল্যাণের জন্য নিয়মানুবর্তিতা একান্ত
প্রয়োজন। নিয়ম অনুবর্তিতায় ব্যক্তির মধ্যে শৃঙ্খলা বোধের জন্ম দেয় এবং
মানুষকে তার কর্তব্যবোধে সচেতন করে তোলে।



জীবনে  নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা



মানুষের জীবনে  নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।মানব জীবনে প্রবেশের
প্রথম ধাপ হলো শৈশবকাল আর শৈশবকাল থেকেই মানুষ কে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা
গ্রহণ করতে হয়। শৈশব কাল থেকে নিয়মানুবর্তিতার সাথে বড় হলেই মানুষ পারে
তার কাঙ্খিত সাফল্যে পৌঁছাতে। নিয়মানুবর্তিতার শৃঙ্খলে বা বাঁধনে বাঁধতে না
পারলে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রেরও ভাঙ্গন ধরে।



মানুষের জীবন যতই সুশৃংখল বা নিয়মানুবর্তী হয় সভ্যতা ততই প্রসারতা লাভ করতে
পারে। কোন জাতি কতটা সভ্য সেটা জানা যায় তার শৃঙ্খলা বোধ বা নিয়মানুবর্তিতা
দেখে।তাই বলা হয় একটি জাতির নিয়মানুবর্তিতায় পারে একটি জাতিকে বিশ্বের সামনে
সভ্য জাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে বা তুলে ধরতে।



নিয়মানুবর্তিতার শ্রেণীবিভাগ



মানব জীবনের সাথে সঙ্গতি রেখে নিয়মানুবর্তিতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা
হয়।-


দেহ গঠনে নিয়মানুবর্তিতা


মনো গঠনে নিয়মানুবর্তিতা


দেহ গঠনে নিয়মানুবর্তিতা



মানব জীবনকে সঠিকভাবে গঠন করতে দুটি নিয়মই প্রয়োজন। আমাদের প্রতিদিনের
জীবনযাপনে যেমন - আহার, নিদ্রা, দৈহিক শ্রম ইত্যাদি 
নিয়মানুবর্তিতা।আমাদের যদি একটু নিয়মের ব্যতিক্রম হয় তখন মানুষকে অসুস্থ
বলা হয়। তাই আমাদের দেহকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে নিয়মানুবর্তিতা একান্ত
প্রয়োজন।


মনো গঠনে নিয়মানুবর্তিতা



মনোগঠনের দিক থেকে নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসিম। আমাদের জীবনে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে শুধু আমাদের নিজেদের প্রতি নয় রাষ্ট্রের প্রতি,
সমাজের প্রতি এমন কি পরিবারের প্রতি ও দায়িত্ববোধ আছে। আর মানুষের মনে এ
দায়িত্ববোধ কাজ করে মানবিক দিক থেকে। আর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্যই মন
গঠনের বিকাশ একান্ত প্রয়োজন।



প্রকৃতির রাজ্যে নিয়মানুবর্তিতা



মহান আল্লাহতালা আমাদের এই সুবিশাল প্রকৃতির রাজ্যকে একটি নিয়মের মধ্যে পরিচালনা
করেন। মহান আল্লাহ তায়ালাই হলেন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিষ্ঠাতা। 
প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার সবই একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা সবাই নিজ নিজ
কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। দিবারাত্রি ও সংঘটিত হচ্ছে তার একটি নির্দিষ্ট নিয়মে।



আরো পড়ুনঃ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা জেনে নিন



প্রতিদিন সূর্য উঠে পৃথিবীর বুকে তার আলো উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় তার নিয়ম
মেনেই।নিয়ম ভেঙ্গে কখনোই সে অসময়ে আবির্ভূত হতে পারে না আবার সে নিয়ম ভঙ্গ করে
অস্তমিত ও হয় না। প্রকৃতির যদি সামান্যতম ও পরিবর্তন হয় তাহলে ঘটে যায় নানা
বিপর্যয়। প্রকৃতি নিয়ম ভঙ্গ করলে কত বড় বিপর্যয় হয় তা আমরা বুঝতে পারি
অনাবৃষ্টি, অতি বৃষ্টি, ভূমিধস ইত্যাদি দেখে। 



আমরা সহজেই বুঝতে পারি প্রকৃতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই আমাদের
নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন।প্রকৃতি আমাদের চারপাশে যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে
রেখেছে তার বাইরে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নিয়মানুবর্তিতা একান্ত
প্রয়োজন।



সমাজ জীবনে নিয়মানুবর্তিতা



মানুষ সামাজিক জীব আর সমাজ ও জাতীয় জীবনে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হল
নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করা। সমাজে একত্রে বসবাস করতে গিয়েই মানুষ বিভিন্ন
নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছে। নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠা করতে নিয়ম মেনে চলা
একান্ত প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তিতায় পারে অন্যায়- অবিচার দূরীভূত করতে। আর এই
কারণে সমাজ জীবন হয়ে ওঠে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী। মানুষের জীবনে কর্ম
অনুশীলনের একটি নির্দিষ্ট ধারা ক্রম রয়েছে আর এই ধারার নামই হলো ছন্দ।



আর সেই ছন্দই সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি। শৈশব থেকেই মানুষকে সমাজে বিচরণ করতে
হয় এবং তাকে বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। মানুষ তার খেয়াল খুশি মতো জীবন
পরিচালনা করতে পারে না। সমাজ জীবনে নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলা বোধ এর
গুরুত্ব অপরিহার্য। নিয়মানুবর্তিতা হলো জীবন গঠনের মূল মন্ত্র আর এই
মন্ত্রের সুধা পান করে মানুষ হয়ে ওঠে সুশৃংখল এবং নিয়মানুবর্তী।



রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা



রাষ্ট্রীয় জীবনেও নিয়মানুবর্তিতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি
রাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি থাকে যা রাষ্ট্রেই বসবাসকারী প্রত্যেকটি
মানুষকে মেনে চলতে হয়। মানুষ যখন রাষ্ট্রের নিয়ম ভঙ্গ করে তখন সে অপরাধী বলে
বিবেচিত হয় এবং রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারে। মানুষ নিয়মানুবর্তি হলে সে
বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে
পারে। তাই রাষ্ট্রীয় জীবনেও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।



পারিবারিক জীবনে নিয়মানুবর্তিতা



পরিবার সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর পারিবারিক নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে
দিয়েই সমাজের শৃঙ্খলা আসে। তাই প্রত্যেকটি পরিবারের মানুষের উচিত তাদের
পারিবারিক নিয়ম নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া আর পরিবারের প্রতিটা মানুষ যখন সুশৃংখলে
আবদ্ধ হয় তখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নিয়মানুবর্তিতা।



ব্যক্তি জীবনে  নিয়মানুবর্তিতা



প্রতিটি মানুষই ব্যক্তি জীবনে সাফল্যে চরম শিখরে অবস্থান করতে চাই। আর মানুষ
যখননিয়মানুবর্তি  হয় তখন সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অবস্থান করতে
পারে। মানুষের জীবনের উন্নতি সাধিত হয় তার ব্যক্তিগত কর্ম সাধনার মাধ্যমে।
প্রকৃতি যেমন তার নিয়ম মেনে চলে মানুষকে তার নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন মানুষ
যদি ব্যক্তিগত জীবনে কোন কাজ ফেলে রাখে তাহলে সে আর কর্মজীবনে অগ্রসর হতে পারে
না।



ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সে সামাজিক জীবনে সুনাগরিকের
মর্যাদা লাভ করতে পারে। তাই ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে
নিয়মানুবর্তিতা একান্ত প্রয়োজন।



কর্ম ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা



প্রতিটি মানুষকে কর্ম করতে হয় তার জীবিকা নির্বাহের জন্য। আর কর্ম ক্ষেত্রে
রয়েছে নিয়মানুবর্তিতা। কর্ম ক্ষেত্রে অফিসের প্রধান থেকে শুরু করে গার্ড
পর্যন্ত সবাইকে তার নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে
কর্মস্থানে পৌঁছানো, নিজের কাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিক ভাবে করা এবং
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মস্থলে অবস্থান করা ইত্যাদি।



আরো পড়ুনঃ  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা  সম্পর্কে জেনে নিন



নিয়মানুবর্তিতার অভাবে কর্মক্ষেত্রে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। কর্ম
ক্ষেত্রে ক্ষতি হলে তার প্রভাব সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর আবর্তিত হয়। কর্ম
ক্ষেত্রে মানুষ যখন নিয়মানুবর্তিতা না হয় তখন নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা
ঘটে থাকে।তাই প্রত্যেকের উচিত তার নির্ধারিত কর্মক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী
হওয়া।



শারীরিক ও মানসিক জীবনে নিয়মানুবর্তিতা



সুস্থ দেহ সুস্থ মন এরই নাম স্বাস্থ্য। শরীর সুস্থ থাকলে মানুষ কাজে উৎসাহ পায়
শরীর অসুস্থ থাকলে মানুষ কোন কাজই সঠিকভাবে করতে পারে না। আর কর্ম ক্ষেত্রে সঠিক
ভাবে কাজ করতে না পারলে মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই
সুস্থতায় হল মানব জীবনের উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। শরীর সুস্থ থাকলে মানুষ
মানসিক দিক থেকেও সুস্থ থাকে। তাই শারীরিক জীবনে ও মানসিক জীবনে
নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।



ছাত্র জীবনে নিয়মানুবর্তিতা



ছাত্র জীবনের সবচেয়ে বেশি নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তিতার উপযুক্ত
সময় বা ক্ষেত্রে হল ছাত্র জীবন। একজন ছাত্রকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আজকের
ছাত্র আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকে যে ছাত্র আগামী দিনে সে জাতির নেতৃত্ব দিবে। তাই
একজন ছাত্রকে যথাযথভাবে গড়ে উঠতে হবে।



নিয়মানুবর্তিতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না হলে একজন ছাত্র কখনোই তার কাঙ্কিত সাফল্যে
পৌঁছাতে পারেনা। জীবন গড়ার সময় হলো ছাত্র জীবন আর এই সময়ে যদি সে সঠিকভাবে
নিজেকে গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তার জীবনে যে অন্ধকার নেমে আসে তার মাশুল দিতে
হয় পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রকে।



আরো পড়ুনঃ  সাম্প্রতিক বিশ্ব ও বাংলাদেশ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন



একজন ছাত্রের প্রধান উদ্দেশ্য হল নিজেকে সৎ,যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তাই
তার নির্দিষ্ট পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি তাকে নৈতিক শিক্ষা অর্জন করতে হবে। 
এছাড়াও সমাজের যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে তাকে সতেস্ফুত ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।
একজন ছাত্র যদি নিয়মনিষ্ট না হয় তাহলে সে কর্ম ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে
পারবে না। একজন ছাত্রকে নিয়মানুবর্তী হতে হলে তাকে মেধাবী হতে হবে তার অনেক অর্থ
সম্পদ থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই।



একজন ছাত্রকে মনে রাখতে হবে নিয়মানুবর্তিতা তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের
ছাত্র সমাজের কাছে মহান দায়িত্ব এবং কর্তব্য হল সুশৃংখলতা বোধ বা
নিয়মানুবর্তিতা। ছাত্র জীবনে যদি নিয়মানুবর্তিতার বীজ বপন করা না হয় তাহলে
ভবিষ্যতে শোনার ফসল ফলবে এটা আশা করা যায় না। তাইতো বলা হয় কঠোর পরিশ্রম
কর,তবেই সফল কাম হবে।



 নিয়মানুবর্তিতা ও মানব জীবনের উন্নতি



নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলা বোধ পা্রে একজন মানুষকে তার জীবনের চরম শিখরে পৌঁছে
দিতে। যে জীবনের নিয়ম শৃঙ্খলা নেই সেখানে কোন শান্তি নেই এবং শান্তি থাকতে পারে
না। নিয়মানুবর্তিতার নিয়ম ভঙ্গ হলে মানুষের জীবনে নেমে আসে ঘর অন্ধকার।
সেনাপতি বিহীন যুদ্ধ যেমন জয়লাভ করতে পারে না তেমনি শৃংখল বিহীন জীবন শান্তি
দিতে পারে না।



সর্বক্ষেত্রেই  উশৃঙ্খল জাতির ভাগ্যে জোটে পরাজয় এবং দুঃখের গ্লানি।
মানুষের পরিমিত আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই পরিমিত ব্যয় করা উচিত। তবে একজন
মানুষের জীবন হবে সুন্দর এবং সাফল্যমন্ডিত।



বর্তমানে ছাত্র ও  উশৃঙ্খলতার কারণ



ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ। কিন্তু আজকের এই ছাত্র সমাজের  উশৃঙ্খলতা দেখে সবাই
উদ্বিগ্ন। তাদের উশৃঙ্খলতার প্রভাব পড়ে অলিতে -গলিতে, রাস্তা-ঘাটে, বাসে,
ট্রেনে এমনকি পরীক্ষা গৃহে। ছাত্রসমাজ হল সকল ক্ষেত্রে অগ্রগামী কিন্তু আজ
অগ্রসরের পথ রুদ্ধ। ছাত্রসমাজ আজ হয়ে উঠেছে বেপরোয়া এবং এর কারণ হলো দেশব্যাপী
কুরুচিকর সামাজিক যোগাযোগ, সিনেমা ইত্যাদি। ছাত্রসমাজকে শৃঙ্খলতার পথে ফিরিয়ে
আনতে হবে এবং গড়ে দিতে হবে তাদের ভবিষ্যৎ।



নিয়মানুবর্তিতা ব্যক্তি-স্বাধীনতার অন্তরায় নয়



মানুষের জন্য সমাজে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন নিয়ম কানুন। আমাদের সমাজে এমন অনেক
মানুষ আছে যারা এই নিয়ম নীতিকে তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তরায় মনে করে থাকে।
কিন্তু মানুষের এ ধারণা ঠিক নয় মানুষকে বুঝতে হবে। সঠিকভাবে নিয়ম মানার মাধ্যমে
সে তার সম্পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারবে। 



নিয়মানুবর্তিতা  মানুষকে শান্তির ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারে।
নিয়মহীন স্বাধীনতা মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে আর এজন্যই ব্যক্তির বিকাশ ও
নিরাপত্তার জন্য নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।



নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব



পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যক্তিগত, দৈহিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনসহ সকল ক্ষেত্রে
নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব রয়েছে। স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ভঙ্গ করলে মানুষ
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় তেমনি নিয়মানুবর্তিতার অভাব হলেও সমাজ বিপদের মুখে
আবর্তিত হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা তাদের
নিয়মানুবর্তিতার প্রভাব দেখতে পায়।


তাদের উন্নতির প্রধান এবং একমাত্র কারণনিয়মানুবর্তিতা। প্রয়োজনীয় নিয়ম -নীতি
না মানলে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা কখনো সম্ভব নয়। নিয়মানুবর্তিতার অভাবে
অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তির জীবনে ও নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। তাই কল্যাণকর সুন্দর
জীবন গড়ে তুলতে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম।



নিয়মানুবর্তিতা চর্চার সময়



নিয়মানুবর্তিতার চর্চা শিশুকাল থেকে করা উচিত। শিশুদের মন থাকে নরম কাদা মাটির
মত। তাই শিশুকাল থেকে নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োগ ঘটাতে পারলে মানুষের জীবন হয়ে
উঠবে সুন্দর এবং সার্থক। আর শিশুদের নিয়মানুবর্তিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে তাদের পরিবার। কারণ মানুষ গড়ার প্রথম ক্ষেত্র হলো
পরিবর।



উপসংহার



মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আমাদের নিয়মানুবর্তী হতে হবে। প্রত্যেকের
জীবনে যথাযথ শৃঙ্খলাবোধ থাকা একান্ত প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তী হীন জীবন হাল
ছাড়া  নৌকার মত যাকে বলে নীতিহীন জীবন। নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে আমরা শুধু
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে  নয় জাতীয় জীবনে ও যথা যত ভূমিকা রাখতে পারি।
নিয়মানুবর্তী হতে পারলে সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারব এ বিষয়ে কোন
সন্দেহ নেই।


তাইতো কবি বলেছেন -


নিয়মের পথ ধরে  গড়লে জীবন,


সফলতা নিয়ে আসে সুখের স্বপন,


গুণাবলী ফুটে উঠে ছড়ায় যে খ্যাতি


কতনা সুনাম পায় দেশ আর জাতি।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url