২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস বিস্তারিত জেনে নিন

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু  ২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস তা আমরা অনেকেই জানিনা। ২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস তা আমরা যদি সঠিকভাবে না জানি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও আমরা এর ইতিহাস, তাৎপর্য কোন কিছুই তুলে ধরতে পারবো না। তাই ২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে জানাতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।



Image


আমি আমার আটিকেলে ২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে, স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস, কবে থেকে স্বাধীনতা দিবস শুরু হয়েছে এবং স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

২৬ শে মার্চ - কেন স্বাধীনতা দিবস

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস। পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙ্গালীদের উপর হামলা শুরু করলে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু এ স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।

১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশের প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। এরপর ২০০ বছরের শাসন নামক শোষণের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশরা ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে বিদায় নেয়। জন্ম নেয় পাকিস্তান ও ভারত নামক একটি রাষ্ট্রের।এরপর শুরু হয় বাঙ্গালীদের নতুন করে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র।

২০০ বছরের শাসন এবং শোষণের অবসান ঘটিয়া ব্রিটিশরা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয় ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু ব্রিটিশদের এই শোষণের দীর্ঘ ইতিহাস যেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প "শেষ হইয়াও হইল না শেষ" হয়েই থেকে গেল। আর সেই স্বাধীনতা নামক নাটকের সূচনা ঘটে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ। আর এই স্বাধীনতার মাধ্যমে মাধ্যমেই জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের।

আরো পড়ুনঃ

বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের জন্ম দিতে বাঙ্গালী কে করতে হয় দীর্ঘ ৯ মাস ধরে একরক্ত হয়ে যুদ্ধ। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ, ২ লক্ষ মা বোনের ত্যাগ এবং কোটি বাঙালির বীরত্বের ইতিহাস আজকের এই বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন।

এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি তার বার্তা পাঠিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ইপি আরের ওয়ারলেস  বার্তায় পাঠিয়ে ছিলেন। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআরের ওয়ারলেস বাত্রায় সম্প্রচার করা হয়।  ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলার আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ঘোষণা পত্র পাঠ করেন।

পরে  ২৭মার্চ জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মেজর জিয়া যে ঘোষণা পত্র পাঠ করেন তা হল -"আমি মেজর জিয়া বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি।

যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্ব শান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নিশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এবং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার"।


বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও মন্ত্রণালয় ১৯৮২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র তৃতীয় খন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘোষণা পত্রে বলা হয় ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি এ ঘোষণা দেন যা তখনকার তার বার্তায় ইপিয়ারের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বাংলায়।

পাকিস্তানের তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের  সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজির জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক শালিক তার "উইটনেস টু সারেন্ডার" বইয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লিখেছেন, "যখন প্রথম গুলি ছোড়া হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

ওই কন্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণায় বলা হয় "এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমি দখলদার  সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্য টিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে"। দক্ষিণ এশিয়ার করেস পন্ডেন্ট ডেভিড  লোশোক ও লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক ওয়ারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে লিখেছেন,"ঘোষণা কারীর গলার আওয়াজ খুবই ক্ষীন ছিল। খুব সম্ভবত ঘোষণাটি আগেই রেকর্ড করা হয়েছিল"।

আরো পড়ুনঃবিজয় দিবস কি ও কেন জেনে নিন

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজী ও বাংলায় ছাপিয়ে ২৬ শে মার্চেই চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বার্তাটি তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ারলেস এর মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।

সেই সময় এম এ হান্নান ছিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২৬ শে মার্চ দুপুর ২ টা ১০ মিনিটে এবং চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে .২ টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেছিলেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র টি জনগণকে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।

২৬ শে মার্চই  এম এ হান্নান, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, আবুল কাশেম, সন্দীপ,বেলাল মোহাম্মদ, মাহমুদ হাসান ও কবি আব্দুস সালাম স্বাধীনতার যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান ও ৭ ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণা ভিত্তিক তার  বার্তার আদলে স্বাধীনতা বিষয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন। রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীতে লিখেছেন,
"ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে ২৬ শে মার্চ সকাল ঠিক ৯ টার সময় কলকাতা কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা হয়।

এছাড়া সেই দিন অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ এবিসি অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার বেতারে ঢাকার গণহত্যার খবর সম্প্রচার করা হয়েছিল।২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরে আদমজী কলেজ থেকে বন্দি অবস্থায় প্রথমে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সারাদিন সেখানেই তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল।

এরপর সন্ধ্যায় থাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২৬ শে মার্চ সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনকে "দেশদ্রোহী" আক্ষা দেন এবং রেডিও পাকিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।রাতে গণহত্যা শুরু হলে বাঙালির প্রতিরোধ শুরু করে কিন্তু পিলখানার ইপিয়ার ও রাজার বাগ পুলিশ লাইনস এর সশস্ত্র প্রতিরোধে এবং পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ বাঙালিরা টিকে থাকতে পারেনি।

এই দিন চট্টগ্রাম, বরিশাল, জয়দেবপুর, নওগাঁ সহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। এদিকে পাকিস্তানে সেনারা  ২৫শে মার্চ রাত্রে যে গন হত্যা শুরু করেছিল তা ২৬ শে মার্চেও অব্যাহত রাখে। পুরো ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয় এবং বিভিন্ন ভবন, বাজার ও বস্তিতে ভারী মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। আর কামানের গলার আগুনে শহরের ঘনবসতির অনেক এলাকা পুড়ে যায়। এছাড়া গুলি করেও অনেক বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষক - শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ২৫ শে মার্চ রাত থেকে ২৬শে মার্চ ভোর পর্যন্ত ট্যাংক, রাইফেল, মেশিন গানসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা হয়। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  জগন্নাথ হল, সলিমুল্লাহ হল, ইকবাল হল, মহসিন হল, সূর্যসেন হল, রোকিয়া হল, ফজলুল হক শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ও আক্রমণ চালানো হয়। এবং ডঃ মনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন চট্টোপাধ্যায়, ডক্টর জি সি দেব কে হত্যা করা হয়।

আরো পড়ুনঃ 

জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা মারাত্মকভাবে আহত হন এবং পরে তিনি মারা যান। সেই রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে বর্বরতা চালানো হয় পরে হলে একটি বন্ধ কক্ষ থেকে অন্তত ছয় জন ছাত্রীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নগ্ন মোর দেহ উদ্ধার করা হয়।

২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হয় এবং বাঙালি জাতিপায় একটি লাল সবুজের পতাকা। এছাড়াও ২৬শে মার্চ বাঙালিরা পায় একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত। সর্বোপরি বিশ্বের বুকে একটি গর্বিত পরিচয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে

২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান "বাংলাদেশ স্বাধীন" ঘোষণা করে বাঙ্গালীদের উদ্দেশ্যে একটি তার বার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন, "আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন"।

আর এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ নয় ৯ মাস এক রক্তখয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।২৬ শে মার্চ এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখার জন্য প্রতিবছর গভীর ভাবগাম্ভীর্য ও শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়।

স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস

১৭৫৭ সালে ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ পেয়ে  ১৯৪৭ সালের ধর্মবিভেদে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের।পশ্চিম পাকিস্তান ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত এবং পূর্ব পাকিস্তান ভারতের পূর্ব দিকে অবস্থিত।

দেশ বিভাগের পর শুরু থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বৈরী ভাব পরিলক্ষিত হয়। নতুন করে শুরু হয় বাঙ্গালীদের শোষণ ও নির্যাতন এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঙালিকে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান অপেক্ষা শক্তিশালী হওয়ায় তারা বাঙ্গালীদের মুখের ভাষা সহ চাকরি, শিল্প কারখানা এমনকি প্রত্যেকটি বিষয় বৈষম্য পূর্ণ আচরণ করতে থাকে।

বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদারদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বাঙালি স্বাধীনতা কামী হয়ে ওঠে যার কারণে তাদের সামনে কোন কিছুই বাধা হয়ে উঠতে পারেনি। আর বাঙালিকে এই মুক্তির পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান  ইতিহাসের মহাবীর, মহানায়ক এবং বাঙালি জাতির  অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে শুরু হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং এই নির্বাচনে বাঙালির জয়লাভ, ১৯৫৭ সালে বাঙ্গালীদের জন্য সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ১৯৫৮ সালে সংঘটিত হয় মার্শাল ল আন্দোলন।

শিক্ষা কমিশন আন্দোলন হয় ১৯৬২ সালে, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয় ১৯৬৮ সালে, ১৯৬৯ সালে হয় গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। এবং সর্বাত্মক ও সহযোগ আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পথ চূড়ান্ত হয়।

আরো পড়ুনঃ 

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর পরই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের চালানো হয় বর্বর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বেই বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন তা হল-"এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়েই আমি দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।



পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং
চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে"। সেই
সময় এম এ হান্নান ছিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২৬ শে
মার্চ দুপুর ২ টা ১০ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২:৩০
মিনিটে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেছিলেন।



চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি জনগণকে
মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।এরপর বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় ৯
মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখণ্ড,
লাল-সবুজের একটি পতাকা এবং নিজেদের একটি মানচিত্র।



কবে থেকে স্বাধীনতা দিবসের শুরু হয়েছে



১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা দিবসের ঘোষণার মধ্যে দিয়েই
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সূচনা হয়। এরপর দীর্ঘ নয়.৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী 
যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি লাভ করে তাদের স্বাধীনতা। ৩০ লক্ষ বাঙালির রক্তের
বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ
সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয় এবং স্বাধীনতা অর্জন করে।



আর এরপর থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ কে স্মরণ করে রাখার জন্যই বাঙালি জাতি
প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ কে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে। ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি একটি
বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং এই প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে
২৬ শে মার্চ কে উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন
হিসেবে ঘোষণা করা হয়।



স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য



১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান "বাংলাদেশ স্বাধীন" ঘোষণা করে একটি ঘোষণা পত্র জারি
করেন। ২৬ শে মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে যেমন বিজয়ের আনন্দ বয়ে এনেছিল একই সঙ্গে
আবার বেদনার অনুভূতিকে ও জাগ্রত করে। কারণ এই দিন বাঙালি হারায় ৩০ লক্ষ তাজা
প্রাণ। দিতে হয়েছিল ২ লক্ষ মা বোনকে তাদের সম্মান।



বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানকে
মেধা শূন্য করা। আর এরই উদ্দেশ্য হিসেবে তারা হত্যা করে কবি,সাহিত্যিক এবং
রাজনীতিবিদদের। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের এই সুক্ত
আগুনকে কিছুতেই নেভাতে পারেনি। বাঙালি জাতি বীরের মতো দীর্ঘ নয় ৯ মাস এক
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ছিনিয়ে নিয়ে আসে তাদের স্বাধীনতা।



আরো পড়ুনঃ ২১ শে/একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানুন



২৬ শে মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে নিয়ে আসে এক অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা। বাঙালি
জাতি ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ কে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই প্রতিবছর .২৬ শে মার্চ
যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে এবং এই দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে
পালিত হয়।



শেষ কথা



বাঙালি বীরের জাতি। তারা কখনো হার মানতে শেখেনি তারা কখনো হার মানবেও না।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে যেমন তারা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে তেমনি
তারা বাংলার স্বাধীনতা কে  অক্ষুন্ন রাখতে ঢেলে দিতে পারে বুকের তাজা রক্ত।
আর এই উদ্যমকে সামনে রেখেই বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ অর্জন করে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা।



যা আজও বাঙালি জাতির জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আসুন আমরা সবাই আমাদের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের সম্মানার্থে আমাদের
এই স্বাধীনতা দিবসকে মর্যাদার সাথে পালন করি। আর হয়তো এরই মধ্যে তাদের আত্মা
শান্তি পাবে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url