রোজা - শাওম কি - রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত জানুন
রোজা একটি ফরজ এবাদত যা প্রত্যেকটি সুস্থ মুসলমানের ওপর অবশ্য পালনীয়। রোজা
- শাওম কি - রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার জন্য আমরা
অনেক ভুল করে থাকি। তাই আমি রোজা - শাওম কি - রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। রোজা - শাওম কি - রোজার গুরুত্ব ও
ফজিলত জানতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।
আমরা মুসলিম তাই আমাদের সবার জানা উচিত রোজা - শাওম কি - রোজার
গুরুত্ব ও ফজিলত, রোজা কাকে বলে রোজার প্রকারভেদ রোজা রাখার শর্ত রোজা ভঙ্গের
কারণ ইফতারের দোয়া। আমরা যদি সঠিকভাবে এগুলো জানতে পারি তবে আমরা সঠিকভাবে রোজা
পালন করতে পারব।
পোস্ট সূচীপত্রঃ রোজা - শাওম কি - রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
- রোজা বা শাওম কি
- পূর্ববর্তী নবীদের সময়ের রোজা
- রোজা কাকে বলে
- রোজার প্রকারভেদ
- রোজা ভঙ্গের কারণ
- ইফতারের দোয়া
- রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
- শেষ বক্তব্য
রোজা বা শাওম কি
রোজা একটি ফার্সি শব্দ। আল কোরআনের পরিভাষায় শাওমকে বলা হয় রোজা। যার আরবি
প্রতিশব্দ হলো শাউম বা শাওম এবং এর বাংলা অর্থ হল সংযম বা বিরত থাকা। ইসলামের মূল
ভিত্তি হল পাঁচটি। আর শাওম বা রোজা হল এই পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে
অন্যতম। সুবেহ সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে
বিরত থাকা যেমন - পানাহার, কামাচার, পাপাচার এবং সেই সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী কাজ
থেকে নিজেকে বিরত রাখাকে বলা হয় শাওম রোজা।
ইসলামী বিধান অনুসারে প্রতিটি সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য রমজান মাসের
রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে যা অবশ্যই পালনীয়। সিয়াম অর্থ চুপ থাকা আর যে চুপ
থাকে তাকে সায়েম বলা হয়। মহান আল্লাহতালা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা হযরত
মরিয়মের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, "ফাইম্মা তারইন্না মিনাল বাশারী আহাদান ফাকুল্লি
ইন্নি নাজারতু লির রাহমানী সাওমান ফালান ইয়াওমা ইনিশিয়ান"।
অর্থঃ সন্তান ভুমিষ্টের পর যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখো কোন প্রশ্ন বা
কৈফিয়ত করতে তবে তুমি বলো, আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাওম বা রোজা (কথা বলা
থেকে বিরত থাকতে) মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলবো
না"। (সূরা মারইয়াম, আয়াতঃ ২৬)।
এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কথা বলা থেকে বিরত থাকার নামই শাওম বা রোজা।
রোজা প্রসঙ্গে রাসুল সাঃ বলেন, "কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়,
সুতরাং অসরতা এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকার নামই হলো প্রকৃত সিয়াম। সুতরাং যদি
তোমাকে কেউ গালাগালি করে অথবা তোমার প্রতি মূর্খতা দেখায়
তাহলে তুমি তার প্রতিকার বা প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে বল যে, আমি সায়েম আমি রোজা
রেখেছি, আমি রোজা রেখেছি।(মুস্তাদরেকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, শহিহুল জামেইস
সাগির)। অতএব রোজা অর্থ হলো সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
পূর্ববর্তী নবীদের সময়ের রোজা
পবিত্র আল কোরআন থেকে আমরা দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য শুধু
রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন তা নয়, আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই রোজা
ফরজ করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, "ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু
কুতিবা আল্লাজিনা মিন ক্বাবলিকুম লা আল্লাহকুম তাত্তাকুন"। (সূরা বাকারা,
আয়াতঃ১৮৩)।
অর্থঃ "হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনি ভাবে তোমাদের
পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পারো"।
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, পূর্ববর্তী সকল নবীদের উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল।
এমনকি ইহুদী-খ্রিস্টানরা নির্দিষ্ট সময়ের নির্দিষ্ট একটা জিনিস থেকে বিরত থেকে
রোজা পালন করতেন। তাও রাত, ইঞ্জিল থেকেও এ কথাগুলো জানা যায় আল্লাহ তাআলা রোজাকে
তার পূর্ববর্তী বান্দাদের উপর ফরজ করেছিলেন।
আরো পড়ুনঃ সালাত কাকে বলে - সালাতের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
রাসূল (সাঃ) যখন হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন
মদিনার ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এটা
কি এমন দিন যে তোমরা রোজা রাখছো। ইহুদীরা বলল ! এই দিনে আল্লাহ তালা মুসা আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তার কওম কে পরিত্রাণ দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার কমকে পানিতে ডুবে
ধ্বংস করেছিলেন।
তাই মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এর উদ্দেশ্যে রোজা পালন
করেছিলেন। আর তাইতো আমরা ঐদিন রোজা পালন করি।এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন,
মুসার স্মৃতি পালনের ব্যাপারে তোমাদের চাইতে আমরা অধিক হকদার। সুতরাং তিনি ওই দিন
রোজা রাখেন এবং সবাইকে রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন"।(সহীহ বুখারী ও
সহীহ মুসলিম)।
রোজা কাকে বলে
রোজা পালন করা ফরজ। সুবেহ সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন কিছু পানাহার, কামাচার বা পাপাচার সহ সকল প্রকার অশ্লীল
কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ হল পাঁচটি। আর রোজা হল
তৃতীয় স্তম্ভ। সিয়াম বা রোজার আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা, কঠোর সাধনা করা,
আত্ম সংযম করা ইত্যাদি।
আত্মসংযম
আত্মসংযম হলো রোজা পালনের একটি অন্যতম শর্ত। আর কেবলমাত্র রোজা বা সিয়াম
পালনকারী ব্যক্তি আত্মসংযম অর্জন করতে পারে। তাই একে সিয়াম বা রোজা বলা হয়।
বিরত থাকা
রোজা বা শাওম পালনের মাধ্যমে সকল প্রকার অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। তাই একে
রোজা বলা হয়।
কঠোর সাধনা
রোজা বা শাওম পালন করতে হলে একজন রোজাদারকে কঠোর সাধনা করতে হয় তথা ধৈর্যের
পরিচয় দিতে হয়। আর একমাত্র রোজা পালনকারী ব্যক্তিই পারে এই কঠিন সাধনা করতে।
তাই একে রোজা বলা হয়।
আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যতগুলো বিধান নাজিল করেছেন তার সবগুলোতেই
রোজা একটি অবিছেদ্ধ অংশ হিসেবে ছিল এবং পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তা থাকবে। আর সিয়াম
বা রোজা সকল যুগের মানুষের জন্য ফরজ ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতালা বলেন, "হে
ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো"। (সুরা বাকারা,
আয়াতঃ১৮৩)।
রোজার প্রকারভেদ
প্রত্যেক সুস্থ এবং বালেগ মুসলিমের উপর রোজা রাখা ফরজ। কোরআন ও হাদীসের আলোকে
রোজা সাধারণত ছয় ৬ প্রকার। এগুলো হলো-
- ফরজ রোজা
- সুন্নত রোজা
- নফল রোজা
- ওয়াজিব রোজা
- মুস্তাহাব রোজা এবং
- মাকরুহ রোজা
ফরজ রোজা
পবিত্র রমজান মাসের এক ১ মাস রোজা রাখা হলো ফরজ রোজা।
সুন্নত রোজা
আরবি বছরের প্রথম মাস হল মহরম মাস। আর এই মহরম মাসের নয় ৯ ও দশ ১০ তারিখ অথবা ১০
ও ১১ তারিখ রোজা রাখা হলো সুন্নত রোজা।
নফল রোজা
প্রতি আরবি মাসের ১৩-১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা রাখা। যাকে আওয়াবিন বীজের রোজা বলা
হয়।
সাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা।
শাওয়াল মাসে ছয় ৬ টি রোজা রাখা।
জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা।
প্রতি সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ অর্থাৎ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা যাকে
ইয়াওমুল ইস নাই লিন আজিম বলা হয়।
মুস্তাহাব রোজা
প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা।
প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা।
ইসলামে নিষিদ্ধ পাঁচ ৫ দিন ব্যতীত সব দিন রোজা রাখা।
মাকরূহ রোজা
প্রতি আরবি মাসের ৩০ তারিখে রোজা রাখা যাকে আবার ইয়াওমুস শক বলা হয়।
শুধু জুমা বারবার বা শুক্রবার রোজা রাখা।
যে কোন একটি দিন নির্দিষ্ট করে রোজা রাখা।
আশুরা উপলক্ষে একদিন রোজা রাখা।
হারাম রোজা
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা
পবিত্র ঈদুল আযহার দিন রোজা রাখা
প্রতিদিন রোজা রাখা
সঠিকভাবে সাহারি ইফতার না করে একটানা রোজা রাখা
বিবাহিত মেয়েদের স্বামীর বিনা অনুমতিতে নফল রোজা রাখা
রোজার ফরজ
রোজা শাওম হলো ফরজ ইবাদত. রোজার ফরজ তিনটি যথা -
- নিয়ত করা
- সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
- অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা বা যৌনাচার থেকে বিরত থাকা
রোজা রাখার শর্ত
রোজা রাখার শর্ত চারটি যথা -
- মুসলিম হওয়া
- সাবালক বা বালেগ হওয়া
- অক্ষম না হওয়া অর্থাৎ সক্ষম হওয়া
- ঋতুস্রাব থেকে বিরত নারী
রোজা ভঙ্গের কারণ
বিভিন্ন কারণে জানতে অথবা অজান্তে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে। তবে রোজা ভঙ্গের
নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ -
- রোজার নিয়ত না করলে
- ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পানাহার করলে বা কেউ জোরপূর্ব কোন কিছু খাওয়ালে
- রাত বাকি আছে ভেবে নির্দিষ্ট সময়ের পর সাহারি খেলে
- কুলি করার সময় হঠাৎ করে পেটের ভিতর পানি প্রবেশ করলে
- ঘুমন্ত অবস্থায় কোন বস্তু খেয়ে ফেললে
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা পান করলে
- ভুলক্রমে পানাহার করে শাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে আবার খাবার খেলে
- স্ত্রী সহবাস করলে
- মহিলাদের হায়েজ ও নিফাস এর রক্ত বের হলে
ধুপ - ধোয়া ইত্যাদি কোন কিছু নাক বা মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে
- ধূমপান করলে
- ছোলা পরিমাণ কোন কিছু দাঁতের ফাঁকে থেকে বের করে গিলে ফেললে
- ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে
- কোন অখাদ্য বস্তু গিলে ফেললে। যেমন - পাথর, লোহার টুকরা ইত্যাদি
- ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধ সেবন করলে
- রাত বাকি আছে ভেবে নির্দিষ্ট সময়ের পর খাবার খেলে
- ইফতারের সময়ের পূর্বে কোন কিছু খেয়ে ফেললে।
ইফতারের দোয়া
"আল্লাহুম্মা ইন্নি লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা
রিযকিকা আফতারতু"।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবংতোমার প্রতি বিশ্বাস
এনেছি এবং তোমার প্রদত্ত খাদ্য দিয়েই রোজা ভঙ্গ করছি।
রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
আরবি ১২ মাসের মধ্যে রমজান হল নবম মাস। ইসলামের অন্যতম মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের
মধ্যে একটি স্তম্ভ হল রোজা। এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বলার অপেক্ষা রাখে না। রমজান
মাস হল এমন একটি মাস যে মাসে মহান আল্লাহতালা নৈকট্য লাভের এবং পরকালীন পাথেয়
অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ রমজান মাস হলো মমিন বান্দাদের জন্য অনেক বড়
নিয়ামত আল্লাহতালা এ রমজান মাসে তার বান্দাদের জন্য বরকত দান করেন বৃষ্টির মত
অঝোর ধারায়।
তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত যারা এই রমজান মাস পাবে তারা যেন অবশ্যই এই দিনের
নিয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হয় এবং সঠিকভাবে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা পালন করে।পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং হাদিসে এই
রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন বলেছেন, "হে বিশ্বাসীগণ রোজা যেরুপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা
হয়েছিল তেমনি তোমাদের উপর ফরজ করা হলো"। (সূরা বাকারা, আয়াত,১৮৩)।
আরো পড়ুনঃ হজের ফজিলত ও গুরুত্ব জেনে নিন
রোজা যে ফরজ তা কোরানের এই আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আল্লাহ তায়ালা
আরো বলেন, "রমজান মাসের রাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে যা মানবজাতির জন্য দিশারী এবং
এতে পথ নির্দেশনা ও সত্য মিথ্যা পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং
তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসে উপস্থিত থাকবে সে যেন রোজা রাখে"। (সূরা বাকারা,
আয়াতঃ ১৮৫)। আল্লাহ তায়ালা রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো বলেন, "রোজা একান্তই
আমার জন্য আর আমি এর প্রতিদান দিব"।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে রাসুল সালাম বলেন, "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও
সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে তার পূর্বে সব গুনাহ মাফ করে দেয়া
হবে।রমজান মাসের রাতে ইবাদত করবে এবং কদরের রাতে ইবাদত করবে তার পূর্বের সব গুনাহ
মাফ করে দেওয়া হবে"। (বুখারী ও মুসলিম)। আবার রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন বর্ণনায়
রোজার পুরস্কার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, রমজান এমন একটি
মাস যে মাসে আল্লাহ তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করে দিয়েছেন।
অতএব যেই ব্যক্তি ঈমান সহ কারে আল্লাহর নৈকট লাভের আশায় রোজা রাখবে তার জন্য
রোজার সেই দিনটি হবে এমন যেন সে সবেমাত্র মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে অর্থাৎ
ঐদিন তার সকল গুনহা থেকে মুক্ত হয়ে নিষ্পাপ হয়ে যাবে"। আল্লাতালা সব ইবাদত
বন্দেগী থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি বলেন, "মানুষের প্রতিটি কাজ
তার নিজের জন্য কিন্তু রোজা শুধু আমার জন্য আমি এর প্রতিদান দেব"। (মুসলিম)।
হযরত আবু হুরায়রা বলেন, যখন রমজান মাসে আগমন ঘটল তখন রাসুল সাঃ এরশাদ করলেন,
তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহতালা তোমাদের জন্য এ মাসে রোজা ফরজ
করেছেন। এ মাসে জান্নাতের সব দরজা সম্ভব খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজার
সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শীকলে বন্দি করে রাখা হয়। এ মাসে এমন
একটি রাত আছে যা হাজার মাসের রাতের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো
সে প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।
হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, আমি বললাম ! হে আল্লাহর রাসূল
আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করব। রাসূল
সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বললেন, "তোমার জন্য অপরিহার্য হলো রোজা রাখা কারণ এর কোন
তুলনা নেই"।এরপর থেকে মেহমানের আগমন ছাড়া আবু ওমামার বাড়ি থেকে দিনের বেলায়
কখনো ধোঁয়া উঠতে দেখা যেত না। তার বাড়ি থেকে দিনের বেলায় ধোঁয়া উঠতে দেখলে
মানুষ বস্তু আজ তার বাড়িতে মেহমান এসেছে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, ৩৪২৫)।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা
রাখবে আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে একটি পরিখা তৈরি করে দেন। যা আকাশ ও
জমিনের দূরত্বের মত। (তিরমিজি, ১৬২৪)।
জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান কিয়ামতের দিন রোজাদাররা সেই রাইয়াম
নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ
করবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ
যাবে না। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করে ফেলবে তখন রাইয়ান নামক দরজা বন্ধ
করে দেওয়া হবে। সুতরাং আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ
বুখারীঃ হাদিস নং, ১৮৯৬)।
রোজা আল্লার নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম
হযরত আবু উমামা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ আমাকে এমন কোন
আমলের আদেশ করুন যার দ্বারা আল্লাহতালা আমাকে উপকৃত করবেন তিনি বললেন তুমি রোজা
রাখো কেননা তার তুলনা হয় না শুনানে নাসায়ে হাদিস-২৫৩১ মুসনাদে আহমদ হাদিস ২২১৪১
বাইহাকি শুয়াবুল ঈমান ৩৮ ৯৩ তাবারানী হাদিস 7463
হযরত আবু উমামা রঃ বর্ণনা করেন আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ আমাকে কোন আমলের আদেশ
করুন তিনি বললেন তুমি রোজা রাখো কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই আমি পুনরায় বললাম
ইয়া রাসুল আল্লাহ আমাকে কোন নেক আমলের কথা বলুন তিনি বললেন তুমি রোজা রাখো কেননা
এর সমতুল্য কিছু নেই ইবনে খুজাইমা হাদিস ১৮৯৩ মোশনাদে আহমেদ হাদিস ২২-১৪০ সহীহ
ইবনে হিব্বান হাদিস 3425 শুনানি নাসাঈ কোবরা হাদিস 2533
রোজা হিংসা বিদ্বেষ দূর করে
হযরত ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সবরের মাসের মানে রমজান মাসের রোজা এবং প্রতিমাসের তিন
দিনে আই এম এ বীজ রোজা অন্তরের হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেয় মুস্না দে বাজার হাদিস
১০ ৫৭ মোশনাদে আহমদ হাদিস ২ ৩০ ৭০ সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস ৬৫ ২৩
রোজাদারের দোয়া কবুল হয়
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম
বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
- ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া
- রোজাদার ব্যক্তির দোয়া ইফতারের সময় পর্যন্ত ও
- মজলুমের দোয়া
তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজার
সামনে খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহতালা ঘোষনা করেন, আমার ইজ্জতের কসম আমি তোমাকে
সাহায্য করবো"। (মসনদে আহমেদ, হাদিস ৮০৪৩, সুনানে তিরমিজি হাদিস ৩৫৯৫, সহিও ইবনে
হিব্বান হাদিস ৩৪২৮)।
হযরত আবু হুরায়রা রহমতউল্লাহ থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না"। (মুসান্নাফে ইবনে আবী
শাইবা হাদিস.৮৯৯৫)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম
বলেছেন,রোজাদারের দোয়া কবুল হয়, ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে তখন তার
দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (সুনানে ইবনে মাজহা হাদিস ১৭৫৩)।
শেষ বক্তব্য
রমজান মাস হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি সময় রমজান মাস হল এমন একটি বরকতময় মাস
এই মাসে আমাদের পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে এই মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে যে মাসের
ইবাদত হাজার বছরের হাজার রাতের ইবাদতের চেয়ে উত্তম
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url