১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমরা পরিবারের জন্মগ্রহণ করি এবং পরিবারেই বেড়ে উঠি। কিন্তু আজকের এই পরিবার ভাঙতে বসেছে। তাই জাতিসংঘ ১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর ১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস সম্পর্কে জানতে আমার পোস্টটি আপনাদের জন্য।
পরিবারের বন্ধন কে অটুট রাখার জন্য পরিবার দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে ১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। নিচে ১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস
পরিবার কি
যেখানে মা - বাবা, ভাই - বোন, দাদা-দাদী, চাচা - চাচি, ফুপু সহ সবাই মিলে একত্রে বসবাস করা হয় তাকে পরিবার বলা হয়। পৃথিবী সৃষ্টি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সবাই পরিবারে বসবাস করে আসছে। পরিবার হলো একটি বন্ধন আর এই বন্ধনে আবদ্ধ হয় পরিবারের আপনজনেরা। পৃথিবী সৃষ্টি শুরু থেকে মানুষ পরিবারে বসবাস করে আসছে।
পরিবারের প্রকারভেদ
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে পরিবার সাধারণত দুই প্রকার যথা
- একক পরিবার
- যৌথ পরিবার
একক পরিবার
যে পরিবারে মা - বাবা, ভাই - বোন একসাথে বসবাস করে তাকে একক পরিবার বলা হয়।আমাদের সমাজে এখন একক পরিবারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে শহরে যারা বসবাস করে তারা একক পরিবারে বসবাস করে।
যৌথ পরিবার
যে পরিবারের মা - বাবা, ভাই - বোন, দাদা-দাদী, চাচা, ফুপুসহ অনেকে বসবাস করে তাকে যৌথ পরিবার বলা হয়। যৌথ পরিবার কে আবার একান্নবর্তী পরিবারও বলা হয়।যৌথ পরিবার গ্রামে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
১৫ই মে - বিশ্ব পরিবার দিবস
১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয় ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। .১৯৯৪ সালকে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। পরিবারের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কেমন হওয়া উচিত, পরিবারের গুরুত্ব, পরিবারের বন্ধন এবং সর্বোপরি পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য বিশ্ব পরিবার দিবস পালন করা হয়।
বিশ্ব পরিবার দিবস এই দিনটি পরিবারের উপযোগিতার ওপর জোর দেয়। পরিবার হলো সামাজিক সম্প্রীতির মূল চালিকাশক্তি। মানুষ সামাজিক জীব তাই সে সমাজে বসবাস করে। আর সমাজ গঠিত হয় পরিবার নিয়ে।সামাজিক উপাদান গুলোর মধ্যে প্রথম এবং প্রধান উপাদান হল পরিবার। পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানুষ পরিবার গঠন করে।
আরো পড়ুনঃ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা - রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
এবং সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রতিটি সংস্কৃতিতে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।তাই পরিবার কে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়। পরিবার হলো এমন একটি জায়গা যেখানে কোন মানুষ তার নিজের মানুষের সাথে দিন অতিবাহিত করেন। পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই তারা দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত ঘাত - সংঘাত, ভাব - সাব, দ্বন্দ্ব - মাধুর্যের মুখোমুখি হন।
এবং সর্ব সব বাধা পেরিয়ে আবার জীবন উপভোগ করেন। পরিবার হলো আত্মিক সম্পর্কের সূতিকাগার। একমাত্র পরিবারের মানুষের মধ্যে গড়ে উঠে স্নেহ, ভালবাসার সোহার্দ্য এবং পারস্পরিক বন্ধন। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা জুড়ে যৌথ পরিবার ছিল কিন্তু এখন আর তেমন যৌথ পরিবার দেখা যায় না। পরিবারগুলো ভেঙ্গে এখন একক পরিবারে পরিণত হয়েছে।
শহরের জীবন থেকে অনেক আগেই যৌথ পরিবার বিদায় নিয়েছে। এখনকাল ক্রমে গ্রামেও আর তেমন যৌথ পরিবার দেখা যায় না। পরিবার ভেঙ্গে ছোট ছোট পরিবার গঠন যেন এক কৃষ্টি কালচারে রূপান্তরিত হয়েছে। বংশ মর্যাদা সম্পন্ন পরিবার ও ভেঙ্গে আজ একক পরিবারের রূপান্তরিত হয়েছে।আমরা জানি পরিবার মানেই দাদা-দাদী, চাচা - চাচি, ভাই-বোন সবাই মিলে একসাথে বসবাস করা।
এখন মানুষ পুরনো ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে এসে স্বামী স্ত্রীর মিলে গঠন করছে একটি পরিবার। আর মা - বাবাকে আরেকটি পরিবারের অংশ হিসেবে কাটাতে হচ্ছে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন। অথবা চলে যেতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। যৌথ পরিবার এখনকার মানুষের কাছে এখন অতীত হয়ে গেছে। বিশেষ করে এখন গ্রামে ও শহরের জীবনের প্রভাব পড়েছে।
আরো পড়ুনঃ একটি বৃষ্টির দিনের অভিজ্ঞতা - রচনা (৬ - ১২) সম্পর্কে জেনে নিন
আর এই প্রভাবের কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙ্গে একক পরিবারে পরিণত হয়েছে।সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, "আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারের পারিবারিক বন্ধন অনেক মধুর হয়, অটুট থাকে একজনের প্রতি অপরজনের ভালোবাসা"। যৌথ পরিবার একে অপরের সমস্যা, অসুখ-বিসুখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আর পরিবারের বন্ধন কে অটুট রাখার জন্য পরিবার দিবস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্তের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে ১৫ই মে জাতীয় পরিবার দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্ব পরিবার দিবস কবে থেকে পালন করা হয়
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। বিশেষ করে ১৮৫৭ সালের শিল্প বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে পরিবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয় আর এই অনীহার কারণে ভেঙে যেতে থাকে তাদের পরিবারের বন্ধন। আর এর প্রতিকার স্বরূপ বাড়তে থাকে বিবাহ বিচ্ছেদ সহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। যার কারনে অনেক শিশুকে বাবা-মা ছাড়া বড় হতে হয়। জাতিসংঘ এ অবস্থায় পারিবারিক বন্ধনকে অটুট রাখতে চাই এবং জনসচেতনতা উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৩ সালের ১৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের ঘোষণা দেন। এছাড়াও ১৯৯৫ সালে সামাজিক বন্ধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার জন্য "সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ব" নামক সম্মেলন করেন।আর এই পরিবার দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের ছোট থেকে বড় সকল সদস্যদের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধন কে অটুট রাখা। এই সম্মেলনের আরো উদ্দেশ্য হলো পরিবারের শিশুসহ বড়দেরও মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা।আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের জন্য পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিশুদের জৈবিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুতির আবাসস্থল হলো পরিবার। কিন্তু আজকের এই শহরে সমাজের লোকজন সামাজিক এবং সংস্কৃতিক অস্তিত্ব অস্বীকার করে। কিন্তু শিশুদের মন হচ্ছে একটি সাদা কাগজের মত।
সাদা কাগজে যে ছাপ ফেলা হয় সেটাই থেকে যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যেমন সংবিধান রয়েছে তেমনি পরিবার পরিচালনার জন্য কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে। আর এসব নিয়ম-নীতি মেনেই একজন ব্যক্তিকে তার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।একটি ভালো পরিবারই পারে একজন শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে।
আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে অনলাইনে মামলা দেখার উপায় জেনে নিন
সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, মিথ্যা কথা না বলতে, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতে, সঠিক সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে নিজে সম্পূর্ণ করা সর্বোপরি নিজেকে বিকশিত করা দরকার তার সঠিক ধারণা দিতে। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবার ভেঙে যাচ্ছে বলে দিন দিন সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামে ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর রক্তের সম্পর্কের লোকজন নিয়ে পরিবার গঠিত হয়। পরিবারের সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হোক এবং ভালো থাকুক সকল পরিবার।
পরিবারের প্রতিপাদ্য
প্রতিবছরই পরিবার দিবসের একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো "ফ্যামিলি এন্ড অর্গানাইজেশন" নাগরিকতায় এখন বিশেষ সবচেয়ে আলোচিত বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম ধ্বংস হয়ে ধীরে ধীরে নগরায়নের সৃষ্টি হচ্ছে ফলে প্রতিটি একক পরিবারের সঙ্গে ইদানিং নাগরিক শাসনের একটা ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। অনেককে নিয়েই পরিবার অর্থাৎ যৌথ পরিবার কিন্তু পরিবারের প্রত্যেকের একটি নিজস্ব জায়গা থাকে। এটাই হচ্ছে প্রত্যেকটি পরিবারের একটি মূল আদর্শ।
শেষ কথা
আমাদের শিশুদের মনস্তাতিক দিক গঠনের জন্য তাদের পরিবার একান্ত প্রয়োজন। আমাদের উচিত এটা লক্ষ্য করা যে প্রত্যেকটা শিশু যেন একটি সুস্থ পরিবার পায়। একটি শিশু যদি একটি সুস্থ পরিবার পায় তবেই সে নিজেকে বিকশিত করতে পারবে। প্রত্যেকটা শিশু বড় হোক নিজ নিজ পরিবারে এবং ভালো থাকুক বিশ্বের সব পরিবার এটাই আমাদের কামনা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url