কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ - বিশ্বের যে ৬ দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ জেনে নিন
কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ / বিশ্বের যে ৬ দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ -
ভালোবাসা দিবস পালন করতে হলে আমাদের তা জানা প্রয়োজন। আমরা যদি সঠিকভাবে না
জানি কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ / বিশ্বের যে ৬ দেশে ভালোবাসা দিবস
নিষিদ্ধ তাহলে আমরা আইনি সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি । তাই কোন দেশে
ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ / বিশ্বের যে ৬ দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ জানতে আমার
আর্টিকেল পড়ুন।
খ্রিস্টপূর্ব ২৬৯ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স নামে ইতালির রোম নগরীতে একজন
খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন এবং তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক। মনে করা হয় তার নামের
অনুসারে এই ভালোবাসা দিবস নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক মুসলিম দেশ এই দিবস
পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ / বিশ্বের যে ৬
দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ তা নিচে আলোচনা করা হলো-
পোস্ট সূচীপত্রঃ কোন কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ / বিশ্বের যে ৬ দেশে
ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ
ভূমিকা
১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসার দিন। আমাদের কাছে যেটা ভালোবাসার দিন, বিশ্বের দরবারে
সেটা ভ্যালেনস্টাইন ডে হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে
তাল মিলিয়ে এই ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করে। যদিও আমাদের দেশে এই
দিবসের কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, তবে আবার কোন নিষেধাজ্ঞা ও নেই।
ফুল, চকলেট এবং পছন্দের উপহার সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়ে
থাকে। তবে বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যেসব দেশে এই ভালোবাসা দিবস পালন সম্পূর্ণ
নিষিদ্ধ ও বটে। আসুন জেনে নেই কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ।
কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ
আসুন জেনে নেই কোন দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ -
১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক সে দেশে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে দিবস
পালন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপরে ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময়
প্রশাসনিকভাবে তাদের দেশে এ দিবস বা উৎসব পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়াও
জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং অস্ট্রিয়াতে ও বিভিন্ন সময়ে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ করা
হয়। এছাড়াও অনেক মুসলিম দেশ এই দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ তারা মনে
করে এ দিবস ইসলাম পরিপন্থী। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের আদালতের মাধ্যমে ভালোবাসা দিবস
পালন নিষিদ্ধ করা হয়।
বিশ্বের যে ৬ দেশে ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ
এছাড়াও যেসব মুসলিম দেশ ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস এর ওপর নিষেধাজ্ঞা
জারি করে নিচে তাদের বর্ণনা করা হলো -
সৌদি আরব
মুসলিম দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং পরিচিত দেশ সৌদি
আরব। এই দেশের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ লোক শিয়া মুসলিম এবং ৭৪ ভাগ সুন্নী। সৌদি আরব
মুসলিম দেশ হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন ধর্মের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ লোক
এই দেশে কাজের জন্য আসে। তবে এই দেশের সবার জন্য একই নিয়ম। এদেশে ভালোবাসা দিবস
পালন তো দূরের কথা, এ দিবসকে ঘিরে কোন উপহার সামগ্রী বিক্রিও কেনা উভয়ই
নিষিদ্ধ।
আরো পড়ুনঃ ভালো বাসা দিবস কত তারিখ / ভালোবাসা দিবস কিভাবে আসলো জেনে নিন
এমনকি এ দিবস উপলক্ষে কেউ লাল গোলাপ বেচা - কেনা করতে পারবেনা। আর যদি কেউ এ
নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তার জেল পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২০১৮ সালে এ নিয়মের
ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা আসে। এই দেশটি ধর্মীয় পুলিশগণ ঘোষণা করেন যে, ভালবাসা
দিবস ইসলাম বিরোধী নয়। এ দিবসে মানুষের মন প্রফুল্ল হয়।
ইরান
ইরানে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি
করেছে সে দেশের ধর্ম গুরুরা। কারণ সেন্সেক্স এ দাবি করা হয়েছে এদেশের প্রায় ৯৯.
৫ ভাগ লোক মুসলিম। এই দিনকে কেন্দ্র করে কোন উপহার সামগ্রী ও বিক্রি করা যাবে না।
দেশটিতে যদিও পশ্চিমা সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তার করেছে, তবুও সেখানকার মানুষের
চিন্তা আগের মতই রয়েছে। তাই এ দেশ ভালোবাসা দিবস পালন করে না।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ভালোবাসা দিবস পালন করা নিষিদ্ধ। যদিও এ দিবস সম্পর্কে কোন আইনি
নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ম নেই। এদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২০কোটি ৩০ লাখ লোক মুসলিম।
সম্প্রতি দেশটিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে ভালোবাসা দিবস পালন ,অ্যালকোহল পান করা এবং
বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ককে বৈধ করার জন্য। তবে এখনো মাকাস্মরের বা সুরাবায়ার মত
এলাকায় এই দিনে যুগোলদের ঘোরাফেরা এমনকি বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
মালয়েশিয়া
২০০৫ সাল থেকে মালয়েশিয়াতে ও এই ভালোবাসা দিবস পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা
হয়। দারুন কারণ মালয়েশিয়াতে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১.৩ বা ১৯.৫ মিলিয়ন
মুসলিম বাস করে। যদি কেউ এই ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে বাইরে বের হয় তবে
তার গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তান দেশটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। ২০১২ সালে এই
দেশে ভালোবাসা দিবস পালন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। উজবেকিস্তান একটি মুসলিম দেশ
হিসেবে বিশেষ ভাবে পরিচিত। এই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১.৪ ভাগ মুসলিম।
ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেনটাইন ডে এর পরিবর্তে সম্রাট বাবর যাকে "ভূমিপুত্র" বলা
হয় তার জন্মদিন পালন করা হয়।
পাকিস্তান
পাকিস্তানের ও ভালোবাসা দিবস পালনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ৭ই
ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের হাইকোর্টে এই দিবস পালন নিষিদ্ধ করা
হয়। সেখানকার বিচারপতি এই দিবস পালনকে ইসলামের পরিপন্থী বলে মনে করেন। কারণ এই
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মুসলিম।তবে সবাই যে এ সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করেছে তা নয়।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এবং ফুল বিক্রেতারা এ দিবস মেনে
নিতে পারেনি। তারা এ দিবসকে উদযাপন করে। তবে এ দিবস পালনে অনুৎসাহিত করতে তারা
অবলম্বন করেছে এক অভিনব পন্থা। পাকিস্থানের ফৌজাবাদের এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি
থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, সেখানে এই দিনটিকে পালন করা হবে "বোন দিবস"
হিসাবে।
দেশটির "ডন" নামক এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয় যে,ওই
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাফর ইকবাল ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে "বোন দিবস" হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেনটাইন ডে ইসলাম ও সংস্কৃতির পরিপন্থী হওয়ায়
উপাচার্য জাফর ইকবাল বলেন, "ভালোবাসা দিবসকে বোন দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
পাকিস্তান এ ইসলামী সংস্কৃতি সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ"।
এ "বোন দিবস" কে কেন্দ্র করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর তাদের
ওয়েবসাইটে লিখেছেন।আমাদের সংস্কৃতিতে নারীরা মা - বোন - কন্যা ও পত্নী
হিসেবে সম্মান পায় বেশি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে পশ্চিমা
সংস্কৃতিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে ফুল ,কার্ড নয়, শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকৃত গাউন, সাল ও স্কাপ বিতরণ করা হবে বলে জানান ওই
ভাইস চ্যান্সেলর।
আরো পড়ুনঃ ২১ শে/একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে জানুন
২০১৭ সালে দেশটির খাইবার পাখতুন খোয়া প্রদেশের কোহাট জেলার স্থানীয় সরকার
ভ্যালেন্টাইন ডে পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।এমনকি সে সময় পাকিস্তান মিডিয়া
নিয়ন্ত্রক কোন সংস্থা ভালোবাসা দিবস কে নিয়ে কোনো খবর প্রচার করতে পারবে না
বলেও আইন জারি করা হয়।এমনকি এ দিনটি উদযাপন উপলক্ষে ওই জেলার কোন দোকানে উপহার
সামগ্রী বা কার্ড বিক্রি বন্ধ করে দিতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়।
টেলিভিশন চ্যানেলেও এ দিবসকে ঘিরে কোন অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না বলে আদেশ জারি
করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মামনুন হুসেইন এই ভালোবাসা দিবস উদযাপন
না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এই ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে এই
দেশটির কোহাটের জেলার প্রশাসক মাওলানা নিয়াজ মোহাম্মদ দেশটির সংবাদ মাধ্যম দৈনিক
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলেন, ফুল, কার্ড বা উপহার দেয়া সাধারন ভাবে খারাপ
নয়।
কিন্তু বিশেষ কোনোদিনের সঙ্গে যুক্ত করা ঠিক নয়।এই চর্চা অশালীন আচরণকে উৎসাহিত
করে। পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় কিছু গোষ্ঠী এই দিনটি উদযাপনের বিরুদ্ধে
প্রচার চালিয়ে আসছে।
উপসংহার
প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব দেশ
পালন করে থাকে। কিন্তু কেন ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় এ নিয়ে
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে। আর এ বিষয়কে ঘিরে রয়েছে নানান ইতিহাস। তবে অনেক মুসলিম
দেশ রয়েছে যারা এই দিবস পালনের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ তারা মনে করে
এই দিবসটি সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।
বিশ্বের কোন কোন দেশ এই ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে পালনে নিষিদ্ধ ঘোষণা
করেছে আমি তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আমার আগের আর্টিকেলে ভালোবাসা দিবসের
ইতিহাস, ভালবাসা দিবস কোথায় থেকে শুরু হয়েছে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আশা
করি আমার এই লেখা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url