কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন




কিসমিস আমরা সবাই খেয়ে থাকি কিন্তু কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা আমরা জানি না। কিসমিস
খেলে আমাদের শরীরে কি উপকার হয় এবং আমরা কোন রোগ প্রতিরোধ করতে পারি তা জানা
প্রয়োজন। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জানতে আমার আর্টিকেলটি আপনার জন্য।



Image


কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। আর এই শুকনো আঙ্গুরকে কিসমিস হিসেবে অভিহিত করা
হয়।কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। আর এই শুকনো আঙ্গুরকে কিসমিস হিসেবে অভিহিত করা
হয়। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-



পোস্ট সূচিপত্রঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা






 কিসমিস কি



কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। আর এই শুকনো আঙ্গুরকে কিসমিস হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কিসমিস আঙ্গুর শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয়, তাই কিসমিস কে শুকনো ফলের শ্রেণীতে
অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং একে বলা হয় শুকনো ফলের রাজা। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই
কম বেশি আঙ্গুর উৎপাদিত হয়। তবে ভারত, পাকিস্তান, ইরাক ও ইরানে সবচেয়ে বেশি
আঙ্গুর উৎপাদিত হয়। আঙ্গুর একটি মিষ্টি ফল এবং একে পুষ্টির আধার হিসাবে অভিহিত
করা হয়। 



কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম,
ফাইবার, নিউট্রিয়েন্টস, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন।আঙ্গুর শুকিয়ে এর আদ্রতা বের
করতে সময় লাগে প্রায় তিন সপ্তাহ। আর এই তিন সপ্তাহ পর আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত হয়
কিসমিস। এই কিসমিস প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজন সূর্যের তাপ কিংবা মাইক্রোওভেন।
আঙ্গুরের ফ্রকটোস গুলো তাপে গরম হয়ে জমাট বেধে যায় এবং কিসমিসে পরিণত হয়।



কিসমিসের প্রকারভেদ



কিসমিস আমাদের সবার কাছেই প্রায় প্রিয়। আমরা সবাই কিসমিস বাজার থেকে কিনে খাই।
কিন্তু আমরা জানি না কিসমিস কত প্রকার । আসুন আমরা জানি কিসমিস কত প্রকার ও
কি কি?


আমি প্রধানত তিন (৩) প্রকার কিসমিস নিয়ে আলোচনা করব।-



আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা জেনে নিন




  • বেদানা কিসমিস বা কালো কিসমিস

  • বাদামি কিসমিস

  • সুলতানা গোল্ডেন  রেজিন



বেদানা কিসমিস বা কালো কিসমিস



বাজারে কালচে ধরনের একপ্রকার কিসমিস পাওয়া যায় যাকে বলা হয় বেদানা কিসমিস।
কালো আঙ্গুল শুকিয়ে যে আঙ্গুর প্রস্তুত করা হয় তাকে বলা হয় বেদানা
কিসমিস। এই কিসমিস গুলোর স্বাদ হলো হালকা টক মিষ্টি এবং আকারে ছোট। আঙ্গুর
থেকে কিসমিস প্রস্তুত হতে সময় লাগে প্রায় তিন সপ্তাহ। আর তিন সপ্তাহ পর রোদে
শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয় এই বেদানা কিসমিস। তাই কিসমিস খাওয়ার
উপকারিতা জেনে কিসমিস খান।


বাদামি কিসমিস



এই কিসমিস প্রায় তিন সপ্তাহ রোদে শুকিয়ে তারপর প্রস্তুত করা হয়। তবে রোদের তাপ
এবং ধরনের ওপর নির্ভর করে কিছুদিন কম বা বেশি হতে পারে। রোদে শুকানোর পর এই
কিসমিস গুলো বাদামী রং ধারণ করে বলে একে বাদামি কিসমিস বলা হয়।আর এই বাদামি
আঙ্গুর তৈরি করতে বিভিন্ন জায়গার এবং বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর ব্যবহার করা হয়। এই
আঙ্গুরকে বাদামী আঙ্গুর বলা হলেও এর স্বাদ, রং এবং আকার নির্ভর করে আঙ্গুরের
ধরনের উপর।


সুলতানা গোল্ডেন  রেজিন



বাজারে বীজহীন গোলাকার একপ্রকার আঙ্গুর পাওয়া যায়। আর এই আঙ্গুল শুকিয়ে যে
কিসমিস প্রস্তুত করা হয় তাকে বলা হয় সুলতানা গোল্ডেন রেজিন কিসমিস। এই কিসমিস
প্রস্তুত করার জন্য আঙ্গুর গুলো শুকাতে দেওয়ার পূর্বে এক ধরনের তৈলাক্ত দ্রবণে
ভিজিয়ে রাখা হয়। আর এই তৈলাক্ত দ্রবণে ভিজিয়ে রাখার কারণে এর রং হয়
বাদামী বা হালকা সোনালী। এই কিসমিস টি আকারে ছোট হয় এবং অন্যান্য কিসমিসের
তুলনায় স্বাদে মিষ্টি হয়।



কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা



আমরা সবাই কিসমিস খাই। শুকনো হোক আর ভিজিয়ে হোক বা কোন খাবারের সাথেই হোক না কেন
! বিভিন্নভাবেই আমরা কিসমিস খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
সঠিক ভাবে জানি না। আমি আজকে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা আপনাদের সামনে তুলে ধরার
চেষ্টা করব। তাহলে আসুন কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেয়া যাক।


রক্তশূন্যতা দূর করে



আমাদের শরীরে যখন আয়রনের ঘাটতি হয় তখন আমাদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর আমাদের
দেশের রক্তস্বল্পতায় সবচেয়ে বেশি শিকার হয় শিশু এবং মহিলারা। আয়রনের অভাব হলে
আমাদের শরীরের রক্তকণিকা তৈরি হয় না। কিন্তু আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন
সরবরাহ ঘটায় আর হিমোগ্লোবিন কম হলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।



আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম নাকি ভাজা বাদাম কোনটি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো জেনে নিন



আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে কিসমিস খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারন
কিসমিস হল আয়রনের অন্যতম উৎস। আবার শরীরে যখন সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় তখন
ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ হয়। আর কিশমিশে থাকে পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরে
সোডিয়ামের মাত্রা কমিয়ে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। 



আবার কিসমিসে উপস্থিত আয়রন, ভিটামিন বি এবং কপার আমাদের শরীরে নতুন রক্ত তৈরি
করে।এবং রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই কিসমিস ভেজানো পানি
নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের যে সকল সমস্যা রয়েছে যেমন ,পেশী
সংকচিত হয়ে যাওয়া সহ সকল ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই কিসমিস
খাওয়ার উপকারিতা জেনে কিসমিস খান।


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে



কিসমিস আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। কিসমিস হল ফাইবার সমৃদ্ধ
খাবার আর ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। আবার খাবার সহজে হজম হয়
বলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য আমাদের উচিত কোন শিরাপ
বা ওষুধ না খেয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়া।


নিরাপদ ওজন বৃদ্ধি



আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা ওজন বাড়াতে বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকে। যেমন
- অনেকেই  ছোলা ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বেশি
পরিমাণে ভাত খেয়ে থাকেন যার ফল হিসাবে সুস্বাস্থ্য হওয়ার পরিবর্তে পেট মোটা
হয়ে যায়। আর শরীরে সৃষ্টি হয় হাজারো রোগ বালাই। 



আপনারা যদি নিরাপদ ওজন বাড়াতে চান তাহলে কিসমিস খেতে পারেন। কিসমিস হল এমন একটি
শুকনো ফল, যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্রকটোজ এবং আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয়
প্রোটেনশিয়াল এনার্জি। যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল থেকে বাঁচিয়ে
রাখে এবং নিরাপদ ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।



আরো পড়ুনঃ  বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন



কিসমিস প্রচুর এনার্জি যোগান দেয় বলে যারা অ্যাথলেট ও বডি বিল্ডার তারা কিসমিস
খেয়ে থাকেন। তবে ওজন বাড়ানোর আগে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমাদের নির্দিষ্ট
মাপের অনুপাতে আমাদের ওজন বাড়াতে হবে।


কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করে



কিসমিস লিভার ও রক্ত থেকে কোলেস্টেরল খুব দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে। আর কিসমিস
হল এন্টি কোলেস্টরেল উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। আর কোলেস্টেরল হৃদ রোগের ঝুঁকি অনেক
বাড়িয়ে দেয়। আর হৃদরোগ প্রতিরোধে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। শরীরে
কোলেস্টেরল শোষণকারী এনজাইম যদি সক্রিয় থাকে তাহলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের
মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায়।



ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন এন সি বি আই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
একটি গবেষণা অনুসারে, এলডিএল এবং ট্রাই গ্লিসারাইড আমাদের শরীরের খারাপ
কোলেস্টেরল কমাতে পারে। যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়। আর খারাপ কোলেস্টেরল হলো রক্তে
উপস্থিত একপ্রকার চর্বি। কিসমিসে উপস্থিত পলিফেনোল  আমাদের রক্তের
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম এর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমাদের দেহের
কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়াতে দেয় না।


ক্যান্সার প্রতিরোধ করে



ক্যান্সার শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। যে শব্দটি শুনলে আমরা সবাই চমকে উঠি।
কিসমিসের গুনাগুন আমাদের ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে
থাকে। কিসমিসে উপস্থিত পলিফেনাল আমাদের রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম এর
কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে দেয়
না। 



কিসমিশে রয়েছে অ্যান্ডি অক্সিডেন্ট উপাদান ও ক্যাটেচিন নামক একটি পলি ফেনি লিক
এসিড। এগুলো আমাদের শরীরের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণু গুলো ধ্বংস করে।এবং
আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষগুলো উৎপাদন হওয়া থেকে রক্ষা করে। এন সি বি আই এর
একটি গবেষণা অনুযায়ী,কিসমিসের মিথানল নির্যাস এ রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক
অ্যান্টি রেডিক্যাল যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। 



আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  -  আমলকির ব্যবহার  জেনে নিন



কিসমিসে আছে ফাইবার যা কোলোরেক্টারাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন সকালে
যদি কিসমিস খাওয়া যায় তাহলে শরীরে ক্যাটে চীনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা শরীরের
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে
কিসমিস খান।


মস্তিষ্কের উন্নতি ও প্রশান্তি



কিসমিসের রয়েছে বোরন নামক পুষ্টি উপাদান যা শরীরের হাড় গঠনের পাশাপাশি মনোযোগ
বাড়াতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য কিসমিস খাওয়ানো
উচিত। এতে তাদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বাড়ে। এছাড়াও কিসমিসে উপস্থিত আয়রন
মানসিক চাপ, অবসাদগ্রস্থতা কমায় এবং মস্তিষ্কের প্রশান্তি আনে ও মন প্রফুল্ল
রাখে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা কিসমিশ খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।


হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে



কিশমিশে রয়েছে বোরন নামক এক ধরনের মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং ক্যালসিয়াম যা
আমাদের হাড় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। বোরন শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে
সহায়তা করে। কিসমিসে উপস্থিত  মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট আমাদের শরীরের বাতের
ব্যথা দূর করে এবং হাড়ের জয়েন্ট ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে।


ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কিসমিসের উপকারিতা



ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেকেই মনে করেন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিসমিস খেতে পারবেন না, কিন্তু এটা ভুল ধারণা।
দুপুরে বা রাতে খাবারের পরে শরীরে যে ইনসুলিনের মাত্রা তৈরি হয় কিসমিস খাওয়ার
মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিসমিস ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ রাখে।  যার
কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।



কিসমিস আমাদের শরীরে লেপটিন ও ঘ্রনিল নামক দুটি ক্ষতিকারক হরমোনের হাত থেকে রক্ষা
করে।  কিসমিসে উপস্থিত এই হরমোন গুলো আমাদের শরীরে খাওয়ার পরিমাণ ও রুটিনের
ব্যাপারে সিগন্যাল পাঠায়। যার ফলে আমাদের যখন তখন খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হয় না
এবং এর কারণে ওজনও বাড়ে না।কিসমিসে ইনসুলিন এর প্রতিক্রিয়া উন্নত করে কারণ এতে
গ্লাইসেমিক সূচকের মাত্রা কম থাকে।



তাই কিসমিস আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল
কার্বোহাইড্রেট ধারণকারী একটি খাদ্য উপাদান যা আমাদের শরীরের রক্তে গ্লুকোজ কত
দ্রুত ছড়াছে তা নিয়ন্ত্রণ করে, তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ডাক্তারের
পরামর্শ না নিয়ে কিসমিস খাবেন না।


দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা করে



কিসমিস দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষা করে থাকে। ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ ফুড এন্ড
নিউট্রিশন দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কিসমিস
দাঁতের গহব্বরে থাকা জীবাণু প্রতিরোধ করে থাকে।গবেষকদের মতানুযায়ী কিসমিসে আছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটো কেমিক্যাল এবং ওলিয়া নোলিক এসিড যা আমাদের দাঁতের
ক্যাভিটি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে।



আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম  জেনে নিন



কিসমিস অলিয়নেলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম এ পরিপূর্ণ বিধায় এটা আমাদের দাঁতে এনামেল
গঠন করে, দাঁতের ক্ষয়  ও ভঙ্গুরতা রোধ করে এবং দাঁত শক্ত ও সুগঠিত করে
থাকে। যারা আইসক্রিম ও চকলেট বেশি খায় তাদের দাঁতও মাড়ি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই যদি তারা কিসমিস খায় তাহলে দাঁতের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
কিসমিসে উপস্থিত ফাইটো কেমিক্যাল গুলো মুখের মধ্যে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া
ধ্বংস করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।


শক্তির উন্নতি করে



কিসমিসে আছে ভিটামিন এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এ বিটা ক্যারোটিন এবং এ
ক্যারোটিনইয়েড  যা আমাদের চোখের ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। যার কারণে আমাদের
চোখে ছানি পড়ে না, দৃষ্টি শক্তির হ্রাস পায় না এমনকি চোখের চারপাশে বলি দেখা
তৈরি হতে দেয় না। কিসমিস  হল চোখের জন্য একটি আদর্শ খাবার।


ইনফেকশন প্রতিরোধ করে



কিসমিসে  উপস্থিত এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, পলিফেনালস, ইনফ্লেমেটরি  উপাদান
আমাদের শরীরে যে কোন ক্ষত থেকে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাই কিসমিস
খাওয়ার উপকারিতা জেনে কিসমিস খান।


জ্বর প্রতিরোধে কিসমিসের উপকারিতা



কিসমিস আমাদের  শরীরের জ্বর নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। কারণ কিসমিসে আছে
প্রচুর পরিমাণে ফেনোল ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। এগুলো আমাদের শরীরে ভাইরাস ও
ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে আমাদের শরীরে ভাইরাল - ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে
যে জ্বর হয় তা প্রতিরোধ করে থাকে।


অ্যাসিডোসিস নিয়ন্ত্রণ করে



আমাদের শরীরে অ্যাসিডোসিস নিয়ন্ত্রণে কিসমিসের চাইতে উপকারী খাবার আর
দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের রক্তের টক্সিন ও এসিডের পরিমাণ বেড়ে
গেলে অ্যাসিডোসিস হয়। আর অ্যাসিডোসিস আমাদের শরীরের ক্যান্সার, চর্ম,
বাত ও হৃদরোগের জন্য দায়ী। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে কিসমিস খান।


 অ্যাসিডিটিতে উপকারী



অ্যাসিডিটির সমস্যা আমাদের সবচেয়ে একটি বড় সমস্যা। অ্যাসিডিটিকে আবার অম্লেও
বলা হয়ে থাকে।  ছোট থেকে বড় এমন কেউ নেই যার অ্যাসিডিটির সমস্যা হয় না।
এসিডিটি হলো পেটে ব্যথা, কখনো বুক থেকে পেট পর্যন্ত জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। আর
কিসমিস অম্লতা প্রতিরোধে  সহায়তা করে।


যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করে



কিসমিসে বোরন নামক এক প্রকার খনিজ পদার্থ রয়েছে যা যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারী ও পুরুষের হরমোন বাড়াতে কিসমিসে উপস্থিত
বোরন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও কিসমিস
খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।


ত্বকের যত্নে কিসমিসের উপকারিতা



ত্বকের যত্নে ও কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এন সি বি আই এর
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে আঙ্গুর
এবং আঙ্গুর সমৃদ্ধ খাবার গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারন কিসমিসে
রয়েছে  প্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে
সহায়তা করে থাকে।



কিসমিস খাওয়ার নিয়ম



বিশেষজ্ঞদের মতে কিসমিসের পুষ্টিগুণ সম্পন্নরূপে পেতে হলে সারারাত কিসমিস 
ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনাকে এক কাপ পানির সাথে ৮
থেকে ১০ টি কিসমিস ভালো করে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। বেশিক্ষণ ভিজিয়ে
রাখলে এর রং অনেক গাড়ো দেখাবে। কিসমিসের রং যত গাঢ় হবে এর পুষ্টি উপাদান তত বেশি
কাজ করবে। সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস গুলো খেতে পারেন।



শুকনো কিসমিস খাওয়ার চাইতে কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে খাওয়া বেশি উপকারী। তাই
বলে শুকনো অবস্থায় একেবারে যে কিসমিস খাওয়া যাবেনা তা নয়। বাজার থেকে কিনে এনে
ভালো করে ধুয়ে ৫ - ৬ টি কিসমিস খেতে পারবেন। আপনি নিশ্চিন্তে প্রতিবার খাওয়ার
আগে অবশ্যই কিসমিস গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।



আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা  খাওয়ার  উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার  নিয়ম
বিস্তারিত জেনে নিন



পায়েস, সেমাই, জর্দা, কোরমা, পোলাও ইত্যাদি খাবার মুখরোচক করতে কিসমিসের জুড়ি
মেলা ভার। এইসব খাবারে কিসমিস দিয়ে রান্না করতে পারেন। এতে করে আপনার খাবারের
স্বাদটাও বাড়বে আবার দেহে ও পুষ্টি পাবেন। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে
কিসমিস খান।



কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটা ফেলে দেবেন না। সারারাত কিসমিস  ভিজিয়ে
রাখার ফলে কিসমিস থেকে কিছু পুষ্টি উপাদান পানিতে যোগ হয়েছে। আপনি এই পানি হালকা
গরম করে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট
পর অন্যান্য খাবার খাবেন।



শেষ কথা



কিসমিস পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি আদর্শ খাবার। কিসমিসে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন,
ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অনেক খাদ্য উপাদান। কিসমিসে  উপস্থিত এন্টি
ব্যাকটেরিয়াল, পলিফেনালস, ইনফ্লেমেটরি  উপাদান আমাদের শরীরে যে কোন ক্ষত
থেকে ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।



আমি কিসমিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের
অনেক উপকারে আসবে। তাই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা জেনে কিসমিস খান।













এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url