মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম - সময় জেনে নিন
মধু সর্ব রোগের মহা ঔষধ এ কথা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু আমরা
জানিনা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়। মধুর সার্বিক পুষ্টিগুণ পেতে
আমাদের মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা
প্রয়োজন।মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে জানতে আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে পড়ুন।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা আল নাহল এর ৫৮ এবং ৫৯ নাম্বার আয়াতে মৌমাছি এবং মধু
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মধু হল সর্ব রোগের
শেফা। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
পোস্ট সূচিপত্রঃমধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়
- মধু কি
- মধুর খাদ্য উপাদান
- মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়
- মধু খাওয়ার উপকারিতা
- ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম
- রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- শেষ কথা
মধু কি
মধু হলো মৌমাছির বিষ। যা এক প্রকারের ঔষধি গুন সম্পন্ন মিষ্টি ও ঘন তরল
পদার্থ ।যা মৌমাছি বিভিন্ন ফুলের নিজাস থেকে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংগ্রহ করে
রাখে। পবিত্র কোরআন মাজিদের "সূরা আল নাহলে" মৌমাছি সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছে।
আয়ুর্বেদী ও ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে মধুকে মহা ঔষধ বলা হয়েছে। আদিকাল থেকেই
পৃথিবীর সব দেশের মানুষ পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক হিসেবে মধু গ্রহণ করে আসছে। মধু কি
- মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে জেনে মধু খাওয়া উচিত।
মধুর খাদ্য উপাদান
ওষুধি গুণসম্পন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মধুতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান।
মৌমাছি ফুলের পরাগরেণু থেকে যে মধু সংগ্রহ করে এতে রয়েছে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ
গ্লকোজ। ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রকটোজ ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২
শতাংশ মনটোজ । প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ শতাংশ ক্যালোরি। আরো থাকে
২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড এবং ১১ শতাংশ
এমকাইম।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম নাকি ভাজা বাদাম কোনটি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো জেনে নিন
মধুতে আরো রয়েছে আয়োডিন, জিংক, কপার, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি মাইক্রো
রিয়েল। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৫ ও
ভিটামিন বি ৬। মধুতে প্রোটিন এবং চর্বি নেই। মধু আমাদের শরীরের সার্বিক সুরক্ষার
কাজ করে থাকে। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান
মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়
মধু খাওয়ার নিয়ম হলো সকালে খালি পেটে খাওয়া এবং হাতের তালুতে নিয়ে তা চেটে
চেটে খাওয়া। একটু কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে যদি খান তাহলে সবচেয়ে বেশি
উপকার পাবেন। তবে সদ্য মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা মধুর চেয়ে কিছুদিন পূর্বে যে মধু
সংগ্রহ করা হয়েছে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আপনি আপনার এসিডিটি কমাতে মধুর
সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা খাবার খাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেতে পারেন এতে উপকার
পাবেন। শীতকালে অনেকের সর্দি - কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। সঠিক নিয়মে মধু
খেলে অনেক উপকার পাবেন। নিচে মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম আলোচনা করা হলো -
মধু ঠান্ডা জনিত রোগের মহা ঔষধ কারণ মধুতে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টি
ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মধু আমাদের সাইনাস ও স্টেশন পরিষ্কার করতে
সাহায্য করে থাকে। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান
মধু কখনোই অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে বা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া ঠিক নয়
কারণ তাপমাত্রা ৪২° সেন্টিগ্রেড এর উপরে হলে মধুর ঔষধি গুণ নষ্ট হয়ে তা বিষ এ
পরিণত হয় অনেকেই আবার চায়ের সাথে চিনির পরিবর্তে মধু খেয়ে থাকেন তাদেরও
উচিত চা একটু ঠান্ডা করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা
যে খাওয়াটায় খায় না কেন তার পুষ্টিগুণ যেন বজায় থাকে
মধু কখনোই ফুটিয়ে খাওয়া ঠিক নয় কারণ তাপে মধুর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
যদিও মধু খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালে খালি পেটে খাওয়া তবুও অনেকেই আছেন
পানি ফুটিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে খান। এক্ষেত্রে তাদের উচিত গরম পানিতে মধু মিশিয়ে
খাওয়া। তাহলে এতে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। এভাবে মধু খেলে দীর্ঘ মেয়াদে
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এটা বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপনার অ্যাসিডিটি সমস্যা থাকলে আপনি লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে
উপকার পাবেন। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
যাদের পেটে হজমের সমস্যা আছে তারা ভারী খাবার খাওয়ার পূর্বে এক চামচ মধু খেয়ে
নিতে পারেন। এতে আপনার হজম শক্তি বাড়বে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
যাদের উঁচু রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা মধু খেতে পারেন। কারণ উচ্চ রক্তচাপ
স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি মধুর সাথে
দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
লিভারের সমস্যার সমাধানে মধু অনেক উপকারী। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বেশি উপকার পেতে
মধুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে।
সর্দি কাশি থেকে আরাম পেতে তুলসী পাতা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে
এক্ষেত্রে আপনাকে তুলসী পাতার রস করে তা গরম করে তারপর সে রস ঠান্ডা করে
নিতে হবে। এবার ঠান্ডা রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে।
যাদের ক্ষুধা মন্দা আছে তারা এক (১) চামচ আদার রস ও এক (১) চামচ মধু মিশিয়ে খেতে
পারেন। এতে অবশ্য সর্দি কাশি ও দূর হয়। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার
নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
যাদের দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়ের সমস্যা আছে তারা কচি বেল, আম গাছের ছালের সাথে পেস্ট
করে এর সাথে আখের গুড় ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনি আমাশয় থেকে মুক্তি
পাবেন।তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধু খাওয়ার উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো -
শরীরে ক্ষত সারাতে
মধু আমাদের শরীরের কাটা - পোড়া ও ক্ষত সারাতে দারুন কার্যকর। কারণ মধুতে
রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা পোড়া ও কাটার জায়গায় ব্যাকটেরিয়া
বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে সেই স্থানে
মধুর পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন।দ্রুত ব্যথা কমে যাবে এবং দ্রুত শুকিয়ে যাবে। কারণ
মধুতে আছে অ্যান্টি মাইক্রবিয়াল উপাদান তা ক্ষত পূরণ হতে সাহায্য করে, এবং
মুখে দুর্গন্ধ ও পুঁজ ইত্যাদিতে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
মুখ গহব্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহব্বরের যে কোন সমস্যায় মধু ব্যবহার করা হয়। এটা দাঁতে ব্যবহার করলে
দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের পাথর দূর করে এমনকি অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে
রক্ষা করে। মুখে কোথাও ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখানে মধু ব্যবহার করলে বিশেষ উপকার
পাওয়া যায়। কুসুম গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে দাঁতের মাড়ির
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চর্ম রোগের উপকারিতা
যদি কারো চর্মরোগ হয় তাহলে আক্রান্ত স্থানে নিয়মিত মধু লাগান। কারণ মধুতে
রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাক প্রতিরোধ করে। এবং অন্য যে কোন কারণে ত্বক
ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক ঠিক করে আবার নতুন ত্বক গঠনে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে এক
চামচ মধুর সাথে অল্প পরিমাণ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার নিয়ম
বিস্তারিত জেনে নিন
রূপচর্চায়
মেয়েদের রূপচর্চায় মধু বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণে মধুর তৈরি
মাক্স এত জনপ্রিয়। মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপকারী পদার্থ যা সূর্যের
অতি বেগুনে রোশ্নি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। এক চামচ মধুর সাথে একটু পানি
মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ব্যবহার করলে এতে আপনার ত্বকের রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ
দূর হবে এবং ত্বক হবে মসৃণ ও ঝলমলে।
ক্লান্তি দূর করে
আপনি যদি প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খান তাহলে আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হবে
এবং আপনি থাকবেন এনার্জিতে ভরপুর। কারণ মধুতে রয়েছে শর্করা, গ্লকোজ যা আপনার
অবসাদ দূর করে দিবে।
ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে
প্রতিদিন এক চামচ পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে একসাথে পান করলে ক্যালসিয়ামের অভাব
দূর হয়। মধু হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে আর হিমোগ্লোবিন রক্তস্বল্পতা দূর
করে। তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
যৌন দুর্বলতা
যাদের যৌন দুর্বলতা আছে তারা মধু খেলে উপকার পাবেন। তবে প্রতিদিন মধু ও ছোলা
একসাথে খেলে বেশি উপকার পাবেন।
ঠোঁটের সৌন্দর্য রক্ষা
মধু ঠোঁটের ওপরের কালচে ভাব দূর করে। ঠোঁটের শুষ্কতা রোধ করে, যার ফলে আপনার
ঠোট হবে নরম তুল তুলে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে ঠোঁটে মধু লাগালে আপনার ঠোঁট হবে নরম
ও নজর কাড়া সুন্দর।
শক্তি প্রদায়ী
মধু শক্তির একটি ভালো উৎস। কারণ মধু শক্তি প্রদেয় খাদ্য। নিয়মিত মধু খেলে
শরীরের তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করে
মধুতে উপস্থিত ভিটামিন বি ১ ভিটামিন বি ২ ভিটামিন বি ৩ ভিটামিন
.৫ ও ভিটামিন ৬, আয়োডিন, কপার, ও জিংক আমাদের দেহের এইচডিএল বা ভালো
কোলেস্টরেলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ভাল
উপকার পেতে প্রতিদিন এক চামচ মধু খান।
হজমে সহায়তা করে
মধু আপনার হজমে সহায়তা করে। মধুতে যে শর্করা থাকে তা খুব সহজে হজম হয়ে যায়।
কারণ এতে যে ডেস্কটিন থাকে তা খুব সহজে রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ
করে। যাদের পেটে সমস্যা আছে মধু তাদের জন্য উপকারী।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে
যাদের শ্বাস প্রশ্বাসের বা সাইনাসের সমস্যা আছে তারা মধু খেতে পারেন। কারণ মধুতে
প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট দেহকে সুস্থ রাখে।তাই আপনারা মধু কি - মধু
খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
বাচ্চাদের এবং শিশুদের জন্য মধু
আমরা সবাই মধু খেতে খুব পছন্দ করি। তবে এই পছন্দের তালিকা থেকে বাচ্ছারা ও বাদ
পড়ে না। মধুর স্বাদ বাচ্ছারা ও খুব বেশি পছন্দ করে। তবে আমাদের মনে রাখতে
হবে এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কখনোই মধু খাওয়ানো ঠিক নয়। মধু যে কোন সময়
বাচ্চাদের পেটে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাচ্চাদের বয়স এক বছরের উপরে না
হলে তাদের মধু খাওয়ানো উচিত নয়।
আমাদের দেশে প্রায় ৩০০ টির ও বেশি জাতের মধু রয়েছে। মধু চিনির চেয়ে মিষ্টি
হলেও এটি চিনির চেয়ে অনেক উপকারী। আজকাল বাজারে প্রচুর পরিমাণে মধু পাওয়া যায়।
তবে অধিকাংশ মধুই প্রক্রিয়াজাত করা। তাই বাচ্চাদের মধু খাওয়ানোর জন্য সরাসরি
মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা উচিত। সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন কাঁচা মধুতে।
আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা - আমলকির ব্যবহার জেনে নিন
বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাই তারা খুব সহজেই বিভিন্ন
রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু তাদের ওষুধ খাওয়ানো অনেক কঠিন। কখনো কখনো সর্দি -
কাশি, ঠান্ডা, হাঁপানি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হলে আপনি
নিশ্চিন্তে মধু খাওয়াতে পারেন।
ইসলামে মধু খাওয়ার নিয়ম
মধুর মধ্যে অনেক রোগের প্রতিকার রয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহতালা বলেন, "তাতে
মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে" (সূরা আল নাহল, আয়াতঃ ৬৯)। "যে কোন রোগীকে
মধু খাওয়ালে সে সুস্থ হয়ে ওঠে" (আল বাইহাকি, আল সুনানুল সুগরা ৯৮ পৃষ্ঠা ৩৪৫,
হাদিসঃ ৩৯৫৮)।
"আপনার পালন কর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন, পাহাড়, গাছের উঁচু ডালে গৃহ
নির্মাণ কর। এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ করো এবং আপন পালনকর্তার
উন্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়। তাতে
মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তা শীল সম্প্রদায়ের জন্য
নিদর্শন রয়েছে"।( সূরা আল নাহল, আয়াতঃ৬৮- ৬৯)।
বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, মধুর মধ্যে রয়েছে ইনহিবিন নামক এক
শক্তিশালী জীবাণুনাশক। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া
মধুতে ডুবিয়ে দিলে তা মরে যায়। এবং মধুর সাথে গ্লুকোজ, অক্সিডেন্ট নামের
বিজারকের বিক্রিয়া ঘটালে গ্লুকোজ ল্যাকটোন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এ পরিণত হয়।
আর এই বিক্রিয়ার ফলে জীবাণু ধ্বংস হয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম বলেছেন, "মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে" (সহীহ
বুখারী, হাদিস নাম্বারঃ ৫২২৮)। রাসুল সাঃ আরো বলেন, "যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন
দিন সকালে মধু চেটে খাবে তার বড় ধরনের কোন রোগ হবেনা"।( ইবনে মাজাহ, হাদিস নংঃ
৩৪৪১)।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, "প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) এর কাছে
মধু এবং মিষ্টান্ন প্রিয় ছিল"। আবু সাঈদ রাযিআল্লাহু ও ইবনে ওয়ালিদ রহমতউল্লাহ
থেকে বর্ণিত, "এক ব্যক্তি নবী সালামের নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ
হয়েছে ।তখন রাসূল সাঃ বললেন, তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে
তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। সে তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও
।
এর পর লোকটি পুনরায় এসে বলল, আমি কোনোরূপই করেছি ! তখন রাসুল সাঃ বললেন, আল্লাহ
সত্য বলেছেন। কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে অসত্য বলছে। তাকে মধু পান
করাও। সে তাকে মধু পান করালো, এবার সে আরোগ্য লাভ করল ।(সহী বুখারী,অধ্যায়
চিকিৎসা, হাদিস নংঃ ৮২)। প্যারিসের রিমে কুভেন যিনি ইনস্টিটিউট অফ কালচারের
পরিচালক তিনি বলেন,
ক্যান্সার, রিকেট, রক্তক্ষরণ ও শারীরিক দুর্বলতায় মধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। শিশুদের চিনির পরিবর্তে মধু খেতে দেয়া হয়। চিনি বাচ্চাদের দাঁতের ক্ষয়
ঘটায় কিন্তু মধু তা করেনা। মধু ব্যবহারে নবজাতক স্বাস্থ্যবান ও সবল হয়ে ওঠে।
(ইবনুল কাইয়ুম, তিব্বুন নবী, পৃষ্ঠাঃ ৫৬)।
মধুর মধ্যে ১৫ প্রকারের সুগার রয়েছে। প্রতি কেজি মধুতে ৩১ থেকে ৩১-৫৪ থেকে ৩৩৫০
ক্যালোরি থাকে।আর মহান আল্লাহতালা মধুকে মানুষের শেফা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
তাই আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে, রাতে বিশেষ করে ঘুমানোর আগে মধু খেলে অনেক উপকার পাওয়া
যায়। মধু রাতের জন্য সঠিক পরিমাণে গ্লাইকোজেন তৈরি করে এবং আমাদের লিভারকে পূর্ণ
রাখে। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্ক জ্বালানির সন্ধানে ক্রাইসিস
মুডে চলে যায় না। মস্তিষ্ককে ট্রিপটোফান নিঃসরণ করে যা ইনসুলিনের
মাত্রা বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে থাকে।
আবার এই ট্রিপটোফান সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয় এবং তা পরে মেলাটোনিনে
রূপান্তরিত হয়। মেলাটোণিন কে আবার সুস্থ হরমোন নামে অভিহিত করা হয়। যা
বিশ্রামের সময় টিসু পুনঃগঠন করে এবং অনাক্রম্যতা বাড়ায়। মধুতে
উপস্থিত মেলাটোণিন শুধু যে ঘুমের সাহায্য করে তা নয় এটি সঠিকভাবে ঘুম থেকে
জেগে উঠতেও সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যেসব খেলোয়ার মধু সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছেন তারা সাধারণ
খেলোয়াড়ের চেয়ে দশ গুণ বেশি চর্বি পোড়াচ্ছেন। এবং তাদের স্ট্রামিনার মাত্রা
ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে মানুকা নামক এক প্রকার
মধু পাওয়া যায় যা ক্ষত সারাতে তারা ব্যবহার করে থাকে।
শেষ কথা
মধু হলো সর্ব রোগের মহা ঔষধ এ কথা আমরা সবাই জানি। তাই আমাদের সবার উচিত সঠিকভাবে
নিয়ম মেনে মধু খাওয়া। আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে মধু কি! মধুতে কি খাদ্য উপাদান
রয়েছে, মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং সময়, শিশুদের মধু খাওয়ার নিয়ম, ইসলামের
দৃষ্টিতে মধু খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আমি আশা করি আমার এই আর্টিকেল আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই
আপনারা মধু কি - মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় জেনে মধু খান।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url