অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা জেনে নিন
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী হল আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ভেষজ
উদ্ভিদ।এই অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা
প্রয়োজন।আমি অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমার
পোস্টটি পড়ুন।
অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা পেতে এই পাতার রস নিয়মিত সেবন করলে রক্তের
শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারণে ইনসুলিন ও সেনসিভিটি বাড়ে।
এছাড়াও এতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ,
ভিটামিন এ, বি ২ ও বি ৬, ফলিক এসিড, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি। অ্যালোভেরা
/এলোভেরা জেলের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -
পোস্ট সূচীপত্রঃ অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা
- অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা
- অ্যালোভেরা /এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম
- অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয
- চুলের যত্নে অ্যালোভেরা /এলোভেরার উপকারিতা
- অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
- অ্যালোভেরা /এলোভেরা রস খাওয়ার উপকারিতা
- অ্যালোভেরা /এলোভেরা এলার্জি
- অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
- শেষ কথা
অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেলের উপকারিতা
আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ হল অ্যালোভেরা। এলোভেরা এর বৈজ্ঞানিক
নাম হল ঘৃতকুমারী। এই গাছ তৈরি করতে তেমন কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে প্রায়
সবখানে এলোভেরা দেখতে পাওয়া যায়। এর পাতাগুলো বেশ খানিকটা লম্বা হয় এবং পাতার
দুই পাশে ছোট ছোট কাটা থাকে। তবে এই পাতা গুনে গুণান্বিত। আদিকাল থেকে এই পাতা
রূপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে। ডায়াবেটিস রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবেও এই
এলোভেরা ব্যবহার করা হয়।
বলা হয়ে থাকে, এই পাতার রস নিয়মিত সেবন করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ
নিয়ন্ত্রণ করে যার কারণে ইনসুলিন ও সেনসিভিটি বাড়ে। এছাড়াও এতে রয়েছে
আয়রন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ভিটামিন -এ, বি ২ ও
বি ৬, ফলিক এসিড, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি। এলোভেরার এই একটি ছোট পাতায় বহু রোগের
ঔষধ থাকে। এর পাতার মাঝে যে স্থিতিস্থাপক উপাদান থাকে এর মূল উপাদান হলো পানি। যা
আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে
এলোভেরা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ত্বকের যে কোন সমস্যা, ছোট - খাটো -
কাঁটা - পোড়া ও এলার্জি সারাতে অ্যালোভেরা জেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যালোভেরার জেল ত্বকের দাগ সারাতে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এলোভেরা ত্বকের
আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে আর এই আদ্রতা ত্বকের বলি রেখা দূর করতে সাহায্য
করে। সরাসরি পাতা থেকে ও জেল নিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
এছাড়াও অ্যালোভেরার জেল দুধ, মধু ও হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে
ব্যবহার করা যায়। আবার শুধু দুধের সাথে মিশিও ব্যবহার করা যায়। রোদে পোড়া
ত্বকে অ্যালোভেরা, টক দই ও শসার রসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকে রোদে
পোড়া দাগ বা কালো কালো ছোপ দাগ দূর হয়।
ওজন কমাতে এলোভেরা জেল
এলোভেরা জেল দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আছে প্রচুর মিনারেল ও
ভিটামিন। ছাড়াও রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, এনজাইম আর স্টেরল। তাই অ্যালোভেরা জেল
নিয়মিত পান করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অ্যালোভেরার জুসের স্বাদ একটু তিতা তাই এর
জুসের সাথে বরফ কুচি, মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে
পান করলে দ্রুত ওজন কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা - কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
আমাদের শরীরে মেদ জমে ক্রনিক প্রদাহের কারণে। আর এলোভেরা জুসে আছে এন্টি
ইনফ্লামেন্টরি উপাদান যা প্রদাহ রোধ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এজন্য
পুষ্টিবিদেরা ডায়েট লিস্টে এলোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হজম শক্তি বাড়াতে এলোভেরা জুস
হজম শক্তি বাড়াতে এলোভেরা জুসের জুড়ি মেলা ভার। এই জুস আমাদের অন্তের উপকারী
ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের বাধা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে। যা
আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে থাকে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
এলোভেরা জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যার
কারণে বহু যুগ ধরে ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় এলোভেরা জুস ব্যবহৃত হয়ে
আসছে। এই জুস নিয়মিত পান করলে ইনসুলিন, সেনসিভিটি বাড়ে। যার ফলে রক্তের শর্করার
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত এই জুস খাওয়া গেলে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই খাওয়ার আগে হোক বা খাওয়ার পরে হোক যাদের
ডায়াবেটিস আছে তারা এই পানীও নিয়মিত পান করুন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এলোভেরা জেল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এলোভেরা হলো এন্টি
ফাঙ্গাল ও মাইক্রোরিয়াল সমৃদ্ধ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে এবং দেহের ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান দূর করে থাকে। তাই আপনি নিয়মিত
এলোভেরা জেলের জুস পান করতে পারেন। এটি দেহের সাদা ব্লাড সেল বৃদ্ধি করে, যা
ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে থাকে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাউথওয়াশের বিকল্প হিসেবে এলোভেরা জেল
ব্যবহার করা হয়। এলোভেরাতে আছে ভিটামিন "সি" যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি
ফোলা, মাড়ি থেকে রক্তপাত বন্ধ করে থাকে। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও
সাহায্য করে থাকে এই অ্যালোভেরা জেল কার্যকর। আপনার মুখে ঘা হয়ে থাকলে যেখানে ঘা
হয়েছে সেই স্থানে এলোভেরা জেল লাগাতে পারেন। এতে আপনার মুখের ঘা সেরে
যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
নতুন গবেষণা অনুযায়ী অ্যালোভেরা জেল এ অ্যালোইমোডিন নামক উপাদান রয়েছে যা স্তন
ক্যান্সার ছড়ানো রোধ করে থাকে। অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধ ও অ্যালোভেরা জেল
বেশ কার্যকরী।
চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে
এলোভেরা জুসে প্রোটিয়ালাইটিক এনজাইম"স নামে এক ধরনের উৎসেচক থাকে যা মাথার তালুর
ত্বকের কোষ গুলোর স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষভাবে কার্যকরী। এই জেল নিয়মিত ব্যবহার
করলে মাথার তালুর ইনফেকশন দূর হয়, খুশকের সমস্যা থাকে না এবং চুল ঘন ও লম্বা
হয়। এটি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই আপনার চুল হবে সিল্কি, নরম
এবং মোলায়েম।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
নিয়মিত এলোভেরা জেল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়া ও অ্যালোভেরা জেলে
প্রায় ২০ রকমের অ্যামিনো এসিড আছে, যা ব্যাকটেরিয়া বা ইনফেকশন দূর করে। এটি
বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে। এতে হজম শক্তি বাড়ে।
অ্যালোভেরা /এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম
এলোভেরা প্রকৃতিগতভাবেই ভেষজ উপাদানে ভরপুর। তাই অ্যালোভেরা ছোট বড় সকলেই খেতে
পারেন। তবে ছোট বাচ্চাদের এলোভেরা না খাওয়াই ভালো। এলোভেরা নিয়ম মেনে খাওয়া
উচিত। এলোভেরা জুস বানিয়ে খেতে পারেন। তবে এর স্বাদ যেহেতু একটু তিতা তাই এর
সাথে বরফ কুচি,লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে এলোভেরা জুস তৈরি করার
ঝামেলা এড়াতে এর মধ্যে যে সাদা অংশ রয়েছে তা এমনিতেও খাওয়া যায়।
অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয়
বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের প্রতিদিনই বাইরে যেতে হয়। আর বাইরে বের হলে রোদ এবং
ধুলাবালিতে আমাদের ত্বকের অবস্থা হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের
যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করাই শ্রেয়। কারণ আমাদের ত্বক হলো সেনসিটিভ। তাই
কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি কোন ক্রিম ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর এলোভেরা
জেল ব্যবহার করা উচিত। শুধু ত্বকে নয় সমস্ত শরীরে ব্যবহার করা যায় এই
অ্যালোভেরা জেল।
এক্ষেত্রে আপনাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে আর তা হল আপনি এই জেল ত্বকে লাগিয়ে
রোদে যেতে পারবেন না। এতে আপনার ত্বকে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হবে বেশি। অনেক
সময় আমাদের ত্বকে ক্ষত দেখা যায়। আর এ রকমের ক্ষত সৃষ্টি হলে অ্যালোভেরা জেল
ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের ক্ষত সেরে যাবে। তবে আপনাকে এই
জেলের ব্যবহার নিয়মিত করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার নিয়ম
বিস্তারিত জেনে নিন
তুলো বা সুতি কাপড় দিয়ে ত্বকে এলোভেরা লাগাতে হবে। যদি সিনথেটিক কোন
কাপড় দিয়ে ব্যবহার করেন তাহলে ভালোর চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। তবে এলোভেরা জেল
মুখে মাখার পর তা শুকিয়ে গেলে আপনি এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। এটা আপনার ত্বককে
অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগানোর পূর্বে আপনাকে
একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে -
আর তা হলো এই জেল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মুখ সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে
পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে আপনি সঠিকভাবে এর উপকারিতা পাবেন।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার /এলোভেরার উপকারিতা
গ্রীন অ্যাডামস এন্ড ইভের রূপ বিশেষজ্ঞ নাহিদ আফরোজ বলেন, অ্যালোভেরা বা ঘৃকুমারী
প্রাকৃতিক গুনে গুণান্বিত একথা আমরা সবাই জানি। তাই চুলের যত্নে এলোভেরার ভূমিকা
অপরিসীম। এই গাছটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে হাজার বছর আগে থেকেই।
খুশকি দূর করে
এলোভেরা জেলের রয়েছে জীবাণু নাষক ও ছত্রাক বিরোধী উপাদান, যা মাথার ত্বকের জন্য
উপকারী। এটি মাথার চুলকানি ও খুশকি দূর করে থাকে।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
অ্যালোভেরার জেলে রয়েছে বিশেষ এক ধরনের ময়েশ্চারাইজার ।এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
হিসেবে কাজ করে এবং চুলের আদ্রতা ধরে রাখে। যার কারণে চুল ভেঙ্গে যায় না এবং
চুলের মাথা ফেটে যায় না।
চুল পড়া কমায়
ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনের ভরপুর হলো এই অ্যালোভেরা জেল। আর এই সব উপাদান
আপনার চুলের ফলিকল কে পরিপুষ্ট করে চুল পড়া কমায়। চুলকে বড় হতেও সাহায্য করে
এবং চুলকে করে ঘন, কালো এবং মোলায়েম।
অ্যালোভেরা /এলোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
এলোভেরা জেল চুলের জন্য অনেক উপকারী এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা চুলের
যত্নে নিয়ম মেনে এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। তবে এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা
হল -
এলোভেরার ডাল কেটে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর এলোভেরার ডাল থেকে হলুদ এক ধরনের তরল
পদার্থ বের হবে সেটা পরিষ্কার করে মুছে নিন। কারণ এই হলুদ পদার্থটি আপনার মাথার
স্কার্বের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এরপর একটা চামচ দিয়ে উপর থেকে নরম সাদা জেলটুকু
তুলে নিন এবং আপনার মাথার স্কার্বে ঘষে ঘষে জেলটা লাগিয়ে আধাঘন্টা (৩০ মিনিট)
রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঘন, লম্বা ও মসৃন চুল পেতে আপনি অ্যালোভেরা জেল এর সাথে নারকেল তেল, মধু ও
কাস্টার ওয়েল মিশিয়ে আপনার চুলে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো উপকার
পেতে এই হেয়ার প্যাকটি আগের দিন রাতে মাথায় লাগিয়ে সারা রাত রাখতে হবে এবং
পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুল ঝরা রোধ করতে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য আপনি এলোভেরা জেল এর সাথে পেঁয়াজের
রস ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে এই হেয়ার প্যাকটি আপনি মাথা
শ্যাম্পু করার পূর্বে মাথায় লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর
শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যারা মাথায় মেহেদী ব্যবহার করেন তারা অ্যালোভেরা জেল এর সাথে মেহেদী মিশিয়ে
ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে মেহেদী অবশ্যই এলোভেরা জেল এবং মেহেদী এক
সাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আপনি যদি একসাথে ব্লেন্ড না করেন তাহলে অ্যালোভেরার
সাথে মেহেদি মিশবে না। তবে শুধু এলোভেরা মাথায় বা ত্বকে ব্যবহার না করাই
ভালো।
অ্যালোভেরা /এলোভেরা এলার্জি
এলোভেরা গাছের গোড়ায় ল্যাটেক্স নামের এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে, যা এলোভেরা
গাছের গোড়া থেকে পাতায় আসে। এই ল্যাটেক্স হল এক ধরনের এলার্জির
জীবাণু। এতে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে তাই এটি সেবন করলে
পেটের নানা সমস্যা সহ পেটের জ্বালাপোড়া, পেটের খিচুনি হতে পারে। আবার যদি এটি
ত্বকে ব্যবহার করা হয় তাহলে আপনার ত্বকেও এলার্জি হতে পারে।
অ্যালোভেরা /এলোভেরা রস খাওয়ার উপকারিতা
গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত যে, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় যেমন এলোভেরার গুরুত্ব
রয়েছে তেমনি এই এলোভেরা জুস পান করে অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই
জুস খেলে আমাদের শরীর সতেজ থাকে। নিম্নে এলোভেরা জুসের বিভিন্ন উপকারিতা
তুলে ধরা হলো -
ক্ষতের চিকিৎসায় এলোভেরা জুস
এলোভেরার জুসে উপস্থিত থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা
শরীরের যেকোনো ক্ষত সারতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই যদি কখনো আপনার শরীরে ছোট
কোন চোট বা আঘাত লাগে তাহলে আপনি এই এ্যালোভেরা জুস খেতে পারেন। দেখবেন আপনার
শরীরের ক্ষত খুব দ্রুত সেরে গেছে।
হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
এলোভেরা জুস খেলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যা আপনার হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
আর এই কারণে আপনার হার্টের কোন ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং হঠাৎ করে
হার্ট এটাকের সম্ভাবনা ও দূর হয়।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি সেবন করলে শরীরের প্রয়োজনীয়
সকল ভিটামিন ও মিনারেল ঘাটতি দূর হয়। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে
যেকোনো রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। বেশি উপকার পেতে আপনি এলোভেরা জুসের সাথে
তুলসী, করলা এবং আমলকি রসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত এই জুস সেবন
করলে আপনি কোন রোগেই আক্রান্ত হবেন না।
নানাবিধ হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হয়
নিয়মিত এলোভেরা জুস সেবন করলে দেহের সকল হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মত হয়। যার ফলে
হরমেনাল ইমব্যালেন্স হওয়ার মতো কোনো সমস্যা আপনার শরীরের ধারে কাছেও আসতে
পারবেনা। তাই হরমেনাল ইমব্যালেন্স সংক্রান্ত নানা রোগের চিকিৎসাতেও এই প্রাকৃতিক
উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হরমোনের কোন সমস্যা হলে পান করুন এলোভেরা
জুস।
শরীর থেকে টক্সিন উপাদান বেরিয়ে যায়
আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে
উঠে খালি পেটে এলোভেরা জুস খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন
উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করবে আর যদি এইসব ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান আপনার শরীর
থেকে বেরিয়ে না যায় তাহলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরের প্রতিটা অঙ্গকর্ম ক্ষমতা
হারিয়ে ফেলবে ফলে আপনি নানা রকম সমস্যায় পড়তে পারেন তাই এখনই সাবধান হন এবং
এলোভেরা জুস খাওয়া শুরু করুন
হজম ক্ষমতার উন্নতি করে
অ্যালোভেরা জুস খেলে শরীরের পাচক রসের ক্ষমতা বেড়ে যায়। যার কারণে বদ হজমের মতো
রোগ আপনার ধারে কাছেও আসতে পারবে না। সেই সাথে আপনার শরীর থেকে গ্যাস,
অম্বল এবং এসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আপনারা যারা খাবার
খেতে পছন্দ করেন তারা এলোভেরা জুস খেতে পারেন।
লোহিত রক্ত কণিকার উপাদান বাড়িয়ে দেয়
রক্তস্বল্পতা আমাদের দেশের মানুষের একটি সাধারন সমস্যা । তবে রক্তস্বল্পতা বা
অ্যামিনিয়ায় আমাদের দেশের মেয়েরা বেশি ভুগে থাকেন। তাই লোহিত রক্তকণিকার উপাদান
বাড়াতে আপনি খেতে পারেন অ্যালোভেরা জুস।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত এলোভেরা জুস খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে আপনি
সর্দি-কাশি সহ ছোট বড় নানান রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। সেই সাথে সংক্রামিত
রোগের সংক্রমণ থেকেও মুক্তি পাবেন।
অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
অ্যালোভেরা জেল প্রয়োজন এর অতিরিক্ত ব্যবহার করলে প্রসবের রং লালসে হয়ে যেতে
পারে ডায়রিয়া হতে পারে এবং এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই পরিবার মত
এলোভেরা জুস খাওয়া উচিত কারণ প্রত্যেকটি জিনিসে যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি
তার ক্ষতিকর দিক রয়েছে তবে এলোভেরার ক্ষেত্রে খারাপ দিকের চেয়ে ভালো দিকের
পরিমাণ বেশি যদি তা নিয়মিত এবং পরিমিত খাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত
এলোভেরার অপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো -
- গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলাদের জন্য অ্যালোভেরার জুস বা জেল ক্ষতিকর।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালোভেরা জুস পান করলে ডায়রিয়া হতে
পারে।
- এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে । এবং
প্রয়োজনের অতিরিক্ত জুস সেবন করলে প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যেতে পারে।
শেষ কথা
আমি এলোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।এলোভেরা
খাওয়ার উপকারিতা, এলোভেরা জুস খাওয়ার উপকারিতা, চুলের যত্নে
এলোভেরার উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আশা করি আমার এই লেখা
আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। যদি আপনারা এই লিখা পড়ে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই শেয়ার
করতে ভুলবেন না।
অনেক উপকারী এবং সুন্দর লিখেছেন।