দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় জেনে নিন
মুরগি হলো প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস। সঠিকভাবে প্রাণীজ আমিষ পেতে হলে দেশি মুরগি
পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমরা যদি দেশি মুরগি
পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে না জানি তাহলে মুরগির উৎপাদন
বাড়াতে পারব না। দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে
আমার পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এমন কোন বাড়ি নাই যেখানে দেশি মুরগি পাওয়া যায় না।
দেশি মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির চেয়ে অনেক কম। দেশি মুরগির উৎপাদন
ব্যয় অনেক কম। কারণ দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। দেশি
মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়
- মুরগি পালন করার পদ্ধতি
- মুরগির জাত নির্বাচন করা
- মুরগির জন্য ঘর তৈরি
- মুরগির খাবার
- মুরগির পরিচর্যা
- মুরগির বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা
মুরগি পালনের উপকারিতা বা সুবিধাসমূহ
শেষ কথা
মুরগি পালন করার পদ্ধতি
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এমন কোন বাড়ি নাই যেখানে দেশি মুরগি পাওয়া যায় না।
দেশি মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির চেয়ে অনেক কম। দেশি মুরগির উৎপাদন
ব্যয় অনেক কম। কারণ দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। দেশি
মুরগির ডিম ও মাংসের দাম প্রায় অন্যান্য মুরগির চেয়ে দ্বিগুণ। এরপর দেশি মুরগির
চাহিদা বাজারে অনেক বেশি তবে দেশি মুরগির বাচ্চা মৃত্যুর হার অনেক বেশি এবং
মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে অপুষ্টিজনিত রোগ।
যার কারনে এর উৎপাদন আশানুরূপ হয়না।দেশী মুরগী থেকে ডিম ও মাংস অধিক
পরিমাণে উৎপাদন করতে হলে দেশি মুরগির বাচ্চা বয়সে মৃত্যুর হার কমিয়ে এনে এদের
যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশি মুরগি পালন করে অতি অল্প
দিনে ভাল আয় করা সম্ভব। দেশি মুরগির মাংস এবং ডিম অনেক আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য। সঠিক
পদ্ধতিতে মুরগি পালন করলে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি মুরগি থেকে
বাড়তি আয় করা সম্ভব। এইজন্য দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়
সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ টিকা কার্ড কি - শিশুদের ইপিআই টিকা সম্পর্কে জেনে নিন
মুরগির মাংস ও ডিম পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে অধিক কার্যকর। অল্প টাকা
বিনিয়োগ করে অধিক আয় করা সম্ভব একমাত্র মুরগি পালন করার মাধ্যমে। মুরগির বিষ্ঠা
একটি জৈব সার। মুরগি বিভিন্ন রকম পোকামাকড় তাদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে যার
কারণে চারপাশে পোকামাকড় তারা খেয়ে ফেলে। সব ধরনের বাজারে মুরগি বিক্রি করা হয়।
মুরগির ডিম খুচরা বিক্রি করা হয় আবার পাইকারি বাজার, স্থানীয় দোকান অথবা
প্রতিবেশীদের কাছে ও ডিম বিক্রি করা যায়।
মুরগির জাত নির্বাচন করা
মুরগি পালন করে লাভবান হতে চাইলে প্রথমে সঠিকভাবে এর জাত নির্বাচন করতে হবে। যেমন
- বয়লার বা হাইব্রিড মুরগি উঠোনে বা আঙিনায় ছেড়ে পালন করা সম্ভব নয় তাই খাঁটি
জাতগুলো বেছে নেওয়া দরকার। ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প বা রোড আইল্যান্ড রেড
(আরআইআর) এ জাতের মুরগি নির্বাচন করা যেতে পারে। এখন বাজারে
গ্রামরপ্রিয়া, গিরিরাজা, বনরাজা ইত্যাদি জাতের মুরগি পাওয়া যায়। এই মুরগির
বাচ্চা গুলো কৃত্রিমভাবে ফুটানো হয় বা তৈরি করা হয়।
মুরগির জন্য ঘর তৈরি
মুরগি পালন করার জন্য আলো-বাতাস পরিপূর্ণ খোলামেলা ঘর তৈরি করা উচিত। এই ঘর এগুলো
সাধারণত ১.৫ থেকে ২.০০ ফুট লম্বা, ৪ ফুট চওড়া এবং ১.৫ থেকে.২ মিটার পর্যন্ত উঁচু
করে তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাশেঁর বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করা যায়।
এছাড়া মাটির দেয়াল দিয়েও এই ঘরগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে।
ঘরের দেয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ছিদ্র বা ফাঁকা জায়গা থাকতে
হবে। এই ঘরগুলোর টিন অথবা বাঁশের তরজা,কাঠের তক্তা বা খড় দিয়ে তার সাথে
পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যায়। প্রতি ১0 থেকে১৫ টি মুরগির জন্য এইরকম একটি
করে ঘর তৈরি করা উচিত।
মুরগির খাবার
মুরগি থেকে ভালো উৎপাদন পেতে হলে এর খাবারের দিকে যথেষ্ট পরিমাণে নজর দেওয়া
উচিত। তবে দেশি মুরগি পালনে তেমন কোনো খাবার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দেশি
মুরগি বাড়ির পাশের ছড়িয়ে - ছিটিয়ে থাকা ধান, গম, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ,
পোকামাকড়, ঘাস, লতাপাতা, পাথরকুচি, কাঁকর ইত্যাদি খেয়ে থাকে। তবে বিদেশি বা
সংকর জাতের মুরগি যেমন - ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প বা রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) এ
জাতের মুরগি পালন করতে হলে তাদের খাবার দেবার প্রয়োজন পড়ে।
মুরগির পরিচর্যা
দেশি মুরগি পালন করতে বা যে সব মুরগি ছেড়ে পালন করা হয় সেসব মুরগি পালন করার
জন্য তেমন পরিচর্যার দরকার পড়ে না। তাই তেমন লোকজনেরও দরকার পড়ে না। এর পরেও
কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, যেমন -
- সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে।
- সন্ধ্যায় মুরগির ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে।
- মুরগি গুলোর ঘরের দরজা সঠিকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
মুরগির ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুড়া অথবা শুকনো খড় বিছিয়ে
দিতে হবে।
মুরগির ঘরে বিছানো জিনিসগুলো পায়খানা জমতে জমতে যেন শক্ত জমাট বেঁধে না যায়
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- এবং দুই এক দিন পর পর এগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- শীতের দিনে মুরগির ঘর গুলো ভালো ভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
গরমের দিনে মুরগির ঘরে যেন বাতাসের ব্যবস্থা থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
এই পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে অতি অল্প সময়ে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। কারণ
দেশি মুরগি পালন করতে খুব একটা খরচ হয় না বা অধিক পুঁজির প্রয়োজন হয়
না। এইজন্য দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়
সে সম্পর্কে জানতে হবে।
মুরগির বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা
পৃথিবীতে যত ধরনের জীব বা উদ্ভিদ রয়েছে সবকিছুই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি হাঁস-মুরগি ও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে অন্য জাতের মুরগি তুলনায় দেশি
জাতের মুরগি রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত কম হয়ে থাকে। এ আর এজন্য দেশি মুরগি
পালনের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশি মুরগি পালন করার পদ্ধতি ও
উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জ্ঞানলাভ করা দরকার।
দেশি মুরগি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভাইরাসজনিত ও ছত্রাকজনিত রোগে
আক্রান্ত হতে পারে। আর এসকল রোগের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থাও রয়েছে।দেশি মুরগির
মূলতরোগ, রক্ত আমাশয়, মাইকোপ্লাজমোসিস, রানীক্ষেত, গামবোরো, বসন্ত ইত্যাদি
রোগ হয়। রোগ গুলোর জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে ভাল হয় যদি
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
রানীক্ষেত রোগ
রানীক্ষেত রোগটি হয় নিউক্যাসেল ডিজিস ভাইরাসের সংক্রমনের ফলে। গ্রামাঞ্চলে এই
রানীক্ষেত রোগ কে চুনা রোগ ও বলা হয়ে থাকে। মুরগি এই রোগ হলে আক্রান্ত
মুরগি সাদা চুনের মতো মল ত্যাগ করে, নিরিবিলি এক কোণায় ঝিমায়, সাদা চুনের মতো মল
ত্যাগ করে,নাক ও মুখ দিয়ে পানি পড়ে, শ্বাসকষ্ট হয়, ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়
ইতাদি।
- সাদা চুনের মত পাতলা মল ত্যাগ করে।
- নাক দিয়ে সর্দি ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
- শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
- ঘাড় বেঁকে যায়, কখনও কখনও একই স্থানে দাঁড়িয়ে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।
- মুরগী খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
- মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে।
- মুরগী দূর্বল হয়ে ঠোঁট ও বুক মাটিতে লাগিয়ে বসে পড়ে।
আরো পড়ুনঃ হজের ফজিলত ও গুরুত্ব জেনে নিন
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য উচচক্ষমতা সম্পন্ন এন্টিবায়োটিক
ব্যবহার করা যেতে পারে।মুরগি রানীক্ষেত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হলে মুরগি বা বাচ্চাকে অন্য সব মুরগি
থেকে আলাদা করতে হবে, এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো মুরগি মারা গেলে সেটাকে
মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে ৭ থেকে ২১ দিন বয়সী বাচ্চাকে বিসিআরডিভি ও
দুই মাসে বেশি বয়সী মুরগিকে আরডিভি ঔষুধ দিতে হবে।
গামবোরো রোগ
এটি একটা ভাইরাসজনিত রোগ। এই গামবোরো রোগের লক্ষণগুলো হলো – মুরগি মাটিতে বুক
লাগিয়ে শুয়ে পড়া, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, পানি তৃষ্ণা বাড়ে, মলের সাথে রক্ত ও
পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়, দেহে কাপুনি ওঠে ইত্যাদি। এই গামবোরো রোগের
চিকিৎসা হিসেবে এমোক্সিলিন , সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ঔষুধ খাওয়াতে হবে।
মুরগি এই গামবোরো রোগে ক্রান্তের হার বেড়ে গেলে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। আর এই
ভিটামিনের অভাব পূরণের জন্য লেবুর রস পানিতে গুলিয়ে, আখের গুড় অথবা স্যালাইন
পানিতে গুলিয়ে খাওয়ানো যায়। সমস্যা বেশি জটিল আকার ধারন করলে অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মুরগি পালনের উপকারিতা বা সুবিধাসমূহ
দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত। মুরগির ডিম ও মাংস উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। মাংস ও ডিমের মাধ্যমে
প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করে এই সমস্যা সমাধান করা যায়।
মুরগির পালক দ্বারা খেলার সামগ্রী, ঝাড়- ইত্যাদি এবং রক্ত ও নাড়িভূড়ি
প্রক্রিয়াজাত করে পশু-পাখীর খাদ্য তৈরীর জন্য আলাদা শিল্প গড়ে উঠেছে।
মুরগির বর্জ্য এবং লিটার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব যা ব্যবহারের
মাধ্যমে জ্বালানী সাশ্রয় করে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা যায়।
আদিকাল থেকে গ্রাম বাংলার মহিলারা বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে মুরগি পালন করে আসছে।
মুরগির বিষ্ঠা উন্নতমানের জৈব সার যা ব্যবহার করে কৃষি ফসল উৎপাদনে লাভবান হওয়া
যায়।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মুরগির গুরুত্ব অপরিসীম। তুলনামূলক স্বল্প বিনিয়োগ
এবং অল্প ভূমিতে বাস্তবায়নযোগ্য বিধায় জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব
উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুরগি পালন, বেকার যুব সমাজ, ভূমিহীন কৃষক এবং দুস্থ্য গ্রামীন মহিলাদের
আত্ম-কর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য উপায়।
শেষ কথা
মুরগির মাংস ও ডিম পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে অধিক কার্যকর। অল্প টাকা
বিনিয়োগ করে অধিক আয় করা সম্ভব একমাত্র মুরগি পালন করার মাধ্যমে। মুরগির বিষ্ঠা
একটি জৈব সার। মুরগি বিভিন্ন রকম পোকামাকড় তাদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে যার
কারণে চারপাশে পোকামাকড় তারা খেয়ে ফেলে। সব ধরনের বাজারে মুরগি বিক্রি করা হয়।
মুরগির ডিম খুচরা বিক্রি করা হয় আবার পাইকারি বাজার, স্থানীয় দোকান অথবা
প্রতিবেশীদের কাছে ও ডিম বিক্রি করা যায়।
আমি আমার পোস্টে দেশি মুরগি পালন করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়
সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আমার এই পোস্টটি
আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
দেশী মুরগীর ডিম অনেক গুরুত্বপুন।