হিট স্ট্রোক কাকে বলে - হিট স্ট্রোক কেন হয় জেনে নিন



হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় আমাদের সবারই জানা উচিত ।
আমরা যদি জানতে পারি হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় তাহলে
আমরা সবাই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব । হিট স্ট্রোক কাকে বলে
এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় জানতে নিচে আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।



Image

হিট স্ট্রোক হল এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া । হাইপার বলতে বোঝায় অধিক মাত্রা
এবং থার্মিয়া হল তাপ। হাইপারথার্মিয়া  বলতে বোঝায় অধিক মাত্রায়  তাপ ।
তাহলে এবার আসুন হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় তা নিয়ে আলোচনা করি


পোস্ট সূচি পত্র ঃ   হিট স্ট্রোক কাকে বলে  - হিট
স্ট্রোক কেন হয়











 হিট স্ট্রোক কাকে বলে



আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো 98 ডিগ্রি ফারেনহাইট । হিটস্ট্রোক
হচ্ছে এমন একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা যা মানব দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে 40
ডিগ্রি সেলসিয়াস  বা 104 ডিগ্রি ফারেনহাইট ক্রস করে । সূর্যের প্রখর তাপ
শরীরে সরাসরি লাগার পর শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা হারিয়ে ফেলে । হিট স্ট্রোক
হলো একপ্রকার মেডিকেল ইমার্জেন্সি । রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দেওয়া হলে রোগীর
মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । 



আবার অনেক সময় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করে দিতে
পারে । এই হিট স্ট্রোকে বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হতে পারে । তবে শিশুরাও 
আক্রান্ত হয়ে থাকে । বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে হিট স্ট্রোকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
তাহলে  এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন  হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট
স্ট্রোক কেন হয় ।


হিট স্ট্রোক কেন হয়



 মানুষ যখন অতি রোদ গরমে থাকে তখন মানুষ ঘেমে যায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত
লবণ পানি বের হয়ে যায় । যাকে বলা হয় ডিহাইড্রেশন । যার কারণে তিনি দুর্বল ,
ক্লান্ত ও মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করেন । আর শরীরের এই অবস্থাকে বলা হয় তাপ
নিঃশেষন । এমতাবস্থায় শরীর যদি সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে
তাহলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয় । আর এভাবেই হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে । কেউ কেউ
আবার একে সর্দিগর্মি ও বলে থাকেন । 

আরো পড়ুন ঃ   আমলকি খাওয়ার উপকারিতা  -  আমলকির ব্যবহার  জেনে নিন



এছাড়াও দীর্ঘক্ষন রোদে হাঁটাহাঁটি বা কাজ করলে এবং ব্যায়াম করলে হিট স্ট্রোক হতে
পারে । এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে শরীরের অভ্যন্তরীণ  তাপমাত্রা যদি ৪0 ডিগ্রি
সেলসিয়াস পৌঁছে যায় তাহলে জীবন হুমকির সম্মুখীন হয় । তাহলে  এখন নিশ্চয়
বুঝতে পেরেছেন  হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় ।



হিট স্ট্রোকের উপসর্গ



হিট স্ট্রোকের কিছু প্রাথমিক উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে । হিট স্ট্রোক দ্রুত সময়ের
মধ্যে জানতে পারলে অনেক জটিল অবস্থা থেকে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় । হিট
স্ট্রোকের উপসর্গ গুলো আলোচনা করা হলো ঃ


  • মাথাব্যথা
  • দুর্বলতা
  • শরীরের অত্যাধিক তাপমাত্রা 
  • ঝিমুনি
  • বমি বমি ভাব
  • অত্যধিক ঘাম হওয়া
  • ফ্যাকাশে দেখানো
  • পেশিতে ব্যথা অনুভব করা
  • ক্লান্তি অনুভব করা
  • মাথা ঘোরা












রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হলো ঃ


  • চোখের মনি বড় হওয়া
  • ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া
  • চামড়ার রং লালচে হয়ে যাওয়া
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা
  • হাঁটতে অসুবিধা দেখা দেওয়া
  •  অসংযত আচরন বা  কথাবাত্রা
  • হৃদপিন্ডের দ্রুত গতি
  • বমি হওয়া
  • খিঁচুনি হওয়া
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া












 তাহলে  এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন  হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট
স্ট্রোক কেন হয় ।



হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা কি



কোন ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হয়েছে যদি তা বুঝতে পারেন তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসার
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আপনাকে যা করতে হবে তা হল ঃ


  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে আসুন ।
  • তার শরীরে ভারি জামা কাপড় থাকলে তা খুলে দিতে হবে ।

  • শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ভেজা তোয়ালে দিয়ে রোগীর শরীর মুছে দিন । সম্ভব হলে পানি
    ঢালুন।

  • হাতের কাছে যদি আইস প্যাক পাওয়া যায় তাহলে রোগীর বগলে অথবা কুচকির
    জায়গায় আইস প্যাক দিন ।




আরো পড়ুন ঃ  কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা -  কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম  জেনে নিন



অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করাতে পারেন । এতে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাবে । আর
শরীর যত দ্রুত ঠান্ডা হবে হিটস্ট্রোকের পরিমাণ তত কমবে ।



একটি থার্মোমিটার দিয়ে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখুন । যতক্ষণ না পর্যন্ত
শরীরের তাপমাত্রা 101 ডিগ্রি থেকে 102 ডিগ্রি ফারেনহাইটে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত
প্রাথমিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে । প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে  অবশ্যই
হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ।



হিট স্ট্রোক এর রেঞ্জ কয়টি 



সিডিসি এর তথ্য অনুযায়ী স্ট্রোক এর রেঞ্জ প্রধানত তিন প্রকার । যথাঃ  


হেমোরেজিক স্ট্রোক
 
মস্তিষ্কের ভিতরে যখন কোনো নালী ছিড়ে যায় এবং এর জন্য যে স্ট্রোক হয় তাকে বলা হয় হেমোরেজিক স্ট্রোক । তিন মাসের মধ্যে এই ধরনের স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে ।

ইশকেমিক স্ট্রোক

মস্তিষ্কে রক্ত নালীর মধ্যে রক্ত জমাট বেধে এবং রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে ব্রেনের কিছু টিস্যু মারা যায় একে বলা হয় ইশকেমিক স্ট্রোক । উচ্চ রক্তচাপ এর ফলে এই স্ট্রোক হয়ে থাকে । শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ স্ট্রোক হলো ইশকেমিক স্ট্রোক ।
 
খুব ছোট বা মিনি স্ট্রোক

মস্তিষ্কের রক্তনালিতে অল্প কিছু সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে এ ধরনের স্ট্রোক হয়ে থাকে । এই স্ট্রোক আবার দ্রুত ভালো হয়ে যায় ।মিনি স্ট্রোক হল যেকোনো ধরনের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ। তবে ছোট বা মিনি স্ট্রোক হবার ৩ দিনের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ , ১ সপ্তাহের মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ ১ মাসের মধ্যে এবং শতকরা ১২ ভাগ ,৩ মাসের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষই বড় ধরনের স্ট্রোক করে । তবে ছোট হোক বা মিনি স্ট্রোক কোনভাবে অবহেলা করা যাবেনা ।

 
লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া উচিত । বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ফ্যাক্টরগুলো যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা উচিত । নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং সঠিক মাত্রায় খাবার গ্রহণ করলে স্ট্রোক এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব । তাহলে এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় ।


হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে কি অবস্থায় রাখতে হয়



হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে অনেক নিয়ম মেনে রাখতে হয় । তবে যে অবস্থায় রাখলে
রোগী বেশি উপকার পাবে  তা হল ঃ


  • ছায়া যুক্ত ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে
  • যতটা পারা যায় কোলাহল মুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে
  • হালকা ও ঢিলে ঢালা পোশাক পরাতে হবে
  • পা দুটিকে বালিশের সাহায্যে ৮ থেকে ১২ ফুট উঁচু করে রাখতে হবে
  • যে কোনো বিষয়ে যেন চিন্তা না করে তা খেয়াল রাখতে হবে
  • প্রয়োজনে রোদে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে








তাহলে  এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন  হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট
স্ট্রোক কেন হয় ।


শেষ কথাঃ



মানুষ যখন অতি রোদ গরমে থাকে তখন মানুষ ঘেমে যায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ
পানি বের হয়ে যায় । যাকে বলা হয় ডিহাইড্রেশন । যার কারণে তিনি দুর্বল ,
ক্লান্ত ও মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব করেন । আর শরীরের এই অবস্থাকে বলা হয় তাপ
নিঃশেষন । এমতাবস্থায় শরীর যদি সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে
তাহলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয় । আর এভাবেই হিট স্ট্রোক হয়ে থাকে । 



আমি   হিট স্ট্রোক কাকে বলে এবং হিট স্ট্রোক কেন হয় তা নিয়ে আলোচনা
করেছি । আশা করি আপনারা উপকার পাবেন ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url