সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিত
সজনে আমাদের কাছে অতি প্রিয় এবং পরিচিত একটি সবজির নাম । গ্রামে আপনি এমন কোন একটি বাড়ি খুঁজে পাবেন না , যেখানে সজনে গাছ নেই । এই গাছ তৈরি করতে খুব একটা যত্নের প্রয়োজন হয়না বলে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই এই সজনে গাছ পাওয়া যায় । কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা , সজনে এবং সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা। আমি আজকে আপনাদের সাথে সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব ।
সকল ভিটামিনের আধার হলো সজনে পাতা । সজনে পাতায় থাকে দুধে চারগুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ বেশি প্রোটিন তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি । যার কারণে বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি সহ রক্তস্বল্পতা দূর করে থাকে এই সজনে পাতা । এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা। যাকে এক কথায় বলা হয় সুপার ফুড ।
মরিঙ্গা সজনে পাতার উপকারিতা
শরীরের শক্তি বাড়াতে চান ! মন-মেজাজ ভালো রাখতে চান ! তাহলে এখনি খান মরিঙ্গা সজনে পাতা । এই সজনে পাতাতে রয়েছে অনেক বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , যেমন -পলি ফিনলস , ফ্ল্যাভোনোইডস ও অ্যাস্করবিক এসিড । এই মরিঙ্গা পাতায়া আরো রয়েছে আপনাকে ভালো রাখার ফ্রিরাডিক্যাল টার্মিনেটাস । যেসব খাবারে পুষ্টিগুণ বেশি রয়েছে বিদেশে তাকে বলা হয় সুপার ফুডস । আর আমাদের দেশের সজনে পাতায় তৈরি যে কোন বিদেশী সুপার ফুডস কে টেক্কা দিতে পারে ।
এই মরিঙ্গা শজনেপাতা থেকে তৈরি হয় মরিঙ্গা পাউডার ।এর প্রত্যেকটা অংশের উপকারিতা আছে বলে এই গাছকে বলা হয় অলৌকিক গাছ । গাছটির প্রতিটা অংশে খাদ্যগুণ থাকলেও এর পাতায় রয়েছে শতকরা 90 ভাগ । এই গাছে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ , ভিটামিন বি , ফলিক অ্যাসিড , রাইবোফ্লাভিন ও পাইরিডক্সিন , ভিটামিন সি , ভিটামিন ই , ক্যালসিয়াম , মাঙ্গানিজ , দস্তা ও প্রোটিন , ফসফরাস ও পটাশিয়াম রয়েছে ।
আরও পড়ুন ঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা - আমলকির ব্যবহার জেনে নিন
আমাদের শরীরে অতি প্রয়োজনীয় আটটি এমাইনো এসিড প্রয়োজন । আর এই মরিঙ্গা পাতাতে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় আটটিএমাইনো এসিড বিদ্যমান রয়েছে । এতে রয়েছে আমাদের যকৃত কে ভালো রাখার মতো ফ্রিরাডিক্যাল টার্মিনেটাস । সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে আপনি আরো পাবেন , শরীর ফোলার সমস্যা সমাধানের উপায় । শরীরে প্রোটিন এবং উৎসেচকের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় না থাকলে শরীর ফুলে যায় । এবার আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
আরও পড়ুন ঃ নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা - কলা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
গবেষণায় দেখা গেছে সজনে পাতায় থাকা বিভিন্ন প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী । এই পাতা পিত্তথলির কার্যকারিতা বাড়াতে পারে যা রক্তে গ্লকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয় । সজনে পাতায় বিদ্যমান ভিটামিন বি যেমন- রিবোফ্লাভিন নায়াসিন এবং ভিটামিন বি 12 এগুলো সহজেই খাবার গুলো ভেঙ্গে ফেলে যার ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় । এতে আরও রয়েছে ফাইবার যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে ।
গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে সবার জন্য তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য আরেকটু বেশি প্রয়োজন । কারণ গর্ভাববস্থায় একজন মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা হিসাবে মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে । সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি আর এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারনে সর্দি কাশির মত রোগ গুলো সাধারণত কম হয় । ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে ও এই পাতার ভূমিকা অপরিসীম ।
ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের সমস্যা তৈরি হয় নিয়মিত সজনে পাতা খেলে হাড়ের গঠন ভালো হয় যা গর্ভের শিশুর জন্য বিশেষ উপকারী । অ্যান্ডিবেকটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং রক্ত চলাচল বাড়ায় ।গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও মিনারেল উপকারী যা প্রসবের জটিলতা কমায় এবং মায়ের দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে । গর্ভাবস্থায় ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায় আর একজন গর্ভবতী মা সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে ইনফেকশনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন ।
ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে সজনে পাতা , সজনে পাতার গুড়া এবং সজনে পাতার তেল উভয়েই বিশেষ উপকারী । এগুলো ত্বকের ফ্রির্যাডিক্যাল ধ্বংস করে । ত্বকের বলিরেখা কমাতে এন্টি-অক্সিডেন্ট প্রয়োজন যা সজনে পাতায় বিদ্যমান । রোদে পোড়া ত্বকের কালচে ছোপ দাগ দূর করতে ও সজনে পাতার উপকারিতা অপরিসীম ।
১) সজনে পাতার গুড়া এবং তেল উভয়ই ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি কুচকানো ভাব , ক্ষত , বলিরেখা ও
বিভিন্ন দাগ দূর করে ।
২) সজনের তেলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়।
৩) ঠোঁটের যত্নে সজনে তেল ব্যবহার করতে পারেন ।কারন এ তেল ঠোঁটের আদ্রতা বজায় রাখে ।
৪)ত্বকের বিভিন্ন ছোপ দাগ এবং ব্রণও টক্সিন এর ফলেই তৈরি হয়। সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আপনি এ সমস্যার সমাধান ও পেয়ে যাবেন ।
ত্বকে সজনে পাতার ব্যবহার পদ্ধতি
দুই চামচ সজনে পাতার পেস্ট বা গুড়া নিন । এর সাথে এক টেবিল চামচ গোলাপজল 1টেবিল চামচ মধু ও আধা চা চামচ লেবুর রস নিন । একটি ঘন এবং মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন । আপনার সময় মত এটি মুখে লাগিয়ে একটু শুকিয়ে আসা পর্যন্ত বা দশ মিনিট অপেক্ষা করুন । হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন , তারপর দেখুন আপনার ত্বক নরম, উজ্জল ও মসৃণ হবে ।
সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে প্রথমেই আপনাকে সজনে পাতা সংগ্রহ করতে হবে ।এরপর ডাল থেকে পাতাগুলো ভালোভাবে আলাদা করতে হবে । পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে । একটি ছোট ছিদ্র যুক্ত ডালায় পাতাগুলো কিছুক্ষণ রাখতে হবে । সজনে পাতায় খুব বেশি ময়লা থাকে না তাই অনেক বেশি করে ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে না ।পানি ঝরা পাতাগুলো রোদে শুকাতে দিতে হবে ।
এই পাতা গুলো অনেক ছোট ছোট আকারের হয় তাই রোদে দিলে বাতাসে উড়ে যেতে পারে ।এক্ষেত্রে আপনি একটি ছোট পরিষ্কার (পরিত্যক্ত) মশারি দিয়ে পাতা গুলো ঢেকে দিতে পারেন । যাদের রোদে শুকানোর ব্যবস্থা নেই তারা একটি স্টিলের পাত্রে খুব অল্প তাপে চুলাই শুকাতে পারেন । তাপে সজনে পাতার গুনাগুন নষ্ট হয় না ,বরং অক্ষত থাকে । সজনে পাতা শুকাতে বেশি সময় লাগে না । তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পাতাগুলো একেবারে শুকিয়ে যাবে ।
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বকের ঘরোয়া পরিরচর্চার ১৫ টি টিপস জেনে নিন
এই শুকনো পাতা গুলো আপনি একটি শুকনো শিলনোড়া বা ব্লেন্ডারে গুড়া করতে পারেন । পাতাগুলো গুড়া করার পর আপনি ইচ্ছে করলে একটু চেলে নিতে পারেন । এবার গুড়া গুলো একটি কাঁচের জারে
সংরক্ষণ করুন আর দেখুন সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা । আপনি ইচ্ছে করলে এই গুড়া গুলো প্লাস্টিকের পাত্রে সংরক্ষণ করতে পারেন । তবে প্লাস্টিকের পাত্রের চেয়ে কাচের পাত্রে এর গুণগত মান বজায় থাকে ।
পাঠকের শেষ কথা
আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে , সজনে পাতা একটি অন্যতম পুষ্টিকর খাবার । তবে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবারের চেয়ে উত্তম এ কথা বলা যাবে না । আপনাকে অন্যান্য সব ধরনের পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে । তবে সজনে পাতা আপনার দেহের অতিরিক্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে । ১০০ গ্রাম দুধ থেকে ১২৫মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ।পক্ষান্তরে , ১০০ গ্রাম সজনে পাতার মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে ৩৩৭মিলিগ্রাম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে ১৮৫ মিলিগ্রাম । তাহলে আপনি এবার নিজেই তুলনা করে দেখুন ,সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা কত বেশি ।
গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে । কারণ আয়রন গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা দূর করে আর ফলিক এসিড মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করে । যদিও সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড আছে তবুও গর্ভবতী মায়েরা সেবনের পূর্বে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে সজনে পাতা খাবেন । সজনে পাতার মতো সজনে ডাঁটা ও সমান গুরুত্ব বহন করে।
সজনে ডাঁটার মধ্যে পাতার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার থাকে । আপনি সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে চায়ের সাথে মিশিয়ে চা হিসাবেও খেতে পারেন । এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা পাতা বা শুকনো পাতা যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন । আরও বেশি উপকার পেতে আপনি এই চায়ের সাথে পরিমাণমতো লেবুর রস , আদা কুচি মিশিয়ে খেতে পারেন ।সবশেষে আমরা বলতে পারি , পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url